১৯২৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারীতে প্যারিস থেকে ৩২ বছর বয়সী শিক্ষিত এক বাঙালী যুবক তাঁর স্নেহময়ী মাকে অত্যন্ত অনুনয় করে ৫০০ টাকা পাঠানোর জন্য লিখেছিলেন, ‘আমি বার্লিন হইতে অত্যন্ত কাতর অবস্থায় প্যারিস আসিয়া আপনাকে ৫০০ টাকার জন্য টেলিগ্রাম পাঠাই। আমার শারীরিক অবস্থা শোচনীয়। আজ মাস ৩-৪ হইল আমার ফুসফুসে ক্ষয়কাশ দেখা গিয়াছে। প্রায়ই শরীরে জ্বর থাকে। ভালো স্বাস্থ্যকর স্থানে ও ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকিলে বাঁচিতে পারি।’ এই বাঙালি তরুণের চিঠি থেকে তাঁর ওই সময়ের শোচনীয় অবস্থার কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। তাঁর থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার জন্য অর্থের জরুরি প্রয়োজন ছিল। সে সময়ে তাঁর ফরাসি স্ত্রীর সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। তিনি সব মিলিয়ে সত্যিই এক নিদারুণ দুঃখ-কষ্টের মধ্যে নিমজ্জিত ছিলেন।
বাংলাদেশের তৎকালীন পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই বাঙালীর নাম গোলাম আম্বিয়া খান লোহানী। তাঁর মায়ের নাম সৈয়দা সিরাজুন্নেসা খান; বাবা আইনজীবী গোলাম আজম খান। লোহানী মা-বাবার তিন পুত্রসন্তানের মেজ ছেলে ছিলেন বলে তাঁর ডাকনাম ছিল ‘মাজু’।
১৮৯২ সালের ২ ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন গোলাম আম্বিয়া খান লোহানী। সিরাজগঞ্জ থেকে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯১৪ সালে লোহানী উচ্চশিক্ষার্থে লন্ডনে যান এবং লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে (স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স) অধ্যয়ন করেন।
সাংবাদিক ও টেলিভিশন উপস্থাপক ফজলে লোহানী, কণ্ঠশিল্পী ও অধ্যাপক হুসনা বানু খানম এবং চিত্রাভিনেতা ফতেহ লোহানীর মামা ছিলেন গোলাম আম্বিয়া খান লোহানী। তাঁদের মা ছিলেন সে পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান ফাতেমা লোহানী। (তিনি ফতেহ লোহানী, ফজলে লোহানীর পিতা ও কামাল লোহানীর পিতৃব্য আবু লোহানীর নিকট ভ্রাতা ছিলেন – সম্পাদক।)
বিপ্লবী জীবনের সূচনা
বর্ণাঢ্য বিপ্লবীর জীবন গোলাম আম্বিয়া খান লোহানীর। লন্ডনে অবস্থানকালেই তিনি সেখানকার শ্রমিক আন্দোলন ও সমাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীগুলোর সংস্পর্শে আসেন। ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না হয়েই শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কাজ করেন। ওই সময়ে কখনো সাংবাদিকতা করে, কখনো শিক্ষকতা করে জীবন নির্বাহ করতেন। মাসিক ১২ পাউন্ড বেতনে লন্ডনের যুদ্ধবিরোধী (প্রথম মহাযুদ্ধ চলাকালে) সংগঠন ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সিভিল লিবার্টিজ’ এর প্রচারক হিসেবেও কাজ করেছেন। ১৯১৭ সালের সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব লোহানীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। সেই কারণে লন্ডনের বিভিন্ন সভায় এই বিপ্লবকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তৃতা করেছেন এবং নতুন সোভিয়েত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আঁতাত শক্তির আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রচারকাজও চালিয়েছেন।

গোলাম আম্বিয়া খান লোহানীর স্বাক্ষরযুক্ত ছবি।
