চলে গেলেন সুরস্রষ্টা আলাউদ্দীন আলী

Comments

চলে গেলেন দেশ বরেণ্য গীতিকার, সুরস্রষ্টা, সংগীত পরিচালক আলাউদ্দীন আলী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। ৯ আগস্ট ২০২০, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টার পর মহাখালীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। গীতিকার ও সুরকার আলাউদ্দিন আলীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার ভোর পৌনে পাঁচটায় আলাউদ্দীন আলীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসময় শ্বাসকষ্টের তীব্র সমস্যা থাকায় চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে আলাউ্দদীন আলী ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণসহ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ও ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের ৩ জুলাই এক পরীক্ষায় তার ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে। বাংলাদেশ ও ব্যাংককে তার চিকিৎসা করা হয়। সাভারে সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন অব প্যারালাইজড কেন্দ্রেও চিকিৎসা নিয়েছিলেন দীর্ঘদিন।

বাংলাদেশের সংস্কৃতিজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, বাংলা চলচ্চিত্রের গানে কিংবদন্তি আলাউদ্দিন আলী ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ওস্তাদ জাদব আলী ও  মা জোহরা খাতুন। দেড় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে চলে আসেন আলাউদ্দিন আলী। তিন ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে সেই কলোনিতেই বড় হন এই গুণী শিল্পী। সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি হয় ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এক অমর শিল্পী আলাউদ্দীন আলী একই সঙ্গে সুরকার, সংগীত পরিচালক, বেহালাবাদক ও গীতিকার। ১৯৬৮ সালে বাদ্যযন্ত্র শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। শুরুটা শহীদ আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে, পরে প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘদিন।

আলাউদ্দীন আলী ১৯৭৫ সাল থেকে সংগীত পরিচালনা করে প্রশংসিত হন। ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’ এবং ‘যোগাযোগ’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৮৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি খ্যাতিমান পরিচালক গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন।

তার সুর ও কথায় কেবল বাংলাদেশই নয়, ভারত ও পাকিস্তানের বহু নন্দিত শিল্পী কণ্ঠ দিয়েছেন। তার লেখা আর সুরের গান বাংলার সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের মুখে মুখে। ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার পুরস্কৃত হয়ে সংগীত পরিচালক হিসেবে রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি।

চলচ্চিত্র, বেতার, টেলিভিশন মিলে প্রায় পাঁচ হাজার গান তৈরি করেছেন তিনি।

আলাউদ্দিন আলীর জনপ্রিয় ও কালজয়ী কিছু গান:
একবার যদি কেউ ভালোবাসতো
যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়
ইস্টিশনের রেলগাড়িটা
দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়
হয় যদি বদনাম হোক আরো
তোমাকে চাই আমি আরও কাছে
এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই
হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ
আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার
সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারও ঘরনি
কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিল না
পারি না ভুলে যেতে স্মৃতিরা মালা গেঁথে
জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো
ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা
আমার মনের ভেতর অনেক জ্বালা আগুন হইয়া জ্বলে
বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না
যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে
এমনও তো প্রেম হয় চোখের জলে কথা কয়
সবাই বলে বয়স বাড়ে আমি বলি কমে রে
বাড়ির মানুষ কয় আমায় তাবিজ করেছে
আকাশের সব তারা ঝরে যাবে
এ জীবন তোমাকে দিলাম
কেন আশা বেঁধে রাখি
সাগরিকা বেঁচে আছে তোমারই ভালোবাসায়
দিন কি রাতে
আমার মতো এত সুখী নয় তো কারো জীবন
শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে
ভালোবাসা যতো বড়ো জীবন তত বড় নয়
অসাধারণ কিছু দেশাত্মবোধক গান রয়েছে তার:
ও আমার বাংলা মা তোর
সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ
প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ
আমায় গেঁথে দাওনা মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা

আলাউদ্দীন আলীর বর্তমান স্ত্রী ফারজানা মিমির একমাত্র মেয়ে আদৃতা আলাউদ্দীন রাজকন্যা। আগের সংসারে আলীর রয়েছেন আরও চার সন্তান, আজমেরী আলী, শওকত আলী রানা, আফরীন আলী ও আলিফ আলাউদ্দীন।

বাঙালীয়ানা/এসএল

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.