রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেয়া ‘ভারতবন্ধু’ উপাধিটি অতি বিস্তৃত। কারণ তিনি ভারতের অনেক ভাষাভাষী মানুষের কল্যাণের জন্য অবিস্মরণীয় কাজ ক’রে গিয়েছেন। এই প্রবন্ধের নামকরণে স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, এখানে শুধু বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কল্যাণে তিনি যে কাজগুলো ক’রে গিয়েছেন, তা নিয়েই আলোচনা করা হবে। উইলিয়াম কেরী ভারতবর্ষে এসেছিলেন একজন মিশনারি হিসেবে। কিন্তু তাঁর মিশনারি দর্শন তাঁকে তথাকথিত মিশনারি হিসেবে আলোকিত করতে পারেনি। তিনি এদেশের সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে পিছিয়ে-থাকা-জনিত যে দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা, নিপীড়ন, অত্যাচার, চিন্তা-ভাবনার দীনতা, দরিদ্রতার চিত্র অবলোকন করেছেন, তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সেই মানুষগুলোর মুক্তির প্রয়াসকে প্রাথমিক কাজ মনে ক’রে এগিয়ে এসেছেন। তিনি মনে করলেন, মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে খ্রীষ্টকে প্রচার করা অন্যায়। মানুষকে ভালোবেসে তার দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকতে পারলে, তার উন্নতিতে সহযোগী হতে পারলে সেটিই হবে খ্রীষ্টের প্রচার। তাই হয়ত তিনি তথাকথিত মিশনারি হিসেবে সার্থক নন।
বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, একচল্লিশ বছরের কার্যকালে উইলিয়াম কেরী সর্বসাকুল্যে মাত্র সাতশ থেকে আটশ জন মানুষকে খ্রীষ্টধর্মে আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন। হয়ত তাঁর কাজ এবং একনিষ্ঠতায় প্রভাবিত হয়ে উল্লিখিত সংখ্যক ব্যক্তি ধর্মান্তরিত হয়ে থাকতে পারেন। উইলিয়াম কেরীর কার্যকলাপে হোম কমিটি অর্থাৎ ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটি (বি.এম.এস) সন্তুষ্ট হতে পারেনি। সম্ভবত ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দের শুরুতেই হোম কমিটির সাথে উইলিয়াম কেরীর সংঘাত সৃষ্টি হয়।
তিনি এতটাই বাংলা ভাষা ও এর মানুষের জন্য নিবেদিত ছিলেন, যে হয়ে উঠেছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি। উইলিয়াম কেরী ভারতে এসেছিলেন ধর্মপ্রচারে। তাই প্রয়োজনের তাগিদে এদেশের ভাষা তাঁকে শিখতে হয়েছিল। কিন্তু বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি মমত্ব ও প্রেম তাঁকে তাঁর আরাধ্য উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এই প্রবন্ধে তাঁর ধর্মপ্রচারের বিষয়টি মৌলিক আলোচ্য বিষয় নয়। বরং মানুষ উইলিয়াম কেরী বাংলা নবজাগরণের প্রাক্কালে বাঙালি জাতির জন্য কী-কী স্মরণযোগ্য অবদান রেখে গিয়েছেন – তারই আলোকপাত বাঞ্ছনীয়।
উইলিয়াম কেরী ১৭ আগস্ট, ১৭৬১ খ্রীষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের নর্দাম্পটনশায়ারের পলার্সপিউরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা এডমন্ড কেরী ও মা এলিজাবেথ উইলসন। এডমন্ড কেরী একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন। তাঁর পরিবার অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ছিল না। এমনটিই বলা চলে যে, উইলিয়াম কেরী অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন। উইলিয়াম কেরী তিনজন নারীকে বিয়ে করেন। এরা হলেন ডরথী প্লাকেট, শালর্ট ইমিলিয়া রুমর এবং গ্রেস হিউজেস। এই তিন স্ত্রীর গর্ভে সাত সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান ফেলিক্স কেরী ভারতবর্ষে সুদীর্ঘকাল পিতার সাথে কাজ করেছেন।
উইলিয়াম কেরী ছোটবেলা থেকেই কিছু জানার আকাঙ্ক্ষায় ভিন্ন ভাষা শেখায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। যুবক বয়সে তিনি গ্রিক, হিব্রু ও ল্যাটিন ভাষা আয়ত্ত করেন। কৃষি, প্রকৃতি প্রেম ছিল কেরীর আগ্রহের বিষয়। সেই শিশুকাল থেকেই তিনি অত্যন্ত বিনয়ী এবং নম্র স্বভাবের ছিলেন। উইলিয়াম কেরী পারিবারিকভাবে চার্চ অব ইংল্যান্ডের সদস্য ছিলেন। কিন্তু টমাস জোনস্ নামে এক লোকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজ চার্চ ত্যাগ ক’রে গোড়া সম্প্রদায় নন-কনফরমিস্টভুক্ত হন। তিনি কিছুদিন এক মুচি কারখানায় জুতা তৈরি ও মেরামতের কাজে যোগ দেন। অতঃপর সেখানেও তিনি মনিবের মৃত্যুর কারণে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। উইলিয়াম কেরী ১৭৮৩ খ্রীষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে এক ব্যাপ্টিষ্ট পালকের কাছে জলে অবগাহণের মাধ্যমে ব্যাপ্টিষ্ট সম্প্রদায়ভুক্ত হন এবং তার কিছু বছর পর যাজক হিসেবে কেরীর আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেই সময় থেকেই কেরী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবহেলিত মানুষের কাছে খ্রীষ্টের বাণী পৌঁছে-দেয়ার মানসে মিশন গঠনের চিন্তা করেন এবং ২ অক্টোবর, ১৭৯২ তারিখে ব্যাপ্টিষ্ট মিশনারি সোসাইটি গঠিত হয়। হোম কমিটির কাছে উইলিয়াম কেরী আফ্রিকায় যাওয়ার মনোবাসনা ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি ডাক্তার টমাস নামে এক লোকের সাক্ষাৎ পান। তিনি কেরীকে ভারতের দুঃখ-দুর্দশা এবং সামাজিক অনাচারের কথা শোনান। কারণ ডাক্তার টমাস ইতিপূর্বে ভারতে এসেছিলেন। তাঁর বাসনা ছিল খ্রীষ্টধর্ম প্রচার করবেন। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। তবে টমাস বাংলা শিখেছিলেন। সোসাইটির সভায় অনেক আলাপ-আলোচনা শেষে স্থির হয় টমাস এবং কেরী খ্রীষ্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতে যাবেন। অতঃপর জুন মাসের ১৩ তারিখ ১৭৯৩ খ্রীষ্টাব্দে তাঁরা ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন এবং ১৭৯৩ খ্রীষ্টাব্দের নভেম্বর মাসের ১১ তারিখ বাংলার মাটিতে পা রাখেন। এখানে উল্লেখ্য যে, উইলিয়াম কেরী ডাক্তার টমাসের কাছ থেকে যাত্রাপথে জাহাজে বসে বাংলা ভাষা শেখা শুরু করেন।
সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে উইলিয়াম কেরী ছিলেন একজন পথিকৃৎ। তিনি কলকাতা থেকে দিনাজপুরের মদনাবাটী এসে নিজের চোখে দেখলেন, কী ক’রে একজন সদ্য স্বামীহারা বিধবাকে স্বামীর সাথে চিতায় উঠিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এই দৃশ্য দেখে তিনি মর্মাহত হন। কেরী নিরলসভাবে দীর্ঘ বছর মানুষকে উদ্বুদ্ধ ক’রে যান। শ্রীরামপুর মিশন থেকে পরিচালিত তাঁর ‘সমাচার দর্পণ’ পত্রিকায় নিয়মিত সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে লিখে যান। তিনি নিয়মিতভাবে যেখানে-যেখানে সতীদাহের খবর পেয়েছেন, রিপোর্ট আকারে তা ‘সমাচার দর্পণে’ প্রকাশ করেছেন। কেরী ১৮০৩ খ্রীষ্টাব্দে ফোর্ট উইলয়াম কলেজের এক সভায় সতীদাহ প্রথা বন্ধে প্রচার চালান, যেহেতু তিনি সেই সময় ওই কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডের জনগণকে প্রভাবিত এবং উদ্বুদ্ধ করার জন্য লিখিত আর্জি প্রেরণ করেন। সেখানকার পার্লামেন্টেও তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট জমা দেন।
১৮২৮ খ্রীষ্টাব্দে শ্রীরামপুর কলেজে কেরী এক সভার আয়োজন করেন। সেখানে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ নিমন্ত্রিত হন। কেরীর নিরলস প্রচেষ্টা এবং রাজা রামমোহন রায় ও দ্বারকানাথ ঠাকুরদের মতো সমাজ হিতৈষীগণের সমর্থন ও প্রচেষ্টায় ডিসেম্বর মাসের ৪ তারিখ ১৮২৯ খ্রীষ্টাব্দে লর্ড বেন্টিংক সতীদাহ প্রথাকে আইন বিরুদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করেন। ইংরেজিতে লেখা এই আইনটি কেরীর কাছে এলে তিনি এটিকে একটি মহৎ কাজ হিসেবে বিবেচনা ক’রে সাথে-সাথে বাংলায় অনুবাদ করেন এবং তা একটি বাংলা পত্রিকায় গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
উইলিয়াম কেরীর দীর্ঘ বছরের নিরলস পরিশ্রম, প্রচেষ্টা ও এদেশীয় মুক্তমনা ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় অবশেষে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বাংলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষে সতীদাহ প্রথার মতো একটি অমানবিক সামাজিক আচারের বিলুপ্তি ঘটে।
শিশু হত্যাও উইলিয়াম কেরীকে মারাত্মকভাবে বিচলিত করে এবং তিনি এই ঘটনায় প্রচণ্ডভাবে মর্মাহত হন। গঙ্গার মোহনায় শিশু বিসর্জনের পিছনে সেই কালে পারিবারিক ও সামাজিক অনেক যুক্তি পরিলক্ষিত হয়েছে। সেই যুক্তির পরে যে কাজ সম্পাদন হতো, তা ছিল অমানবিক, পৈশাচিক। সুতরাং কেরী মনে করলেন, গঙ্গায় শিশু হত্যা বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে তিনি ঘনিষ্ঠজন জর্জ উডনীর স্মরণাপন্ন হন। উডনীর সহযোগিতায় লর্ড ওয়েলেসলীর নির্দেশনায় কেরী এই শিশু হত্যার ধর্মীয় দিক নিয়ে খোঁজ-খবর সংগ্রহ করতে থাকেন। অতঃপর তিনি তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তার ভিত্তিতে লর্ড ওয়েলেসলী ১৮০২ খ্রীষ্টাব্দের আগস্ট মাসের ২০ তারিখ এক আইন জারি করেন।
বাংলায় কুষ্ঠ ছিল একটি অস্পৃশ্য রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যেখানে-যেখানে কুষ্ঠ হয়েছে, তা নির্মমভাবে কেটে ফেলা হতো। কখনো-কখনো পুড়িয়ে মারা হতো। কেরী ‘সমাজদর্পণ’ এবং ইংরেজি পত্রিকা ‘ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস পান। তিনি ১৮১২ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতায় স্থাপন করেন কুষ্ঠ হাসপাতাল। হাসপাতাল নির্মাণে অনেকেই কেরীকে অর্থ ও জমি দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।