ব্যাপক পরিধিতে কর্মতৎপরতা
১৯২১ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত লোহানী বিভিন্ন ইউরোপীয় পত্রপত্রিকায় ভারতের রাজনৈতিক ও শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে প্রচুর লেখালেখি করেছেন। সে সময়ে ইউরোপে অবস্থানরত ভারতীয় ছাত্রদের মধ্যে জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সপক্ষে প্রচারকাজ চালিয়েছেন। এই সময়ে সাংবাদিকতা, অনুবাদক ও ভাষাশিক্ষক হিসেবে অর্থোপার্জন করে ব্যক্তিগত জীবন পরিচালনা করেছেন। লোহানী ইংরেজি ভাষা ছাড়াও ফরাসি, জার্মান ও হিন্দি ভাষা জানতেন।
লোহানী ১৯১৪ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থান করেন। ১৯২০, ১৯২১ সালের ফেব্রুয়ারী, ১৯২২, ১৯২৪ ও ১৯২৫ সালে ফ্রান্সে; ১৯২১, ১৯২৩, ১৯২৪ ও ১৯২৫ সালে জার্মানিতে অবস্থান করেন। তবে ১৯২১ সালে সুইজারল্যান্ড থাকা অবস্থায় লুহানী তাঁর ব্যাপক ও বিভিন্নমুখী রাজনৈতিক তৎপরতা পরিচালনা করেন।
এর মধ্যে ১৯২১ সালের মে মাসের শুরুতে লোহানী আরও কয়েকজন বিপ্লবীর সঙ্গে ইউরোপে অবস্থানরত প্রবাসী বিপ্লবীদের এক বৈঠকে যোগদান করার জন্য মস্কো যান।
১৯২১ সালের পর প্যারিসে অবস্থানকালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র দ্য মাসেস অব ইন্ডিয়া পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। সম্পাদনা ছাড়াও এই পত্রিকা বিভিন্নভাবে ভারতবর্ষে পাঠানোর ব্যবস্থার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন লোহানী। প্যারিসে থাকাকালে বিখ্যাত ফরাসি বুদ্ধিজীবী অঁরি বারবুসের নেতৃত্বে গঠিত ‘কমিটি প্রো-হিন্দু’ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে লোহানীর ফ্রান্সে থাকার অনুমতি প্রত্যাহার করা হয়। এ অবস্থায় ১৯২৫ সালের নভেম্বর মাসে তিনি মস্কো চলে যান। এরপর থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থান করেন। এ বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ঘোষিত হয় মৃত্যুদণ্ড। আর গুলি করে তাঁকে হত্যা করা হয় ১৭ সেপ্টেম্বর।

ধারণা করা হয় এটিই গোলাম আম্বিয়া খান লোহানীর শেষ ছবি। – সম্পাদক
লোহানী এই দীর্ঘ সময় মস্কোতে সাংবাদিক, অনুবাদক, গবেষক, শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের বিভিন্নমুখী কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। বিচিত্র ও বিস্ময়কর ছিল তাঁর কর্মজীবন।
প্রবাসে ভারতীয় বিপ্লবীদের তৎপরতা
এ শতাব্দীর প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সমগ্র ভারতের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন প্রবাসী ভারতীয়দের গভীরভাবে আলোড়িত করেছিল। সে সময়ে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান ও উত্তর আমেরিকায় ভারতীয় বিপ্লবীদের বিভিন্ন কেন্দ্র গড়ে ওঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীদের অনেকেই ১৯১৭ সালের সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। স্বদেশের মুক্তির সংগ্রামের পথ সন্ধানের লক্ষ্যে এসব সাহসী বিপ্লবীর অনেকে বহু সমস্যা সত্ত্বেও সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে সোভিয়েত বিপ্লবের নেতা লেনিন দেখা করেছিলেন।
