শেষ মুহূর্তে চন্দ্রযান-২ বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে মুষড়ে পড়েন ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর চেয়ারম্যান ড. কে শিভান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্রন্দনরত শিভান জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন।
ইসরোর প্রধানকে সারা ভারত থেকে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সান্ত্বনা দিয়ে নতুন ভাবে উৎসাহ দিয়েছেন অভিযান অব্যহত রাখতে।
প্রিয়জন থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা এক কাশ্মীরি যিনি একটি ইংরেজি পোর্টালের thequint.com এর সিটিজেন জার্নালিস্ট, ফাইজান বুখারি লিখেছেন, ‘প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারা কতটা যন্ত্রণা ও কষ্টের তা জানি। আমি আমার চাঁদ- আমার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।’
‘স্বজন বিচ্ছিন্ন’ ওই কাশ্মীরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কাশ্মীরিদের যন্ত্রণা ফুটিয়ে তুলে ইসরো প্রধানকে খোলা চিঠি যে দেন:
সুপ্রিয় ড. কে শিভান,
প্রথমেই আপনাকে এবং আপনার সহকর্মীদের অনেক অভিনন্দন, এমন একটি বড় মাপের সাফল্যের জন্য। চন্দ্রযান ২’র সাফল্যের জন্য আপনারা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণের কয়েক মিনিট যখন বাকি তখনই দুর্ভাগ্যবশত চন্দ্রযান বিক্রমের সঙ্গে গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
আমি জানি, আপনি আপনার দেশকে গর্বিত করতে চেয়েছিলেন! কে না চায়? এও জানি। যে এত কাছে থেকেও কাছের কারোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তা কতটা কষ্টকর। আমি খুব ভাল করেই তা বুঝতে পারছি। আমিও আমার ‘চাঁদ’ আমার মায়ের সাথে গত একমাস কোনও যোগাযোগ করতে পারিনি। উনি জম্মু-কাশ্মীরের বাদগামে থাকেন এবং গত কয়েক সপ্তাহে একবারও ওঁর সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।
আপনি একজন বড় বিজ্ঞানী, আপনি জানেন কীভাবে সবটা সামলাতে হবে। তা সত্ত্বেও কেমন ভেঙে পড়লেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে। ঠিকই, যখন কাছের কারোর (কোনও কিছুর) সঙ্গে যোগাযোগ করা না যায় তখন সত্যিই তা খুবই বেদনাদায়ক।
স্যার, একটা কথা অবশ্যই বলতে চাই, আপনি খুব ভাগ্যবান। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং সান্ত্বনা দিলেন ও আশ্বাসও দিলেন যে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমায় দেখুন, কতটা হতভাগ্য আমি! একমাসের বেশি হতে চলল আমি আমার পরিবারের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছি। এখনও পর্যন্ত কেউ আমায় সান্ত্বনা দিতেও এলেন না।
শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী একটি শব্দও খরচ করেননি আমাদের মতো মানুষের জন্য, যাঁরা নিজের পরিজনদের কোনও খোঁজই পাচ্ছেন না। স্যার যাই হোক আপনি আর আমি একই নৌকার সওয়ারি।
আপনি বলেছেন, ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করার সব রকমের চেষ্টা করছেন। আমিও একমাস ধরে খুব চেষ্টা করছি একবার মা-বাবার সঙ্গে অন্তত কথা বলার।
এই মুহূর্তে ভীষণভাবে মনে হচ্ছে, ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করার যতরকমের সুযোগ আপনি পাচ্ছেন আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার চেয়ে তা অনেক বেশি। স্যার, জানেন সবচেয়ে বেশি কষ্ট কখন হয়? যখন আপনার দেশের মানুষজনই আপনার প্রতি কোন সহানুভূতি দেখান না কিংবা সান্ত্বনাও দেন না।
স্যার, আমি আবার বলছি আপনি খুব ভাগ্যবান কারণ আপনি যখন জানালেন যে বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে আপনার, তখন সোশ্যাল মিডিয়া ভরে উঠেছে উৎসাহবার্তায়, সমর্থনে।
আর আমি এখানে একা বসে আপনাকে চিঠি লিখছি…
বাঙালীয়ানা/এসএল