একাত্তরের রবিনহুড মারিও রয়ম্যান্স

Comments

।। অমি রহমান পিয়াল ।।

খানিকটা তন্দ্রার ঘোরেই ছিলেন মারিও রয়ম্যান্স। চোখ মেলতেই সামনে থাকা টিভিতে দৃষ্টি আটকে গেলো। সংবাদ পাঠকের সামান্য বর্ণনার পর পর্দায় ভেসে উঠলো কোনো মতে গা ঢাকা এক মায়ের কোলে অপুষ্ট এক শিশুর ছবি। জায়গাটা পূর্ব পাকিস্তান। সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের নামে ভয়াবহ এক গণহত্যা চলছে। লাশ কুকুরে খাচ্ছে। লোকজন পালাচ্ছে। গন্তব্য একটাই, সীমান্তের ওপারে ভারতে। আর সহ্য হলো না, উঠে নব ঘোরালেন। বন্ধ করে দিলেন টিভি।

Mario Roymance_01

মারিও রয়ম্যান্স

কিন্তু দৃশ্যগুলো আটকে গেলো মাথায়। ঠিক কোন জায়গাটা এমন করে নাড়া দিয়ে গেলো এই ফ্লেমিশ (বেলজিয়ামের ডাচভাষী) তরুণকে তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারবে না হয়তো। ওই শিশু কোলে বিপন্ন মা কি? সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। সপ্তাহখানেক পরে টেলিফোনে লা সোয়েরে পত্রিকাকে মারিও বলছেন, ‘আমি কিন্তু পেশাদার অপরাধী নই বরং শিল্পরসিক। আমার বয়স মাত্র ২০, একজন এতিম। মা বেঁচে থাকলে হয়তো এই কাজটা আমি করতাম না। কিন্তু মানুষের দূর্ভোগ আমার সহ্য হয় না।…’

Mario Roymance_02

মারিও রয়ম্যান্স

কী প্রসঙ্গে মারিও এই কথাগুলো বলছেন? কেন দিচ্ছেন এই সাফাই? জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে চল্লিশ বছর পেছনে। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যখন চলছে, তখন দূরের ব্রাসেলসে বসে টিভিতে বাঙালীদের দুর্দশা দেখে অস্থির হয়ে পড়েন ২১ বছর বয়সী এই তরুণ। কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর যা করলেন সেটা বেলজিয়ামের ইতিহাসে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অপরাধের তালিকায় শীর্ষেই রয়ে গেছে। ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ব্রাসেলসের মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টস থেকে খোয়া গেলো ১৭ দশকের শিল্পী ইয়োহান ভারমিয়ারের আঁকা ‘দ্য লাভ লেটার’ নামের মাস্টারপিসটি। পরদিন জাদুঘর কর্তৃপক্ষের মাথায় বাজ পড়লো। বিশেষজ্ঞরা রায় দিলো এটা পেশাদার চোরদের কাজ। অপরাধীদের ধরতে অভিযানে নামলো বিশাল পুলিশ বাহিনী। তখনও কারো ভাবনাতেও আসেনি আনাড়ি এক তরুণ নিতান্তই ঝোঁকের মাথায় শিল্পমূল্যে অমূল্য এবং সেসময়কার বাজারদরে ৫ মিলিয়ন ডলারের পেইন্টিংটি দিশেহারার মতো লুকানোর পথ খুঁজছে।