প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীদের মধ্য থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন তখন সোভিয়েত বিপ্লবে আকৃষ্ট হয়ে মস্কো গেছেন। ভারতবর্ষের মুক্তিসাধনায় সদ্যপ্রতিষ্ঠিত নতুন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সাহায্য-সহযোগিতা লাভই ছিল এসবের উদ্দেশ্য। তাঁদের মধ্যে সামন্ত রাজা যেমন ছিলেন, তেমনি কৃষক-শ্রমিকও ছিলেন।
এই উপমহাদেশের ওয়াহাবি আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং ইসলা্মী শাস্ত্রের পণ্ডিতসহ তাঁদের এক বড় অংশই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী। তাঁদের মধ্যে সবাই সব রকম শোষণ-অত্যাচার থেকে মুক্তি এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির বাণী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সে জন্য অবশ্যম্ভাবীভাবে এই প্রবাসী বিপ্লবীদের অনেকেই ওই সময়ে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। স্বদেশে ও বিদেশে এই বিপ্লবীদের বহুমুখী তৎপরতা অবিভক্ত ভারতের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে নতুন নতুন অধ্যায় সংযোজন করেছিল। বর্তমান বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার গোলাম আম্বিয়া খান লোহানী সেই সাহসী বিপ্লবীদের একজন।
লোহানীর প্রথম মস্কো গমন
‘কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকে’র আমন্ত্রণে ১৯২১ সালে মে মাসের শুরুতে প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গোলাম আম্বিয়া খান লোহানী, উত্তর প্রদেশের পাণ্ডুরাজ খানখোজেসহ সাতজন বিপ্লবী বার্লিন থেকে মস্কো পৌঁছান। প্রখ্যাত ভারতীয় বিপ্লবী এম এন (মানবেন্দ্র নাথ) রায়ের মতে, এই গ্রুপে ১৪ জন সদস্য ছিলেন। সে সময়ে ভারতীয় বিপ্লবীদের মধ্যকার মতপার্থক্য ও বিভেদ দূর করার কাজে সাহায্য করার জন্যই তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ১৯২০ সালের নভেম্বর মাসে বীরেন্দ্রনাথের মস্কো সফরের সময়েই ভারতীয় বিপ্লবীদের ঐক্যবদ্ধ করে একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা আলোচনা হয়। এ আলোচনার ভিত্তিতেই বীরেন্দ্রনাথ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বিপ্লবীদের বার্লিনে আসার আমন্ত্রণ জানান। বীরেন্দ্রনাথের আহ্বানে সাড়া দিয়েই সম্ভবত লোহানী ১৯২১ সালের জানুয়ারী মাসে প্যারিস থেকে বার্লিনে যান।
বীরেন্দ্রনাথের নেতৃত্বাধীন ‘বার্লিন গ্রুপ’ এর সদস্যরা মস্কোতে গিয়ে এম এন রায় ও অন্যদের দ্বারা তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠনে বিরোধিতা করেন। সে সময়ে ‘কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক’ এর নেতৃত্বের সঙ্গে এম এন রায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং তাঁর কার্যক্রমকে তাঁরা মেনে নিতে পারেননি। এ সময়ে আরও কিছুসংখ্যক বিপ্লবী মস্কো পৌঁছেছিলেন। ‘বার্লিন গ্রুপ’ এর মতামত শোনা ও আলোচনার জন্য ‘কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক’ একটি কমিশন গঠন করেছিল। কিন্তু এই আলোচনা ফলপ্রসূ হতে পারেনি। এর জন্য বীরেন্দ্রনাথ এম এন রায়কেই দায়ী করেছেন। এরপর ‘বার্লিন গ্রুপ’ এর সদস্যরা একে একে মস্কো ত্যাগ করেন।
কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের ভারতীয় কমিশনের কাছে ‘বার্লিন গ্রুপ’ এর পক্ষ থেকে লোহানী তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন। এম এন রায়ের মেমোয়ার্সে-এ (পৃ. ৪৭৭-৪৯৩) মস্কোতে অবস্থানকালে ‘বার্লিন গ্রুপ’ এবং লোহানীর কার্যক্রমের কিছু বিবরণ পাওয়া যায়। এম এন রায় লোহানীকে ‘একজন বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তি এবং ভালো বক্তা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
