এক টাকার মুদ্রা । ঝর্না রহমান

Comments

মরস ক্যান রুজিনা? লগে লগে বাইজা গেল নাহি?

বিটকাল পেত্নীর মতো একটা হিহিহিহি হাসির ঝাপটার ভেতর দিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে কথা কটি বের হয়।

রোজিনা পেট চেপে ধরে পাতাবাহারের ঝোপের আড়ালে বসে পড়ে। কথাটা শুনে এক ঝলক চেয়ে দেখে।

একটু দূরে কোমরে দুহাত রেখে নাটুকে কায়দায় দাঁড়িয়ে আছে রানী। রাক্ষুসে দুটো ব্যাঙাচির মতো মাথা উঁচিয়ে টং ধরে আছে রানীর দু চোখের ভুরু। আর তার চোখের গর্তে আধফোঁটা আলো আঁধারের মধ্যে চিলিক দিচ্ছে শয়তানী হাসি।

রেজিনা ততক্ষণে পেট খালি করে দিয়েছে। ঘাসের ওপর বিজলা পানি আর বদহজম খাবারের টুকরোটাকরা। তেমন কিছু ছিলও না পেটে। গতকাল মাঝরাতে ফুটপাতের দোকান থেকে রানী আর রোজিনা দুজনেই দুটো করে পুরি আর এক কাপ চা খেয়েছিলো।

দোকানী তাজুল অবশ্য খ্যাক খ্যাক করে ঘসটানো হাসি মেরে বলেছিলো, মোগলাই পরোটা আছে, খাইলে প্যাটে থাকবো বিহান তক। শইল্যে তাগদ থাকবো। নাইলে তো ফুট্টুশ!

নিতান্ত কুৎসিত ইঙ্গিত। কিন্তু এসব কোন কালেই গা সওয়া হয়ে গিয়েছে!

উল্টা রানী ঝামট মেরে বলেছিল, মোগলাই লাগে না। ইলেকট্রিক শইল। মোগলাই ছাড়াই শট মারে।

সেই রানী এখন রোজিনার দিকে চেয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের ভেতর বিজবিজ করছে কৌতুক।

কী লো, তর প্যাটে কি গলা দিয়াই পোলা ঢুইক্যা গেল রুজিনা?

আবার নাটুকে হাসিতে ভেঙে পড়ে রানী।

ধলপহরের নির্জন প্রকৃতি সে হাসিতে কেমন ভূতুড়ে হয়ে ওঠে। রোজিনা কতক্ষণ পেট চেপে ধরেই দম নেয়। আর মনে হয় ওয়াক উঠবে না। গলায় পেঁচিয়ে রাখা ওড়নাটার কোণা দিয়ে মুখটা মুছে নেয় ভালো করে। সেই সাথে আধহাত বের করে দেয় জিভ। আঙুলে ওড়না পেঁচিয়ে আলজিভ পর্যন্ত ডলে ডলে ঘসে। তাতে আবার ওয়াক ওয়াক করে ওঠে রোজিনা। ছোলম বদলানো সাপের মতো গলগল করে বেরিয়ে পড়ে রোজিনার জিভ।

আবার হিহি হাসিতে পাতাবাহার মাতিয়ে দেয় রানী।

গাছপালার আড়ালে আবডালে পানি মেশানো ধ্যারধ্যারা দুধের মতো ফিকে সাদা আলো ফিনিক দিয়ে উঠছে। সেই আলোতে কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকা রানীকে কেমন বাঁশবনের প্রেতিনীর মতো দেখায়। রোজিনার ইচ্ছে করে কন্ধকাটা ভূত হয়ে রানীর ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওর দাঁতকপাটি খুলে নিয়ে ফুটপাথে ছুঁড়ে মারে। জন্মের মতো ঘুচিয়ে দেয় ওর এই ভেটকি। গোল্লা গোল্লা চোখে রানীর দিকে চেয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে –

আমার লগে বেশি খানকিপানা দেহাইলে তরে কলাম কাঁচা খায়া ফালামু রানী!

ঝপ করে আর এক গাল তিতা দুর্গন্ধ রস ঘাসের ওপরে পিচকিরির মতো ছড়িয়ে দেয় রোজিনা।

রানী দুই বুড়ো আঙুল কুৎসিতভাবে নাচিয়ে আবার হাসে – কাঁচা খাবি আমারে? খাবি এই কলাডা। খাইছস না এট্টু আগে? অহন তো হজম করতে পারতাছস না। তর গলা ছোড তয় বড় কলা খাছ ক্যান? অহন বমি কইরা মরস! নে, আমার কাছে মৌরি দেওয়া পান আছে। খায়া ল। মোখটা ভালো লাগবেনে।

