বিদ্যুৎ বিতরণের প্রিপেইড মিটার এখন থেকে বাংলাদেশেই তৈরী হবে। আগামী জানুয়ারি থেকেই রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও চীনের হেক্সিং ইলেক্ট্রিক্যাল কোম্পানি যৌথভাবে মিটার তৈরির কাজ শুরু করবে। এই লক্ষ্যে ২১ অক্টোবর, রবিবার, দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যৌথ মূলধনী কোম্পনি গঠনের চুক্তি সই হবে। এই তথ্য নিশ্চিত করেন ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারের জন্য খুলনার সাচিবুনিয়ায় ভাড়া করা ফ্যাক্টরিতেই কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। তবে এই উদ্যোগকে আরও সম্প্রসারিত করে ভবিষ্যতে বড় পরিসরে মিটার তৈরির কারখানা করা হবে।
এই কার্যক্রম সম্পর্কে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিক উদ্দিন বলেন, “আমরা জানুয়ারি থেকেই মিটার উৎপাদন শুরু করতে চাই। এর আগে সব মিটারই আমদানি করা হতো।এখন থেকে আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় রাষ্ট্রীয় অর্থের সাশ্রয় হবে।”
এই উদ্যোগকে সম্প্রসারিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, “এখন ভাড়া করা জমিতে কাজ করছি।ভবিষ্যতে নিজেদের জমিতে ফ্যাক্টারি করবো এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের কারখানাতে প্রতি বছর ৫ লাখ মিটার তৈরি হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, “এখন দেশে মোট বিদ্যুতের গ্রাহকের সংখ্যা তিন কোটি ১০ লাখ।কিন্তু প্রিপেইড মিটার বসানো হয়েছে মাত্র ১৫ লাখ ৮০ হাজার গ্রাহকের আঙিনায়। সরকার বিতরণ কোম্পানিকে যে লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে ৭৫ লাখ গ্রাহকের আঙিনায় মিটার বসাতে হবে। অর্থাৎ সরকারের পরিকল্পনা সফল করতে হলে ২ বছরে ৫৯ লাখ ২০ হাজার গ্রাহকের আঙিনায় মিটার বসাতে হবে।কিন্তু এত অল্প সময়ে এত বেশি মানুষের ঘরে ঘরে প্রিপেইড মিটার বসানো সম্ভব নয় বলে মনে করা হয়।”
ওয়েস্টজোন ও হেক্সিং যৌথভাবে যে সমীক্ষা চালিয়েছে, তাতে দেখা যায়, প্রতিটি মিটার আমদানি করতে এখন ব্যয় হচ্ছে সাড়ে চার হাজার টাকা।কিন্তু দেশে তৈরি করা হলে প্রতি মিটারের দাম পড়বে চার হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি মিটারে সাশ্রয় হবে ৫০০ টাকা।তবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে আরও কম খরচে মিটার উৎপাদন সম্ভব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, “একেবারে নতুন হওয়ায় বাংলাদেশে প্রিপেইড মিটারের বড় বাজার রয়েছে।তিন কোটি গ্রাহক আর চার হাজার টাকা ধরে হিসাব করলেও দেশে প্রিপেইড মিটারের ১২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। বিপুল সম্ভাবনাময় এই খাতে মিটারের সব যোগানই এত দিন বাইরে থেকে আসতো। এখন এর আংশিক দেশেই উৎপাদিত হবে। অন্য বিতরণ কোম্পানি মিটার উৎপাদনে এগিয়ে এলে দেশেই সব মিটার উৎপাদন সম্ভব। একটি বা দুটি কারখানা করেই দেশে প্রতি বছরের মিটারের চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়।”
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র আরো জানায়, “ধীরে ধীরে সব গ্রাহকের আঙিনায় প্রিপেইড মিটার বসানো হবে।এতে ব্যবহারের আগেই গ্রাহককে বিদ্যুতের বিল দিতে হবে। ফলে বিদ্যুৎ বিল শতভাগ আদায়ের পাশাপাশি বিল তৈরি ও সরবরাহ ব্যয় কমে যাবে। ফলে বিতরণ কোম্পানিগুলো দুই দিক থেকে লাভবান হবে।”
বাঙালীয়ানা/টিএইচ/জেএইচ