এছাড়াও চড়ক পূজা, পুণ্যলাভে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও সন্ন্যাসীদের সাগরে ঝাঁপ দেয়া, গলায় কলসি বেঁধে প্রাণ বিসর্জন, দাস-প্রথা – এরকম আরো অনেক কুপ্রথা ও হত্যার বিরুদ্ধে উইলিয়াম কেরী ছিলেন সোচ্চার। ধর্মে ব্যাখ্যা নেই – এমন অনেক বর্বরতা ও হত্যাকাণ্ড উইলিয়াম কেরীর প্রচেষ্টায় এবং এদেশের উদার ব্যক্তিগণের সক্রিয় ভূমিকায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আইনের মাধ্যমে বন্ধ হয়েছিল।
উইলিয়াম কেরী ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে শ্রীরামপুর মিশনে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করেন। পঞ্চানন কর্মকারের সহযোগিতায় এই প্রেসের বাংলা হরফ ঢালাই কারখানা স্থাপিত হয়। কেরী, পঞ্চানন এবং ওয়ার্ডের প্রচেষ্টায় এদেশে স্থাপিত হয় হরফ ঢালাই কারখানা। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ এই প্রেস-এর কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তি প্রসারিত করার জন্য কলেজের পাঠ্যপুস্তক, ব্যাকরণ, বাঙালির সহজপাঠ্য অনুবাদ ইত্যাদি মুদ্রণের কাজ দিয়ে সহযোগিতা করেছিল। মুদ্রণযন্ত্রের কাগজ আনা হতো বিদেশ থেকে অথবা হাতে তৈরি কাগজ ব্যবহার করা হতো। এই কাগজের দাম অনেক ছিল। তাই কেরী হস্তচালিত যন্ত্রের মাধ্যমে কাগজ তৈরি করা আরম্ভ করলে খরচ অনেক কমে যায়। বিলাতি কালি আসার পূর্ব পর্যন্ত শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে হাতে তৈরি কালি ব্যবহার করা হতো।
বলাবাহুল্য, শ্রীরামপুর মিশনের প্রেস বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক নতুন যুগের দ্বার উন্মোচিত ক’রে দেয়। এই প্রেস থেকে বাংলা ব্যাকরণ, অভিধান, পাঠ্যপুস্তক, প্রবন্ধ, অনুবাদ, পত্রিকাসহ নানাবিধ পুস্তক মুদ্রিত হয়েছে। হয়ত কেরী সাহেবের এই মুদ্রণযন্ত্রটি এদেশে প্রথম স্থাপিত কোনো যন্ত্র নয়, কিন্তু তিনি এর মাধ্যমে কর্মকাণ্ডের যে বিশালতা ঘটিয়েছিলেন, তা বাঙালি সমাজে একটি আন্দোলন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। সেই হিসেবে তিনি বাংলার মুদ্রণ জগতে একজন পথিকৃৎ, তা নিঃসন্দেহে সকলেই স্বীকার করবেন।
শ্রীরামপুর মিশনে প্রেস স্থাাপিত হওয়ায় সেখান থেকে বহু গ্রন্থ, পত্রিকা, পাঠ্যপুস্তক মুদ্রিত হয়েছে। তাঁর তত্ত্বাবধানে ‘দিগদর্শন’ ও ‘সমাচার দর্পণ’ নামে দুটি বাংলা সাময়িকী নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তাঁর উদ্যোগেই ১৮১৮ খ্রীষ্টাব্দে ‘ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া’ নামে একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এসব কাজের জন্য তাঁকে একজন সফল প্রকাশক বলা অন্যায় হবে না।
উইলিয়াম কেরীর জীবনে ১১ মার্চ, ১৮১২ খ্রীষ্টাব্দ তারিখটি অত্যন্ত কষ্ট ও বেদনার। ওই দিন সন্ধ্যায় প্রেসটি আগুনে পুড়ে যায়। সেখানে-রাখা কেরীর মহা মূল্যবান বহুভাষিক শব্দকোষ পাণ্ডুলিপি, তেলেগু ও শিখ ভাষার ব্যাকরণের পান্ডুলিপি, রামায়ণের ইংরেজি অনুবাদসহ আরও অনেক মূল্যবান পান্ডুলিপি পুড়ে যায়।
উইলিয়াম কেরীর ব্যাকরণ রচনা, অভিধান তৈরি, বাইবেল অনুবাদ, ‘ইতিহাসমালা’, ‘কথোপকথন’, পাঠ্যপুস্তক রচনা ও অনুবাদ ইত্যাদি কর্মকান্ডগুলো এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। ‘কথোপকথন’ গ্রন্থটি নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা থাকলেও মনে করা হয়, উইলিয়াম কেরী রচিত এই গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যে প্রথম প্রবন্ধ এবং একই সাথে নাটকের মর্যাদা লাভ করেছে, যেহেতু ‘কথোপকথন’ একটি সংলাপধর্মী প্রবন্ধ। আবার অনেকে বলে থাকেন, এর পূর্বেই তিনি বাইবেলের ‘মথি সুসমাচার’ বইটি অনুবাদ করেছেন, সুতরাং বাংলা সাহিত্যে ওটিই প্রথম প্রবন্ধ।
উইলিয়াম কেরীর অনুবাদ সাহিত্য ও বাংলা গদ্য – বাংলা ভাষার সূচনা-পর্ব বললে এতটুকু অত্যুক্তি হবে না। তিনি যখন বাংলা ভাষা রপ্ত করা শুরু করতে থাকলেন, তখন তিনি অনুধাবন করলেন যে, এ ভাষার নিজস্ব একটি সৌন্দর্য রয়েছে। ভাষাটি অত্যন্ত ঐশ্বর্যশালী এবং অনেক গভীরে এর শেকড় প্রোথিত রয়েছে। সেই সময় কিন্তু বাংলা ভাষার কোনো প্রমিত রূপ ছিল না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যদি প্রমিত বাংলার রূপকার হয়ে থাকে, তবে উইলিয়াম কেরী ছিলেন তার পথ প্রদর্শক।
কেরী এদেশের সাধারণ মানুষের জন্য মাতৃভাষায় ইতিহাস, অংক, বিজ্ঞান বিষয়ে সার্বজনীন শিক্ষা-বিস্তারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রবর্তক। দিনাজপুর এবং শ্রীরামপুরের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা-বিস্তারে এরকম অনেকগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। উইলিয়াম কেরী নারীদের প্রতি বঞ্চনা, অবহেলা এবং তাদের মূর্খতা অবলোকন ক’রে শ্রীরামপুর মিশনের স্কুলে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ তৈরি ক’রে দেন। সামাজিক বাধ্যবাধকতার কারণে সেখানে মেয়েদেরকে পর্দার আড়ালে রেখে শিক্ষা দেয়া হতো। অধ্যাপক সুশান্ত সরকার তাঁর গ্রন্থে এ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘এ দেশীয় সমাজে মেয়েদের শিক্ষা বোধ করি প্রথম প্রয়াস।’
উইলিয়াম কেরী ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। কলেজে যোগদান করেন ১৮০১ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসের ৪ তারিখ। তিনি সেখানে ছাত্রদের বাংলা, সংস্কৃত ও মারাঠি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। এই তিনটি ভাষায় অধ্যাপনা করতে গিয়ে তিনি পাঠ্যপুস্তকের অভাব অনুভব করেন। উইলিয়াম কেরী নিজে এবং কলেজের সহযোগী অধ্যাপকদেরকে দিয়ে পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় শ্রীরামপুর প্রেস থেকে ছাত্রদের জন্য পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করা হয়। ১৮১৮ খ্রীষ্টাব্দে উইলিয়াম কেরী, মার্শম্যান এবং ওয়ার্ড-এর প্রচেষ্টায় শ্রীরামপুর কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়। সার্বজনীন শিক্ষা-বিস্তারে এটি ভারতের দ্বিতীয় পুরাতন কলেজ।
উইলিয়াম কেরী নিতান্ত প্রয়োজনের তাগিদেই বিভিন্ন ভাষা শেখেননি। প্রয়োজনের পাশাপাশি জ্ঞানান্বেষণের জন্যও অনেক ভাষা শুধু কথা বলার জন্যই নয়, তিনি সেই ভাষার মূলে প্রবেশ করতে সচেষ্ট হয়েছেন এবং সার্থক হয়েছেন। তিনি যুবক বয়সে গ্রিক, হিব্রু ও ল্যাটিন ভাষা রপ্ত করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ইতালী, ফরাসি ও পর্তুগিজ ভাষা জানতেন। এদেশে আগমনকালে জাহাজে বসেই ডাক্তার টমাসের কাছ থেকে বাংলা ভাষা শিখছিলেন। তিনি সংস্কৃত, বাংলা, অসমীয়, উড়িয়া, পাঞ্জাবি, তেলেগু, মারাঠি ইত্যাদি ভাষা ভালোভাবে শিখে নিয়েই এসব ভাষায় ব্যাকরণ ও অভিধান রচনা করেছিলেন।