লেনিনের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা
১৯২১ সালের এপ্রিলে মস্কোতে যাওয়া বার্লিন গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, গোলাম আম্বিয়া খান লোহানী এবং পাণ্ডুরাজ খানখোজে অন্যদের চেয়ে জানাবোঝার দিক থেকে কমিউনিজমের অনেক কাছাকাছি ছিলেন। ১৯৬৯ সালের মে মাসে নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত সোভিয়েত ল্যান্ড পত্রিকায় আর ইউনিৎস্কায়ার লিখিত ‘লেনিন অ্যান্ড দ্য ইন্ডিয়ান রেভল্যুশনারিজ’ প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, তাঁরা তিনজনে মিলিতভাবে ‘থিসিস অন ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড রেভল্যুশন’ শীর্ষক ১৪ পৃষ্ঠার একটি নিবন্ধে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন। এই নিবন্ধ ‘কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক’ এর কার্যনির্বাহী কমিটি এবং এর তৃতীয় কংগ্রেসের প্রাচ্য দেশবিষয়ক কমিশনের সামনে উপস্থিত করা হয়েছিল।
১৯২১ সালের ৭ জুলাই ‘কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক’ এর তৃতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন চলাকালে বীরেন্দ্রনাথ, লোহানী ও খানখোজে একটি নোটসহ এই থিসিস লেনিনের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এর সঙ্গে একটি নোটে তিনজন লিখেছিলেন: ‘আমরা আশা করি, আপনি সময় করতে পারলে আমরা ভারতীয় সমস্যা সম্পর্কে আপনার সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপের সুযোগ পাব।’ লেনিন তাঁদের এই নোটের কোনো উত্তর দিয়েছিলেন কি না অথবা দেখা করেছিলেন কি না, সে বিষয়ে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
মস্কোর ‘ইনস্টিটিউট অব মার্ক্সিজম লেনিনিজম’ এ সংরক্ষিত কেন্দ্রীয় পার্টির মহাফেজখানায় (আর্কাইভ) লেনিনের পাঠানো চিঠিপত্রের একটি রেজিস্টার আছে। তাতে ১৯২১ সালে ৮ জুলাই তারিখে ৫০১ নম্বর রেজিস্টারে দেখা যায়, লেনিন সেদিন বীরেন্দ্রনাথ, লোহানী ও খানখোজেকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠির কোনো কপি বহুদিন পাওয়া যায়নি। বহুদিন পর ১৯৩৪ সালে ১৮ মার্চ লেনিনগ্রাদ বিজ্ঞান একাডেমির গবেষকদের এক সভায় জার্মান ভাষায় প্রদত্ত বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তৃতার কপি পাওয়া যায়। বীরেন্দ্রনাথের রুশি স্ত্রীর কাছে রক্ষিত এই বক্তৃতার কপির খোঁজ পান সোভিয়েত গবেষক ই এন কোমারভ।
ভারতীয় গবেষক চিন্মোহন সেহানবীশের বিশিষ্ট গ্রন্থ রুশ বিপ্লব ও প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীতে (পৃ: ২১৫) জার্মান ভাষায় প্রদত্ত বীরেন্দ্রনাথের বক্তৃতার কিছুটা অংশ অনুবাদ করে দেওয়া আছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘রায়ের (এমএন রায়) তদানীন্তন অতি-বামপন্থী মতের বিরুদ্ধে আমরা ভারতীয় সমস্যা সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লিখে লেনিনের কাছে পাঠাই।
লেনিন তার জবাবে ইংরেজিতে তাঁর নিজের হাতে লেখা এই কটি লাইন আমাদের পাঠান:
‘কমরেড চট্টোপাধ্যায়, লোহানী ও খানখোজে,
আমি প্রবল আগ্রহ নিয়ে আপনাদের নিবন্ধ পড়েছি। কিন্তু, নতুন নিবন্ধ কেন?
