এ কে এম শহীদুল্লাহ। শহীদ সাবের নামে সুপরিচিত শহিদুল্লাহর জন্ম ১৯৩০ সালের ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজারের ঈদগাঁ গ্রামে। বাবা সালামতউল্লাহ এবং মা শরিফা খাতুন। শিক্ষকদের প্রিয় ছাত্র ছিলেন প্রচন্ড মেধাবী সাবের।
১৯৪০ সালে ‘ছন্দশিলা’ নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনার মধ্য দিয়ে কিশোর শহীদ সাবেরের সাংবাদিকতা শুরু।
সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক এ সময় থেকে তাঁর ভেতরে লক্ষ্যণীয়। ছাত্র ফেডারেশনের সাথে যুক্ত ছিলেন সাবের। ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে ১৯৫০ সালে সাবেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলে থাকা অবস্থায় তিনি তাঁর জীবন ও সংগ্রামের ওপর ‘আরেক দুনিয়া থেকে’ শীর্ষক লেখাটি শেষ করেন। এই লেখাটি তাঁকে লেখক হিসেবে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়।
পঞ্চাশের শেষদিক থেকে তিনি সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত হন। এ অবস্থায়ও তিনি কাজ করে গেছেন সংবাদে।
জীবনে অনেক অস্থিরতা ও অসুস্থতার মধ্যে দিয়েও তিনি রচনা করে গেছেন সাহিত্য। ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘এক টুকরো মেঘ’, ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত কিশোর সাহিত্য ‘ক্ষুদে গোয়েন্দার কাহিনী ’ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
১৯৬৩ সালে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে সহকারী সম্পাদক হিসেবে। তাঁর লেখার ক্ষমতা, বাগ্মিতা, সাংগঠনিক ক্ষমতা, রাজনৈতিক সচেতনতা তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে বন্ধু মহলে। জীবনে অনেক অস্থিরতা, অসুস্থতা আর পাগলামির মধ্যদিয়েও তিনি রচনা করে গেছেন সাহিত্য।
১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বংশালের দৈনিক সংবাদ অফিস গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সেই রাতে শহীদ সাবের সংবাদ অফিসেই রাত্রিযাপন করছিলেন। আগুনে পুড়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয় শহীদ সাবেরের। সেই সঙ্গে পুড়ে যায় একজন অস্থির দেশপ্রেমিকের শরীর। শহীদ সাবের। এক ইতিহাস।
ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সন্জীদা খাতুন ‘আমার বন্ধু’ শহীদ সাবের সম্পর্কে লিখছেন:
১৯৪৯ সালে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ঘরে বসে ছিলাম। ফজলুল হক হলের হাতার ভেতরেই থাকি। হলের অ্যাসেম্বলি হলে মুকুল ফৌজের সম্মেলন চলছিল, বিকেলের দিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে গেলাম। সেদিনই সাবের ভাইকে (শহীদ সাবের। কথাশিল্পী, কবি ও সাংবাদিক দৈনিক সংবাদ) প্রথম দেখি। ছোট্ট একটা দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন, কুলি আর সাহেব নিয়ে ঘটনা। প্রথমে খুব নিরীহ বিনীত ভাব নিয়ে শুরু করে, খানিক পরে ভোল পাল্টে ধমক-চমক করছিলেন। আবছা মনে আছে। চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলেন তিনি, সে কথা জেনেছিলাম ঘোষণা শুনে।