ব্রাসেলসের সেই জাদুঘরে সে সন্ধ্যাতেই উদ্বোধন হয়েছিলো র‌্যঁবা এন্ড হিজ টাইম নামে ওই প্রদর্শনীটি। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি ও ডেনমার্কের জাদুঘর থেকে বহুমূল্য সব চিত্র নিয়ে আসা হয়েছিলো ধারে। ভারমিয়ারের মাস্টারপিসটি এসেছিলো আমস্টারডামের রাইখস মিউজিয়াম থেকে। মূলত ষোড়শ ও সতেরো দশকের ডাচ শিল্পীদের নিয়েই ওই প্রদর্শনী, যা উদ্বোধন করেন বেলজিয়ামের রাজকন্যা পামেলা। তিনিই দ্য লাভ লেটারকে অক্ষত দেখা শেষজন। দর্শকদের একজন হয়েই সে প্রদর্শনীতে আসেন মারিও। চিত্রকলা সম্পর্কে জ্ঞান আছে বলেই জানতেন কোনটি তার প্রয়োজন, আগেই দেখে রাখেন তার লক্ষ্যের অবস্থান। অবশ্য সাইজও একটা ব্যাপার ছিলো। লাভ লেটার আঁকা হয়েছে ১৫ বাই ১৭ ইঞ্চি ক্যানভাসে। দর্শকরা যেখন বের হচ্ছে, মারিও তখন লুকিয়ে পড়েন এক দেরাজে। জাদুঘরের নিরাপত্তাব্যবস্থা এখনকার মতো এমন আহামরি ছিলো না সে সময়। চার জন পুলিশ ভেতরে টহল দিতেন কোনো অস্ত্র ছাড়াই। রাত একটু গভীর হলেই বেরিয়ে আসেন মারিও। এরপর চলে যান ভারমিয়ারের ছবির সামনে। কিন্তু সেটা বেশ শক্ত করেই সাটানো ওয়ালে। এবার পকেট থেকে একটা আলু কাটার ছুরি বের করলেন। তারপর চারপাশ থেকে কেটে নিলেন ক্যানভাসটা। মুড়িয়ে ভাজ করে পকেটে ভরলেন। তারপর ভেন্টিলেটার বেয়ে বাইরে বেরিয়ে ট্যাক্সি চড়ে সোজা বাসায়। টঙ্গারেনের এক কয়লাখনির পাশে।

Mario Roymance_Newspaper02

হাতে তো পেলেন। এবার এটা কোথায় রাখবেন এনিয়ে শুরু তার টেনশান। প্রথমে ঘরে রাখলেন, তারপর সেখানে নিরাপদ নয় ভেবে পাশের জঙ্গলে গিয়ে মাটি চাপা দিলেন। রাতে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আবার সেটা তুলে আনলেন ঘরে। নিজের ও কব্জায় থাকা সম্পদের নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্কিত মারিও পরদিন বল্ডারবার্গের হোটেল সিতেওয়েতে কাজের জন্য যোগাযোগ করলেন। তাকে ওয়েটার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো। ভবিষ্যতে তার পরিচয় দেওয়ার সময় এই পেশাটাই উল্লেখ হবে বারবার। ইতিহাসে ভারমিয়ারের নাম ও সেরা কীর্তিটির সঙ্গে উচ্চারিত হবে অনামা এক বেলজিয়ান ওয়েটারের কথাও। যাহোক, কাজটা পেয়ে অনেকখানি নিশ্চিন্ত হলেন মারিও। কারণ তাকে থাকার জন্য একটা ঘরও দেওয়া হয়েছে। সেখানে তোষকের নিচে একটা বালিশের কভারের মধ্যে ঠাই নিলো ভারমিয়ারের প্রেমপত্র। এর হদিশ পেতে বড় অংকের পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে ইতিমধ্যে।

এভাবেই সপ্তাহখানেক কেটে গেলো। মারিও এদিকে রেডিওতে শুনে যাচ্ছেন পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা। কিরকম নৃশংসতা চললে লাখে লাখে মানুষ অজানার উদ্দেশ্যে সীমান্তপাড়ি দেয়! ১ অক্টোবর রাতে ফোন করলেন লা সয়ের পত্রিকায়। নিজের পরিচয় দিলেন থিল ফন লিমবার্গ বলে। ইংরেজীতে যা থিল অব লিমবার্গ। থিল উইলেনস্পিজেল হচ্ছেন ফ্লেমিশ লোকগাঁথার রবিনহুড (জার্মানি-হল্যান্ডেও যার সমান মর্যাদা)। তাসের গায়ে জোকারের যে ছবিটা থাকে সেটা কিন্তু এই থিলেরই প্রতিকৃতি। প্রচলিত আছে তিনি হাসি এবং মজার ছলে দূর্নীতিবাজদের মুখোশ খুলতেন একইসঙ্গে ধনীদের সর্বস্ব লুটে তা বিলিয়ে দিতেন গরীবদের। লা সয়েরের সাংবাদিক ওয়াল্টার শুল্ডেনকে মারিও জানালেন যে চুরি যাওয়া ভারমিয়ার এখন তার কাছে। এটা ফেরত পেতে হলে কর্তৃপক্ষকে ২০০ মিলিয়ন ফ্রাংক (চার মিলিয়ন ডলার) মুক্তিপণ দিতে হবে। তবে শর্ত আছে। টাকাটা তাকে নয়, দিতে হবে ক্যাথলিক দাতব্য সংস্থা কারিতাসে। আর সেটা খরচ করতে হবে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের পেছনে!

