ক্ষমতা আঁকড়ে থেকে অনেক নাটকের পর ভিসি নাসিরের পদত্যাগ

Comments
সেপ্টেম্বর ১১ থেকে অনেক নাটকের পর গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অধ্যাপক খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি উপাচার্য নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তাকে অপসারণের সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

খবরটি গোপালগঞ্জ ক্যাম্পাসে পৌঁছনোর পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আনন্দ উল্লাসে ফেটে পরে। পরস্পরের সাথে আলিঙ্গন, মিষ্টি বিতরণ আর রঙ ছিটিয়ে তাদের ভাষায় “আন্দোলনের বিজয়” উদযাপন করে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রথীন্দ্রনাথ বাপ্পি বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের বিজয়ে আমরা আপ্লুত। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার কারণেই আমাদের আজ এ অর্জন।’

১১ সেপ্টেম্বর একজন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হইয়েছিল সেই ফাতেমা তুজ-জিনিয়াকে উপাচার্যের পদত্যাগে তার অনুভুতি কি জানতে চাওয়া হলে তিনি বাঙালীয়ানাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা উপাচার্য শুরু করেছিলেন এবং এক “ভয়” এর সংস্কৃতি চালু করেছিলেন তারই বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, এর ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। ভয় কাটিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অন্যায়, দুর্নীতি ও অসঙ্গতি ঝেড়ে ফেলা সম্ভব, সেটাই প্রমাণ করেছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।’

সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, দুপুর ৩টার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ আল হাসানের কাছে উপাচার্য নাসিরউদ্দিন পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে অতিরিক্ত সচিব পদত্যাগপত্রটি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে হস্তান্তর করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র গণমাধ্যমের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি উপাচার্য নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘এ বিষয়ে মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।’ এ প্রসংগে তিনি আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে, একে একে তাদের সবার বিষয়েই তদন্তসাপেক্ষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে পড়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৯টার দিকে পুলিশ পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হন। 

একটি ফেইসবুক পোস্টের জন্য গত ১১ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করার পর উপাচার্য নাসিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ওই শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরাল হয়, যেখানে ওই ছাত্রীকে বকাঝকা ও হুমকি-ধমকি দিতে শোনা যায় উপাচার্যকে। মেয়েটির বাবাকে নিয়েও তীর্যক মন্তব্য করেন ভিসি। অডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ঝড় ওঠে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনও জোরদার হয়। বিক্ষোভের মুখে ১৮ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ১৪টি দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। 
তবে এতে সন্তুষ্ট না হয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে অনশনসহ আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এ আন্দোলন ঠেকাতে ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য। শিক্ষার্থীরা তার প্রতিবাদ করলে একদল বহিরাগত হামলা চালায়, এতে অন্তত ২০জন শিক্ষার্থী আহত হয়। ওই হামলার জন্য উপাচার্যকে দায়ী করে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন সহকারী প্রক্টর। এই পরিস্থিতিতে ঘটনা তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কমিটি করে ইউজিসি। তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রোববার রাত ৯টার কিছুক্ষণ পর কড়া পুলিশ পাহারায় নিজের কোয়ার্টার থেকে গাড়িতে উঠে ক্যাম্পাস ছাড়েন অধ্যাপক নাসির।
বাঙালীয়ানা/এসএল

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.