উন্নত শিরে ঘরে ফিরলেন

Comments

পাকিস্তানী স্বৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সিপাহশালার জেনারেল টিক্কা খানের হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ল বাংলার মানুষের উপর।

বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে উঠল। শুরু হলো মরণপণ যুদ্ধ।

ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পাকবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ (এসএসজি) ৩ কমান্ডো কোম্পানি কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জেড এ খান এবং কোম্পানি কমান্ডার মেজর বিলাল রানা আহমেদ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অজ্ঞাত স্থানে। সেখান থেকে ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় হেলিকপ্টার যোগে তাকে তেজগাঁ বিমানবন্দরে আনা হয়। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর একটি বিমানে শেখ মুজিবকে গোপনে নিয়ে যাওয়া হয় করাচী। পরবর্তীতে তাঁকে রাওয়ালপিন্ডির অদূরে মিয়াঁওয়ালী কারাগারের নির্জন সেলে কঠোর নিরাপত্তায় বন্দী করা হয়।

বন্দীকালে শেখ মুজিবকে কারও সাথে কথাও বলতে দেয়া হয়নি। দেয়া হয়নি কোন সংবাদপত্র। কোন খবর পৌঁছনোর নূন্যতম কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। তাঁর গ্রেফতারের পর থেকেই যে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তাও তিনি জানতেন না।

এদিকে বাংলার দামাল ছেলেদের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী আক্রমণে কাবু পাকবাহিনী আশ্রয় নিল ঢাকা শহরে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথবাহিনী “মিত্রবাহিনী” ঢাকাকে চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেললে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক দস্যু রক্তলোলুপ ইয়াহিয়া খান ও তার নরঘাতক সৈন্যবাহিনী বাংলাদেশের কাছে মাথা নত করে জনতার সামনে আত্মসমর্পণ করল।

পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পরাজয় ও নির্লজ্জ আত্মসমর্পনে পাকিস্তানে তীব্র সমালোচনার মুখে পাক প্রেসিডেন্ট লে. জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে নিউইয়র্ক থেকে দ্রুত পাকিস্তানে ফিরিয়ে এনে ২০ ডিসেম্বর পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এর দায়িত্ব ভুট্টোর হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হল।

ভুট্টো ক্ষমতা নিয়েই বুঝেছিলেন শেখ মুজিবের কিছু হলে তার দায়দায়িত্ব ভুট্টোকেই নিতে হবে। পরাজিত সেনাবাহিনীর সমস্ত ক্ষোভ মুজিবের উপর। সেনাবাহিনী শেখ মুজিবের যেকোন ক্ষতি করতে কসুর করবে না। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে ভুট্টো অনুধাবন করেছিলেন এর পরিণতি।

শঙ্কিত ভুট্টো ২২ ডিসেম্বর মিঁয়াওয়ালী জেলের প্রিজন গভর্নর হাবিব আলীকে জরুরী বার্তা প্রেরণ করেন শেখ মুজিবকে কারাগার থেকে দ্রুত নিরাপদ কোন স্থানে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা নিতে।

হাবিব আলী পাকিস্তানী কারাগার থেকে শেখ মুজিবকে সরিয়ে দুদিন অজ্ঞাত (সম্ভবত নিজের বাড়ীতে) কোন স্থানে অন্তরীন রেখে ভুট্টোর নির্দেশে ২৫ কিম্বা ২৬ ডিসেম্বর সিহালার পুলিশ রেস্ট হাউজে রাখা হয়। রাওয়ালপিন্ডি থেকে এই রেস্ট হাউজের দূরত্ব আনুমানিক ২৩ কিলোমিটার।

এখানে স্থানান্তরের পরপরই জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করেন। তখন জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবকে নানা ধরনের প্রস্তাব দেন বলে কথিত আছে। কনফেডারেশন কিম্বা ইউনিয়ন জাতীয় কিছু একটা করে যদি একসঙ্গে থাকা যায় সে চেষ্টা ভুট্টো করেছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিব নাকি সহকর্মীদের সঙ্গে কথা না বলে কিছুই বলতে রাজি হননি।

এরপর শেখ মুজিবকে একটা যৌথ ইশতেহার দেয়া হয়েছিল স্বাক্ষর করার জন্য। মুজিব সেটাও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

শেখ মুজিবের অনুরোধে ভুট্টোর নির্দেশে উত্তর-পশ্চিম সিমান্ত প্রদেশের হরিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে কামাল হোসেনকে নিয়ে আসা হয় সিহালা রেষ্ট হাউজে।

ডিসেম্বরের ২৯ বা ৩০ তারিখে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমেদ সিহালায় এসে শেখ মুজিবকে জানান যে তাঁকে দেশে পাঠাবার ব্যবস্থা চলছে তবে কিছুটা সময় লাগবে কেননা আকাশপথে ভারতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় পিআই-এর বিমানের বাংলাদেশে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই তৃতীয় কোন দেশের সহায়তা লাগবে। তেহরান হতে পারে সেই তৃতীয় দেশ। তেহরান যেতে মুজিবের আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত লন্ডন হয়ে দেশে ফেরার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।

৭ জানুয়ারী অপরাহ্নে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আসা হয় রাওয়ালপিন্ডিতে। রাওয়ালপিন্ডিতে ভুট্টো শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেন।

নৈশভোজকালে ভুট্টো শেখ মুজিবকে জানান, ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভী পাকিস্তান সফরে আসছেন পরদিন অর্থাৎ ৮ জানুয়ারী। ভুট্টো মুজিবের সাথে ইরানের মোহাম্মদ রেজা শাহ-এর একটি বৈঠকের প্রস্তাব দিলে শেখ মুজিবুর রহমান তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং নৈশভোজ বয়কটের হুমকি দেন।

সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো শেখ মুজিবুর রহমানকে লন্ডন পাঠাবার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

৯ মাস ১৩ দিনের কারাবাসের পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্ত হলেন। পাক হানাদারবাহিনীর লজ্জাজনক পরাজয়, আন্তর্জাতিক চাপে বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৩ দিন পর শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হল পাকিস্তান সরকার।

রাওয়ালপিন্ডি থেকে ৭ জানুয়ারী দিবাগত মধ্যরাতে ড. কামাল হোসেন, তাঁর স্ত্রী হামিদা হোসেন ও তাঁদের দুইসন্তানসহ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সরকারের চার্টার করা করাচী থেকে আসা পিআইএ-র একটি বিশেষ বিমানে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হন। মুজিবকে বিদায় জানাতে রাওয়ালপিন্ডির চাকলালা বিমানবন্দরে এসময় উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো।

শেখ মুজিবের মুক্তি ও লন্ডন যাত্রার বিষয়টি পাকিস্তান সরকার অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে সম্পন্ন করে। রাওয়ালপিন্ডি থেকে বিমান উড্ডয়নের ৬ ঘন্টা পরে পাকিস্তান সরকার যুক্তরাজ্য সরকারকে বিমানে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতির তথ্য জানায়।

৮ জানুয়ারী গ্রিনিচ সময় সকাল ৬টা ৩৬ মিনিটে অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে পিআইএ-র বিমানটি হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

টেলিফোনে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কথা বলে লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালনরত এসএম রেজাউল করিম উপস্থিত হন বিমানবন্দরে। হিথরো বিমানবন্দর ভিআইপি লাউঞ্জে যুক্তরাজ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমনওয়েলথ বিষয়ক বিভাগের কর্মকর্তা ইয়ান সাদারল্যান্ড, লন্ডনে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার আপা বি পন্থ শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাগত জানান। বঙ্গবন্ধু যখন লাউঞ্জে অপেক্ষা করছিলেন, তখন সেখানে আসেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার নাসিম আহমেদ।

এরপর বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও লন্ডন গমনের খবর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল বিশ্বব্যাপী। দেশের আপামর জনসাধারণ ও বিশ্বনেতৃবৃন্দের চোখ নিবদ্ধ হয় লন্ডনে।

শেখ মুজিবুর রহমান হিথরো বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেও সেখানে কোনও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন আমি সুস্থ আছি, বেঁচে আছি। এ মুহূর্তে আপনারা শুধু আমাকে দেখুন, কিছু শোনার আশা করবেন না। তাই এখন আমি আর বেশি কিছু বলতে চাই না। সম্ভবত পরে একটা বিবৃতি দিতে পারি।’

তিনঘণ্টা বিমানবন্দরে অবস্থানের পর বেলা ১০টার পরে শেখ মুজিবুর রহমান ড. কামাল হোসেনসহ ক্লারিজ হোটেলের উদ্দেশে রওনা হন। গাড়িতে ওঠার সময় তিনি সামনে বসতে পারেন কিনা জিজ্ঞাসা করলে কর্মকর্তারা বলেন, অবশ্যই।

হোটেলে হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্যে উপস্থিত হতে থাকলে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় হোটেল কর্তৃপক্ষকে। নিরাপত্তার স্বার্থে পাঁচজনের একটি দলকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়। হোটেল কক্ষের জানালা থেকে শেখ মুজিব অপেক্ষমান জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন।

হোটেলে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করতে আসেন ব্রিটেনের লেবার পার্টির নেতা হ্যারন্ড উইলসন, কমনওয়েলথের মহাসচিব আরনল্ড স্মিথ, সাবেক মন্ত্রী পিটার শোরসহ আরো অনেকে।

২৬ মার্চে গ্রেফতারের পর এদিন হোটেল থেকে প্রথমবারের মতো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আধঘণ্টা কথা বলেন শেখ মুজিব। প্রথমে বড় ছেলে শেখ কামাল, পরে ক্রমান্বয়ে বেগম মুজিব, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও মেজ ছেলে শেখ জামালের সঙ্গে কথা বলেন। বেগম মুজিব আবেগঘন কণ্ঠে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শেখ মুজিব জানতে চান – ‘তুমি কেমন আছি, বেঁচে আছো তো’?

এরপর শেখ মুজিব তাঁর দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু টেলিফোনে যুক্ত হয়ে বলেন, ‘হ্যালো তাজউদ্দীন, আমি সাংবাদিক পরিবৃত আছি, তাদের কী বলবো? দেশের মানুষ কেমন আছে? বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে যে অগণিত নারী-পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছেন, এই মুহূর্তে তাদের কথা আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে’। এসময়ে তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাথেও কথা বলেন।

এর পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শেখ মুজিবের সঙ্গে কথা বলেন এবং নয়াদিল্লী সফরের আমন্ত্রণ জানান। ইন্দিরা গান্ধী শেখ মুজিবুর রহমানের কুশল জানতে চেয়ে বলেন, ‘আমরা খুবই খুশি আপনি মুক্তি পেয়েছেন’। শেখ মুজিবুর রহমান ইন্দিরা গান্ধীর মাধ্যমে ভারতের জনগণকে অভিনন্দন জানান। এরপর ইন্দিরা গান্ধী জানতে চান, ‘কেমন আছেন’? জবাবে শেখ মুজিব বলেন, ‘আমি ভালো আছি। আমি আপনাদের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ’।

হোটেলের হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেন, “আজ আমি মুক্তভাবে দেশবাসীর সঙ্গে স্বাধীনতার আনন্দ ভাগ করে নিতে পারছি। এক মহাকাব্যিক সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। … … এই লড়াইয়ের চূড়ান্ত অর্জন হলো একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ গঠন করা। আমি যখন কারাগারে বন্দী অবস্থায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম, তখন জনগণ আমাকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা করেছে।” তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশের মানুষ যে পরিমাণ মূল্য দিয়েছে এবং কষ্ট ভোগ করেছে, অন্য কোনো জাতিকে তা করতে হয়নি। আমি আমার দেশের মানুষের কাছে ফেরার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছি না।”

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানে আটক এবং যেকোনো সময় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে জানতে চান একজন সংবাদিক। জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। মনে রাখতে হবে, যে মানুষ মরতে প্রস্তুত, তাকে কেউ মেরে ফেলতে পারে না।” অপর এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি কী কখনো ভেবেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন হবে? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমি প্রায় ৩৫ বছর ধরে রাজনীতি করছি। যেদিন আমাকে কারাগারে নেওয়া হয় আমি বুঝতে পারছিলাম না বেঁচে থাকব নাকি মরে যাব। তবে, আমি জানতাম বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন হবে, তাদের কেউ দমাতে পারবে না।”