উইলিয়াম কেরী একজন অনুবাদক ছিলেন। তিনি ‘রামায়ণ’ ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। এবং বাইবেল বাংলা, উড়িয়া, অসমীয়, তেলেগু, মারাঠি ভাষায় অনুবাদ করেন। অনেকেই মনে ক’রে থাকেন যে, উইলিয়াম কেরী ভারতবর্ষে প্রথম অনুবাদক, যিনি ইংরেজি থেকে ভারতীয় ভাষায় এবং ভারতীয় ভাষা থেকে ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন পুস্তক অনুবাদ করেছেন।
অনেক বাংলা ভাষা গবেষক মনে ক’রে থাকেন যে, উইলিয়াম কেরী ‘কথোপকথন’ গ্রন্থটি এককভাবে রচনা করেননি। এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন রামরাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার প্রমুখ ব্যক্তি। কিন্তু ইতিহাস ঘেঁটে অধ্যাপক সুশান্ত সরকার দেখতে পেয়েছেন যে, ‘কথোপকথন’ গ্রন্থটির পরিকল্পনা, আয়োজন এবং সিংহভাগ সংলাপ রচনায় কেরীর কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। সুতরাং গ্রন্থকারের স্বত্ব তাঁরই প্রাপ্য। এরপর আসে কেরীর ‘ইতিহাসমালা’ প্রসঙ্গে। গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৮১২ খ্রীষ্টাব্দে। ‘ইতিহাসমালা’ মূলত অনেকগুলো গল্পের সমাহার। উইলিয়াম কেরীর নিজের দর্শন, কর্ম ও ভাবনা নিয়ে লিখেছেন ‘ইনকুয়ারি’ গ্রন্থ্।
উইলিয়াম কেরী এদেশে প্রথম আলু, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি বিদেশী সবজি বীজ মদনাবাটিতে নিজ বাগানে চাষ করেন এবং স্থানীয় লোকদের চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি বাংলা ও বিলেতের মধ্যে সবজি, ফল, বৃক্ষ জাতীয় বীজ ও গাছ আদান-প্রদান করেন। উইলিয়াম কেরী তাঁর শ্রীরামপুর কলেজে হর্টিকালচার উদ্যান স্থাপন করেন। তিনি ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দে লিনিয়ান সোসাইটির সদস্য হন। উইলিয়াম কেরী ১৮২৩ খ্রীষ্টাব্দে ‘অ্যাগ্রি-হর্টিকালচারাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮২৩ খ্রীষ্টাব্দে লন্ডন জিওলজিক্যাল সোসাইটি ও রয়্যাল অ্যাগ্রিকালচারাল সোসাইটির সদস্য হন। ১৮২৪ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ভারতের কৃষি সমিতির সভাপতি নিযুক্ত হন।
বাংলার দরিদ্র মানুষকে মহাজনের খপ্পর থেকে মুক্তির লক্ষ্যে উইলিয়াম কেরী ১৮১৯ খ্রীষ্টাব্দের ১ মার্চ প্রতিষ্ঠা করেন ‘শ্রীরামপুর সঞ্চয়ি ব্যাংক’। দরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় সহজ উপায়ে অর্থ লেনদেনের বোধ করি এটিই বাংলায় প্রথম প্রয়াস। এরপর প্রায় শত বছর পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে কৃষি ব্যাংক এবং আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ১৯০৮ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন সমবায় ব্যাংক এবং এরও প্রায় সত্তর-পঁচাত্তর বছর পর মোহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংক। যদিও কেরীর ব্যাংকটি ১৮২৪ খ্রীষ্টাব্দের দিকে বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজের কল্যাণে উইলিয়াম কেরীর আন্তরিকতার পরিচয় মেলে।
