শিল্পক্ষেত্রে বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের নির্ধারিত মূল্য ৭ টাকা ৭৬ পয়সা। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম প্রায় ১৫ টাকা ধরে বরাদ্দপত্র (ডিমান্ড নোট) ইস্যু করছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো, এই বর্ধিত মূল্যের কারন হিসেবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস(এলএনজি) আমদানির কথা বলা হয়েছে। একইভাবে বর্ধিত মূল্য ধরে বরাদ্দপত্র দেয়া হচ্ছে ক্যাপটিভ পাওয়ারেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত, চট্টগ্রামের শিল্প ও বাণিজ্য খাতে গ্যাস সংযোগের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৬২৮টি ডিমান্ড নোট ইস্যু করেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। যেখানে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা। এসব ডিমান্ড নোটের ভিত্তিতে এরই মধ্যে টাকাও জমা দিয়েছেন ২৭৪ জন গ্রাহক। পরীক্ষামূলকভাবে এলএনজি সরবরাহ শুরু হলে ডিমান্ড নোটপ্রাপ্ত সব গ্রাহকই টাকা জমা দিয়ে দেবেন বলে মনে করছে ‘কেজিডিসিএল’-এর বিপণন বিভাগ।
ডিমান্ড নোটপ্রাপ্ত একজন গ্রাহকের মতে, নতুন গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে কেজিডিসিএলের দেয়া ডিমান্ড নোটে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা। এলএনজি সরবরাহের আগেই বিতরণ কোম্পানিগুলোর গ্যাসের দাম বাড়ানোর এ প্রচেষ্টা উৎপাদনমুখী শিল্পের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
নতুন গ্রাহকদের জন্য ডিমান্ড নোটে যে দর দেয়া হচ্ছে তা অস্থায়ী বলে জানান, কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খায়েজ আহমেদ মজুমদার। তিনি আরও জানান, এলএনজি আমদানির পর শিল্পসহ সব ধরনের গ্রাহকের গ্যাসের দাম পুনর্নির্ধারণ করা। সরকারি ঘোষণা আসার পর নতুন-পুরনো সব গ্রাহকের জন্যই একই মূল্য নির্ধারণ করা হবে। সেক্ষেত্রে পুরনো গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া জামানত থেকে নতুন দর সমন্বয় করা হবে।
বিইআরসি প্রদত্ত মূল্যহার অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় মূল্য ৭ টাকা ৩৯ পয়সা। ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বর্তমান মূল্য ৯ টাকা ৬২ পয়সা। এছাড়া শিল্পে ৭ টাকা ৭৬ পয়সা ও বাণিজ্যিকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ১৭ টাকা ৪ পয়সা।
এলএনজি আমদানির ভিত্তিতে সকল ধরনের গ্যাসের মূল্য ৭৫ শতাংশ বাড়াতে বিইআরসিতে প্রস্তাবনা দিয়েছে ছয় বিতরণ কোম্পানি, প্রতি ইউনিটের প্রস্তাবিত গড়মূল্য ১২ টাকা ৯৫ পয়সা। এর ভিতর ক্যাপটিভে ৯ টাকা ৬২ পয়সার পরিবর্তে প্রতি ইউনিটের প্রস্তাবিত মূল্য ১৬ টাকা ও শিল্পে ১৫ টাকা।
উল্লেখ্য, বিইআরসির ঘোষণার পূর্বেই বর্ধিত মূল্যে ডিমান্ড নোট ইস্যু করা, ব্যবসায়ীদের বিপাকে ফেলবে বলে মনে করেন চিটাগাং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি মাহবুব চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের শুরুতে এলএনজি আসলেও, এখন পর্যন্ত তা সরবরাহ করা যায়নি। এলএনজি সরবরাহের আগেই গ্যাসের দাম ১৪ টাকায় নিয়ে যাওয়া হলে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়বেন।‘
এদিকে, কেজিডিসিএলের মতো অন্য বিতরণ কোম্পানিও এলএনজি আমদানিকে কেন্দ্র করে দাম বাড়িয়ে শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে ডিমান্ড নোট ইস্যু করছে বলে জানা গেছে। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাস পর্যন্ত তিতাসসহ চারটি বিতরণ কোম্পানি থেকে শিল্পে ৫০৩টি গ্যাস সংযোগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন বিভাগ) প্রকৌশলী রানা আকবর হায়দারী জানান, এখন নতুন করে কোনো সংযোগের আবেদন না নেওয়ায় অতিরিক্ত দাম ধরে ডিমান্ড নোট ইস্যুর সুযোগ নেই।
তিনি আরও জনান, গ্যাসের দাম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করা বিইআরসি নির্ধারিত মূল্যেই গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস বিক্রির বাধ্যবাধকতা রয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলোর। বিইআরসির আইন অনুযায়ী, এর কম বা বেশি দামে গ্যাস বিক্রির করার নিয়ম নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থার আদেশ ছাড়া এভাবে মূল্যবৃদ্ধি বিইআরসির আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যা বিইআরসি আইনের ৪০ ও ৪২ ধারা অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। আদালতে মামলা হলে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
উল্লেখ্য, গ্যাস সংকট মোকাবেলায় এলএনজি আমদানির উদ্যোগের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের মহেশখালীতে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের প্রথম ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল। গত ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, এলএনজি নিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছায় কমিশনিং জাহাজ। গত মে মাস থেকে ওই গ্যাস সঞ্চালন পাইপে গ্রাহক পর্যায়ে দেয়ার কথা থাকলেও, গ্রাহকদের গ্যাস প্রদান করতে পারেনি পেট্রোবাংলা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জাতীয় গ্রিডে এলএনজি যোগ করার ঘোষণা দিয়েও তা বাস্তবায়ন করতে পারে নি তারা।
বাঙ্গালিয়ানা/আআ/এআর