রানী ঝোপের আড়াল থেকে তার ছোট বটুয়া বের করে রোজিনাকে দুমড়ানো এক খিলি পান দেয়। মুহূর্তেই বদলে যায় রানীর ভঙ্গি। চোখে মুখে মায়া জেগে ওঠে। ঘামে ভিজে উঠেছে রোজিনার কপাল। রানী হাতের পাতা দিয়ে মুছিয়ে দেয়। একপাশে সরে যাওয়া টিপটা রোজিনার কপালে ঠিকমতো বসিয়ে দেয়। রানীর কণ্ঠ থেকেও ফিকে দুধের মতো মমতা ঝরতে থাকে – তর শইলডা আসলে বেশি কাহিল। এট্টু ভিটামিন খাইস। ভিটামিন এটু জেড। আমাগো জীবনডা তো একটা লাড়াই। লাড়াই করতে তাগদ লাগে তো!

রোজিনার চোখের কোণায় দু ফোঁটা পানি টলটল করে। রানীর হাতটা আস্তে ঠেলে দিয়ে ঘাসের ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে সে। ধাপ ধাপ করে দম নেয়। এতক্ষণ বমি করে বুকের কোটরে ঝুলতে থাকা দমের বেলুনটা যেন খালি হয়ে গিয়েছিলো। পানের খিলিটা মুখে পুরে দিয়ে আস্তে আস্তে চিবায়। সুরুৎ করে টেনে নেয় পাতলা রস। একটু করে যেন বাতাস ঢোকে বেলুনে।

রানীও পাশে বসে পড়ে। রানী আজ লাল ফুলের ছাপ দেয়া জর্জেট শাড়ি পরেছে। শাড়ির আঁচলটা ঝপাৎ করে কোলের ওপর ফেলে দিয়ে ব্লাউজের ফাঁক থেকে পাইপের মতো মোড়ানো কটি নোট বের করে আনে। যত্ন করে ভাঁজ খুলে টাকাগুলো গুনে দেখে। পান চিবাতে চিবাতে রোজিনা রানীর টাকা গোনা চেয়ে চেয়ে দেখে। রোজিনার মুঠোর ভেতর এখনও একটা তেলতেলে ময়লা বিশ টাকার নোট। নোটটা জামার ফাঁকে রাখার সুযোগ হয়নি আর। তার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল আতুড়ি উল্টে আসা ওয়াক। মুঠোটা একটু আলগা করে টাকাটা অনুভব করে। মনে হচ্ছে মুঠোর ভেতর একটা মরা চামচিকা ধরে আছে রোজিনা। অথচ চামচিকাটাকে ঘেন্না করে ছুঁড়ে মারতে পারে না। চোখের কোনা বেয়ে দুটো পানির ফোঁটা কানের কাছে গড়িয়ে পড়ে। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে – হায় রে ট্যাকা!

রানী টাকা মুড়িয়ে বটুয়ায় ঢুকিয়ে রেখে রোজিনার পাশে শুয়ে পড়ে।

বড় বড় কড়ই আর জারুল গাছের ফাঁকে ঝুলে আছে ম্যাদা মারা ফ্যাকাশে আকাশ। ধলপহরের আঁধারিয়া আলোয় সে আকাশ কেমন ময়লা ত্যানার মতো দেখায়। দক্ষিণের ফুটপাতের একটা লাইটপোস্টে তখনও বাতি জ্বলছে। তবে তার আলোটা টিউবের ভেতরেই ধুন ধরে আছে। বাইরে তার কোনো ফোকাস নাই। শেডের ভেতরে কেজিখানেক মরা পোকার তূষ জমে আছে। রোজিনা টলটলে চোখ মেলে সেই আলোটার ভেতরে কী মধু দেখতে থাকে আল্লা জানে। ওদের জীবনের সাথে ঐ শালার ফোকাস-টসকে-যাওয়া বাত্তির কি কোনো তফাৎ আছে!

রানী রোজিনার কানের পাশ থেকে পানির ফোঁটা মুছিয়ে দেয়। মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বলে – এত বমি করতাছস ক্যান? হাছাই প্যাট বাজাইছস? বড়ি মড়ি খাছ না? তিন চাইর বচ্ছর অইয়া গেল, বুঝ না কইরা চললে তো মরবি। কে দেখবো তরে? জাউরা বাচ্চার দায়দাইত্য লইব কে? প্যাট খসানোও বহুত ঝামেলার। কাড়ি কাড়ি ট্যাকা লাগে।

রোজিনা ঘাড়টা একটু তুলে থুঃ করে এক দলা পিচকি পাতাবাহারের গোড়ায় ছুঁড়ে দেয়। বিকৃত হয়ে ওঠে মুখ। জিভ দিয়ে গড়িয়ে পড়া পানরস মুছে নিতে নিতে বলে – না, অই সব কিছু না।

তয় যে উটকি পারতাছস!

গুয়ের গাইরার শুয়ারগুলা আহে। আইগ্যামুইত্যা পানি লয় না। খাচ্চরের খাচ্চর। দুরকুইষ্টা গন্দ! ম্যাগগো!

আর এক দলা পিক ছুড়ে মারে রোজিনা।

লগে বেলেড থাকলে আইজ দিতাম শুয়ারের বাচ্চার হেইডা গোড়ার থনে নামায়া।

রানী চিৎ হয়ে শুয়েই দুহাত টান টান করে আকাশে তুলে মটমট করে আঙুল ফোটায়। হেসে গলে পড়ে। রানীর এই এক অভ্যাস। কথার আগে পিছে পাঁচবার করে হাসে। তবে রানী যেন এখন সত্যিকার প্রেতের মতই হাসে। বলে, বেলেড না, ক্ষুর রাখিছ। দরকার হইলে গলা তলা দুইডাই কাটন যাইব। আমি দেখছি তো, ট্যাকা বাইর করতে করতে ব্যাডায় তরে জানি কী কইতে আছিল। কী কয়?

জাউরার ঘরের জাউরা কইব আবার কী! ঘিন্নায় আমারে ছ্যাপ ফালাইতে দেইখ্যা কুত্তার বাচ্চায় কয় কি, বেশ্যা মাগির মোখ আবার মোখ নাকি, হেইডা তো পায়খানা! খালি দুইজন ভদ্দর লোক, আচানক দেখি ফুটপাত দিয়া হাইটা যাইতেছে, তাই ঐ শুয়ারের বাচ্চারে কিছু কইতে পারলাম না। নাইলে মনডা চাইছিলো অর লুঙ্গিডা টান মাইরা খুইলা রাইখা দেই।

আবার হিহি করে হেসে ওঠে রানী – তুই টান মাইরা খুলবি কি! গোলামের পুতেরা তো এই ধলপহরে পার্কে আহেই লুঙ্গি খোলতে খোলতে। রাইত ভইরা এগুলান ঠেলা বায়, টেরাকে কইরা মাল টানে। হের বাদে ডেরায় ফিরোনের আগে হস্তায় মজা মারোনের লাইগা আসে এইহানে। তর কাছে, হেসুম যেই জাউরার পুতে আইসা ভঙ্গি কইরা খাড়াইল হেইডারে দেখতেই তো কেমুন ঘিন্না লাগতাছিল। চুলে দাড়িতে জঙ্গুইলা শয়তান একটা। ব্যাডায় মনে হয় এক মাসের আগুছুইল্যা। অরে উষ্টা মাইরা লৌড়াইতে পারলি না?

রানীর কথায় রোজিনা কিছু বলে না। চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। আস্তে আস্তে পানের রস গিলে নেয়।

রানী তার কৃতকর্ম আড়াল থেকে দেখেছে – এটা রোজিনার কাছে কোনো লজ্জা তো নয়ই কোনো ভাবনার বিষয়ও যেন নয়। বরঞ্চ রানী আর রোজিনা নিজেদের মনে করে পরস্পরের সমব্যথী। নিজেদের সুখ দুঃখ ওরা এভাবেই ভাগাভাগী করে নেয়।

রানীও আর কিছু বলে না। রোজিনার মতো সেও চুপচাপ আকাশ দেখে। এই পার্কে এলে তাও আকাশ দেখতে পায়। গাছপালা ঘাসলতাপাতার বনজ গন্ধ পায়। পাখপাখালির চিড়িকপিড়িকও শুনতে পায়। মাঝে মাঝে ফেলে আসা গ্রামের কথা মনে করে। জলাজঙ্গল খালবিল কচুরিপানা ধানখেত কলাই সরিষা ডুবসাঁতার শাকপাতা কুড়ানো কাঁচা আমের ভর্তা আর আকাশ তোলপাড় করা কালো মেঘ – কতগুলো টুকরো টুকরো ছেঁড়াখোঁড়া ছবি জোড়া দিয়ে একটা মধুর শৈশব-ফোটানো গ্রামের কথা রানীর মনের ভেতর এখনও মাঝেমাঝে হাতপা ছুড়ে ছটফট করে ওঠে।

রানী-রোজিনা গ্রামসুবাদে ওরা কোনো আত্মীয় নয়। বাংলাদেশের দুই প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের গ্রাম। সে গ্রাম রানী রোজিনার জন্য স্থায়ী আবাস হতে পারেনি। ক্ষুধা দারিদ্র্য আর দুর্ভাগ্য তাদের গ্রাম থেকে ছুঁড়ে দিয়েছে দূরে। নিয়তির স্রোতে ভাসতে ভাসতে ওরা চলে  এসেছে রাজধানী শহরে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পেছনের ঘিঞ্জি বস্তিতে আরও অনেক ভাগ্যহীনা রেহানা হালিমা কোহিনুর হাসিনা রুপা লাইজুদের সাথে রানী-রোজিনার ঠাঁই হয়েছে। কাজেই এখন ওরা আত্মীয় বটে। তবে রোজিনাকে সবক হিসেবে রানী প্রথমেই একটা কথা বলে দিয়েছে – দুটো জিনিস ওদের মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে অপারেশন করে ফেলে দিয়ে আসতে হয়। তা হলো আত্মা আর পিত্তি।

আত্মা থাকলে মন্দ কামে আত্মার বটুতে টান পড়ে, মন হায় হায় কইরা ওঠে, পাপের চিন্তায় মাথা আউলাবাউলা হয়া যায়, আর পিত্তি থাকলে ঘিন্না আহে, উটকি আহে, উখাল আহে, ছ্যাপ আহে, নাড়িভুড়ি উইলটা আহে। এইসব আহা-আহি বাদ। কাজেই রানীর নাগরী-রাত্রির সহচরী হতে গিয়ে রোজিনা ধীরে ধীরে মনটাতে অনেক রকম কাটাছেঁড়া করে নেয়। কিন্তু তারপরেও কখনও মনে হয় সব কিছু উল্টে আসতে চায়। এমন কি পিত্তিও!  

মাঝে মাঝে রোজিনার মনে হয়, এই পাপের দুনিয়ায় তার জন্ম না হলে কী এমন ক্ষতি হতো! অথবা মা মরে যাওয়ার পর তার বেঁচে থাকবারই বা দরকার কী ছিলো! মা-র কথা তো মনেই নেই তার। শুধু জানে, তাকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা-বেটি বিসূচিকা হয়ে আতুড়েই আধা-মরা হয়েছিলো।  তারপর হাড়চামড়া লাগালাগি হয়ে কোনোমতে কোঁ কোঁ করে বছর তিনেক বেঁচেছিলো। একদিন বদনা নিয়ে টাট্টিখানায় যাবার পথে চোখ উল্টে মরে পড়েছিল। লোকে বললো বদ জিনে রক্ত শুষে দেহ ছোবড়া করে খেয়ে ফেলেছে। আর বউ মরার তিন মাসের মাথায় রোজিনার বাপ আবার বিয়ে করেছিলা। বড় বোন সখিনা তখন সাত বছরের শিশু। সে-ই বুকে তুলে নিয়েছিল ছোট্ট রোজিনাকে।

সতালো মায়ের লাত্থিগুতা খেয়ে দু বোনের দিন পার হতে থাকে। খাওয়া জুটুক আর না জুটুক সখিনার শরীরে জোয়ার আসে। মায়ের ভাই দুলন মামা কয়েকদিন সখিনাকে আড়ালে আবডালে চেপে ধরে। রাতের বেলা ঘরের চালায় ঢিল পড়ে। জানালা দিয়ে জিংলা বাঁশের খোঁচা এসে লাগে ঘুমন্ত সখিনার গায়ে। বাপ এসব দেখে পাশের গ্রামের দোজবর নূরু মিয়ার সাথে সখিনার বিয়ে দিয়ে দেয়। সখিনার যখন বিয়ে হয় রোজিনার বয়স তখন এগার বছর। সে মাঝে মাঝেই বড় বোনের জন্য কেঁদে বুক ভাসাতে লাগলো। আর তার শাস্তি হিসেবে জুটতে লাগলো সতালো মায়ের ধাতানি।

একদিন সতালো মায়ের ভাই দুলনকে তার বাপ বললো রোজিনাকে সখিনার শ্বশুরবাড়িতে কয়েকদিনের জন্য রেখে আসতে। দুলন মামার সাথে পথে নেমে তার চোখের দিকে তাকিয়ে কিশোরী রোজিনা একটা বাঘডাশার চোখ যেন দেখতে পেয়েছিল। গ্রাম ছাড়িয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর একটা পাটখেতে বাঘডাশাটা ঝাঁপিয়ে পড়ে। সবুজ পাটখেতে রোজিনার লাল ফুলের ছাপ দেয়া জামাটা মুখ থুবড়ে পড়ে। ওর ছোট্ট শরীর চটকাতে থাকে বাঘডাশা। ধর্ষিতা রোজিনা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলে দুলন তার মুখ ঠেসে ধরে। তারপর পকেট থেকে এক টাকার একটা চকচকে মুদ্রা বের করে হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলো, মেয়ে হলে বড় হতে হতে এসব ঘটনা ঘটে। এটা কান্নার কোনো বিষয় না। আর এসব কথা অন্য কাউকে না বললে সে আরও বড় বড় নোট পেতে পারে।

কিন্তু রোজিনা সেই মুদ্রাটা বড় বোনের হাতে তুলে দিয়ে হেঁচকি তুলতে তুলতে সব কথা বলে দিয়েছিলো।

সখিনা চোখের জলে গাল ভাসিয়ে বোনকে বুকে চেপে ধরে। সান্ত্বনা দেয় – স্বামীকে বলে, রোজিনাকে নিজের কাছেই রেখে দেবে সখিনা। নয় তো শয়তান দুলন ওর জীবন নষ্ট করে দেবে। গ্রামের চেয়ারম্যানের কাছে দুলন মামুর বিচারও চাইবে সখিনা।

সখিনার বর রোজিনার দুর্ভাগ্যের কথা শুনে মোচে মোচড় দিয়ে বলে, আপনা মামু তো না! কাজেই পাটখ্যাত ধৈঞ্চাখ্যাত-এ দোষ নাই। চাইপা যাও। এইসব কতা লইয়া বিচার বৈঠক করলে মাইয়াগোই বদনাম হয়।

বোনের বাড়িতে কয়েকদিন বাদে এক দুপুরে খ্যাড়ের পালার আড়ালে সখিনার বর নূরু মিয়াও চেপে ধরে রোজিনাকে।

খ্যাক খ্যাক করে হাসতে হাসতে বলে, কছমা পেয়ারা খাইয়া দেহি কেমুন লাগে। মামুতে খাইব, আর আমি দুলাভাই কি আঙ্গুল চুইমু?

রোজিনা চিৎকার দিতে গেলে নূরু মিয়াও দুলনের মতো একই কায়দায় ফতুয়ার জেব থেকে বের করে এনেছিলো একটি চকচকে মুদ্রা। মুঠোর ভেতর গুঁজে দিয়ে বলেছিলো, নতুন ট্যাকা। দ্যাখ কেমুন সোন্দর।

রোজিনা যদি এসব কথা কাউকে না জানায় আরও বেশি পাবে। আর জানালে বোন তালাক হয়ে যাবে।

দুলন মামুর দেয়া মুদ্রাটা সখিনাবুবুকে দিয়ে দিলেও দুলাভাই নূরু মিয়ার মুদ্রাটা রোজিনা মুঠোর ভেতরেই রেখে দেয়। আসলে মুঠোয়ও না, সেই মুদ্রা সে রেখে দেয় তার কপালের মাঝখানে। টিপ দিতে গেলে রোজিনার সব সময়ই মনে হয় কপালের মাঝখানে একটা চকচকে ধাতব চাকতি বসানো আছে। দানবের চোখের মতো সেই চাকতি ধ্বকধ্বক করে জ্বলে। ঐ চাকতিকে তার জীবন থেকে আর যেন ছুটানো যাবে না। সতের বছর বয়স হতে হতেও নূরু মিয়া দুলন মামুদের ছুটাতে পারে না রোজিনা। 

আটার কলে কাজ করতে গিয়ে একদিন মেশিনের ফিতায় লুঙ্গি পেঁচিয়ে মারা পড়ে রোজিনার বাপ। তার পর বছর খানেকের মাথায় সতালো মা আর দুলন মামুর যোগসাজসে একদিন রোজিনার বিয়ে হয়ে যায় দুলনের শহইরা দোস্ত হাশেমের সাথে। শ্বশুর বাড়ি নেওয়ার নাম করে এক অজানা লোকের বাড়ি নিয়ে গিয়ে তুললে রোজিনা টের পায় হাশেম আরও বড় দুলন মামু। হাশেম তাকে ভাওতা দিয়ে বিয়ে করেছে। দুলন মামু নূরু মিয়া দুজনেই টাকা খেয়ে রোজিনাকে তুলে দিয়েছে হাশেমের হাতে।

পয়লা রাতেই হাশেম কোমর থেকে একটা কাপড়ের বটুয়া বের করে ঝুনঝুন করে নাচায়।

মুদ্রা-ভরা বটুয়া!

রোজিনার জন্য খরচ-করা টাকাগুলো তো উসুল করতে হবে!

দেনমোহর উসুল না হলে বউয়ের গায়ে হাতে দেবে কী করে!

ভুয়া হোক তবুও তো স্বামী। কাজেই বিনা চাকতিতেই হাশেমের সাথে বাসর হয় রোজিনার। পরের রাতে আর হাশেম নয়,  ঘরে ঢুকেছিল বিড়ির ব্যাপারি আলতু শেখ। হাশেমের বটুয়ার উসুল-মুদ্রার মাজেজা বুঝতে অসুবিধা হয় না রোজিনার।

হাশেইম্যার কাছ থেকে আলতু শেখ – তারপর আরও সাত আটজনের হাত বদল হয়ে, খইল্যার আস্তানায় মাসখানেক বন্দী থাকার পর ছিন্নভিন্ন জামাকাপড় আর ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে একদিন গভীর রাতে পালিয়ে এসেছিল রোজিনা। ‘মেডিকেল’ খুঁজতে খুঁজতে পার্কের গাছতলায় ঘাসের ওপর প্রচণ্ড ক্লান্তিতে লুটিয়ে পড়েছিলো। পরের দিন তার ঘুম ভাঙে পার্কের গার্ডের লাঠির গুঁতো খেয়ে। গোঁফ মুচড়ে হাসে লোকটি। রোজিনার স্তনে লাঠির খোঁচা দিয়ে কুৎসিত মন্তব্য করে। টাকা চায়।

রোজিনা অবাক হয়ে বলে, কিসের টাকা?

টাকা তো রোজিনার কাছে নেই! কেনই বা ও টাকা দেবে? আসমানের তলায় ঘুমাতে গেলে ভাড়া দিতে হবে?

রোজিনা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘচাৎ করে ওর কামিজের ফাঁকে হাত গলিয়ে দেয় লোকটি। প্রচণ্ডভাবে মুচড়ে দেয় স্তন। বলে – টাকা নাই তো কিছু তো দিতে হইব, না কি? দেনাপাওনা ছাড়া কি দুনিয়া চলে?

ক্লান্ত দেহটাকে টেনে তুলে রোজিনা অবাক হয়ে লোকটাকে দেখে। ভুরু নাচিয়ে হাসে লোকটি। হাশেমেরই বয়সী! রোজিনার মনে হয় এও বুঝি হাশেমেরই লোক। হাশেম কি এখানেও এসে হাজির হয়েছে? রোজিনার চারপাশে অসংখ্য হাশেম! মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে হাশেম। গাছের ডাল থেকে বানরের মতো লাফ দিয়ে নেমে আসে আরও হাশেম।  চারপাঁচজন লোক। এরা কোথায় ছিল বুঝতে পারে না রোজিনা। এলোমেলো ওড়নাটা শরীরে জড়াবার সুযোগে লোকটা আর একবার লাঠি দিয়ে বগলে খোঁচা মারে। বলে – জলদি ভাগ। খালি ট্যাঁক নিয়া পার্কে মৌজ মারবা আর ঘুমাইবা তা হবে না। বাকি হাশেমেরা বিড়ি-খাওয়া কালো দাঁত কেলিয়ে হাসে।

রোজিনার মনে হয় পার্কের গাছগুলোর শাখা-প্রশাখার ভেতর থেকে একটা করে পাকানো লাঠিধরা হাত নেমে আসছে। লাঠিগুলো একসাথে খুঁচিয়ে দিচ্ছে রোজিনার সারা শরীর। শরীরের অদৃশ্য খোড়ল থেকে ভুস ভুস করে বের হতে থাকে রক্ত। রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে রোজিনা।

রানীর সাথে সেখানেই রোজিনার পরিচয়। কোথা থেকে চিলের মতো উড়ে এসেছিলো রানী। ওদের হাত থেকে ছোঁ মেরে তুলে নিয়েছিল রোজিনাকে। রানীর জীবন কাহিনী শুনে বলেছে, এই হিস্টোরিডা কাগজে পেচাইয়া চুলায় গুইঞ্জা দে। জ্বইলা পুইড়া ছাই হইয়া যাউক গা। শহরে আইসা এখন নতুন কইরা হিস্টোরি লেখন লাগবো। আমাগো পুরানো হিস্টোরি কেউ শুনবো না।

রানীই রোজিনাকে নিয়ে আসে ওদের বস্তিতে।

এই শহরে রোজিনাদের মতো ছন্নছাড়া মেয়ের একলা থাকা বড় কঠিন। আপাতত থাকুক রোজিনা রানীর সাথে। তারপর যত তাড়াতাড়ি পারুক কোনো একটা কাজ খুঁজে নিজের ব্যবস্থা নিজে করে নিক। বস্তিতে একটা চালা ভাড়া করে থাকতে হলে আগে এলাকার মাস্তানকে টাকা দিতে হবে। ফুটপাথে খোলা বস্তিতে থাকেতে হলেও পুলিস দালাল মাস্তান সবাইকে মাসোহারা দিয়েই থাকতে হবে। এ শহরে টাকা রোজগার করা যেমন কঠিন তেমন সহজ। রোজিনা পথ বুঝে নিক।

হাসপাতালের বর্জ্য কুড়িয়ে-আনা দলের সঙ্গে রোজিনাকে লাগিয়ে দিয়েছিলো প্রথম। একদিন ডাস্টবিনে বর্জ্যের সাথে একটা মেয়েমানুষের পচাগলা কাটা ঠ্যাঙ দেখে বমি করে চোখ উল্টে দিয়েছিলো রোজিনা।

রানী বলে, হাসপাতালের ভেতরে কাজ আছে। কোনটা করতে চায় রোজিনা। রিস্ক আছে, টাকাও আছে। বাচ্চা চুরি, ওষুধ চুরি, রক্ত চুরি। কতরকম চুরির সুযোগ আছে! টসকাতে পারলে ভালো, না পারলে জেলের ভাত। রানীদের বস্তির হনুফা বেওয়া, বাদইল্যার মা, জরিনা, পারু, এরা সব সরকারি ওষুধের কার্টনসহ ধরা পড়ে এক বছর ধরে জেল খাটছে। টাকা খরচ করতে না পারলে বছরের পর বছর জেলেই পচে মরতে হবে। বিচার হবে না।