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ তাঁর সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করতে চেকার্সে ছিলেন। তিনি সেখান থেকে তড়িঘড়ি লন্ডনে ফিরে এলে সন্ধ্যায় ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে যান শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে শেখ মুজিব বাংলাদেশকে সার্বভৌম দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু কমনওয়েলথের সদস্যপদ প্রত্যাশার কথা জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে এবং প্রধানমন্ত্রী হিথ এ বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন। একই সঙ্গে তারা বাংলাদেশকে কেন স্বীকৃতি দিতে পারেনি তার কারণও ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্রিটেন এবং ভারতীয় উপমহাদেশের তিনটি দেশের মধ্যে মধুর সম্পর্ক রাখতে চাই। আমরা ভুট্টোকে বাস্তবতা মেনে নিতে সাহায্য করব।’ হিথ মুজিবের কাছে জানতে চান, ‘আমরা আপনার জন্য আর কী করতে পারি’? জবাবে শেখ মুজিব বলেন, ‘আপনি আমাদের জন্য একটি কাজ করুন, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিমান দিয়ে সাহায্য করুন।’

শুরু হলো তাঁর বাংলাদেশে ফেরার প্রস্তুতি। কোন পথে কবে কখন দেশে ফিরবেন, এই আলাপের মধ্যেই শেখ মুজিব লন্ডনেই ঘোষণা দেন- তিনি এক-দুই দিনের ভেতরেই ফিরতে চান।

এদিকে বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা ও স্বাগত জানানোর পরিকল্পনা করতে বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক বসে শনিবার। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ভারতের ওপর দিয়ে আসবেন বলে তিনি আশা করছেন। তিনি এসে রমনা রেসকোর্স, শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়’। বৈঠক থেকে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বন্ধু রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

লন্ডন থেকে যাত্রা করে শেখ মুজিবুর রহমানকে বহনকারী ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্সের কমেট ৫ বিমানটি বিমানের জ্বালানী নেয়ার জন্যে সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোশিয়ায় এবং দ্বিতীয়বার বাহরাইনে যাত্রা বিরতি শেষে যাত্রার গোপনীয়তা বজায় রেখে ১০ জানুয়ারী স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় দিল্লী বিমানবন্দরে এসে পৌঁছোয়।

মুজিব বিমান থেকে বেরিয়ে এলে সমবেত জনতার ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।  শেখ মুজিবের বিমানটি যখন অবতরণ করে তখন বিমানঘাঁটিতে ভারতের ত্রিবর্ণরক্ষিত জাতীয় পতাকা ও বাংলাদেশের সবুজ পটভূমিকায় লাল ও সবুজ রঙের জাতীয় পতাকা উড়ছিল। ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো হলো।

শীতের সকালে দিল্লীর পালাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে অভ্যর্থনা জানাতে সব প্রটোকল ভেঙে ছুটে আসেন ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার সরণ সিংসহ পুরো মন্ত্রিসভা, প্রধান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানসহ আরও অনেকে। বিমানবন্দরে আগত ৩২ দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরিচিত হন শেখ মুজিব।

সেনাবাহিনীর ব্যান্ডে দুই দেশের জাতীয় সংগীত ‘জন গণ মন’ ও ‘সোনার বাংলা’ বাজতে থাকে। শেখ মুজিবের আগমনের পরে ভারতীয় স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনীর ১৫০ জনের সম্মিলিত গার্ড অব অনার পরিদর্শন করে।

আনুষ্ঠানিকতার শেষ পর্বে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানিয়ে ভাষণ দেন, জবাবে শেখ মুজিব তার ভাষণে রাষ্ট্রপতি গিরি ও ভারতের জনগণ এবং বিশেষভাবে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্যে ধন্যবাদ জানান।

এরপর শেখ মুজিব ও ইন্দিরা গান্ধী ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় প্যারেড গ্রাউন্ড অভিমুখে যাত্রা করেন।  প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও হাজার হাজার নর-নারী পথের দুপাশে দাঁড়িয়ে থেকে ‘জয় বাংলা’ ও ‘শেখ মুজিব জিন্দাবাদ’ ধ্বনিতে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা জানান।  বিমানঘাঁটি থেকে ২ কিলোমিটার দূরে প্যারেড গ্রাউন্ডে যখন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী গান্ধীর সঙ্গে শেখ মুজিব এসে পৌঁছান তখন মুহুর্মুহু ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হতে থাকে।  শেখ মুজিবের ভাষণ শোনার জন্য সমবেত হাজার হাজার নর-নারীর কণ্ঠে শুধু ‘মুুজিবুর রহমান জিন্দাবাদ’, ‘ইন্দিরা গান্ধী জিন্দাবাদ’ ধ্বনি শোনা যায়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন- শেখ মুজিব তাঁর জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাদের মুক্ত করবার, তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। আজ বাংলাদেশ মুক্ত। উপস্থিত জনতাকে ইন্দিরা বলেন- আমিও আপনাদের কাছে তিনটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, এক, শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠাবো, দুই, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করবো এবং তিন, শেখ মুজিবকে মুক্ত করে আনবো। আমিও আমার প্রতিশ্রুতি রেখেছি।