উইলিয়াম কেরী ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা এবং বাংলায় উপস্থিত হওয়া থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বেশ কয়েক জন বন্ধু, শুভাকাক্সক্ষী, সুহৃদ পেয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে ডাক্তার টমাস, রামরাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, জর্জ উডনী, মার্শম্যান, উইলিয়াম ওয়ার্ড, চার্লস মেটকাফ, বাটারওয়ার্থ বেইলি প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। রামরাম বসু কেরীর সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন। উইলিয়াম কেরীর সুখে-দুঃখে, অভাব-অনটনে এই রামরাম বসু সব সময়ের জন্য পাশে ছিলেন। শুধু পাশেই ছিলেন না, রামরাম বসু উইলিয়াম কেরীর সকল কাজে বন্ধু ও ভাইস্বরূপ ছিলেন।
উইলিয়াম কেরী ১৮০৬ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য হন। তিনি ১৮০৭ খ্রীষ্টাব্দে আমেরিকার ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ডিভাইনিটি উপাধি লাভ করেন। ১৮১৭ খ্রীষ্টব্দে কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি স্থাপিত হয়, পরিচালনা কমিটির ২৪ জন সদস্যের মধ্যে উইলিয়াম কেরী এর প্রধান নিযুক্ত হন। ১৮২৬ খ্রীষ্টাব্দে সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য কেরীকে গ্র্যান্ট ইন এইড প্রদান করেন। এছাড়া তাঁর মৃত্যু-পরবর্তীকালে বহু দেশে কেরীর স্মরণে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন: উইলিয়াম কেরী খ্রীষ্টিয়ান স্কুল-সিডনি, অস্ট্রেলিয়া; উইলিয়াম কেরী ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (১৮৭৬)-ক্যালিফোর্নিয়া, আমেরিকা; উইলিয়াম কেরী ব্যাপ্টিষ্ট কলেজ-অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড; কেরী ব্যাপ্টিষ্ট গ্রামার স্কুল-মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া; কেরী কলেজ-কলম্বো, শ্রীলংকা; উইলিয়াম কেরী ইউনিভারসিটি (১৮৯২)-মিসিসিপি, আমেরিকা; কেরী ব্যাপ্টিষ্ট কলেজ-পার্থ, অস্ট্রেলিয়া; উইলিয়াম কেরী অ্যাকাডেমী-চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ; উইলিয়াম কেরী মেমোরিয়াল স্কুল-শ্রীরামপুর, হুগলী, ভারত; উইলিয়াম কেরী ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (২০০৮)-ঢাকা, বাংলাদেশ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
উইলিয়াম কেরীর স্মরণে দিল্লির ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল সায়েন্স কমপ্লেক্সে একটি ম্যুরাল এবং বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ সংঘ (বিবিসিএস), মিরপুরস্থ চত্বরে উইলিয়াম কেরীর স্মরণে একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে বিবিসিএস ভবনে উইলিয়াম কেরী লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়।
