বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ওই দুজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে বংশাল থেকে মো. আকরাম নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আকরাম গত বছর ওই মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ায়, সেখান থেকেই হাদী ও তোহার সঙ্গে তার যোগাযোগ।
পুলিশ কর্মকর্তা ফরিদ বলেন, ডেমরার ওই মসজিদের সঙ্গে একটি মাদ্রাসা আছে। ইমাম হাদী সেখানে পড়াতো। আর তোহা ওই মাদ্রাসার ছাত্র, সে ইমামের অনুগত। ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, “পরিকল্পনা অনুযায়ী মনিরকে অপহরণ করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছিল তারা। কিন্তু মুক্তিপণ পাওয়ার আগেই তারা শিশুটিকে হত্যা করে।”
তাদের কাছ থেকে এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি পাতলা তোয়ালে, দুটি সিমেন্টের বস্তা, দুটি কালো রংয়ের দড়ি, একটি মোবাইল ফোন এবং শিশুটির পোশাক গ্যাবাডিংয়ের ফুল প্যান্ট ও পাঞ্জাবি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান উপকমিশনার ফরিদ।
তিনি জানান, অন্যান্য দিনের মতোই রোববার, ৭ এপ্রিল, ২০১৯, সকালে ডেমরার ডগাইর নতুন পাড়ার বাসিন্দা মো. সাইদুল হকের তিন ছেলে-মেয়ে ওই মাদ্রাসায় পড়তে যায়। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে আট বছরের মনির ছিল সবার ছোট।
বেলা ১১টার দিকে দুই মেয়ে বাসায় ফিরে জানায়, তাদের ভাইকে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন সাইদুল স্ত্রী ও মেয়েদের নিয়ে ওই মাদ্রাসাসহ আশপাশের সম্ভাব্য জায়গাগুলোতে খোঁজাখুঁজি করেন। কেউ মনিরের সন্ধান পেলে তাকে জানানোর অনুরোধ জানিয়ে এলাকায় মাইকিংও করেন তিনি।
পরে ছেলে নিখোঁজ হওয়ার কথা জানিয়ে থানায় একটি জিডি করেন সাইদুল হক। এরইমধ্যে তাকে ফোন করে ছেলেকে ফিরে পেতে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ওই টাকা মসজিদটির লাশ বহনের খাটিয়ার নিচে রাখতে বলা হয়। সে অনু্যায়ী ইমাম হাদীর কাছে এক লাখ টাকা দিয়ে আসেন সাইদুল। ‘অপহরণকারীরা’ আসেনি জানিয়ে পরদিন আবার ওই টাকা সাইদুলকে ফেরত দেয় হাদী।
এদিকে পুলিশও মনিরের খোঁজে মাঠে নামে। সোমবার বিকালেই মসজিদের সিঁড়িতে বস্তাবন্দি অবস্থায় মনিরের লাশ পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারের পরপরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইমাম হাদী ও তার ‘সাগরেদ’ তোহাকে আটক করা হয় বলে উপ কমিশনার ফরিদ জানান।
“পরে মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদে তারা মনিরকে হত্যা এবং মুক্তিপণের জন্য টাকা চাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। বলেছে, নির্মাণাধীন ওই মসজিদের দুই তলা থেকে তিন তলায় উঠার সিঁড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল মনিরকে। সে চিৎকার করবে বলে মুখ চেপে ধরার এক পর্যায়ে ছেলেটি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে তার লাশ বস্তায় ভরে রাখা হয়।”
বাঙালীয়ানা/এসএল