এরপর শেখ মুজিবুর রহমান ‘ম্যাডাম প্রাইম মিনিস্টার শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান প্রেজেন্ট’ বলে তাঁর বক্তৃতা শুরু করতেই জনতা শেখ মুজিবকে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার অনুরোধ জানান। জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী এবং ইন্দিরা গান্ধীর অনুরোধে তিনি তখন বাংলায় তাঁর ভাষণ শুরু করেন। এতে জনসাধারণ তাকে চিৎকার করে অভিনন্দন জানান। শেখ মুজিব ঘোষণা করেন, ভারত ও বাংলাদেশের মৈত্রী চিরস্থায়ী হবে।  বাংলাদেশে পাকিস্তানীরা যে পৈশাচিক ও কাপুরুষোচিত অত্যাচার চালিয়েছে ইতিহাসে কোনো শাসকের এরূপ জঘন্য অত্যাচারের কথা জানা যায়নি।  তিনি আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, “বাংলাদেশ বলতে গেলে এক নারকীয় তান্ডবের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে।… এক কোটির বেশি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। দশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। পুরুষদের সামনেই মা-বোনদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়। কী অন্যায় করেছিল বাঙালীরা? তারা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চেয়েছিল- এটাই ছিল তাদের অন্যায়। বাঙালীরা বাঁচতে চেয়েছিল কিন্তু তার জবাবে তারা পেয়েছে বন্দুক, বুলেট, গুলি।

ভারতবর্ষের জনগণ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর উষ্ণ ভাষণে বলেন- আপনাদের প্রধানমন্ত্রী, আপনাদের সরকার, আপনাদের সৈন্য বাহিনী, আপনাদের জনগণ যে সাহায্য এবং সহানুভূতি আমার দুঃখী মানুষকে দেখিয়েছে, চিরদিন বাংলার মানুষ তা ভুলতে পারবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের জন্য ইন্দিরা গান্ধী কূটনীতিকভাবে যে ভূমিকা রেখেছিলেন সেজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ মুজিব। ‘দুদিন আগেও আমি পশ্চিম পাকিস্তানের অন্ধকার সেলের মধ্যে বন্দি ছিলাম। শ্রীমতি গান্ধী আমার জন্য দুনিয়ার এমন কোন জায়গা নাই যেখানে তিনি চেষ্টা করেন নাই আমাকে রক্ষা করার জন্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ’, দিল্লীর ভাষণে বলেন শেখ মুজিব। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একটা স্বাধীন রাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ ও ভারত চিরস্থায়ী বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। এই দুটি দেশ চিরদিন শান্তি ও বন্ধুত্বের মধ্যে বসবাস করবে।’

এরপর দিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবনে কলকাতা থেকে আনা গুড়ের সন্দেশ, সমুসা, শিঙ্গাড়া আর দার্জিলিং চা দিয়ে আপ্যায়িত করা হল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে। এখানেই মুজিব-ইন্দিরা প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে শেখ মুজিব জানতে চান- কখন বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় বাহিনী প্রত্যাহার করা হবে? জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন আপনি চাইবেন’। মুজিব বললেন, ’তাহলে আগামী স্বাধীনতা দিবসের আগেই হোক। ইন্দিরা সম্মতি দিয়ে বলেন, ‘তা-ই হবে’।

মুজিবকে নিয়ে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্সের বিমানটি দিল্লীর পালাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে আবারও আকাশে উড়ল, এবারের গন্তব্য মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার তেজগাঁ বিমানবন্দর।

টাইম ম্যাগাজিনের ভাষ্য অনুসারে, “ঠিক দুপুর দেড়টায় প্রখর রোদের মধ্যে ঢাকার আকাশে ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর কমেট জেট দেখা গেল, ঠিক তখনই জেটটি নামল না।  আকাশ থেকে শেখ মুজিব তাঁর সোনার বাংলাকে দেখার ইচ্ছে করেছেন। সে কারণে প্রায় ৪৫ মিনিট আকাশে পাক খেয়ে পাইলট তাঁকে ‘সোনার বাংলা’ দেখালেন। সোনার বাংলা তখন শ্মশান।”