তবুও রোজিনা ঢুকেছিলো। ইসমাইল, পচা, জুলেখা, নাসরিন এদের সাথে। হাসপাতালের মেট্রন ওয়ার্ড বয় এদের সাথে একটা অলিখিত চুক্তি থাকে। টাকার বখরা দিতে হয় ওদের। কয়েকদিন না যেতেই সেই বখরার চেহারা দেখে রোজিনা মুষড়ে পড়ে। কাজে অকাজে, এমন কি লোকজনের সামনেও জুলেখা রোজিনাদের শরীর খামচে দেয়া, যেখানে সেখানে হাত চালিয়ে মুচড়ে দেয়া বখরাওয়ালাা লোকগুলোর জন্য পান্তাভাত। 

এক রাতে ওয়ার্ডবয় মকবুইল্যা সিঁড়ির নিচে ঘুমন্ত রোজিনাকে তার স্তন ধরে টেনে ওঠায়। মকবুলের সাথে আছে আরও দুজন। বাংলা খেয়ে মাতাল হয়ে এসেছে। হাসপাতালে শুয়ে ঘুম-যাবার বখরা চায় ওরা। রোজিনাকে টেনে নিয়ে যায় টাল করে রাখা সিমেন্টের বস্তার আড়ালে। বমি বমি আর বমি। বিধ্বস্ত রোজিনার সারা শরীর ওরা বমি করে ভাসিয়ে দেয়। আত্মা পিত্তি কোনোটাই অপারেশন করা হলো না রোজিনার। হাসপাতালের সিঁড়িতে একদলা ছ্যাপ মেরে কাজ ছেড়ে চলে এসেছিলো।  

শেষ পর্যন্ত রানীর সাথেই রোজিনা কাজ করতে চায়।

রানী তার বুড়ো বাপকে নিয়ে থাকে। একটা ছোট ভাইও আছে। বারো তের বছর বয়স। কোথায় থাকে কোথায় খায় ঘুমায় রানী জানে না। তবে বস্তির এই বয়সী ছেলেছোকরাদের বেশিরভাগই হেরোইন আর ফেনসিডিল ব্যবসার সাথে জড়িত। মাদকের চালান এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় সাপ্লাই দিতে শিশুদের ব্যবহার করা অনেক নিরাপদ। এই কাজের সাথে যুক্ত হয়ে একসময় ওরা নিজেরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে ওদের কেউ কেউ পুলিসের হাতে ধরা পড়ে, কেউ নেই হয়ে যায়। তবে এসব নিয়ে  খুব বেশিদিন হা-হুতাশ বা শোক করার সময় ওদের থাকে না। রানী মাঝে মাঝে ভাইয়ের জন্য অস্থির হয়। নেশার টাকায় টান পড়লে মাঝে মাঝে ভুস করে উদয় হয় সুরুজ। ঘরে বসে থাকে থম ধরে। তারপর সুযোগ বুঝে রানীর ব্যাগের টাকাপয়সা পকেটে ভরে পালিয়ে যায়। রানী শাপশাপান্ত করে। দেখা পেলে কোরবানী দিয়ে দেবে বলে বাপকে শাসায়। আবার ভাইয়ের জন্য বিলাপ করে কাঁদতেও বসে।

রানীর সাথে রোজিনা কাজ করতে চায় শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছিল রানী।

বলে, চৌক্ষের পানি আর বদ রক্ত হগলই নিচের দিকে নামে, জানস তো! জাইনা বুইঝা লইস কলাম।

রানী না বললেও ততদিনে রোজিনার অনেক কিছুই জানা হয়ে গিয়েছে। রানীর সাথে বেরিয়ে গলিঘুপচিগুলোও জানা হয়। শরীরের এত রকম রেট আছে! রানীর কাছ থেকে শুনে মুখস্থ করতে গিয়ে অবাক হয়ে নিজের বুক জোড়া নিজেই চেপে ধরেছিলো রোজিনা। এই মোচড়ের রেট সবচেয়ে কম! আশ্চর্য! প্রথম যখন দেহের ভেতর থেকে এই অঙ্কুর দুটো গজিয়ে উঠেছিলো, কেমন জ্বর জ্বর শিহরন! কী দামী দুটো জিনিসের মালিক মনে হয়েছিলো নিজেকে! শুওরের বাচ্চা দুলন তার রেট করেছিলো এক টাকার একটা মুদ্রা!

রোদ্দুর বেড়ে উঠলে ওরা দুজন পার্ক থেকে বেরিয়ে আসে। রানী বাপকে নিয়ে হাসপাতাল যাবে। বুড়োর বুকের ভেতর একটা ইটের দলার মতো কফের পিণ্ড আটকে আছে। কাশতে কাশতে বস্তির লোকের ঘুম হারাম করে দেয়। রানীও শাপশাপান্ত করে। দম কেন বের হয় না মরকুইষ্টা বুড়ার!

বাপের জন্য আজ গতরাতের রোজগারের সবটাই যাবে। আজ খেতে হবে পাত্থরের ঝোল। মরার বাপ কেন মরে না! বস্তিতে ফিরে গিয়ে কিছু তো খেতে হবে! দুটো তো রাঁধতে হবে। কী রাঁধবে আজ! মানুষের পেটটা যদি না থাকতো! পেটের থলিটাকে যদি সত্যি অপারেশন করে ফেলে দেয়া যেতো! মেয়েমানুষ বাচ্চা না চাইলে বাচ্চাদানী অপারেশন করে ফেলে দেয়। পাকস্থলিটা তেমন ফেলে দেয়া যায় না?

ল রুজিনা, আমরা প্যাটের থইলা কাইটা ফালায়া দেই। প্যাট তো দুই তিনবার ফালাইছি। তয় সেইডা অন্য প্যাট। এহন প্যাটের ভিতরের ভাতের থইলা কাইটা ফালায়া দিই। খাওন লাগবো না। ফিলমের নায়িকাগো লাহান প্যাটও থাকবো ফেলাট!

রোজিনার পেটে খোঁচা দিয়ে হি হি করে হাসে রানী।

রোজিনা এখনও চুপচাপ। কথা বলে না। রানীর কথায় মৃদু হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটে।

তার পরেও ওরা দুজন পেটের চিন্তা করতে করতেই পথ হাঁটে।

ফুটপাথের তরকারির ভ্যান থেকে রানী কিছু শাকপাতা কেনে। রোজিনা লাউশাক বেগুন আর গুঁড়ো চিংড়ির শুটকির একটা প্যাকেট কেনে। সব মিলিয়ে চুয়াল্লিশ টাকা। পঞ্চাশ টাকার একটা নোট দিলে লোকটা রোজিনাকে পাঁচটাকা ফেরত দেয়। রানী খ্যালখ্যাল করে ওঠে – অই মিয়া, আর এক ট্যাকা দেও।

লোকটা দাঁত বিটকে হাসে। বলে, এক ট্যাকা আবার দেওন লাগবো?

লাগবো না মানে? এক ট্যাকার দাম নাই?

রানী কোমরে হাতে রেখে শিরদাঁড়ায় বাঁক তুলে শরীরকে তলোয়ারের মতো ধারালো করে তোলে। যেন টাকা না দিলে এক কোপে লোকটাকে দু টুকরো করে ফেলবে।

লোকটি রোজিনার হাতে তিনচারটি কাঁচামরিচ তুলে দিয়ে বলে এক টাকার কয়েন নাই, তার বদলে মরিচ লও!

মরিচ? এক ট্যাকার বদলা তিনখান মরিচ?

তয় কী? অহন তো দুই হাজার বারো। তেরোতে অইবো ট্যাকায় একটা। আর চৌদ্দতে এক ট্যাকায় আর মরিচ না পাইবা মরিচের বটু! লোকটা কাঁচামরিচ থেকে ঝরা বোঁটা তুলে ফেলে দিয়ে হাত ঝাড়ে।

রানী ছোঁ মেরে রোজিনার হাত থেকে মরিচগুলো কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু তার আগেই রোজিনা কচকচ করে একটা মরিচ চিবিয়ে খেয়ে নেয়। দোকানী হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। বলে, মোখে দেহি হোদবোধ নাই! ঝাল লাগে না?

রানী অবাক হয়ে বলে, তর হইল কী ছেমরি? হুদা হুদা কাঁচামরিচ খাইতাছস ক্যান?

রোজিনা কথা বলে না। একটু শিস দিয়ে ঝালটা সয়ে নিয়ে বাকি মরিচ কটি যত্ন করে তার টাকার বটুয়াটির ভেতর ঢুকিয়ে রাখে। ভেতরে একটু নজর করে। হ্যাঁ, মুদ্রার সাথে ভালো মানিয়ে গেছে মরিচ!

রোজিনা ফিসফিস করে বলে, মরিচ দিয়া কী করবি?

উদাস গলায় রোজিনা বলে, দরকার মতো চাবায়া খায়া লমু।

খিক খিক করে গাব গাছের পেত্নীর মতো হাসে রানী।

লেখক:
Jharna Rahman_Photo
ঝর্না রহমান, কথাসাহিত্যিক, কবি, সম্পাদক ও কণ্ঠশিল্পী

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.

About Author

বাঙালীয়ানা স্টাফ করসপন্ডেন্ট