প্রান্তিক
প্রান্ত থেকে প্রান্তিক হয়ে যাচ্ছি!
যে প্রান্তে সূর্যমুখী ফুটেছিল,
সেই প্রান্ত খসে যাচ্ছে!
পরস্পর সংলগ্ন থেকে–
জঙ্গলে ছাওয়া গাছপালা নিয়ে
বছরের পর বছর যে লগ্ন তৈরি করেছিলাম,
এক পশলা শিলাবৃষ্টির পর–
তা এখন ভগ্নস্তূপ!
ভগ্নহৃদয় নিয়ে ঠুনকো হয়ে গেলাম!
কৃষিযোগ্য জমি হাতছাড়া হয়ে গেল
এখন সেখানে মদ চোলাইয়ের কারখানা!
মদবিক্রেতারা নেশায় নেশায়
আমাকেও বৃন্তহীন ও বাস্তুচ্যূত করেছে!

নিজের কাছে
নিজের কাছে নিজে স্পষ্ট হও
ভেক ধরে নেক নজরে আর কত থাকবে?
নিজের কাছে কতটুকু সৎ থাকো?
কুক্কটও ডাকে ভোরবেলায়
শিয়ালের ডাক নকল করে!
ছিদ্রানুসন্ধানী হয়ে ওঠ–
নিজের ছিদ্র দেখতে পারো না!
নিজের কাছে নিজে কতটুকু সৎ থাকো?
আত্মপ্রতারণা প্রতারণার পরগণা বাড়িয়ে তুলছে!
দেখো, বেলফুল ফুটে আছে
বেলগাছ অস্পষ্ট হয়ে নেই!
দেখো, সজনেফুল ফুটে আছে
সজনেগাছ অস্পষ্ট হয়ে নেই!
দেখো, জুঁইফুল ফুটে আছে
জুঁইগাছ অস্পষ্ট হয়ে নেই!
তুমি যে কখন কী হয়ে ফুটে থাকো!
যার সঙ্গে রাতবেলায় একবিছানায় ঘুমাও,
সে-ও সকালে উঠে তোমাকে চিনতে পারে না!

পণ্ডশ্রম
দুর্নাম রটিয়ে হটিয়ে দেওয়া যাবে না!
আমার ইমারতের তলও কংক্রিটে তৈরি,
ভূকম্পনে নড়বে না–পিলারও ভাঙবে না!
আনুগত্য না থাকলেই–গর্তে ফেলে দিবে?
তুমি তো তল্লাটে সুবাতাস বহন করো না,
যাদের ভুঁড়িভোজন করাও–তারা তো
অভুক্ত ও অনাহারী নয়,
তারা তো নচ্ছার!
মানুষের মনে সবকিছু পুশ করা যায় না!
সে-রকম ইনজেকশন ও সুঁই নেই!
ইচ্ছেমতো ছকের ভেতরে নিয়ে
সম্মান ও মর্যাদা নষ্ট করা এতটা সহজ নয়!
পালাক্রমে পালাগানে টেনে নিতে পারবে না,
সকলকে-সকালবেলায়!

সিঁড়ি
সবকিছু টেনে নিয়ে–সিঁড়ি বানিয়ে ফেলছি!
শ্রমিকের কথা বলে
শ্রমিককেও সিঁড়ি বানিয়ে ফেলছি!
জনগণের কথা বলে
জনগণকেও সিঁড়ি বানিয়ে ফেলছি!
সিঁড়িতে পা রেখে বিড়িতে আগুন লাগিয়ে
এখন বিড়ির বদলে দামী সিগারেটে আগুন লাগিয়ে
এতটাই ধোঁয়া উড়াচ্ছি,
ধোঁয়ার ভেতর কেউ আমাকে চিনতে পারছে না,
কোকিল গানের সাথে শুধু প্রহেলিকা!
রক্ত জল করা আন্দোলন ও বিজয়
সমকোণী ত্রিভুজ থেকে
স্থূলকোণী ত্রিভুজে নিয়ে যাচ্ছি!
অপরের বাড়ি-ঘর আগুনে পুড়তে থাকার সময়
ফায়ারব্রিগেডের চলন্ত সিঁড়িটা
আগুন নেভাতে ব্যবহার না করে
নিজের বাগান ও ধুলোপথ ভিজিয়ে তুলছি!

লেখক:
গোলাম কিবরিয়া পিনু, কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক