“Dr. M.N. Shaha has won an honor in the whole scientific world”
-আইনস্টাইন।
সমগ্র বিজ্ঞান জগতে পদার্থবিজ্ঞানে যার অবদান সত্যিই অপরিসীম তিনি হলেন মেঘনাদ সাহা। তিনি যে চমকপ্রদ আবিষ্কারের জন্য বিশেষ সুপরিচিত সেটি হলো “থার্মাল আয়নাইজেসন”, যা নক্ষত্রের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মাবলী ব্যাখ্যায় ব্যবহৃত হয়। ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ অক্টোবর গাজীপুর জেলায় কালিয়াকৈর উপজেলার শেওড়াপাড়া গ্রামে জগন্নাথ সাহা ও ভুবনমোহিনী দেবীর কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেন এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর পিতা একজন সামান্য মুদি ছিলেন তাই সংসার চলতো বেশ অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে। সেইজন্য তিনি ছেলেবেলায় সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ে পড়েন, এক আত্মীয়ের বাড়িতে ঝুটা কাজের বিনিময়ে থেকে। বহুপ্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে তিনি শিক্ষা লাভ করেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে। তিনি স্বদেশী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ায় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় তাকে ঢাকা স্কুল থেকে বিতাড়িত করা হয়। এরপরেই তাঁর কলকাতায় আসা। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। সেই সময় প্রেসিডেন্সিতে ছিল চাঁদের হাট।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের সহপাঠী ছিলেন তিনি। আবার অন্যদিকে তিনি ছিলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় এর ছাত্র।
পরবর্তীকালে তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদ অমিয়চরণ ব্যানার্জীর সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। ১৯২৩-১৯৩৮ সাল পর্যন্ত এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন হিসেবে দায়িত্বভার সামলে গেছেন মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত। ধর্মের চোখ দিয়ে তার পর্যালোচনা করলে বোঝা যাবে, তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ রূপে নাস্তিক। সব ধর্মের উর্দ্ধে যে এক অন্য ধর্ম সেই মানব ধর্মে বিশ্বাসী।
১৯২৭ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটি এর ফেলো হন। এবং ১৯৩৪ সালের ২১তম অধিবেশনে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস সংস্থার সভাপতি হন। নোবেল পুরষ্কারের জন্য চারবার মনোনীত হন। কিন্তু প্রথমবার নোবেল কমিটি মেঘনাদ সাহা’র কাজকে পদার্থবিজ্ঞানের একটি উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ হিসেবে বিবেচনা করলেও এটি “আবিষ্কার” হিসেবে না মানায় তিনি নোবেল পুরস্কার পাননি। পরবর্তীকালেও নোবেল কমিটি তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। অথচ বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী নিলস বোর, ম্যাক্স বর্ণ, প্রমুখ দিকপাল মুগ্ধতার সঙ্গে স্বীকার করেছেন মেঘনাদ সাহার অনন্য প্রতিভার কথা। তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি পরমাণু বিজ্ঞান, আয়ন মন্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা বিষয়ক গবেষণা, তাপীয় আয়নবাদ সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন প্রভৃতি। তিনি শুধু সংস্কার বা আবিষ্কারেই ক্ষান্ত হননি। বেশ কিছু পুস্তকও রচনা করেছেন যেমন The principle of relativity, Treatise on heat, Treatise on modern physics, Junior textbook of heat meteorology ।
১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি ভবনের প্লানিং কমিশনের দিকে যাওয়ার সময় সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটে হঠাৎই তিনি পরলোক গমন করেন। ডাক্তারের রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি বিগত ১০ মাস ধরে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর মৃতদেহ পরেরদিন তাঁর প্রিয় শহর কলকাতার কেওড়াতলা মহাশশ্মানে দাহ করা হয়।
এই উপমহাদেশে পদার্থবিদ্যা বিশেষত পরমাণু বিজ্ঞানের ও তাপীয় আয়নবিজ্ঞানের ভিত গড়ে দিয়ে গেছেন তিনি।
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা।