অভীক রহমানের কবিতা

Comments

গাছতলায় বুদ্ধ

বৃক্ষ প্রাচীন 
বৃক্ষ সমীচীন  
আদি সভ্যতার সৃষ্টি 
হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর কৃষ্টি
উপাসনালয় তো একটি 
বটবৃক্ষ অশ্বত্থ 
ওম শান্তি ওম করি সন্ধান 
গাছতলায় নির্বাণ
লাভ করেছেন সিদ্ধার্থ 
যাহা তথাগত তাহাই যথার্থ 
ক্ষত্রিয় রাজ বরেণ্য  
ধরাধামে ধ্যানে মগ্ন 
ছাড়িয়া রক্তাক্ত যুদ্ধ 
গাছতলায় বুদ্ধ 
প্রাচীনকালের সাক্ষী 
নেই কোন মন্দির দ্বাররক্ষী 
গাছ তলার মন্দিরে
নবজন্ম পাইল বিশ্ব
পুনর্জন্ম হলো বুদ্ধের 
বোধে কর্মে সংঘে
আলোকিত এ বঙ্গে।

ইথারে ইথারে

সমস্ত কথাই থাকবে 
এখানে সেখানে 
যেখানেই তুমি যাও কিংবা যাবে
আমাদের কথাগুলো পাবে । 

কথাগুলো হাসছে কাঁদছে 
কথাগুলো দুঃখ পাচ্ছে 
কথায় কথায় কথা বাড়ছে 
সমস্ত কথাই আছে 
সমস্ত কথাই থাকবে 
যেখানেই তুমি যাও কিংবা যাবে
আমাদের কথাগুলো পাবে। 

তোমার আমার মাঝে 
যোজন যোজন পথ পড়ে আছে 
কথাগুলো ঠিক পৌঁছে যাবে কাছে 
নদীতে স্রোতে যেমন নাও চলে
কথাগুলো শুধু করে পারাপার 
জমিনে ঘাসের ঢেউ সীমানায় 
আকাশ ডাকে নীলিমায় 
এমন সময় পালে হাওয়া এলে 
তরতর করে কথাগুলো এগোবে
যেখানেই তুমি যাও কিংবা যাবে
আমাদের কথাগুলো শুনতে ঠিকই পাবে। 

নটরাজ যখন মহাজাগতিক নাচে
গগনে ঘন ডমরু সদা বাজে 
বাদ্য বাজে ধ্বনিতে সাজে 
তোমার আমার কাছে 
কথাগুলো আছে। 

ফাঁকা তো থাকে না
জানতো কল-কাকলিরা 
না কি জানো না? 
সবকিছু থাকে শূন্যস্থান ভরে 
কথাগুলো ঘুরে ফেরে 
ইথারে ইথারে! 

তোমার আমার কথা 
ভেসে আসে বাতাসে 
তুমি কাকে ভালোবাসো
কে তোমায় ভালোবাসে
যা আছে দূরে 
তোমার আমার মনের ভেতরে 
কথাগুলো বেড়াবে 
ইথারে ইথারে
ভালোবাসি বলো তারে 
ইথারে ইথারে
যেখানেই যাও তুমি কিংবা যাবে
আমাদের কথাগুলো পাবে
চলো কথা বলো তবে 
ইথারে ইথারে ।

এক্কা দোক্কা

এই বেশ ভাল থাকা 
সেকেন্ড মিনিট ঘন্টার কাঁটা
বসে বসে গুনতে থাকা 
প্রহর কীভাবে যায়। 

আসবে একা যাবে একা 
হাসবে একা কাঁদবে একা 
প্রেমের হাটে এ কোন ধোকা
নিজেরে ছাড়া কাউকে নাহি চায়। 

এমন কেন বেঁচে থাকা 
তুমি একা আমি একা 
অন্য কারো করি না তোয়াক্কা 
খেলি চল এক্কা-দোক্কা
সুজন বিনে বাঁচা যে বড় দায়।

যেখানে প্রকৃতি নির্ভার

মাঝে মাঝে মনে হয় 
সব ছেড়েছুড়ে 
হারিয়ে যাই বহুদূরে 
মানুষের ভিড়ে 
সভ্যতা জিভ চাটে মিছে 
উলঙ্গ পৃথিবীর বুকে 
আদিমতা মরে ধুঁকে ধুঁকে
যেখানে পথ হয়েছে বিলীন 
ভেঙেচুরে প্রাচীনের ঋণ।

তুমি আর আমি কত আধুনিক-আধুনিকা
পূ্র্বপুরুষের পথেই চলেছি নিমিত্ত চাকা 
অগ্নিদগ্ধ শিখা অনির্বাণে 
সভ্যতার প্রতি কটাক্ষ সভ্যতার
সব টিকে আছে মননে মানসিকতায়। 

মানুষ সৃষ্টিশীল 
সম্পদে স্বপ্নিল 
বিরাজ করে ভুবনে 
জলে-স্থলে-গগনে 
নয়নের তারা চমকিত নয়নে 
দৃষ্টি বিদ্ধ যেখানে 
তোমার আর আমার 
ধর্ম-কর্ম এ সংসার 
সব ছেড়েছুড়ে 
চলো যাই দূরে অনেক দূরে 
যেখানে প্রকৃতি নির্ভার!

বিজ্ঞজন

সব দেখি বিজ্ঞজন 
আসল কাজে থাকে ক’জন 
ধর্ম মানলেই হবি সুজন 
কর্মকার হয় যে কুজন। 

কেউবা বলে কি হবে বুঝে 
কী লাভ বলো খামাখা খুঁজে 
সবই দেখি কিতাবে আছে 
অন্তরাত্মা সদাই বাজে 
মানে কি তবু এ মন 
সব দেখি বিজ্ঞজন 
আসল কাজে থাকে ক’জন? 

মানব জনম একা কেমন 
আগে যে ছিল এখনও তেমন
মন্ত্র যত তন্ত্র তত
সকলে বলে আমি স্বতন্ত্র
মন্ত্রভেদে কেউ পর কেউ আপন 
সব দেখি বিজ্ঞজন 
আসল কাজে থাকে ক’জন। 

ধর্মান্ধ জনে জ্ঞান দেয় বিজ্ঞানে 
ধর্মগ্রন্থ সবই জানে 
বিজ্ঞানীরা যে যা-ই বলেন 
সবই পাবেন যে যা-ই করেন 
ধর্ম কেমন যেমন তেমন 
কী হবে বলো করে এমন 
অজ্ঞানে করে জ্ঞান বিতরণ 
ওরে ও আমার মন 
সব দেখি বিজ্ঞজন 
আসল কাজে থাকে ক’জন।

লেখক:
Avik Rahman
অভীক রহমান, কবি

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.

About Author

বাঙালীয়ানা স্টাফ করসপন্ডেন্ট