উইলিয়াম কেরী বলতেন, ‘ভারতবাসীর যাহা নিজের ও নির্দোষ, তাহা পরিত্যাগ করা কোনো মতেই কর্তব্য নহে।’ এই উক্তির মাধ্যমেই বোঝা যায়, তিনি কতখানি মানবিক ছিলেন। উইলিয়াম কেরীর শিশুকাল থেকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া, ভারতে আগমনের পথে প্রাথমিক প্রতিকূলতা, ভারত আগমনে যাত্রাপথে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জাগতিক বাধা-বিপত্তি, এমনকি বাংলার মাটিতে পদার্পণ করা থেকে বঙ্গে একচল্লিশ বছরের জীবনকাল মধুময় ছিল না। হোম কমিটি থেকে বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা, ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অসহযোগিতা, পারিবারিক দুঃখ-কষ্ট, এদেশে আগমন হেতু তাঁর প্রথম স্ত্রীর মানসিক বৈকল্য, অর্থাভাব জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে ছিল।
উইলিয়াম কেরী বাঙালি সমাজ এবং তাদের ভাষা ও সাহিত্যের (অনুবাদ, ব্যাকরণ, অভিধান, প্রবন্ধ, গল্প, সাময়িকী, গীত রচনা, শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণ, মুদ্রণ শিল্প, সমাজ সংস্কার, কৃষি, হর্টিকালচার, সমবায় ব্যাংক, ইত্যাদি) জগতে এক বিশাল ক্যানভাস সৃষ্টি ক’রে গিয়েছেন। ভাবতে অবাক লাগে, এক জীবনে এটি কেমন ক’রে সম্ভব হয়েছিল? কিন্তু বাঙালি হিসেবে তাঁকে জানার আগ্রহ নেই। তাঁকে জানতে হলে ব্যাপকভাবে উইলিয়াম কেরী সম্পর্কে প্রচারণা প্রয়োজন। বোধ করি, এখানেই ব্যক্তি ও জাতি হিসেবে আমরা উদাসীন।
উইলিয়াম কেরীকে লেডি হেস্টিংস ‘সদানন্দ’ বলে ডাকতেন। প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন একজন সদা উৎফুল্ল ও আনন্দ চিত্তের মানুষ। সব সময় তাঁর চিন্তা-চেতনা ও কাজে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হয়েছে। কোনো দিন তিনি হতোদ্যম হন নি। তিনি এদেশের মানুষকে ভালোবেসে তাদের ভালোবাসায় একজন প্রকৃত বাঙালি হয়ে উঠেছিলেন।
মহাত্মা কেরী ১৭৯৩ খ্রীষ্টাব্দে বাংলায় এসে আর কোনো দিন ইংল্যান্ডে ফিরে যাননি। তিনি ১৮৩৪ খ্রীষ্টাব্দের ৯ জুন ৭৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। শ্রীরামপুর কলেজ ক্যাম্পাসে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।
সজনীকান্ত দাস যথার্থই বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে কেরীর অপর সকল কীর্তিও যদি কোনো দিন নিঃশেষে বিলুপ্ত হয়, বাংলা সাহিত্য বাঁচিয়া থাকিলে তিনি স্বমহিমায় চিরদিন বাঁচিয়া থাকিবেন, কারণ তিনি সর্বপ্রথম প্রভূত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলা ভাষাকে ভদ্র ও শিক্ষিতজনের আলোচ্য ভাষার মর্যাদা দান করিয়াছিলেন।’
লেখক:

হিমু অধিকারী, কবি, গল্পকার এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক
তথ্যসূত্র:
১) উইলিয়াম কেরী – জীবন ও সাধনা, অধ্যাপক সুশান্ত সরকার, লেখক ও গবেষক
২) পাক্ষিক স্বর্গমর্ত, আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ২০০৬, জুন ২০১৩, আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ২০১৪, আগষ্ট ২০১৬
৩) উইলিয়াম কেরী উইকিপিডিয়া
*এই বিভাগে প্রকাশিত লেখার মতামত ও বানানরীতি লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাঙালীয়ানার সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকা অস্বাভাবিক নয়। তাই এখানে প্রকাশিত লেখা বা লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা সংক্রান্ত আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় বাঙালীয়ানার নেই। – সম্পাদক