এসো আমরা নাচি । সালেহা চৌধুরী

Comments

জায়গা এসেক্সের কাছে। বিচার বলে একটি গ্রামে। পল সেখানে গেছে ওর বন্ধুর আমন্ত্রণে। ওখানে স্কুলে পড়তো। তারপর ওখান থেকে লন্ডন চলে আসে মিস্ত্রি বাবার সঙ্গে। এরপর য়ুনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করছে। দুই বছর হলো একটা চাকরি শুরু করেছে। দু-একজন বন্ধু বান্ধবী থাকলেও আপাতত একার জীবন।

পলকে ফোন করেছে রব। – হাই পল এখান থেকে যে গেছ তারপরতো কখনো আসনি। এসো এখানে একবার। আমার জন্মদিনে একটা হল ভাড়া নেওয়া হয়েছে। বাবাই সব ব্যবস্থা করছেন। হারিয়েট হলে নাচ-গান-খাওয়া। তুমি থেকে যেয়ো। মনে আছে আমাদের স্কুলের জীবন? কত সব এ্যাডভেঞ্চার ছিল তখন। তুমি যে মেয়েটাকে ফ্যান্সি করতে সেই রুথ আসতে পারবে না। বিয়ে টিয়ে করে সংসার গুছিয়ে বসেছে। তবে অনেকেই আসবে। তোমার ভালো লাগবে। রুথের চাইতেও সুন্দরীরা আসবে। আসছো তো?

পল এক কথায় রাজি হয়ে গেছে। ছোট একটা গাড়ি আছে ওর সেটা চালিয়ে আসবে বলে তৈরী। বন্ধুনী শিবা বলে
– যাও। আমি যাব না। পুরনো কতজনের সঙ্গে দেখা হবে তোমার। হ্যাভ ও নাইস টাইম।


পল গাড়ি চালাতে চালাতে ফেলে আসা স্কুলের কথা ভাবছে। একটা মিক্সড স্কুলে পড়তো ওরা। বিচার ম্যানোর বেশ নাম করা স্কুল। ওর চেহারায় একটা রক হাডসন ভাব আছে বলে অনেক মেয়েই ওকে পছন্দ করতো। সবার কথা তেমন মনে নেই। তবে রিয়ার কথা মনে আছে। রিয়া বোধহয় রুথকে ঈর্ষা করত। পলের তো তাই ধারণা। কখনো রিয়া বলেনি – কি আছে ওর মনে। একটু চাপা স্বভাবের বরাবর। তবু বোঝা যায় কোন মেয়ের ভালো লাগা। কিন্তু রুথের কাছে রিয়া যেন একেবারেই আনকোরা একজন। যেমন খলবল করে রুথ ওকে আকর্ষণ করেছিল রিয়া তেমন পারেনি। সবাই কি সবকিছু পারে? রুথ আর পল বেশ এক জুটি হয়ে অনেকের ঈর্ষা কুড়িয়েছে। রিয়া তাদেরই একজন। যে বার স্কুলে একটা নাচের অনুষ্ঠান হয় পল নেচেছিল রুথের সঙ্গে। দূরে একটা টেবিলে বসে রিয়া ওদের দেখছিল। আর কারো সঙ্গে নাচেনি রিয়া। রুথ কানের কাছে মুখ এনে বলেছিল – রিয়া ইজ জেলাস। পল একবার ভেবেছিল ওকে নাচতে ডাকবে। কিন্তু যখন ডাকবে ভাবছে টেবিল থেকে উঠে আগেই চলে গিয়েছিল রিয়া। এইসব ও ভাবছে হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে – কতক্ষণ লাগবে তোমার? রবের গলা।

সন্ধ্যার আগেই চলে আসব।

একটু আগে বাড়ি থেকে বের হতে পারনি?

একটা কাজে আটকে পড়েছিলাম। সরি রব।

ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসো। রাস্তায় কি খুব ট্রাফিক?