১০ জানুয়ারী দুপুর ২টোর কিছু পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসে নামলেন স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে।

রানওয়েতে অপেক্ষমান জনতার মধ্য থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ছুটে গেলেন ফুলের মালা হাতে, বিমানের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলেন, দোরগোড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মালা পরিয়ে বুকে মাথা দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন তাজউদ্দীন।

রানওয়েতে একটি হুইলচেয়ারে প্রতীক্ষারত পিতা শেখ লুৎফর রহমানের কাছে ছুটে গেলেন মুজিব, মাটিতে হাঁটু গেড়ে বাবার বুকে মাথা রাখলেন।

মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে দেয়া হলো ‘গার্ড অব অনার’।

বাংলাদেশ বেতার এবং আকাশবাণীর ধারাভাষ্যকারেরা বাংলা, ইংরেজী এবং হিন্দিতে সরাসরি ধারাবিবরণী দিয়ে চলেছেন। দূরদর্শন, রয়টার, এসোসিয়েটেড প্রেস, বিবিসি, এবিসি, সিবিএস, এএফপিসহ বিশ্বের শ সাংবাদিক শেখ মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সংবাদ পৌঁছে দিচ্ছেন।

তেজগাঁ বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গন্তব্যের পথে রওনা দেয়ার পালা। ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনী যারা তখনও নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, জানালেন একটি মোটরকারে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা। কিন্তু শেখ মুজিব চতুর্দিক ঢাকা গাড়িতে যেতে রাজি হলেন না। নিরাপত্তাবাহিনীর যুক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনমানুষের নেতা মুজিব তাদের জানিয়ে দিলেন একটি খোলা ট্রাকে করে তিনি যাবেন।

অবশেষে একেবারে খোলা একটি ট্রাকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ অন্যান্য জেষ্ঠ নেতা ও যুবনেতা পরিবেষ্ঠিত হয়ে যাত্রা শুরু করলেন। গন্তব্য রেসকোর্স ময়দান।

পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিপুল জনসমুদ্রকে তিনি অভিবাদন জানালেন ন’মাসের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের জন্যে।

মাত্র চার মেইল পথ ২ঘন্টার বেশী সময় পেরিয়ে বিপুল জনসমুদ্রে ভাসতে ভাসতে ট্রাকটি এসে পৌঁছোলো রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান)।

উন্নত শিরে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রথম ভাষণ দিলেন এখানেই সেদিন সন্ধ্যার প্রাক্বালে। শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এলেন, অর্জিত হল বাংলার মানুষের চূড়ান্ত বিজয়।

“বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় তুমি আজ
ঘরে ঘরে এত খুশি তাই।
কী ভালো তোমাকে বাসি আমরা, বলো কী করে বোঝাই।
এদেশকে বলো তুমি বলো কেন এত ভালোবাসলে,
সাত কোটি মানুষের হৃদয়ের এত কাছে কেন আসলে,
এমন আপন আজ বাংলায়… তুমি ছাড়া কেউ আর নাই
বলো, কী করে বোঝাই।
সারাটি জীবন তুমি নিজে শুধু জেলে জেলে থাকলে
আর তবু স্বপ্নের সুখী এক বাংলার ছবি শুধু আঁকলে
তোমার নিজের সুখ-সম্ভার কিছু আর দেখলে না তাই
বলো কী করে বোঝাই।”

(আবিদুর রহমানের লেখা ও সুধীন দাশগুপ্তের সুরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গান)

লেখক: সাগর লোহানী, সম্পাদক, বাঙালীয়ানা

অগ্নিঝরা একাত্তরের দিনগুলো, পড়ুন

ডিসেম্বর ১৯৭১

নভেম্বর ১৯৭১

অক্টোবর ১৯৭১

সেপ্টেম্বর ১৯৭১

আগস্ট ১৯৭১

জুলাই ১৯৭১

জুন ১৯৭১

মে ১৯৭১

এপ্রিল ১৯৭১

মার্চ ১৯৭১

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.

About Author

বাঙালীয়ানা স্টাফ করসপন্ডেন্ট