Mario Roymance_Newspaper03

ওয়াল্টার তার পরিচয় জানতে চাপাচাপি করেছিলেন। জবাবে নিজেকে লিমবার্গের থিল হিসেবেই দাবি করেন মারিও। পাশাপাশি একটা হুমকিও দেন, মুক্তিপণ ছাড়া পেইন্টিংটা উদ্ধারের চেষ্টা করা হলে এটা চিরতরে হারিয়ে যাবে। তার কাছে ল্যাটিন আমেরিকার এক ক্রেতার হদিস আছে, প্রয়োজনে সেটা তার কাছে বিক্রি করে দেবেন। আর বাকি যে ৩৯টা ভারমিয়ার আছে, সেগুলোও চুরি করবেন। স্বাভাবিকভাবেই ওয়াল্টার তার কাছে জানতে চান পেইন্টিংটা তার কাছে আছে এর প্রমাণ কি। তখন তাকে গোপন এক জায়গায় দেখা করার প্রতিশ্রুতি দেন মারিও, সঙ্গে ক্যামেরাও নিয়ে আসতে বলেন। ভোরের আলো ফোটার ঘণ্টাখানেক আগে লিমবার্গের ওই জঙ্গলের পাশে দেখা হয় দুজনের। প্লাস্টিকের একটা মুখোশ পড়ে ওয়াল্টারের মুখোমুখি হন মারিও। তারপর তাকে চোখবেধে নিয়ে যান গন্তব্যে। সেখানে গাড়ির হেডলাইটের আলোয় ফ্লাশ জালিয়ে ছবি তোলেন ওয়াল্টার। রোববার দুটো ছবি সহ লিমবার্গের থিলের দাবিনামার খবর ছাপায় লা সয়ের। সাথে সাথে সাড়া পড়ে যায় গোটা বেলজিয়ামে।

Mario Roymance_Newspaper04

এদিকে বেলজিয়ান রেডিও জানায় দু’দিন আগে তারা একই দাবিনামার চিঠি পেয়েছিলো। কিন্তু সেটা বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় তারা প্রচার করেনি, বরং পুলিশকে দিয়েছে তদন্ত করতে। লা সয়েরের খবরে ডাচ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে ব্রাসেলসে আসে। তবে পেইন্টিংটা সত্যিই আসল কিনা সেটা যাচাই করার জন্য তারা একজন বিশেষজ্ঞ দিয়ে তা পরীক্ষা করার আবেদন জানায়। এসময় কোনোধরনের পুলিশি বাধার মুখে তাকে পড়তে হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। টোপ গেলেননি মারিও। দু’দিন পর ‘হেট ফক’ নামে আরেকটি পত্রিকায় টেলিফোন করেন তিনি। এবার সময়সীমা বেধে দেন। ৬ অক্টোবরের মধ্যে মুক্তিপণ বাবদ ২০০ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক পরিশোধ না করলে তিনি পেইন্টিংটি বিক্রি করে দেবেন বলে হুমকি দেন। শুধু তাই নয়, পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য এই মুক্তিপণ পরিশোধের ঘটনাটা টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে- এই শর্তও জুড়ে দেন। সেখানে প্রেমপত্রের বীমার দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ কোম্পানি গ্রায়েম মিলারকে উপস্থিত থাকতে হবে চুক্তিপত্রে সই করার সময়। প্রস্তাব শুনে হতভম্ব হয়ে পড়ে কর্তৃপক্ষ। এত অল্প সময়ে এতটাকা সরাসরি সম্প্রচার করা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হস্তান্তরকে অসম্ভব বলে জানায় তারা।

