পরাধীনতার দুঃখ
ব্রিটিশ এলো ব্যবসা নিয়ে
পাতলো জুড়ে আসন
অত্যাচারে করলো তারা
দুশ বছর শাসন।
ঘোর পলাশীর আম বাগানে
মীর জাফর যে বেঈমান
সিরাজদৌলার মসনদ গেলো
বাংলা হলো খান খান
নিভলো বাংলার সবুজ বাতি
দেশ যে পরের হাতে
বাংলায় এলো ঘোর অন্ধকার
ঘুম নেই কারো রাতে।
শাসক সেজে করলো শোষণ
এলো বাংলায় সর্বনাশ
মসলিন তাঁতির আঙুল কেটে
বাধ্য করে নীলের চাষ।
গান্ধী ডাকল অসহযোগ
ভারত-মাটি ছেড়ে যাও
স্বর্ণফলা এদেশ আমার
এবার তুমি ফেরত দাও।
ভাইয়ে-ভাইয়ে ঝগড়া হলো
হিন্দু এবং মুসলমান
এক দেশ ভেঙে দুভাগ হলো
ভারত এবং পাকিস্তান।
দুই পাশে দুই পাকিস্তান
ভারত থাকে মাঝে
পশ্চিমারা সুযোগ পেয়ে
শাসনকর্তা সাজে
স্বাধীন দেশে নেমে এলো
আবার কালো দিন
বাঙ্গালীরা এবার হল
পশ্চিমের অধীন।

একুশে ফেব্রুয়ারি
পশ্চিমারা করলো শোষণ
বাঙালির মানহানি
উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা
আমরা তা না মানি
আমার ভাষা কেড়ে নিবে
তা দেব না হতে
প্রতিবাদে মুখর সবাই
নামলো রাজপথে
পাক সেনারা করলো গুলি
গরম হল রাজপথ
হাজার ছাত্র উঠল রুখে
শহীদ সালাম, বরকত।
পাখীর চোখে আকাশ থেকে
দেখছে ওরা বেশ
বাংলা আমার রাষ্ট্রভাষা
স্বাধীন বাংলাদেশ।।

সাতই মার্চ
শেখ মুজিবুর ভাষণ দিলেন
উঠলো জ্বলে বাতি
পাক সেনাদের মোকাবেলায়
তৈরি হলো জাতি।
সংগ্রাম এবার স্বাধীনতার
বিকল্প আর নাই
এবার আমরা হবোই স্বাধীন
যুদ্ধে চলো ভাই ।
ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ো
যার যা আছে লও
যুবক-বৃদ্ধ, কৃষক-মজুর
হও আগুয়ান হও।

পঁচিশে মার্চ
পশ্চিমাদের বেঈমানীতে
বঙ্গবন্ধুর ডাক
বীর-বাঙালি অস্ত্র ধরো
পশ্চিমা নিপাত যাক।
হিন্দু-মুসলিম মা-বোনেরা
খ্রিস্টান-বৌদ্ধ ভাই
জব্দ করো শত্রুসেনা
স্বাধীন স্বদেশ চাই।
পাষাণ-পরা পাকসেনারা
হামলে পড়ে রাতে
হাজার মানুষ মারলো তারা
কামান-গোলার ঘাতে।
কালো রাত্রির গোলাগুলি
অবাধভাবে চলে
দিশেহারা বাঙালিরা
মরে জলে স্থলে।

ছাব্বিশে মার্চ
শেখ মুজিবকে বন্দী করে
রাতের অন্ধকারে
স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে
গেলেন কারাগারে।
বঙ্গবন্ধু প্রাণের নেতা
নড়ল ওদের টনক
মাতৃভূমি স্বাধীন হলো
তিনিই জাতির জনক।

দশই এপ্রিল
বাংলার মানুষ আশ্রয় নিলো
ভারত মাটির পরে
রইলো যারা গড়লো দুর্গ
প্রতি ঘরে ঘরে।
মুজিবনগর আমতলাতে
গঠন হলো সরকার
যুদ্ধে এবার জিততে হবে
মুক্তিসেনা দরকার
বীর যুবারা ট্রেনিং নিলো
তাক ভারতের মাটিতে
রাতে-দিনে হানা দিলো
পাক সেনাদের ঘাঁটিতে।

চৌদ্দই ডিসেম্বর
শহর-নগর ধ্বংস হলো
পুড়ে দোকান-পাট
হাটে-ঘাটে সৈন্য এলো
করে লুট-পাট।
ভারত দিলো হাত বাড়িয়ে
পাক-বাহিনী ক্ষুব্ধ
মুক্তিসেনা, মিত্র-সেনা
করে ভীষণ যুদ্ধ।
অত্যাচারী পাক সেনারা
হেরে যাবে বুঝে
বুদ্ধিজীবী হত্যা করে
বাড়ি খুঁজে খুঁজে।

ষোলই ডিসেম্বর
পাক সেনারা অবশেষে
করলো আত্মসমর্পণ
বাঙালিদের বিজয় হলো
ভরলো সুখে তনুমন।
স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ
স্বাধীনচেতা মন
শেখ মুজিবুর জাতির পিতা
স্বাধীন জনগণ।
ব্রিটিশ গেলো পাকও গেল
গেল রাজাকার
বাঙালিরা উঠলো জেগে
ঘুচলো অন্ধকার।
আমার এদেশ সোনার বাংলা
বড়ো ভালো দেশ
এই না দেশের ভালোবাসা
হয় না কভু শেষ।।

(অন্য প্রকাশ – প্রকাশনা থেকে প্রকাশিতব্য লেখকের “সোনামণিদের ছড়ায় স্বাধীনতার ইতিহাস” নামের গ্রন্থের কয়েকটি রচনা)
লেখক:
ধনঞ্জয় সাহা, ছড়াকার, কবি,