চে গুয়েভারার কবিতা

Comments

ফিদেলের জন্য গান

তুমি বলেছিলে সূর্যোদয় হবে।
চলো যাই,
সেই অচিহ্নিত পথে
তোমার ভালোবাসার সবুজ কুমিরকে মুক্ত করতে।

এবং চলো আমরা
সকল উপেক্ষাকে তুচ্ছ করি
বিদ্রোহী প্রগাঢ় নক্ষত্রপ্লাবিত ভ্রূকুটিতে।
হয় বিজয়ী হব না হয়
মৃত্যুকে যাব পেরিয়ে।

প্রথম গুলিতেই সারাটা জঙ্গল
উঠবে জেগে সতেজ বিস্ময়ে।
এবং তখনই সেখানে
তোমার পাশে
আমরাও থাকব
প্রশান্ত সাহচর্যে।

যখন তোমার কণ্ঠস্বর বাতাসকে করবে চার ফালি –
ভূমি সংস্কার, সুবিচার, রুটি, স্বাধীনতা
তখন সেখানে আমরাও
তোমার পাশে থাকব,
আমাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে –
একই উচ্চারণ।

দিনের শেষে
অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অভিযান
সাঙ্গ হলে,
তখন দেখবে সেখানে
শেষ যুদ্ধে
আমরাও রয়েছি
তোমার পাশে।

যখন বন্য পশু চাটে তার ক্ষত
যেখানে বিদ্ধ কিউবার বর্শা,
তখন গর্বিত হূদয়ে আমরা
তোমার পাশে থাকব।

ভেবো না ওই সব উপহারসমেত
ব্যাঙের মতো লাফিয়ে বেড়ানো
তমঘা-আঁটা মাছিরা
আমাদের সংহতি করতে পারবে বিনষ্ট,
আমরা চাই তাদের রাইফেল, বুলেট
আর এক টুকরো পাথর
অন্য কিছুই নয়।

আমেরিকার ইতিহাস রচনায়
আমাদের সামনে যদি
ইস্পাত-বাধা আসে
তাহলে আমাদের গেরিলা অস্থি
ঢাকার জন্য চাই শুধু কিউবার অশ্রুধারা –
আর কিছু নয়।

অনুবাদ: মতিউর রহমান

এবং এখানে

আমি মেস্তিজো! জ্বলন্ত প্যালেট হাতে চেঁচিয়ে উঠল চিত্রকর,
আমি মেস্তিজো! আকাশপথে ডেকে যায় উড়ন্ত পাখি,
আমি মেস্তিজো! বিস্কোরিত হয় কবির প্রতিবাদ।
আমি মেস্তিজো! বলে উঠল সেই লোক যে আমাকে
প্রতিটি রাস্তার কোণে খুঁজে পায় দৈনন্দিনের যন্ত্রণায়
এবং এমনকি মৃতদের পাথুরে রহস্য
উজ্জ্বল কাঠের মতো কঠিন ভালোবাসায়
‘সে-ই হলো মেস্তিজো, আমার ভেতরের অদ্ভুত সন্তান’।
আমিও মেস্তিজো, তবে একটু অন্যভাবে:
সেই সংগ্রামে, যেখানে দুই শক্তি পরস্পরের
প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
আমার বুদ্ধিকে করে সংহত, আনে বিভাজন
যে শক্তি গাছে ফল পেকে উঠবার আগেই তার
ভেতর থেকে নিয়ে আসে সময়ের গন্ধ!
আমি ঘুরে বেড়াই হিস্পানিক আমেরিকায়
সীমান্ত ধরে ধরে, সেই অতীতকে ছুঁতে, যা ঘিরে
আছে এই মহাদেশ।
দুর, বহুদুর থেকে ভেসে আসা ঘণ্টার আওয়াজের মতো
স্মৃতিগুলি কী মধুরিম, আশ্চর্য সুবেশ।

অনুবাদ: রথীন চক্রবর্তী

হাওয়া আর ঢেউয়ের উল্টোদিকে

হাওয়া আর ঢেউয়ের উল্টোদিকে
এই যে কবিতা, বইবে আমার স্বাক্ষর
তোমাকে দিয়েছি ধ্বনিমুখরিত ছয়টি মাত্রা−
একটি চাহনি যা বয়ে বেড়ায় (আহত পাখির মতন)
কোমল বেদনা,

কুসুম গরম অথৈ পানির একটু স্বস্তিহীনতা,
একটি আঁধার দপ্তর যার আলোর উৎস
মাত্র আমারই কবিতা
তোমার অনেক একঘেয়ে রাতে জীর্ণ একটি
আঙ্গুলের আবরণ
আমাদের যত ছেলেমেয়েদের একটি আলোকচিত্র

আমার সঙ্গী পিস্তলটির অতি অপরূপা গুলি,
সন্তানদের (সতত গোপন অথচ অতল) যুক্তিরহিত স্নৃতি
যা কিনা একদা ধারণ করেছি আমরা,
এবং আমার কাছে গচ্ছিত জীবনের কিছু শান্তি,

সবই (সানন্দে আর অকাতরে) দিয়ে দিই বিপ্লবকে
এমন তো কোনো শক্তি নেই যা
মিলতে দেবে না আমাদের।

অনুবাদ: সাজ্জাদ শরিফ

লেখক:
Che035
আর্নেস্তো চে গুয়েভারা (১৯২৮-১৯৬৭), কবি, রাজনীতিক, বিপ্লবী, গেরিলা

চে-কে জানতে কমরেড আজিজুল হকের বিশ্লেষণ পড়ুন
চে’র অনন্যতা ঠিক কোথায়?

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.

About Author

বাঙালীয়ানা স্টাফ করসপন্ডেন্ট