সমুদ্রে যেয়ো না একা
সমুদ্র তোমাকে দেখে কেমন ঋষির মতো শান্ত হয়ে গেছে
তোমার চরণ ছোঁবে বলে কী আকুলতা তার ধাবমান জলের বুকে।
তুমি একা গেছো বলে সমুদ্র কেমন উতলা হয়েছে দেখো
আশেপাশের মানুষজনের কথা আর কী বলবো?
আমাকে রেখে তুমি আর একা একা সমুদ্রে যেয়ো না
এর চেয়ে বরং তুমি আমার শহরেই থেকো
আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষিকার মতো
আমারে শিখাও তুমি প্রেমের নিষিদ্ধ পাঠ!
সঞ্চিত মুদ্রায় অচিরেই আমরা একটা সমুদ্র,
একটা পাহাড় এবং এক আকাশ জ্যোৎস্না কিনবো
তারপর দুজনে গৃহবন্দী হবো,
কখনো পেরোবো না আর সদর দরজার চৌকাঠ।
তুমি আর কখনো একা সমুদ্রে যেয়ো না।

তুমি আমার অনন্য বিষাদ
মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তোমার কথা মনে পড়ে
তোমার ফেসবুক টাইমলাইন তন্নতন্ন করে খুঁজি।
আজ দিনটা তোমার কেমন কাটলো?
দুপুরে কী দিয়ে ভাত খেলে?
বিকেলে কার সাথে ঘুরতে গিয়েছিলে?
কী রঙের শাড়ি পরেছিলে? কপালে কি
হাতে তৈরি রিক্সা পেইন্টের টিপ ছিল?
গতকাল সন্ধ্যায় মানুষের ভীড়ে গিয়েছিলে কেন?
মুখে তখন তোমার মাস্ক ছিল না যে!
এই করোনার কালে কেন এমন আত্মঘাতী সাহস দেখাও?
তোমার কিছু হলে আমি জীবন্মৃত হয়ে যাবো, আমি
বাঁচবো না। তুমি এই সত্যটুকু আজো বুঝতে পারো না?
মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়, আমার তোমার কথা মনে পড়ে
তুমি আমার সারা জীবনের অনন্য এক বিষাদের নাম।

অগ্নিভেজা ফাগুন
যে মানুষটা ফিরে যায় গৃহে শেষ হলে মধুপান
আমার কবিতায় কী করে আমি লিখি তার জয়গান?
তবু কেন তোর তীরের পানে উছলে পড়ে ঢেউ
অংক কষে দেখিস তো সে ছিল কি তোর কেউ!
শহর জুড়ে হাওয়ায় ওড়ে স্মৃতির ধুলোবালি
বুকের ভেতর মরু-ঝড় লাগছে ভীষণ খালি
একটি বিকেল না হয় আমার কাঁধেই রেখে মাথা
চোখের জলে দিস ভিজিয়ে পদ্য লেখার খাতা।
তরুণী তোর পাহাড় যুগল এবং জলাশয়
সেইখানেতে জমা রেখেছি সমূহ বরাভয়
এবার তুই বর্ষাতেই জ্বালাস তোর আগুন
শ্রাবণেই নামুক ধরায় অগ্নিভেজা ফাগুন।

শানে নযুল
আমাদের কোনদিন কথা হবে না, দেখা হবে না। দেখা হবার দিনে যানজটে নগরী অচল হয়ে গেলে আপনি মাঝপথ থেকে ফিরে যাবেন। ফিরে গিয়ে আপনার লেখার টেবিলে বসে একটা কষ্টের কবিতা লিখে ফেলবেন। ফেসবুকে সেই কবিতা পড়ে পাঠকেরা সব অভিভূত হবে। অথচ আপনি আর কখনো তুমি হবেন না। পাঠকও জানবে না আপনার কবিতার শানে নযুল।
এটাই নিয়তি। তবু ভালো থাকবেন। কবির ভালোবাসায় থাকবেন।

শরাব
আমি বেহেশতে যেতে চাই
কারণ সেখানে উন্নতমানের পানশালা আছে।

আলোকিত অন্ধকার
তোমার অবাধ্য সাহস যে আলোকে চিনে নেয়
সে আসলে কতটা আলোকিত
নাকি আলোর মুখোশে আরো বেশী গাঢ় অন্ধকার?
শব্দের শৃঙ্খলে কবি তোমাকে বেঁধেছে
ভ্রমণের প্রলোভনে নিয়ে গেছে দূরের পল্লীতে
সাদা বরফের খেলায় ছুঁয়েছে তোমার দুহাত
শীতার্ত সন্ধ্যার কটেজে জ্বলেছে দাউ দাউ অগ্নি।
তুমি কার সাথে যাও আলো-আঁধারির রেস্তোরায়
নিশীথের ট্রেনে কে কবিতা শোনানোর ছল করে
জানালার কাঁচ ভেদ করে আসা চাঁদের আলোয়
আর্দ্র করে তোলে তোমার সযত্নে সাজানো শুভ্র উঠোন?
তরুণী বোঝেনি তবু কবি সেই আলো
মুখোশের আড়ালে লুকোনো আলোকিত অন্ধকার!

চুমুপোকা
– তোমার ঠোঁটে কীসের দাগ
পোকায় কেটেছে বুঝি?
– হুম, তুমি যখন চুমুপোকা হয়ে কাটো!

কেমন আছো হেমলতা?
আজো রয়ে গেছো তুমি দূরের বালিকা
মধ্যসমুদ্রে দূর থেকে দেখা বাতিঘর
আমি তোমার যতটা আপন
তার চেয়ে অনেক বেশি করে রেখেছো পর!
তুমি কেমন আছো হেমলতা?
আমাদের যৌথ বিকেলগুলো আর ফুল হয়ে
বেইলি রোডের ফুটপাত জুড়ে ফুটে থাকে না।
কিছু ভালোবাসা তাই অভিমানে
সিদ্ধেশ্বরীর গলিতে আত্মাহুতি দিয়ে
শেষমেষ মিশে গেছে মন্দিরের সান্ধ্য ইবাদতে।
তুমি ভালো থেকো হেমলতা
তোমার ঠোঁটজোড়া ছুঁয়ে নাইবা নামলো
রাত্রির উথাল-পাতাল ঝড়।

লেখক:
আবুল হাসনাৎ মিল্টন, কবি, প্রাবন্ধিক, চিকিৎসা গবেষক ও শিক্ষক