না তেমন ট্রাফিক নেই।

কি একটা গান বাজছে আর পল যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে পলের পার্টির জায়গা হ্যারিয়েট হলের দিকে যাবার চেষ্টা করছে। মনে হলো ইস সন্ধ্যা তো হয়ে গেছে। আটটায় কী যেতে পারবে। অক্টোবরের মোটামুটি ছোট দিন। নাচ, গান খাওয়ার সময় আটটা টু মিডনাইট। কিম্বা বলা যায় মিডনাইট টু মর্নিং। একটু ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হলো। জানালার কাচ একটু ঘোলাটে। ওয়াইপার কাচ পরিস্কার করলেও বেশ ঘোলাটে ভাবটা যায় না। একটা প্রিয় গান বাজছে। কি যেন ভাবতে ভাবতে পল লক্ষ্য করে কে একজন তাকে হাত ঈশারায় গাড়ি থামাতে বলছে। একজন মেয়েই তো মনে হলো। ছাতা বা বর্ষাতি কিছু নেই। বেশ একজন নিরুপায় নারী। এই অচেনা জায়গায় গাড়ি থামিয়ে কোন বিপদে পড়ব? এসব ভাবনা বাদ দিয়ে মন কেবল বলছে বৃষ্টিতে, বাজে আবহাওয়ায় আটকে পড়া একজন নারী। একজন অসহায় নারী। ব্রেকে পা দেয়।

গাড়িটা থেমে যায়। গাড়ির দরজা খুলে বলে – ভেতরে উঠে এসো। মেয়েটা গাড়িতে উঠে বসে। চমকে যায় পল। আরে এতো রিয়া। ওর স্কুলের সেই ঈর্ষান্বিত রিয়া। বলে ও – রিয়া তুমি? কোথায় চলেছো? ঠিক আগের মত দেখতে। একটুও বদলায়নি। আট বছর রিয়াকে স্পর্শ করেনি। স্কুলের কিশোরীর মত সেই আনকোরা মুখ যে মনের কথা বলতে জানে না। কেবল বুকের ভেতর কষ্ট ধরে রাখে। আবার বলে – কোথায় চলেছো রিয়া? যেন গতকালের পর আজ আবার ওদের দেখা হলো।

তুমি যেখানে যাবে। গলার স্বর একেবারে আগের মত। যাকে বলে একটু হাসকি ভয়েস। সেইতো ঘন চুলে পনিটেল। রবার বান্ডে দুটো লাল ফুলকুড়ি। রিয়া বলতো ফুলদুটো লরিরোজ। আমার খুব প্রিয় ফুল। এই ভাবে চুল বেঁধে তো ও স্কুলে আসত। চুল একেবারে তেমনি আছে। একটু কোঁকড়া, ঘন, সুন্দর। মাঝখানে চলে গেছে কতগুলো বছর। তারপরেও।

ও তুমি আসবে রব তো কিছু বলেনি।

রব জানে না। আমি অন্য একজনের কাছে পার্টির খবর পেয়েছি। তবে ভাবিনি তোমার সঙ্গে এই ভাবে পথের মধ্যে দেখা হবে। পল একটা রুমাল এগিয়ে দেয়। বলে – মাথা মুছে ফেল। তোয়ালে নেই। রুমালে কাজ সারো। তারপর বলে – অবাক কান্ড তুমি রাস্তার মাঝখানে কি করছিলে? আর একটু হলেই আমি তোমাকে ফেলে চলে যেতাম। অন্ধকার। ঝির ঝির বৃষ্টি। সব কিছুতো তেমন দেখা যায় না।

আমার গাড়িটা একটা গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। তাই বাসে চলে এলাম। কাল গিয়ে গাড়ির খোঁজ খবর করব। বাস নামিয়ে দেবার পর ঠিকানার গোলমাল হয়। তাই। আমি খুব দূরে থাকি না। বলে মাথাটা রুমালে মুছে ফেলে রিয়া।

পল তাকায় রিয়ার মুখের দিকে। আবার মনে হয় মুখের চেহারায় তেমন কোন বদল নেই। কেবল চোখের দৃষ্টিতে কেমন ঘুম ঘুম ভাব। বলে – মনে হয় খুব টায়ার্ড তুমি রিয়া?

তা একটুতো বটেই। রাস্তা হারালে যেমন হয়। তুমি একা?

পল হেসে বলে – আর কে থাকবে বল।

আর কেউ থাকবে না? রুথ কোথায়?

এখান থেকে যাবার পর ওর খবর জানি না।

অন্য কেউ?

দু একজন বন্ধু আছে। তবে প্রেমিকা নেই। যাকে দেখলে মনে হয় ওর সঙ্গে আমি বাঁকি জীবন কাটাব। না তেমন কেউ নেই। বলে হাসে পল।

এই খবরে রিয়া কি খুশী। কেমন উদাস হয়ে বসে আছে। আর পলের মনে হলো এমন একটা খবর রিয়াকে দিতে পেরে ও ভালো বোধ করছে। বন্ধু আছে কিন্তু প্রেমিকা নেই। বলে পল – এখন তোমার দেখা পেলাম। কি যে ভালো লাগছে রিয়া। কি যে আনন্দ হচ্ছে সেটা কি করে তোমাকে বোঝাব রিয়া।