Mario Roymance_Newspaper05

বিআরটি রেডিওতে এই বক্তব্য শুনে ৬ তারিখ সকালে সেখানেই ফোন করলেন মারিও। সেসময় চলছিলো জনপ্রিয় শো ‘টু বেড অর নট টু বেড’, মারিওকে সেখানেই সরাসরি এন্ট্রি দেওয়া হয়। নিজের দাবি এবং এর প্রেক্ষাপট হাজার হাজার তরুণ-যুবার সামনে তুলে ধরেন লিমবার্গের রবিনহুড। তার সোজাসাপ্টা কথাবার্তা, মহত্ব ও সরলপনায় মুগ্ধ বনে যায় তারা। এদিকে কিন্তু সর্বনাশ হয়ে গেছে। হ্যাসেটের একটি পেট্রোলপাম্প থেকে ফোন করেছিলেন মারিও। সেটা পাম্পের অপারেটর শুনে ফেলেন। পুরষ্কারের লোভে খবর দেন পুলিশে। মপেডে চড়ে বেশীদূর যেতে পারেননি। ধাওয়ার মুখে আশ্রয় নেন এক গোয়ালে। লিমবার্গের রবিনহুডকে দুটো গরুর মাঝখানে গোবরের স্তুপে কয়েকটা খড় দিয়ে ঢাকা অবস্থায় আবিষ্কার করে পুলিশ। হোটেল সিতেওয়ের রান্নাঘরের পেছনে শোবার ঘর থেকে উদ্ধার হয় দোমড়ানো প্রেমপত্র। জানা যায় ট্যাক্সিতে বাড়ি ফেরার পথে ওটার ওপর বসেছিলেন মারিও। মাসছয়েক পর মার্কিন বিশেষজ্ঞ শেলডন কেকের তত্বাবধানে খানিকটা চেহারা ফেরে দ্য লাভ লেটারের। জোড়া লাগে ক্ষতস্থান। স্বস্তি ফেরে শিল্পরসিকদের মনে। মন্দের ভালো প্রেমপত্রকে ফিরে পাওয়াটাকেই বিশাল কিছু বলে প্রবোধ মানেন তারা।

Mario Roymance_Newspaper06

লিমবার্গের থিলের গ্রেফতারের খবরে জনগনের মধ্যে কিন্তু উল্টো প্রতিক্রিয়া ঘটে। একটা মহৎ লক্ষ্যে তার মতো সরল-সিধে তরুণের এমন বেপরোয়া ও অভিনব উদ্যোগকে অপরাধ বলে মানতে অস্বীকার করে তারা। সংবাদপত্রগুলো, রেডিও-টিভি তার পাশে দাঁড়ায়। এমনকি তার হোটেলের মালিক-কর্মচারিরাও রাস্তায় নামেন মারিওর নিঃশর্ত মুক্তিদাবি করে পিটিশনে সাক্ষর সংগ্রহে। সেই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে দাতব্য সংস্থাগুলো। মারিওর আসল পরিচয় ছাপিয়ে সবার মুখে থিল অব লিমবার্গই ব্যাপ্তি পায়। পাবলিক সেন্টিমেন্টে প্রশাসন নরম হতে বাধ্য হয়। দুবছরের কারাদন্ড হয় মারিওর, কিন্তু ছয়মাস সাজা খেটেই মুক্তি পেয়ে যান তিনি।

Mario Roymance_Book

ট্রাজেডির সেটা শুরু মাত্র। কারাবাস তার ওপর প্রচণ্ড মানসিক আঘাত হয়ে এসেছিলো। তার প্রায় সব চুলই পড়ে যায়। অপ্রকৃতস্থ মারিও হোটেলে কাজে ফিরলেও মাসখানেক পর কাউকে কিছু না বলে উধাও হয়ে যান। পরিচিত এক মেয়েকে বিয়ে করেন, তার একটি মেয়েও হয়। কিন্তু দু’জনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। জানা যায় মারিও স্ত্রীকে মারধোর করতেন, তার ওপর শয়তান ভর করেছে এই অভিযোগে। শোনা যায় ল্যুভর থেকে দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা চুরি করার পরিকল্পনা করেন মারিও এবং গ্রেফতার হন প্যারিসে। সময়টায় পুরোপুরি ভবঘুরে তিনি। রাস্তায় রাস্তায় কাটাতেন, শুতেন গাড়িতে। ১৯৭৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর লিজে এক রাস্তার পাশে পার্ক করে রাখা গাড়িতে মুমূর্ষ অবস্থায় পাওয়া যায় মারিওকে। বলা হয় তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। আভ্যন্তরীন রক্তক্ষরণে দশদিন পর ১৯৭৯ সালের ৫ জানুয়ারি মারা যান লিমবার্গের রবিনহুড। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এক অজানা-বেনামী সুহৃদ। জন্মস্থান টঙ্গারেনের নেরেমে এক পুরোনো কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

