ইরাজ আহমেদের ৪টি কবিতা

Comments

আর কোনো ইচ্ছে নেই

ভোরবেলা রেডিও খুলে জানতে পারি
এবার শীতের পকেটে হাত গুঁজে চলে যেতে হবে।
চেয়ে দেখি, দাদু অক্টোপাসের মতো
অনেক হাতে জড়িয়ে ধরতে চাইছে আমাকে
চুল আঁচড়ে দেবে বলে
বাবা একটা চিরুনি হাতে দাঁড়িয়ে- এত ভিড়ে খুঁজে পাবে আমাকে আবার?
কী আগুন জ্বেলেছো গুনিন
ছাই হয়ে যায় পশুপাখি,
সমুদ্রের তীরে ঝাউগাছ,
মাটির তৈরি পিঁপড়া!
ভোরবেলা রেডিও খুলে জানতে পারি
শরীরে আর কোনো জন্ম নেই
আর কোনো বৃষ্টি নেই
আর কোনো অসুখ নেই আমার।
পাশ ফিরে শুয়ে ক্লান্তি দেখি
পাতা ঝরে গেছে দেখি,
                 রাশি
                      রাশি
                          পাতা।

জানুয়ারী-২০২২

তোমার শীতকাল নেই

আজকাল আমার অনেক ভুলভাল হয়,
ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টাতে গিয়ে দেখি বৃষ্টি পড়ছে।
চিঠি লিখেছো,
তাতেও বৃষ্টি;
তোমাদের শীতকাল নেই?
কবিতার পাশ ঘেঁষে কত লোক হেঁটে যায় প্রতিদিন
কয়েক লাইনের মধ্যবর্তী মাইলের পর মাইল শূন্যতা কাকে ডাকে?
পকেটের সিগারেট একজন বেকারের চেয়েও পরিশ্রমী;
পোড়ানোর আয়োজনে যত্নে পুড়ছে আবার।
আজকাল আমার অনেক ভুলভাল হয়,
কবিদের শরীরে অনেক দাগ থাকে;
কী অসহায় আমি, চিনতে পারি না!
তুমি একটা বই লিখেছো,
আগুন লিখেছো,
কুয়াশা লিখেছো,
পুরো একটা রেলস্টশন জুড়ে লিখেছো না- ফেরার গল্প
তবু দেখি বৃষ্টি নেমেছে চোখ জুড়ানো।
তোমার শীতকাল নেই?
ভোরবেলা ডাকতে গিয়ে দেখি
বৃষ্টি পড়ছে!

জানুয়ারি- ২০২২

আমার মনে হয়েছিলো

আমার প্রথমে মনে হয়েছিলো সন্ধ্যাবেলা কিছুই করার নেই
তারপর তাকিয়ে দেখি একটা পিঁপড়া খুব শান্ত ভঙ্গিতে
গাছ বদল করলো!
আমার প্রথমে মনে হয়েছিলো এই হেমন্তকালের রাতে
শার্টের পকেটে অনেকটা অন্ধকার ছাড়া
আর কিছু অবশিষ্ট নেই
তারপর তাকিয়ে দেখি জুয়ার বোর্ডে সযত্নে তাস বেটে রাখছে কেউ!
আমার প্রথম মনে হয়েছিলো পাশ ফিরতে গিয়ে হঠাৎ
ঘুম ভেঙে গেছে অচেনা সাপের
তারপর তাকিয়ে দেখি মানুষ আছে!
আমার প্রথমে মনে হয়েছিলো আকাশের পুরোটাই
অদ্ভুত কৌশলে সেলাই করা আবহাওয়ার পূর্বাভাস আর
অমলিন দুঃখ
তারপর তাকিয়ে দেখি ক্যান্সারে আক্রান্ত বন্ধুর মতো
আমারও মুঠো মুঠো চুল পড়ে যাচ্ছে!
আমার প্রথমে মনে হয়েছিলো এসব রাত্রি মাথার ওপর দু’হাত তুলে দাঁড়ানো; অসহায়, একা
তারপর তাকিয়ে দেখি অচেনা হাসপাতালের করিডোরে
আমি নিজেকেই বিক্রি করছি এক বোতল দেশী মদের দামে!
তুমি আশ্চর্য হয়েছো দেখে?

আমি শুধু নিজেকে ফিরিয়ে নিয়েছি এমন সব রাত্রি থেকে।

নভেম্বর-২০২১

কবি

আমার যখন খুব ক্ষুধা পায়
আকাশের বিছানা বালিশ বিক্রি করে দিয়ে টাকা জোগাড় করি
আমি নক্ষত্র মেখে ভাত খাই
এঁটো হাতে লেগে থাকে ঠাণ্ডা মেঘ।
আমার যখন খুব শীত করে;
বেঁচে থাকার আশা থাকে না আর
লোহার কারখানার আগুনকে ডেকে বলি,
মুদ্রণপ্রমাদের মত এই যে এত শব্দ পুড়ছে আমার শরীরে
তাকে বাঁচাও,
শীতে জামা দাও
ছত্রভঙ্গ বাতাসে ধরানোর মতো সিগারেট দাও।
আমার চোখে যখন নেশার ধারণা পাল্টানো সন্ধ্যা
দাঁড়ায় পুলিশের গাড়ির মতোন ফুটপাত ঘেঁষে;
কী ভয়ংকর ভঙ্গিতে তখন দুলতে থাকে আমার হাত
চশমায় বৃষ্টি বাজে ধরণের অ্যাক্সিডেন্টের গল্প!
আমার শার্টের পকেটে ধুতুরার বীজ লকলক করে
যখন খুব একা থাকতে ইচ্ছে করে
আমি ধারালো ব্লেড টেনে গলা কেটে দেখি রক্তপাত।
আমার খুব ক্ষুধা পায়
আমার খুব শীত করে
আমি জানি, আমার অনুপস্থিতির গল্প
ভাসতে থাকবে শীতের বাতাসে।

নভেম্বর-২০২১

লেখক:
Iraz Ahmed
ইরাজ আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.

About Author

বাঙালীয়ানা স্টাফ করসপন্ডেন্ট