২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বছর পর নির্বাচনী সুবাতাস বইছে। ডাকসু নির্বাচনের হাওয়া লেগেছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের মাঝেও। সবার উৎসুক দৃষ্টি ডাকসুর পানে যেন এখান থেকেই পরিবর্তনের শুরুটা হবে এই আশায়।
ডাকসু নির্বাচনের আমেজ যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছে গত কয়েকমাসে হয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের সকল নির্বাচনকেও। আমরা দেখেছি নতুন প্রজন্মের একটা বড় অংশ নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়ছিলো। তাছাড়া নির্বাচনে ছিলোনা কোনো ফেয়ার প্লে গ্রাউন্ড, ছিলোনা প্রত্যাশিত প্রার্থী অথবা বিশ্বস্ত ইশতেহার। ক্ষমতাসীনরা ছাড়া ছিলোনা কোনো বিকল্পও! একাধিকবার একটি নির্দিষ্ট দলে আবদ্ধ করে ফেলা গণতন্ত্র একটা দেশের চিত্র হতে পারেনা। যার ফলে যারা যুক্তিবাদি, যারা স্বপ্নালু, যারা গনতন্ত্রের চর্চা করতে চান তাদের নির্বাচনবিমুখ হয়ে যাওয়াটা ছিলো খুবই স্বাভাবিক।
ডাকসু নির্বাচনে এক দশক আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পরেও প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগকে না হলেও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পরতে হচ্ছে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বারুদের মতো জ্বলে উঠায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, যারা ক্যাম্পাসের প্রিয়মুখ, যারা এতদিনে রাজনীতি সচেতন, যুক্ত ছিলেন ছাত্রদের অধিকার আদায়ের মিছিলে তবে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের ছত্রছায়ায় নিজেদের আবদ্ধ রাখেননি তাদের “স্বতন্ত্র জোট” ব্যানারে সামনে আসায় ডাকসু নির্বাচনকে যেন আরও উৎসবমুখর করে তুলেছে। “স্বতন্ত্র জোট” দাবী করে তারা যেহেতু কোনো বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত নয় তাই তাদের ব্যবহার করে কোনো দল ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করেও সুফল পাবেনা। কারণ স্বতন্ত্র হওয়াতে কোনো দলের কাছে জবাবদিহিতার প্রেশারও তাদের নেই। তাই তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছেই তাদের জবাব দিতে চায় বরং কোনো বৃহৎ দল নয়।
অন্যদিকে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের হয়ে লড়ছে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং ঢাবি ছাত্র লীগের জনপ্রিয় নেতারা। তারা দাবী করতেই পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ এবং নেতাদের বিপুল জনপ্রিয়তার কাছে হেরে যাবে বাকিরা, তবে গত এক দশকে ছাত্রলীগের কৃতকর্ম তাদের ডাকসুতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। তবে এও সত্য, জনপ্রিয়তা যে নির্বাচনে প্রভাব ফেলে তা ছাত্রদলের অবস্থানেই প্রকাশ করে, ছাত্রদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়ার ফলে নির্বাচনে ছাত্রদলের অবস্থান তলানিতে।
বামেরা নির্বাচনে যাচ্ছে লিটন নন্দীর নেতৃত্বে, নিজেদের তুলনামূলক গুটিয়ে রাখার ফলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ঠিক কতটুকু তা বলা মুশকিল। তবে, এও সত্য ডাকসুতে যে কোনো দলের জন্যই বিশাল প্রতিপক্ষ লিটন নন্দীর ছাত্র ইউনিয়ন ও প্রগতিশীল জোট। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিসিএল এর অংশগ্রহণ এবং সে দলের হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের লড়াই করাটা আরও উৎসবমুখর নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়।
ডাকসু নির্বাচনের চোখে পড়ার মতো বিষয় হলো এজিএস বা তারমতো গুরুত্বপূর্ণ পদে লড়াই করছেন ভয়ডরহীন তরুণ শিক্ষার্থীরা। একইসাথে বিশ্বাস করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্ত চর্চার প্রাণকেন্দ্রে নারীদের অংশগ্রহণ অনুমেয় ছিলো। গত এক বছরে বাংলাদেশে হয়ে যাওয়া অন্যতম দুটি আন্দোলনের মিছিলে মিছিলে স্লোগানে ধ্বনিতে এক হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা বিশ্বাস করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভুত বর্তমান সকল সমস্যাকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি করা হয় তার মাঝে অন্যতম আবাসন সমস্যা। তারা এও বিশ্বাস করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো কোনো বৃহৎ দলের হয়ে সমাধান করাটা যতটা না কঠিন তাদের জন্য সমাধান করাটা অনেক বেশী সহজ।
বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে বহুদিন পর নির্বাচন ঘিরে নিজেদের গান লেখা হচ্ছে নিজেদের সুরে, বিতর্ক উৎসব হচ্ছে নির্বাচন ঘিরে, অরাজকতা নয় বরং পারস্পারিক সহমর্মিতার চিত্র দেখা গেছে মধুর ক্যান্টিনে, ছাত্রবান্ধব ইশতেহার নিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সকলে। সকল দলের ইশতেহারে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা থাকলেও স্বতন্ত্র জোটের তালিম হাসানের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ঢাবির শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব সবার থেকে আলাদা হতে পারে সেটা ইতিহাসভিত্তিক কারণে।
যদিও শেষ পর্যন্ত স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন যদিও থেকেও যায় তবুও অপেক্ষা করতে হবে ১১ই মার্চ পর্যন্ত। ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠ, সুন্দর, উৎসবমুখর হোক। প্রত্যেক ভোটার তার সকল ভয়কে ছাড়িয়ে গিয়ে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে বাংলাদেশে একটি সুন্দর নির্বাচনের দৃষ্টান্ত হয়ে থাক ২০১৯ এর ডাকসু নির্বাচন এই কামনায় আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
লেখক: মোসাদ্দেক মিম। শিক্ষার্থী, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।