কিন্তু এখানেই শেষ নয় মারিও উপাখ্যান। বছর দুয়েক আগে হ্যাসেল্টের কুরিঞ্জেন ব্রিজের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এক প্রেমিকজুটি। স্যু সমার্সের জন্ম ‘৭১য়ে, দ্য মর্ণিং পত্রিকার আদালত প্রতিবেদক। একটু ফিকে হয়ে আসা বিশাল এক গ্রাফিটি (আমরা যাকে চিকা বলি) তার নজর কাড়লো, লেখা- লং লিভ থিল। এর মানে কি জানতে চাইলেন চালকের আসনে থাকা স্টিন মিউরিসের কাছে। স্টিন একাধারে গায়ক, সঙ্গীতকার এবং টিভিঅনুষ্ঠান নির্মাতা। চলচ্চিত্রও বানিয়েছেন কয়েকটা। স্টিন পুরো ঘটনাটা বলতে পারলেন না, আবছা কিছুটা জানেন লোকশ্রুতি হিসেবে। কারণ ১৯৭১ সালে তারও বয়স ছিলো মাত্র ৬। এরপর দুজন ঠিক করলেন ঘটনাটা জানতে হবে। ঘাটতে ঘাটতেই পুরো ইতিহাসটা তাদের সামনে চলে এলো। পাশাপাশি জানলেন ওই গ্রাফিটি হোটেল সিতেওয়ের মালিকের ছেলের হাতের আঁকা। জানলেন ২০০৭ সালে দ্য কোয়েস্ট নামে একটি থিয়েটার গ্রুপ মারিওকে নিয়ে একটি নাটক করেছে।

Mario Roymance_03

মারিও রয়ম্যান্স

চমকিত এই জুটি ঠিক করলেন লিমবার্গের রবিনহুডকে আবার জনসমক্ষে আনার, তাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার। স্টিন সিদ্ধান্ত নিলেন মারিওর ঘটনা নিয়ে একটা তথ্যচিত্র বানাবেন আর স্যু ঠিক করলেন বই লিখবেন। মারিওর অভিযাত্রার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর হোটেল সিতেওয়েতে একটি প্রিমিয়ার হয়েছে ‘থিল ফন লিমবার্গ’ নামের ডকুমেন্টারিটির। অবশ্য একই নামে একটি শর্টফিল্মও তৈরি করেছেন আরেক ডাচ পরিচালক থমাস বিয়ারটেন। তবে তারটার সঙ্গে গুণগত মানে ব্যাপক পার্থক্য স্টিনের তথ্যচিত্রের। সেখানে আর্কাইভাল ফুটেজ, পত্রিকার কাটিং এবং সংশ্লিষ্ঠদের সাক্ষাতকার দিয়ে মারিও রয়ম্যান্সের তখনকার মনোজগতটা উম্মোচন করেছেন তিনি। একইদিন স্যু সমার্সও প্রকাশ করেছেন তার বই ‘মারিও’।

কী দূর্ভাগা জাতি আমরা। মুক্তিযুদ্ধের এক পরম সুহৃদের নামটাই জানতে এতগুলো বছর চলে গেলো আমাদের!

(ডাচ কিছু নামের উচ্চারণে আমার ভুল হতে পারে, সেটা ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখতে অনুরোধ রইলো- লেখক)

লেখক:
Omi Rahman Pial01
অমি রহমান পিয়াল
ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিষ্ট

*প্রকাশিত লেখার মতামত ও বানানরীতি লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাঙালীয়ানার সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকা অস্বাভাবিক নয়। তাই এখানে প্রকাশিত লেখা বা লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা সংক্রান্ত আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় বাঙালীয়ানার নেই। – সম্পাদক

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.

About Author

বাঙালীয়ানা স্টাফ করসপন্ডেন্ট