বোঝাতে হবে না। রিয়া এমন ভাব করে বসে আছে যেন ও জানে পল ওর সঙ্গ পেয়ে কতখানি আনন্দিত আজ। বলে – আজ অনেক সময় আমরা নাচব। অনেক নাচব। যেন রুথ জানতে পেরে খুব ঈর্ষান্বিত হয়।

অবশ্যই। সারারাত। আর রুথ? না না ও ঈর্ষান্বিত হবে না। সারারাত নাচব আমরা। পল আবার বলে। ভয়ানক আনন্দে হেসে ভেসে গিয়ে রিয়াকে স্পর্শ করে বলে।

সারারাত নয়। ভোরের দিকে একটা বাস আছে তখন যেতে হবে। রিয়া জানায়।

কে ভাববে তোমাকে নিয়ে? আর বাসে কেন? ধাক্কা খাওয়া গাড়িটা দেখতে যাবে? না আর কেউ অপেক্ষা করে আছে?

আছে। এই বলে রিয়া হাসে। পল বুঝে গেছে এটা রিয়ার বানানো কথা। কেউ নেই ওর জীবনে। না হলে এই ভাবে কেউ কেবল খবর পেয়ে চলে আসে? কেবল পলকে দেখবে আর পলের সঙ্গে নাচবে বলে। বলে – যেই থাকুক তুমি ফট করে যেতে পারবে না।

একটু কি বেদনা রিয়ার গলায়? বলে – যতক্ষণ পারি থাকব। রিয়া ওর চুলগুলো সামনে আনে। তারপর আবার পেছনে ঠেলে দেয়। – ওই দেখ ‘হারিয়েট হাউজ’ চলে এসেছে। রব আমাকে দেখে অবাক হবে খুব তাই না? রিয়া চুল গুছিয়ে বলে।

সকলেই রবের বন্ধু। স্কুলের বন্ধু বলতে কেবল রিয়া আর পল। এ ছাড়া রবের কলেজ আর য়ুনিভার্সিটির দু একজন। আর এখন যে কাজ করছে সেখানকার কয়েকজন। – তুমি এসেছো? তোমাকে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে রিয়া। এবার তোমার ঠিকানা ফোন নম্বর সব দেবে। যখনই পার্টি হবে তোমাকে ডাকব। রব খুশী খুশী গলায় বলে। সে ঠিক রিয়াকে আশা করেনি।

দেব। ঘাড় দুলিয়ে রিয়া বলে। পুরো হলঘরটায় ছায়া ছায়া অন্ধকার। যাকে বলে লাইট এ্যান্ড শেড। চমৎকার সব নস্টালজিক গান বাজছে। সেইসব গান যা ওরা স্কুল জীবনে শুনত। পল একটু স্যাম্পেন নেয়। রিয়া নেয় না। বাথরুম থেকে একটু ঘুরে আসে রিয়া। চুল বোধহয় আঁচড়েছে। ঠোঁটে লাল রংএর তরমুজি লিপস্টিক। চোখে একটু আই লাইনারের পরশ। ভুরুটা আর একটু কালো। টেনে বাঁধা চুলের নিচে মসৃন কপালে বিভা। কোন এক অচেনা নতুন শহরের গন্ধ ওর সারা শরীরে। তাহিতি না তেহেরান না তিব্বত না তুরস্ক পল জানে না। কোন এক নারকেল গাছের দ্বীপের ঘ্রাণ রিয়ার অস্তিত্বে। ফুল ফুল জামাটায়, জামার লেসে, ওর সমস্ত সত্ত্বায়। চোখের দীর্ঘ সুন্দর পল্লবের নিচে ওর ঘুম ঘুম চোখ। আজ এই ছায়া ছায়া অন্ধকারে পল লক্ষ্য করে ওর বাঁ চোখের নিচে একটা কাল তিল আছে। ওকি আগে এই তিলটা খেয়াল করেনি? মনে হয় না। দুহাত বাড়িয়ে দেয় পল নাচের ভঙ্গিতে। – সারারাত নাচব আমরা। তুমি আর আমি।

রিয়া হাসে। আর পল বুঝতে পারে আসলে ও রিয়াকেই ভালবাসত। ভালোবাসার ছল ছল স্রোত ওর সারা মনে, হ্রদয়ে, ভাবনায়। এমন অনুভূতির সঙ্গে আগে ওর পরিচয় ছিল না। রিয়া ওর প্রেমিকা। ওর সবকিছু। তোলপাড় ভাবনায় দিশেহারা পল। রিয়া কি ওকে যাদু করে ফেললো। কি জানি কেন এমন লাগছে পল জানে না।

