কামরুন নাহারের কবিতা

Comments

কণ্ঠহার

কণ্ঠে তোমার কনকচাঁপার কণ্ঠহার।
হৃদয় পোড়া শিউলি মালা
ছিঁড়ে ফেলো;
মাটির হৃদয় ঠিক জীবনে ফিরিয়ে নেবে

জীবন বাঁকে, হৃদয় শাখে
কত পাখির গুঞ্জরণ
তোমার আকাশ আলো করে
কোন হৃদয়টা সাজবে তাতে
তা ভেবেই আলোকবর্ষ
ধাঁধায় মেতে আকাশ কাঁপায়

স্বপ্ন জীবন উড়িয়ে ফেলে
বাস্তবতার ঘুড়ির সাথে
নাটাই সুতো বেঁধে নিয়ে
দূর আকাশে উড়ে চলে

যে পাখিটা উড়তে জানে
ডানাগুলো যার শক্ত বড়ো
সে কেবলই মায়ার টানে
ফিরে আসে নিজের নীড়ে

যে জীবনটা দয়ার দানে
বেড়ে ওঠে বেহায়া বনে
সে জীবনই তুচ্ছ জেনে
হারাতে নেই অকারণে

অসম্পূর্ণ এ জীবন-মেনে
যারাই সুখ কুড়োতে জানে
বেঁচে থাকার রসদগুলো
ভীষণ দামি তাদের কাছে

তারাই বাঁচে, বাঁচতে জানে
একটা জীবন সংগ্রামে

দ্বিতীয় জীবন

অলস দুপুর বিষণ্ণতা
কাজের ভিড়ে আটকে গিয়ে ভীষণ একা
নিখুঁত জীবন স্বপ্ন আঁকা
ভুল সময়ের গন্ধে
মেতে জীবন আঁকা

আকাশ দেখা
পূবের আকাশ ভুল ভেবে
পশ্চিমেতে ফিরে যাওয়া
তবুও একা
জীবন মেপে এগিয়ে চলা

সহজবোধ্য কথারা সব গল্প হয়ে গাল ফুলালে
পাখিরা সব রোদ দুপুরে
উদাস হয়ে নীরব তেজে
সুর ভুলে যায়
তুমুল স্বরে চেঁচিয়ে বলে
মেঘ নদীদের নিরব ঘরে আর থাকি না

জীবন নিয়ে পালিয়ে বেড়াই
একাকি থাকি
নিজের নীড়ে
স্বপ্ন বুনি বাবুই ঘরে
হঠাৎ আবার মনে হলে
ঘর ভেঙে যাই ইচ্ছে হলেই

খামখেয়ালির ভীষণ তোড়ে
জীবন কবে পেরিয়ে গেল
বুঝলামই না
বুঝতে বুঝতে বেলা গেল
ভুল জীবনের অঙ্ক কষে
জীবন নদী গহিন জলে
মেঘ পিয়নের ভেলায় ভেসে
আমায় ডাকে

বেলা শেষে পাখির নীড়ে
ফিরবো জেনে দুহাত বাড়ায়
পাখি জীবন জেনেই আসি বারেবারে এই ভুবনে
এবার এলাম, আবার আসবো
কোথায় কোন নদীর তীরে
কেউ জানে না
তবে আসবো ফিরে পাখির নীড়ে
কথা দিলাম

অল্প, স্বল্প, গল্প

এই যে মানুষ ভীড়ের মাঝে হারিয়ে একা
গল্প করে, নিদ্রা ভেঙে
নিঝুম রাতের শূন্য তীরে
দাঁড়িয়ে একা
ভেবেই চলে
পাখি এবং নীড়ের কথা

তৃণ থেকে গাছ হয়ে যায়
কাটা-ছেঁড়ার গল্প ভীড়ে
এই যে মানুষ
স্বপ্নগুলো তাড়িয়ে বেড়ায়
রোজ অজানা ভুলবশত

রোজ জীবনের পৃথক সাজে
নর এবং নারীর বেশে
গল্প জুড়ে একঘেয়ে খুব
জীবন কাটায়

সময় জানায় ভালো লাগে
পিঁপড়ে এবং মাঝির গল্প
দাঁড় টানা কোন গুণের গল্প
মৃত্তিকা ভোর বাদুড় গল্প
উই ডাকা কোন গাছের গল্প
মন কেড়ে নেয় অবাক সুরে

আর অল্প-স্বল্প, গল্প ভীড়ে
জীবন তরী গহন জলে
ভাসিয়ে নেয় ভেলায় তুলে

তীব্র জলের স্রোতের ভীড়ে
মনের আগুন জলের স্নানে
শান্ত সুখের পরশ পেয়ে
নিরব হয়ে গহিন জলে
নির্বিবাদে মিলিয়ে যায়
মলিন হয়ে হাসির রেখায়

লেখক জীবন

এক জীবনে রঙিন আলোর সুর মেলা ভার
লেখার আগুন কতটা শরীর পুড়িয়ে কাঁদায়
কেউ জানে না

রাতের আঁধার কতটা গভীর
কতটা দীর্ঘ
কবির মতো কেউ বোঝে না

শিল্পী তার ছবির ভাষায়
আঁধার রাতের গদ্য আঁকে
সেই ছবিতে ভাষা দিয়ে
আঁকিয়ে তোলে লেখক হৃদয়

পুষ্প ফোটা কোমল জলে
নির্জনা কোন স্যাঁতস্যাঁতে ভোর কাদা ও জলের
লাল পদ্ম নীল হয়ে যায়
তীব্র রাগে

বন্য নদী রোষানলে
পুড়তে থাকে দহন জলে
কান্নাগুলো শিশির হয়ে
পাতায় ভাসে
বাষ্প হয়ে-বাষ্পীভূত
আকাশ নীলে

মন গহিনের কালচে রেখা
কতটা নীল আর তীব্র ব্যাথায় কুঁকড়ে থাকে
কবির মতো কেউ জানে না!

বুঝতে গেলে হৃদয় লাগে
মানুষ নামের প্রাণীর মাঝে
এখন এসব অবান্তর
আর অপ্রয়োজন

মেঘে ভেজা হৃদয়খানা তুলে রেখে
তড়িৎ আমি ঝড়ের বেগে ভেসে চলি
কান্না সে-তো দুর্বলতা
ভীষণভাবে জানে হৃদয়
নিজের কাছেই দুর্বলতা প্রকাশ করতে ভয় হয় খুব
আবার কখন না জানি মন শুরু করে মানতে এসব

খুব সাহসী, ভীষণ তেজী
এটাই আমার জীবনধারা;
জানুক লোকে, নিরব থাকা মানুষগুলো সবকিছুই
মেনে নেবে নির্বিবাদে এমনটি নয়

স্বাধীনতা নিজের কাছে
স্বপ্নগুলোও নিজেরই
আর বেঁচে থাকার মন্ত্রগুলোও নিজেরই হয়!
ভুল করো তাই বারেবারে
আর নিচ্ছো শিখে নিজের মতো
জেনো
প্রতিবারে আত্মশক্তি বেড়েই যাবে
ভুল মানুষই পথ দেখাবে
মিলিয়ে নিও

লেখক:
Kamrun Nahar
কামরুন নাহার, কবি

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.

About Author

বাঙালীয়ানা স্টাফ করসপন্ডেন্ট