দেশজুড়ে ধস নেমেছে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে। আশঙ্কাজনক হারে নেমে গেছে চামড়ার দাম। একলক্ষ টাকার চামড়া এক হাজারেও বিক্রি হচ্ছে না বলে, চামড়ার বাজার ঘুরে জানা যায়।
এবারের ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার চামড়ার দাম গতবছরের চেয়ে কম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু সেই নির্ধারিত দরও ঠিক থাকেনি। বরং কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা হয়েছে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়েও কম মূল্যে। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং আড়তদারদের সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, কোরবানির ঈদকে পুঁজি করে প্রতিবছর প্রায় কয়েক লাখ মৌসুমি ব্যবসায়ী দেশব্যাপী চামড়ার ব্যবসায় নামেন। পাইকারি ব্যবসায়ীর তাঁদের কাছ থেকে চামড়া কিনে জমা রাখেন আড়তদারদের কাছে। এবারের ঈদে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে চামড়া কিনেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
এর ফলশ্রুতিতে সেসব চামড়া কম দামে কিনে নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা। রাজধানীর কাঁচা চামড়ার পাইকারি আড়ত লালবাগ ও আমিনবাজারে ঈদের দিন ও তার পরের দিন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে চামড়া বেচাকেনার খবর পাওয়া গেলেও গত শুক্রবার থেকে দাম একটু বেড়েছে বলে জানা গেছে।
সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা।
কোরবানির দিন ও তার পরের দিন এর চেয়েও কমদামে চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় চামড়া কিনেছেন। আর ঢাকার বাইরে কেনাবেচা হয়েছে গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে।
এদিকে, চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন চামড়ার দাম কমার কারণ হিসেবে ট্যানারি মালিকদের দায়ী করছেন। অন্যদিকে, ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন দায়ী করছেন আড়তদারদেরকে। বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পণ্যের মুল্যের নিম্নমুখী পতনও চামড়ার দাম কএ যাওয়ার অন্যতম কারণ।
ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে সারা দেশ থেকে কমবেশি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। তবে বছরের মোট জোগানের অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, গতকাল ঢাকার সাভারে অবস্থিত চামড়া শিল্পনগরের প্রায় সব কারখানা বন্ধ ছিল। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক কারখানায় ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিন গবাদিপশুর চামড়া সংরক্ষণ করা হয়। ঈদের দিন চামড়া কিনে হাজারীবাগে সংরক্ষণ করা হয় পরবর্তিতে সেখান থেকে লবণযুক্ত চামড়া গতকাল সাভারের কারখানায় আনা হয়।
শ্রমিকদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, সাভারে চামড়া শিল্পনগরে শ্রমিকের সংকট রয়েছে, নানা সমস্যার কারণে শ্রমিকেরা এখানে কাজ করতে চান না। এ কারণে অনেক কারখানার মালিক ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিন সাভারের কারখানায় গবাদিপশুর চামড়া সংরক্ষণ করতে পারেননি।
সংগৃহীত চামড়ায় লবণ দিয়ে হাজারীবাগসহ সুবিধাজনক জায়গায় আপাতত জমা রাখা হয়েছে যা সপ্তাহখানেকের ভিতর সাভারে আনা হবে। চামড়া পৌঁছানোর পর, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ শুরু হবে বলে শ্রমিকদের কাছ থেকে জানা যায়।
বাঙালীয়ানা/আআ/জেএইচ