আর যারা এই পার্টিতে এসেছে সকলেই অপরূপ। আজকাল যেমন একটা সাজ প্রায়ই দেখা যায় – মেয়েদের স্তন আর পিঠ একেবারে খোলা, তেমন নয়। এর মধ্যে কেউ কেউ ‘বাস্ট’ দুটোকে অস্বাভাবিক বড় করে সকলকে দেখায় তেমন কোন ব্যাপার নেই এই পার্টিতে। সকলেই এমন করে সেজেছে মনে হয় এমন করে সাজা আবার চলে এসেছে আজকের সমাজে। যার মধ্যে একটা শোভন ব্যাপার আছে। একটা নরম-নীরব সুষমা আছে। রব কি সকলকে আমন্ত্রণ করবার সময় ‘ড্রেস কোড’ দিয়ে দিয়েছিল। বাজনাটাও কেমন এক রোমান্টিকতা ও ক্লাসিকতায় ভরা। উদ্দাম উল্লাসের বাজনা নয়। ‘এক্সটাসি’ ট্যাবলেট খেয়ে নাচার মত কোন ব্যাপার এখানে নেই। নাচতে নাচতে পার্টি ফ্লোরে শুয়ে পড়বার ঘটনা ঘটবে বলে মনে হয় না।

রিয়া আর পল একটা আলো-আঁধারী কোন বেছে নেয়। এখানে নেই কোন উদ্দাম নাচ – যা ‘পাসো ডবলোর’ মত নাচ, যেখানে বুল-ফাইটের কথা থাকে। এখানে সবাই যেন ভিয়ানিজ ‘ওয়ালজ’ করবে এমনই ঠিক করেছে। এমনকি ঝর্নার মত চার্লসটন পর্যন্ত নেই। নাচতে নাচতে কানের কাছে মুখ নিয়ে রিয়া বলে – তুমি ছাড়া আমি আর কাউকে এমন তীব্র ভাবে ভালোবাসিনি। পল গভীর গলায় বলে – কখনো বলনিতো। কখনো খোঁজ করবারও চেষ্টা করনি। কেন?

আমি তো ভেবেছি তুমি আর রুথ একেবারে ‘দে লিভ হ্যাপিলি এভার আফটার করছো।’

না না। এখন হবে। আজকে থেকেই হবে ‘লিভ হ্যাপিলি এভার আফটারের’ হাতে খড়ি। রিয়ার গালের সঙ্গে গাল লাগিয়ে পল বলে।

দুজনে মিশে গেছে দুজনের মধ্যে। পলের মনে হয় কোথায় থেকে এক অপার্থিব ছন্দ ওদের নাচে। কোন এক দূরতম নক্ষত্রের আলো সঙ্গে করে এসেছে রিয়া, সারা শরীর চুবিয়ে ডুবিয়ে কোন এক অপরূপ সুবাসে। পল বলে – রিয়া প্রতিজ্ঞা কর তুমি আমাকে কোনদিন ছেড়ে যাবে না।

রিয়া কোন কথা বলে না। পল বুঝতে পারছে রিয়া ওকে ফেলে যাবে না। অন্যরাও নেচে চলেছে। পলের মনে হয় রিয়ার স্পর্শ বড় অলৌকিক। এমন স্পর্শ ও জানে না। ওতো অনেকবারই নেচেছে এমন অনুভূতি হয়নি। কারণ কী? ঠিক বুঝতে পারছে না। হালকা শরীরে প্রজাপতির মত রিয়া। এই জগতে নয় ওরা দুজন এমন এক জগতে যে জগতের কথা পল আগে জানত না। কোন দূরের নক্ষত্রে ওরা এখন? নাচতে নাচতে কত সব কথা বিনিময়? কত সব চুমু ঝরানো সময়। কতসব টুপটাপ শিশির ওদের শরীরে। আর সেই শিশিরের ফোঁটায় নতুন কোন অচেনা গ্রহের কথা। যেখানে এতদিন পর পল যেতে চায় রিয়ার হাত ধরে। আর কখনো সে ভুল করবে না। রিয়া আমার রিয়া। রিয়ার কানের কাছে পলের উচ্ছ্বাস।

নাচতে নাচতে প্রায় ভোরের কাছাকাছি চলে যায় ওরা। যেন ঘুম আর জেগে থাকার মধ্যে পল। হঠাৎ যখন সে ফিরে আসে এই পৃথিবীতে বুঝতে পারে রিয়া চলে গেছে। – ও কেন রিয়ার চলে যাওয়া বুঝতে পারেনি। কেন রিয়া ওকে না বলে চলে গেল? ও লক্ষ্য করে ও বসে আছে টেবিলের খুব কাছে। হাতে স্যাম্পেনের গ্লাস। চারপাশে তাকায়।

কেউ কেউ নাচ থামিয়ে চলে গেছে। সুরের রেশ তখনো অম্লান। পল ছুটে যায় রবের কাছে। – রব রিয়া কোথায়?