শীঘ্রই আমি এ বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলব।
আপনাদের ভ্রাতৃপ্রতিম
এন লেনিন’
এই তিনজন ভারতীয় বিপ্লবীকে লেখা চিঠিতে লেনিন তাঁদের সঙ্গে কথা বলার যে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, তা বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ, এরপরই লেনিন অসুস্থ হয়ে মস্কো ছেড়ে গোর্কি শহরে চলে যান।
সোভিয়েত গবেষক এম এ পেরসিটসের ইন্ডিয়ান রেভল্যুশনারিজ ইন দ্য সোভিয়েত ১৯১৮-১৯২১ পুস্তকে ‘ওয়েস্টার্ন গ্র“প অব ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল রেভল্যুশনারিজ ইন মস্কো’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে আরও উল্লেখ করেছেন যে বীরেন্দ্রনাথ, লোহানী ও খানখোজ ১৯২১ সালের ৪ আগস্ট আরেকটি নিবন্ধ প্রণয়ন করেন এবং তা কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের ভারতীয় কমিশনে প্রেরণ করেন।
তিনজন বিপ্লবী প্রথম দলিলে ভারত ও অন্যান্য প্রাচ্য দেশে শ্রেণী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারকাজ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন। সে উদ্দেশ্যে কমিন্টার্নের উচিত ‘একটি বিশেষ বিপ্লবী বোর্ড’ গঠন করা। তাঁরা এম এন রায় কর্তৃক প্রবাসে গঠিত কমিউনিস্ট পার্টির তীব্র বিরোধী ছিলেন। কারণ, তাঁদের মতে, এটা ভারতীয় শ্রমিক শ্রেণীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
পেরসিটসের মতে, এম এন রায়কে সমালোচনা করার সঙ্গে তাঁরা একটি বড় ভুল করেছিলেন। তাঁদের মতে, সে সময়ে ভারতে কমিউনিস্ট সংগঠন গড়ে তোলার সময় হয়নি। তবে তাঁরা মার্ক্সের সমাজে শ্রেণীবিভেদ ও শ্রেণীসংগ্রামের তত্ত্বকে গ্রহণ করেছিলেন।
জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের বিশিষ্ট প্রাচ্যবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক হর্স্ট ক্রুগারের মতে, বীরেন্দ্রনাথ, লোহানী ও খানখোজে তাঁদের দলিলে ভারতের অভ্যন্তরীণ অবস্থা বিশ্লেষণে উল্লেখযোগ্যভাবে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছিলেন। জাতীয় বুর্জোয়াদের ভূমিকার প্রশ্নে এম এন রায়ের সংকীর্ণ চিন্তার বিপরীত বিশ্লেষণ ছিল।
এম এ পেরসিটস ও অধ্যাপক হর্স্ট ক্রুগার এই তিনজনের দলিলকে গুরুত্বসহ মূল্যায়ন করেছেন। পাশাপাশি ইতিবাচক বক্তব্যের প্রশংসা এবং নেতিবাচক দিকগুলোর সমালোচনাও করেছেন। বহুদিন পর লেনিনগ্রাদে গবেষকদের সামনে পূর্বোল্লিখিত বক্তৃতায় বীরেন্দ্রনাথ স্বীকার করেছিলেন, ‘ওই নিবন্ধ রাজনৈতিকভাবে বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেই ভ্রান্ত ছিল।’
বর্তমান শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শুরুতে লোহানীর মস্কো যাওয়া ভারতীয় জাতীয় মুক্তি আন্দোলন সম্পর্কে গভীর তাত্ত্বিক দলিল রচনা, কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা-সমালোচনা, লেনিনের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রচেষ্টা প্রভৃতির মধ্য দিয়ে তাঁর দৃঢ় ও সাহসী ভূমিকার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে।
মস্কোর বিপুল কর্মতৎপরতা
আমরা আগেই দেখেছি, ১৯২৫ সালের নভেম্বর মাসে ফরাসি পুলিশের কাছ থেকে প্যারিস থাকার অনুমতি না পাওয়ায় লোহানী মস্কো চলে যান। এই সময় থেকে ১৯৩৭ সালের শেষ অথবা ১৯৩৮ সালের শুরু পর্যন্ত তিনি মস্কোতে ছিলেন – এ পর্যন্ত তথ্য পাওয়া গেছে।
এই দীর্ঘ সময় মস্কোতে স্থায়ীভাবে থাকাকালে লোহানী বহু ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতায় যুক্ত ছিলেন। ১৯১৯ সালে গঠিত ‘কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকে’ (কমিস্টার্ন) তিনি সক্রিয় ছিলেন। এ ছাড়া তিনি মস্কোর ‘কৃষক আন্তর্জাতিক’ (প্রেজেন্টস ইন্টারন্যাশনাল) এ কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশের বিপ্লবীদের সাহায্য করার আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘মোপার’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এসব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কাজ ছাড়াও লোহানী ব্যস্ত ছিলেন শিক্ষক, সাংবাদিক ও গবেষক হিসেবে বহু কাজে। মস্কোর ‘ইনস্টিটিউট অব অরিয়েন্টাল স্টাডিজ’-এ বাংলা ভাষার শিক্ষক ছিলেন। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের ওপর ক্লাস নিয়েছেন। শ্রমিকদের জন্য ‘মস্কো ওয়ার্কার্স ইউনিভার্সিটি’ ও ‘কমিউনিস্ট ইউনিভার্সিটি অব দ্য ওয়ার্কিং পিপল অব দ্য ইস্ট’-এ শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। তবে মস্কো অবস্থানকালে পুরো সময়টাতেই লোহানী মস্কো পাবলিশিং হাউসের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এসব কাজ ছাড়াও চিন্মোহন সেহানবীশের পূর্বোল্লিখিত পুস্তকে ১৯৬৪ সালের ২৩ আগস্ট ও ২৭ সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক লিংক-এর মস্কো সংবাদদাতা পি উন্নিকৃষ্ণানের দুটি নিবন্ধ থেকে আরও কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সোভিয়েত ভারততাত্ত্বিকদের মতে, লোহানী ভারতীয় ও ঔপনিবেশিক সমস্যাসংশ্লিষ্ট গবেষণায় নিযুক্ত ছাত্রদের পরিচালনা করতেন। তিনি সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি এবং ভারতের প্রবাসী কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। ১৯২৭ সালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতা মতিলাল নেহরু ও জওহরলাল নেহরু যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে যান, তখন তিনি তাঁদের দোভাষীর কাজও করেছিলেন।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, লোহানী জাতীয় ও ঔপনিবেশিক প্রশ্নে ‘কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক’ এ কাজ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি ১৯২৮ সালের ১৭ জুলাই থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ‘কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক’ এর ষষ্ঠ কংগ্রেসে ভারতের অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এই কংগ্রেসের কার্যবিবরণী মোটামুটিভাবে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের মুখপত্র ইন্টারন্যাশনাল প্রেস করোসপন্ডেস-এ (ইমপ্রেকর) প্রকাশিত হয়েছিল। তা থেকে দেখা যায়, তিনি কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং ঔপনিবেশিক প্রতিবেদনের ওপর বিতর্ক-আলোচনা শেষে লোহানীর ঘোষণা ২১ সেপ্টেম্বর ১৯২৮ সংখ্যা ৮১-এর ইমপ্রেকর-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর মস্কো সারা বিশ্বের বিপ্লবী-সংগ্রামীদের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। পরাধীন ভারতবর্ষসহ অনেক দেশের সেরা ব্যক্তিরা সে সময়ে সেখানে থেকে স্বদেশে ও বিদেশের জনগণের মুক্তিসংগ্রামে বিরাট অবদান রেখেছিলেন। আজ এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এসব ব্যক্তির মধ্যে বাংলাদেশের গোলাম আম্বিয়া খান লোহানীর স্থান ছিল অনেক উঁচুতে।
এক মহান উত্তরাধিকার
লোহানী তাঁর লন্ডনের প্রবাসজীবনের প্রায় শুরু থেকে প্যারিস, বার্লিন এবং শেষ পর্যন্ত মস্কো থেকে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক অধীনতা থেকে ভারতবর্ষের মুক্তির লক্ষ্যে বহুমুখী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তবে আজও বহু তথ্যই অজানা রয়েছে। সেগুলো সন্ধানের জন্য আরও চেষ্টার প্রয়োজন। কিন্তু সে সম্ভাবনা ক্রমশ কমে এসেছে। কারণ তাঁর সমসাময়িক বন্ধুদের সঙ্গে প্রবাস জীবনে কাজ করেছেন, এমন কেউ আর আজ বেঁচে নেই।
ভারতবর্ষের মুক্তি আন্দোলনের তত্ত্বগত ভিত্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ ও আগ্রহোদ্দীপক বড়-ছোট প্রবন্ধ লিখেছেন। শুধু সমসাময়িক ঘটনাবলির ওপর নয়। মৌলিকভাবেই ভারতবর্ষের অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রকাশ করে গেছেন। স্বদেশে ও বিদেশের রাজনৈতিক মহলে যা সৃষ্টি করেছিল প্রচুর কৌতূহল। তাঁর বেশ কিছুসংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল ‘কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক’ তত্ত্বগত সাময়িকী, ইমপ্রেকরসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায়। এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু প্রবন্ধ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ভারতবর্ষসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকাতেও তাঁর বহু লেখা বের হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। সে জন্য প্রচেষ্টা নেওয়া দরকার।
অতি সম্প্রতি ও বহু প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ ছাড়াও সোভিয়েত গবেষক ভি পুচকভের সাহায্যে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের মহাফেজখানা থেকে পাওয়া গেছে ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত লোহানীর তৈরি আটটি অপ্রকাশিত প্রতিবেদন। সম্ভবত এগুলো তিনি তৈরি করেছিলেন কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের জন্য। এগুলো মূলত তৎকালীন ভারতের কমিউনিস্ট ও শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলন এবং এ সম্পর্কে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের নীতি সম্পর্কে প্রচুর তথ্যনির্ভর রচনা। এখনো এগুলোর ঐতিহাসিক মূল্য বিরাট।
লোহানীর এসব প্রকাশিত ও অপ্রকাশ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ এবং প্রতিবেদন পড়ে এটা ধারণা করা যায়, তাত্ত্বিক হিসেবে প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীদের মধ্যে তাঁর স্থান বিশিষ্ট ও অন্যতম প্রধান – যদিও তিনি এবং তাঁর কার্যাবলি এখনো তেমনভাবে আলোচিত নয় স্বদেশে ও বিদেশে।