তারপরে দেখা ২৩ নম্বর উর্দু রোডের বাসায় আমার বিয়ের পর। সে ১৯৫৬ সালের কথা। ওয়াহিদুলের কয়েকজন বন্ধু ওঁদের একতলার ঘরে থাকতেন। শিল্পী ইমদাদ হোসেন, সাংবাদিক শহীদ সাবের, ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউল হক। ইমদাদ রুইতপুর থেকে ঢাকায় এলে ওই খানেই থাকতেন তখন। আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না কারোরই। জিয়াউল তো বেকার। সাবের ভাই-ই বোধ হয় খোরাকি হিসেবে কখনো কখনো কিছু কিছু তুলে দিতে পারতেন ওয়াহিদুলের মায়ের হাতে। তখন পর্যন্ত পরিবারে একমাত্র উপার্জনশীল সদস্য সাংবাদিক ওয়াহিদুল হকের অবস্থাও ছিল করুণ। মর্নিং নিউজ থেকে বেতন পেতেন ৮০ টাকা, তার সঙ্গে সানডে অ্যালাউন্স হিসেবে আর ৪০ টাকা। ব্যস। সরকারি কাগজেই এই হাল—সংবাদ সাবের ভাইকে কতই-বা দিতে পারত। সাবের ভাই প্রথম পরিচয়েই বললেন, আপনি তো একটি মেয়ে মাত্র নন—আমি আপনাকে ‘মিনু ভাই’ বলে ডাকব (আমার ডাকনাম ‘মিনু’)। অন্যে যা করে, তার চেয়ে ভিন্ন কিছু করার ঝোঁক, বুঝতে পারলাম। খুশিও হলাম তাঁর কথায়।
তখন সংবাদ-এর সাহিত্যের পাতার জন্য লেখা এলে তিনি আমাকে এনে দেখাতেন, মতামত চাইতেন। নতুন লেখক খুঁজে বের করার আনন্দে, তখনকার ছাত্র এখনকার প্রফেসর আবুল কালাম মনজুর মোরশেদের লেখা এনে দেখাতেন আমাকে, মহা উৎসাহে বলতেন, কেমন, ভালো না?একবার কী হলো—জিয়াউল আর ইমদাদ মহা খেপে গেল। বলে, দুর্গন্ধে টেকা যায় না ঘরে। সাবের ভাই এমনিতেই একটু নোংরা তো থাকতেনই—তার ওপরে শুরু হলো স্বাস্থ্যচর্চা। অলিভ অয়েল মাখতে শুরু করলেন সারা গায়ে, তার গোসল-টোসলের নাম নেই। এক বিছানায় শোয়া দুষ্কর। ঘুমেরও রাজা ছিলেন সবাই। ইমদাদকে ঠেলাঠেলি করলে বিরক্ত হয়ে বলত, আঃ হা, সারা রাত ঘুমাইছি—এখন রেস্ট লইতাছি না। সাবের ভাই সাড়াশব্দ করার ধারই ধারতেন না। সকালের নাশতার সময়ে এই নিয়ে ধুন্ধুমার লেগে যেত। ওয়াহিদুলের মা চিৎকার করতেন, ‘দ্যাখছোনি। চা ঠান্ডা হৈয়া গেল।’
স্বাস্থ্যটা বরাবরই খারাপ দেখেছি তাঁর। ইনফরমেশন সার্ভিসের জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় ভালো করলেও যদ্দুর মনে পড়ে, স্বাস্থ্য পরীক্ষাতেই তিনি টিকতে পারেননি। সে আমলে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করাটা তাঁর বন্ধুদের কেউ কেউ ভালো চোখে দেখেননি, আলোচনা শুনতাম। সাবের ভাই বলতেন, সরকারে ঢুকে পড়েই সরকারের চরিত্র বদলাতে হবে। ভালো তর্ক বেধে যেত বন্ধুদের ভেতরে। পাকিস্তান আমলে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথভাবে একটি ছবি তৈরি হয়েছিল—জাগো হুয়া সাবেরা। সংবাদ-এর জহুর ভাইও (জহুর হোসেন চৌধুরী) এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাবের ভাই এ ছবির কাজে মেতে গেলেন। প্রগতিবাদীদের ছবি ছিল এটি। পাকিস্তানের দুই অংশের মিলমিশের ব্যাপারটাও ছিল পেছনে। এ জে কারদার ছিলেন চিত্রপরিচালক। সাদেক খান আর সাবের ভাই সহকারী পরিচালক। আরও একটি খবর উল্লেখযোগ্য—ছবির নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছিলেন কলকাতার তৃপ্তি মিত্র আর নায়ক বাংলাদেশের খান আতাউর রহমান। ষাটের দশকে ছবিটি দেখেছি ঢাকার সিনেমা হলে। এই সময়টাতে সাবের ভাইয়ের তত যাওয়া-আসা ছিল না আমাদের বাসায়, তাই ভালো করে জানি না কী হলো না হলো। শুনেছিলাম, ছবির কাজ করে তিনি কোনো ফাঁকিতে পড়েছিলেন, হয়তো তত সুনাম পাননি। আলাঝালা শোনা কথা—প্রেমের ব্যাপারেও এই সময়েই আঘাত এসেছিল।
দুই.
