জ্যোতিষী কার্ল মার্ক্স: একবিংশ শতকে এসে মিলে গেছে তার অধিকাংশ কথা

Comments

কার্ল মার্ক্স বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স হতো দুশতাধিক। উনিশ শতকের এই দার্শনিক সমাজ এবং পুঁজিবাদ সম্পর্কে যে বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিলেন, সেগুলো কতটা সঠিক প্রমাণিত হয়েছে তা নিয়ে বিবিসিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি কৌতূহল-উদ্দীপক।

প্রথমত, মার্ক্স বলেছিলেন পুঁজিবাদ এমন সব জিনিস তৈরি করবে, যা মানুষের দরকার নেই, কিন্তু তারপরেও সে বস্তুর চাহিদা তৈরি হবে। একেই তিনি ‘কাল্পনিক চাহিদা’ বলে নাম দিয়েছিলেন।

উদাহরণ দিয়ে বলা যায় ফ্যাশন আর স্মার্টফোনের কথা। চলতি হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে কাপড়-চোপড় পরতে গিয়ে আমরা এমন সব কাপড়-চোপড় ফেলে দিচ্ছি যেগুলো আসলে এখনো ব্যবহার করা যায়। যে স্মার্টফোনটি আপনার হাতে আছে, তার তুলনায় বাজারে আসা নতুনটির তফাৎ খুব সামান্যই। তারপরও ফোন কোম্পানিগুলো বিরামহীন নতুন মডেল উদ্ভাবন করে বাজারে ছাড়ছে এবং সর্বশেষ মডেলের ফোনটির জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে ভোক্তাদের মধ্যে।

দ্বিতীয়ত, কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন পুঁজিবাদের প্রকৃতিই হচ্ছে এটি ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ আর ‘মন্দা’র মধ্যে ঘুরপাক খায়। সেই অর্থে ২০০৮ সালে বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী মতই হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, লাভের জন্য পুঁজিবাদের যে তীব্র ক্ষুধা, সেজন্য বিশ্বে মানুষের যা প্রয়োজন তার চেয়ে উৎপাদন অনেক বেশি হবে। এবং শ্রমিকের মজুরি এতই কমবে যে তারা নিজেদের উৎপাদন করা পণ্য কিনতে পারবে না। আর মানুষ পণ্য না কিনলে পুঁজিবাদীরা মুনাফা করবে কিভাবে? যে কারণে পুরো ব্যবস্থা ব্যর্থ হতে শুরু করবে। যার অনেক কিছুই এখন দেখতে পাওয়া যায়!

তৃতীয়ত, মার্ক্স বলেছেন, কোম্পানিগুলো এত বড় হতে থাকবে যে তারা নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্রমে গ্রাস করে নেবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সাধারণ অর্থে পুঁজিবাদের বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার কথা। যেমন পাড়ার মাংস ও মাছ বিক্রেতার মত ছোট ব্যবসা পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। এবারে মনে করে দেখুন তো, বড় সুপার মার্কেট চেইন রেখে কে কবে পাড়ার ছোট দোকানটিতে ঢুকেছেন?

চতুর্থত, কার্ল মার্ক্স বলেছেন পুঁজিবাদের ধরণ অনুযায়ী মুনাফার জন্য বড় ব্যবসায়ীরা কর্মীদের বেতন ও সুবিধাদি কমিয়ে দেয়। এতে মধ্যবিত্ত ক্রমে গরীব হতে থাকে। এর ফলে একটি বড় অংকের নগদ অর্থ অল্প কিছু মানুষের হাতে জমতে থাকে। আজকের পৃথিবীতে তিন শো সত্তুর কোটি মানুষের যা সম্পদ, তার চেয়ে বেশি সম্পদ আছে মাত্র ৪২ জন ধনী মানুষের হাতে। চীন, ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত জনসংখ্যা তিন শো সত্তুর কোটি।

পঞ্চমত, কার্ল মার্ক্সের সবচেয়ে বড় তত্ত্ব ছিল পুঁজিবাদ নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনবে। হবে বিপ্লব। তিনি বলছেন, যখন সবাই বুঝতে পারবে যে এই পদ্ধতিতে গলদ আছে, তখন তারা নিজেরাই বিদ্রোহ করে বিপ্লব ঘটাবে।

কিন্তু সেটি এখনো বাস্তবে ঘটেনি। তবে পৃথিবীর কোটি মানুষ এখনো এই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বেঁচে আছে।

(বিবিসির মূল উৎস থেকে ঈষৎ পরিবর্তিত, ছবিসূত্র ইন্টারনেট)

বাঙালীয়ানা/এআর

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.