বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানীর ঢাকার চকবাজার থানাধীন চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের কাছে এক ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত হয়।
ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট সাড়ে চারঘণ্টার মতো কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। সকাল ৭টার দিকে আগুন নেভাতে সফল হয় তারা। এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬৭ জনের আর আহত অর্ধশতাধিক। এখনও নিখোঁজ অনেকে।
কারও মতে রাজমহল হোটেলের সামনে একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আশেপাশের ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কারও মতে প্রথমে একটি ট্রান্সফর্মারে বিকট শব্দ হলে সেখান থেকে আগুন বের হতে দেখা যায়। সেই আগুনে পিকআপটি বিস্ফোরিত হয়। পিকআপ বিস্ফোরণের পর রাজমহল হোটেলে আগুন ছড়ায়। হোটেলের সামনে সিলিন্ডার গ্যাস ছিল। সেগুলো বিষ্ফোরিত হয়। রাজমহল হোটেলের পুরো ভবনে আগুন ছড়ানোর পর পাশের ভবন ওয়াহিদ মঞ্জিলে আগুন লাগে। এই ভবনের নিচে মার্কেট ও ওপরে গোডাউন রয়েছে। বডি-স্প্রে’র দোকান ও প্লাস্টিক দানার দোকান রয়েছে। এক পর্যায়ে ওয়াহিদ মঞ্জিল সংলগ্ন জামাল কমিউনিটি সেন্টার ও রাস্তার উল্টো পাশে থাকা দুটি ভবনের চার ও পাঁচ তলায় আগুন ধরে। এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কী থেকে তা জানাতে না পারলেও আগুন ছড়িয়ে পড়ার জন্য দাহ্য পদার্থকে দায়ী করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের সময় ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলি আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, একটি সিএনজি বহনকারী পিকআপ ট্রাকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পরপরই পাশে থাকা গোডাউন ও দোকানে আগুন লেগে যায়, ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
“পুরান ঢাকার মানুষ” শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন অগ্নিকান্ডের অর্ধদিবস পার করে দিয়ে অগ্নিকান্ড স্থল সরেজমিনে সফর করে জানালেন “এটা হচ্ছে সিলিন্ডার ব্লাস্ট। ওই এলাকায় গ্যাস স্বল্পতা ছিল। হোটেলে সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করতো। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা কেমিক্যাল এরিয়া না, এখানে কেমিক্যালের কোনো অস্তিত্ব নেই, কোনো গোডাউনও ছিল না”। তিনি আরও বলেন, “পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসা বংশ পরম্পরা। এটাতো বন্ধ করা যাবে না। এর সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। আমি পুরান ঢাকার মানুষ। আমি জানি”। নিমতলির ঘটনার ৯ বছর পরও কেমিক্যাল গোডাউন সরানো গেলো না কেনো, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বললেন, “আপনারা কি ভীনগ্রহ থেকে এসেছেন নাকি? আমরা কি ঢাকা শহর গুড়িয়ে দেবো?”
মেয়র সাঈদ থোকন বলেছেন, দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যালের গোডাউন উচ্ছেদে কঠোরতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাঈদ থোকন আরও বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদের জন্য গত সোমবার থেকেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শুরু করা হয়েছে। আগুন লাগার ঘটনার সাত-আট দিন আগে এফবিসিসিআই’র মাধ্যমে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি বৈঠকও করা হয়েছিল। তারপর থেকে আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করি। আমাদের আগে থেকেই উচ্ছেদ অভিযান চলছিল। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গতকাল (বুধবার) এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। কেরানীগঞ্জে একটি জায়গায় শনাক্ত করা হয়েছে, সেখানে গোডাউনগুলো স্থানান্তর করা হবে।“
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, “২০০৯ সাল থেকে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউন সরাতে বলে আসছি। সরিয়েও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আবার এগুলো এই এলাকায় চলে এসেছে। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেছেন, তারা আর লাইসেন্স নবায়ন করছেন না। তিনি পদক্ষেপ নেবেন এগুলো সরানোর জন্য। মেয়র আমাদের তথ্য ও দিকনির্দেশনা দিলে আমরা সব ক্লিয়ার করে দেবো।“
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বললেন, “চকবাজারের ঘটনা থেকে আমরা আবারও শিক্ষা পেলাম। ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব, মনযোগী হব, মনোনিবেশ করব।”
সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজউক, গণপূর্ত বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, সর্বোপরি সিটি কর্পোরেশনের এখানে কি ধরনের দায়িত্ব পালনের কথা ছিল? যারা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তারা কিংবা ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠানসমূহ এসব কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করার কথাই শুধু নয় সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এদের নিয়ন্ত্রণ করবে আইন মাফিক। তাহলে এ ধরনের ঘটনার জন্য নিয়মানুযায়ী তারাই দায়ী হবে। আর নিয়মবহির্ভূত ব্যবসা যারা করছে, যাদের ভবন এসব নিয়মবহির্ভূত ব্যবসায় ব্যবহার হচ্ছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার দায় সিটি করপোরেশন এবং আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই নিতে হবে।
৩ জুন, ২০১০ -এ নিমতলী অগ্নিকাণ্ডে সরকারী হিসেবে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। বেসরকারী সংস্থা বার্ন এডুকেশন অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস মিশন (বিইএএম) এবং বাংলাদেশ সোসাইটি ফর বার্ন ইনজুরি (বিএসবিআই) এর হিসেব মোতাবেক এ সংখ্যা প্রায় ১৫০। বুধবার চকবাজারে সরকারী হিসেবেই ৬৭টি প্রাণ চলে গেল।
রাষ্ট্র তার জনগণকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রতিনিয়ত, সেখানে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ৬৭টি জীবন ফেরত পাওয়া যাবে কী? রাষ্ট্র নাগরিককে নিরাপত্তা দেবে, এ জনগণের অধিকার। জনগণের নিরাপত্তার সর্বোত্তম ব্যবস্থা নেবে সরকার। সেই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে দায় সরকারের।
মাননীয়দের কাছে বিনীতভাবে প্রশ্ন করতে চাই যে এভাবে উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন আর কতদিন? সরকার ও প্রশাসনের এমনতর দায়িত্বহীনতার জবাব জনগণের কাঠগড়ায় একদিন দিতেই হবে।
২০০৮ সালে যে শিশু স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিল সে আজ এসএসসি পাসের সার্টিফিকেট নেবে! আপনাদের শিক্ষাকাল কবে শেষ হবে বলতে পারেন?
সম্পাদক, বাঙালীয়ানা