রিয়া? ওতো চলে গেছে। ও বলেছে ওর পক্ষে আর বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব নয়।

ওর ঠিকানা, ফোন নম্বর কিছু দিয়েছে?

খুব তাড়াতাড়ি চলে গেছে বলে ওসব নিতে পারিনি। তবে বলছিল আমাকে যেতে হবে ‘অরেঞ্জ গ্রোভে’।

অরেঞ্জগ্রোভ? কোথায়?

এখান থেকে দেড় দুই মাইল দূরে একটা মস্ত জঙ্গল আছে। অনেকে সর্টকাট করতে গেলে ওই ফরেস্টের ভেতর দিয়ে গাড়ি চালায়। শুনেছি জায়গাটা ভালো নয়। আমি ওই ফরেস্টটাকে সবসময় বর্জন করি। কি সব আদিভৌতিক ঘটনা নাকি সেখানে।

তুমি নিশ্চয় বলতে চাইছো না ও ওই ফরেস্টের ভেতর বাস করে?

না ঠিক তা না। তবে এর আশেপাশে বাড়ি আছে। ওখানে কোথায় থাকে হয়তো।

ও কি ওই জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাবে? গাড়িতে আমাকে বলছিল ওর গাড়িটা একটা গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে। তাই ও খানিকটা পথ বাসে এসেছে। তারপর হাত ঈশারায় আমাকে থামায়। রাস্তায় ঝির ঝির বৃষ্টির ভেতর একা। সেটা তো এই পৃথিবীর একটা অষ্টম আশ্চর্য ঘটনা। এখনো ভাবলে আমার খুব অবাক লাগে।

আমারও। কি ভাবতে ভাবতে রব বলে।

পল বাইরে আসে। তারপর গাড়ি নিয়ে বের হয়। দেড় মাইল দুই মাইল উত্তরের পথে। ‘অরেঞ্জ গ্রোভ’ কোথায় সেই জঙ্গল। এখন সকাল হয়ে গেছে। একেবারে পরিস্কার নয় তবে রাস্তা চিনতে কষ্ট হয় না। রাস্তায় একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই সে ‘অরেঞ্জ গ্রোভ’ দেখিয়ে দেয়। পল ছুটছে। বুঝতে পারছে না রিয়া নিশ্চয় ওই জঙ্গলের ভেতর ওর জন্য অপেক্ষা করছে না। ভাঙ্গা গাড়ি নিয়ে রিয়া কতদূর যাবে?

পেয়ে যায় ‘অরেঞ্জ গ্রোভ’। কতগুলো লোক সেখানে। পুলিসের গাড়িও দেখা যায়। একটা গাড়ি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সেখানে আটকে আছে। সেখানে কাচের জানালায় যে মুখ – সে কি রিয়া? কিন্তু এতক্ষণ যার সঙ্গে নাচলো সে তো এই মুখ নয়। বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে সেই মুখ। চুলের গোড়ায় দুটো ফুলের কুঁড়ি। লাল দুটো লরি রোজ। ঘন মেঘের মত এক রাশ হালকা কোঁকড়া চুল।

কাল বিকালে গাড়িটার এ্যাকসিডেন্ট হয়েছ। জঙ্গল বলে অনেক পড়ে জানা গেছে। তদন্তকারীর একজন বলে।

মেয়েটা কি বেঁচে নেই? বিস্ময়ে প্রশ্ন করে পল।

না। ধাক্কা খাওয়ার সঙ্গে কাল বিকালেই মারা গেছে।

কাল বিকালে? বোকার মত আবার প্রশ্ন করে পল?

কাল সন্ধ্যায়? ওর হ্রদয় আর্তনাদ করে বলে – চল তোমার সঙ্গে নাচব! এই বলে যে ঘুম ঘুম চোখ ওর দিকে তাকিয়েছিল সেই রিয়া এখন কোথায়?

এখনো জেগে আছে লেগে আছে রিয়ার ঘ্রাণ। তাহলে? পল দিশেহারা।

লেখক:
Saleha Chowdhury
সালেহা চৌধুরী, গল্পকার

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.

About Author

বাঙালীয়ানা স্টাফ করসপন্ডেন্ট