লোহানীর লেখা সম্পর্কে আলোচনাকালে সোভিয়েত একাডেমি অব সায়েন্সেসের প্রখ্যাত গবেষক আলেকজান্ডার মেলিনকভ এ নিবন্ধের লেখকের সঙ্গে আলোচনাকালে বলেছেন, এগুলো খুবই ভালো।
তা থেকে লোহানীর জ্ঞানের গভীরতার প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি উঁচুস্তরের একজন গবেষক ও বিশেষজ্ঞ ছিলেন। আলেকজান্ডার মেলিনকভ আরও বলেছেন, সে সময়ে মুক্তি আন্দোলনের প্রশ্নে ভারতীয় বিপ্লবীদের অধিকাংশের চিন্তাধারা ছিল সংকীর্ণ। শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে যখন ভারতে বিরাট জাতীয় মুক্তি আন্দোলন চলছে, তখন লোহানীর অবস্থান ছিল খুব বাস্তবসম্মত।
এ পর্যন্ত প্রাপ্ত লোহানীর জীবন সম্পর্কে তথ্য, রাজনৈতিক পরিচয় এবং বিভিন্ন প্রবন্ধ-প্রতিবেদন থেকে লোহানীর সংগ্রামী উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের সম্যক ধারণা করা যায়। বাংলাদেশসহ সমগ্র পরাধীন ভারতবর্ষের মুক্তির স্বপ্ন শুধু দেখেননি, প্রবাসজীবনের সব বেদনা, অর্থাভাব, পারিবারিক জটিলতা, দুরারোগ্য ব্যাধি, ব্রিটিশ গোয়েন্দা এবং ফরাসি পুলিশের আক্রমণ প্রভৃতির মধ্যেও তিনি অবিচল নিষ্ঠায় বিপ্লব-সাধনার আত্মনিয়োগ করেছিলেন। সে জন্য গোলাম আম্বিয়া খান লোহানীর সারা জীবন এ দেশের মুক্তিসংগ্রামীদের জন্য এক মহান উত্তরাধিকার।
লেখক:
মতিউর রহমান, সম্পাদক, প্রথম আলো
** নিবন্ধটি সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানীতে প্রকাশিত
ছবিসূত্র:
- লায়লা সামাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ
- ডেভিড কিংয়ের “অর্ডিনারি সিটিজেন্স: ভিকটিমস অব স্ট্যালিন” বই থেকে
তথ্যপঞ্জি:
- লোহানীর জীবনের বিভিন্ন তথ্য মস্কোর কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের মহাফেজখানা থেকে সংগৃহীত তাঁর স্বহস্তে লিখিত জীবনপঞ্জি থেকে নেওয়া;
- স্যার ডেভিড পিট্টি, কমিউনিজম ইন ইন্ডিয়া ১৯২৪-১৯২৭, পুনর্মুদ্রিত, মহাদেব প্রসাদ সাহ কর্তৃক সম্পাদিত কলকাতা ১৯৭২;
- সোভিয়েত গবেষক ভি পুচকভের কাছ থেকে সংগৃহীত;
- চিন্মোহন সেহানবীশ, রুশ বিপ্লব ও প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবী, কলকাতা, ১৯৭৩;
- এম এ পেরসিটস, ইন্ডিয়ান রেভল্যুশনারিজ ইন সোভিয়েত ইউনিয়ন, মস্কো, ১৯৭৩;
- ড. হর্স্ট ক্রগার, ‘গোলাম আম্বিয়া খান লুহানী অ্যান্ড দ্য ইন্ডিয়ান রেভল্যুশনারিজ ইন ইউরোপ’ অপ্রকাশিত), বার্লিন ১৯৮১;
- বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তৃতা, ডকুমেন্টস অব দ্য কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া, (প্রথম খণ্ড: ১৯১৭-১৯২২), নয়দিল্লি;
- এম এন রায়, মেমোয়ার্স, মুম্বাই, ১৯৬৪;
- ড. গঙ্গাধর অধিকারী, ডকুমেন্টস অব দ্য হিস্ট্রি অব দ্য কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া, (তৃতীয় খণ্ড, সি), ১৯২৮, দিল্লী;
- ড. গঙ্গাধর অধিকারী, ‘দ্য কমিন্টার্ন কংগ্রেসেস অ্যান্ড দ্য সিপিআই’, মার্ক্সিস্ট মিসেলিনি, সংখ্যা ২, নয়াদিল্লি;
বাঙালীয়ানা/এসএল