ট্রায়াল রুম
ট্রায়াল রুমে ঢুকি আর আমি বার হইতে
না পারি, দেখি সেইখানে মহাবিশ্বের
ছদ্মবেশি একখানা আয়না,
আর একটা স্টিলের হ্যাঙার
তাতে আমার পুরানা পোশাকগুলি পাল্টাইয়া ঝুলাই রাখি।
আমি বুঝতে পারি ঐ আয়না জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানের
যে ট্রায়াল রুম, আমি সেইখানে, এলিয়েনরা আসে,
তারা তাদের ধবধবা অমল ধবল মেঘের পোশাক পরায়
ধসায়ে আমার বিশ্ববোধরে
নিয়া যায় কদম ফুলের গন্ধ বিছানো
মহাবিশ্ব ছদ্মবেশি আয়নার গভীরে
পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ রাখতে শুধু আমি ভুলি যাই!

পাখি
দেয়ালের উপ্রে যে নরম পাখিটা
ওরে আমার খোয়াবের লগে আর
না জড়াই,
নাইলে ও কাঁপি উঠবে!

মেঘের আব্বা-আম্মা
যখন ও খুব ছোট। ওরে নিয়া পাহাড়ে উঠি।
ভাগ্য কী খারাপ পাহাড়ে উঠি দেখি
আকাশে কোনো মেঘ নাই। ছেলে বলে, আব্বু-আম্মু
হেন পাহাড়ে কেন আনলা যেইখানে মেঘ নাই!
ও তখনও সত্য/মিথ্যার পার্থক্য বুঝত না।
ওরে কইলাম, বাবা, তোমার বাপ-মা যদি উড়াল দিই
এ পাহাড়েরতে আরেকটু উপরে উঠি,
দেখবা দু-টুকরা মেঘ উঠতেছে!
ও কইলো, না, আমার মেঘের আব্বা-আম্মা দরকার নাই।
আমার ভয় করতেছে, আমারে জড়াই ধরো।
আমি কইলাম, হ বাবা, আমারও ভয় করতেছে।
মেঘ হই উড়তে গিয়া পাছে যদি ঝরি পড়ি।
তখন তুমি আব্বু-আম্মুরেই আর পাইবা কই।
চলো আমরা বাড়ি ফিরি যাই।
ও কইলে, হ, তোমরা আমারে
বালিশের কভারের মতো প্যাঁচায়ে বেড়াই ধরো!

ট্রেন স্টেশন
এইখানে অনেক হকারের ডাক, কুলির অনুনয়,
যাত্রীদের উঠানামা,
ট্রেনের হুইসেল কোনো কিছুই এইখানে বিশিষ্ট হইতে পারে না,
সবই মিশি গলি যায় অন্যকিছু অন্যকিছুর ভেতর,
এইখানে কোনটা ধ্বনি আর কোনটা প্রতিধ্বনি বুঝার চেষ্টা বৃথা,
দূরে কইতর উড়ে আকাশের বিনা ডাকে তারা সাড়া দেয়,
তেসতুরি পাড়া,
কিংবা ফার্মগেইট পার হইতে হইতে ততক্ষণে
আমি ভুলি যাই আমি রেল স্টেশনের ফায়াকুন হইতে
কুনের ভিতর আসছি
শুধু একজনই ট্রেনে উঠে আর অন্যজন নামে
আমরা ভুলে আমরা বহু মানুষের মুখ দেখি
ট্রেন হইতে নামি কাবিল সেলুনের ভিতর
আয়নার ভিতরে সেভ হইতেছে
যে তার কাছেও দেখলাম
এইসব শেয়ার করার কিছুনাই!

সেল্ফি
ওরা তো আমাদেরই কালো পিঁপড়া।
মুখে ডিম। আসছে, না যাচ্ছে কোথায়?
ওদের কী বেলা অবেলা নাই!
ভিজতেছে জিওল গাছের পাতা।
কিন্তু বৃষ্টি তো এহনও নামে নাই।
আমরা কী আমাদের হাত নাকি চোখরে বিশ্বাস করব এইখন!
মাটির হাঁড়ির মতো আমাদের ঘুম ভাঙবে কবে?
আমাদের বলতেছে কেন! আমি তো একাই!
কুকুর ডাকতেছে। গহীন রাত পাওয়ার কারণে।
টুইকে রাখি খবরের কাগজের কোণায়।
কোন কোন তাড়না হুল ফুটাইতে পারে।
বিলের পানিই ঘোলা হয়তো। নাকি সন্ধ্যার কারণে
মাছের চোখ ঘোলা হই আসতেছে?
বিশুদ্ধ অন্ধকার আর কত নিচে! সেথা যাওনের
কোনো ডুবা নৌযান কী এক্কেবারেই নাই!
জীবনে একবার শুধু একবার পেখম মেলি ফুইটে উঠতে
চাইছিলাম আর্তির ভিতর।

মহাকাশ
আমার একরত্তি বিষণ্ন চিন্তার মতো
তুমি রাতটুকু আমার পাশে থাকো।
এক হাজার বছর আগের আলো যেন একসাথে
আমাদের দুজনের গার্হস্থ্য চোখের ভিতর ঢুকি পড়ে।
আমরা একে অপরের হাত দিই যেন চোখ ঢাকি না!
এ গ্রহে আমরাও কী নিজেদের অজান্তে
আলোরূপে উঁকি দিতে আসি পড়ছি!
জানা যায়?
শোনো পার্থিব জহির, এসব কালজয়ী আলোর পৌত্তলিকতা
নিয়া আলোচনার বিষয়ও না!
ভাষার অনন্তমারপ্যাঁচের বিষয়ও না!

লেখক:
জহির হাসান, কবি ও চিত্রকর
ফিচার ফটো: কবি জহির হাসানের অঙ্কিত