১৯৬২-এর পরে ৩/ই আজিমপুর কলোনির বাসায় সাবের ভাই বেশ কিছুদিন আমাদের কাছে ছিলেন। ছোট একটি শোবার ঘর, লম্বামতন একখানা বসার ঘর আর খাবার জায়গা নিয়ে সরকারি ফ্ল্যাট। খাবার টেবিলের পরে একটুখানি জায়গা পার্টিশন দিয়ে আলাদা করা হয়েছিল তাঁর জন্য, সাংবাদিক ইউনিয়ন অথবা সংবাদ-এর পয়সায়। জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে থাকতেন, কিংবা বিছানায় পা তুলে মাথা নিচু করে ভাবতেন বসে বসে। সিগারেট তো চলতই। ‘মিনু ভাই, চার আনা পয়সা’। পয়সা পেলেই মোড়ের দোকানমুখো হাঁটা দিতেন। একদিন পয়সা দিতে পারিনি, দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন। দেখি, সিগারেট হাতে এক পথচারীর পেছন পেছন হাঁটছেন দ্রুত। মোড়ে গিয়ে ভদ্রলোক শেষ হয়ে আসা সিগারেটের টুকরাটা ফেলে দিতেই বুভুক্ষুর মতো ছুটে গিয়ে তুলে নিয়ে ছোট ছোট টান দিতে দিতে ডাইনে ঘুরে হাঁটতে শুরু করলেন। হয়তো প্রেসক্লাবের পথে। হ্যাঁ, তখনকার দিনের কলেজের লেকচারার আর সাংবাদিকের সংসারের দশা এমনই ছিল যে দৈনিক বাড়তি চার আনা পয়সা সাবের ভাইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার মুরোদ হতো না। অবশ্য লাভও ছিল না তাতে, কারণ ধোঁয়া করে উড়িয়ে দেওয়ার জন্যই তো ওই পয়সা কটি চাওয়া। মাসের শেষ কয়েক দিন দিনপিছু বারো আনা কি জোর এক-দেড় টাকা বরাদ্দ ছিল বাসার বাজার বাবদ। চার আনা পয়সার দাম কম নয়। কাজে যাওয়ার রিকশাভাড়াও বাঁচিয়ে রাখতে হতো হিসাব কষে। সে-ও এক কাল গেছে।
ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে সংসার তখন। তাঁর বড় বড় নখ, খোঁচা খোঁচা দাড়ি, আর চিটচিটে ময়লা কাপড়-পরা মানুষটিকে নিয়ে ভয় হতে লাগল ক্রমে। গোসল করার কথা কানেই নিতেন না। হেঁটে গেলে দুর্গন্ধ ছড়াত। ব্যবহারের কাঁথাটি বেশ খানিকটা ছিঁড়ে গিয়েছিল, আর খানিক ছিঁড়ে তার ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে বসে রইলেন একদিন। ওই অবস্থায় হো হো করে হেসে উঠলেন। অবোধ পাগলের হাসি নয়, বিশ্বসংসারের প্রতি চরম বিদ্রূপের হাসি। সেই মুহূর্তে বিদ্রূপের লক্ষ্য হয়তো ছিলাম আমিই, আমার সাধ্য হয়নি তাঁকে উপযুক্ত বিছানাপত্র সরবরাহ করা।
জহুর হোসেন চৌধুরীর কাছে গিয়ে পরিস্থিতির কথা বললাম একদিন। তিনি দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলাপে বেশি মন দিলেন। বাস্তবিক, কেউ তখন আর সাবের ভাইয়ের দায়দায়িত্ব নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইত না। পাবনায় পাঠানোর কথা তুলেছিলাম তাঁর কাছে। সাবের ভাইকে দুবার পাবনার হেমায়েতপুরে দেওয়া হয়েছিল চিকিৎসার জন্য। আমাদের বাসা থেকেই নিয়ে যাওয়া হয় একবার।
তিন.
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের আগে আগে শেখ লুতফর রহমান ছায়ানটের ছেলেমেয়েদের একটি গণসংগীত শিখিয়েছিলেন, ‘ওরে মাঝি, দে নৌকা ছেড়ে’। সাবের ভাইয়ের লেখা গান। ১৯৬৭ সালেই নাকি লুতফর ভাইকে কথাগুলো দিয়ে, সুর করতে বলেছিলেন সাবের ভাই। ‘মাঝি’ বলতে নাকি বুঝিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি তখন অত্যন্ত সরব। অবিসংবাদী নেতা হয়ে উঠছেন ক্রমে। আগরতলা মামলা ডিসমিস হয়ে যাওয়ার পর একদিন, প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে গীতিকার আর সুরকারে মিলে গানখানি শেখ সাহেবের উদ্দেশে উৎসর্গ করেছিলেন মুখে মুখে। এসব কথা শুনেছি লুতফর ভাইয়ের কাছ থেকে। যে সময়ের কথা হচ্ছে, তখন সাবের ভাইকে সুস্থ বলে গণ্য করে না কেউ, অথচ এমন গানের বাণী রচনা করছেন তখনো।
আমাদের বাসা ছেড়ে তখন সংবাদ অফিসের ঘরেই তাঁর রাত্রিবাস চলছিল। পারিপার্শ্বের ব্যাপারে সচেতনতা ছিল তাঁর, আবার কেমন করে যে স্বাভাবিকতার সুতোটির ওপারে চলে যেতেন তিনি, তা কে জানে! লুতফর ভাই বলেন, অনেক আগে সাবের ভাইয়ের লেখা আরও একটি কবিতাতে সুর দিয়ে গানখানি তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের কোনো অনুষ্ঠানে গেয়েছিলেন। বেশ দীর্ঘ ছিল কবিতাটি। গানের শেষে সেদিন সাবের ভাই গায়ককে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন পরম আবেগে। গানটির প্রথম চরণ, ‘হাত মিলাও, হাত মিলাও, হাত মিলাও। এশিয়ার দেশ হাত মিলাও’। ‘ওরে মাঝি’ লেখা হয়েছিল গান হিসেবেই, আর ‘হাত মিলাও’ নাকি মূলত ছিল কবিতা। কিন্তু সে গানের বাণী লুতফর ভাইয়ের এখন আর মনে নেই।
বাংলা একাডেমি থেকে শহীদ সাবের রচনাবলী বেরিয়েছে, তাতে সাবের ভাইয়ের উল্লিখিত গান দুটি নেই দেখছি। তাই এই সুযোগে ‘ওরে মাঝি’ গানটি উদ্ধৃত করি। এর আগের বছরের নববর্ষে এই গানখানি আমরা রমনার প্রভাতি অনুষ্ঠানে গেয়েছি।
ওরে মাঝি, দে নৌকা ছেড়ে
দে নৌকা ছেড়ে, ছেড়ে দে।
আকাশে ডাকে যদি দেয়া ঘন ঘন
ঝোড়ো হাওয়া বয় যদি বয় অনুক্ষণ
বজ্রেরি গরজন, বজ্রেরি গরজনে
দশদিক কম্পিত ছিন্ন,
তবু তোর পথ নেই বেয়ে চলা ভিন্ন।
তুই পাড়ি দিবি আজ তোর বুকে বুক বেঁধে।।
ঘনাক আঁধার তাতে ভয় কিরে তোর ভয় কি
পড়ে-থাকা সে তো মরে থাকা নয় কি নয় কি?
তুই নবজীবনের নব যাত্রী
তোর কিবা দিন কিবা রাত্রি!
সম্মুখে তোর উত্তাল ঢেউ
করতালে গর্জাক বিদ্যুৎ চমকাক
তুই নিঃশঙ্কায় তোর নৌকায় দে পাল তুলে।।সারা জীবন স্নানের প্রসঙ্গ এড়িয়ে চললেও শেষ পর্যন্ত দিব্যি নিঃশঙ্কায় তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন অগ্নিস্নান। পাল তুলে দিয়েছেন তাঁর নৌকায় জীবননদীর ওপারে পৌঁছানোর জন্য।
সৌজন্য: রশীদ হায়দার সম্পাদিত স্মৃতি ’৭১ এবং প্রেস ইন্সটিটিউট অফ বাংলাদেশ
স্কেচ সৌজন্য: মাসুক হেলাল ও প্রথম আলো
বাঙালীয়ানা/এসএল