মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, সন্ধ্যায় পোশাক কারখানা ছুটির পর প্রাইভেট গাড়ীর ড্রাইভার বাদশা পূর্ব পরিচিত পোশাককর্মী এক মেয়েকে প্রাইভেট কারে নিয়ে বেড়াতে বের হয়। এক পর্যায়ে নির্জন একটি স্থানে গাড়ীর ভেতরে মেয়েটিকে দুইবার ধর্ষণ করে বাদশা। ২৪ এপ্রিল মেয়েটি বাসার ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
২৪ এপ্রিল সকালে চট্টগ্রাম নগরীর মোগলটুলির বাসায় আত্মহত্যা করলে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। মেয়েটির বোন ডবলমুরিং থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বাদশা নিয়মিত মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করত। ক্রমাগত যৌন নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে তার বোন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয় বলে জানান সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আশিকুর রহমান।
মামলার প্রেক্ষিতে শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, গভীর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর পাঠানটুলি এলাকা থেকে উবারচালক মো. বাদশাকে (২৪) গ্রেফতার করে পুলিশ। রোববার। ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মো. সফি উদ্দিনের আদালতে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় এবং ধর্ষণের কথা স্বীকার করে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার মো. আশিকুর রহমান জানান, বাদশা এবং ১৭ বছর বয়সী ওই পোশাককর্মীর বাসা নগরীর ডবলমুরিং থানার পাঠানটুলি এলাকায়। মেয়েটি নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করত। বছরখানেক আগে সেখানে বাদশাও চাকরি করত।
যৌন হয়রানির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ধর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ পায়। বাদশা’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বাদশা পোশাক কারখানা থেকে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর প্রাইভেট কার চালাতে শুরু করে। পোশাককর্মী মেয়েটির সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বলেও দাবি করেছে সে। বাদশা জানায়, ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় পোশাক কারখানা ছুটির পর বাদশা তাকে প্রাইভেট কারে নিয়ে বেড়াতে বের হয়। একপর্যায়ে নির্জন একটি স্থানে নিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে কারের ভেতরে দুইবার ধর্ষণ করে সে। এসময় মেয়েটি জ্ঞান হারায়।
বাদশা জানায়, মুখে পানি ছিটিয়েও জ্ঞান না ফেরায় মেয়েটিকে নিয়ে কার চালিয়ে সে পাঠানটুলিতে নিজের বাসায় যায়। বাসা থেকে বাদশা ও তার মা মিলে মেয়েটিকে নিয়ে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঐ হাসপাতালের চিকিৎসক মেয়েটির শরীর দুর্বল উল্লেখ করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়। বাদশা ও তার মা মেয়েটিকে নিয়ে নিজেদের বাসায় যায়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হলে রাত দেড়টার দিকে তাকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করে বাদশা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে মেয়েটির ভগ্নিপতি হাসপাতাল থেকে তাকে বাসায় নিয়ে যায়। পরদিন সকালে বোন কর্মস্থলে যাওয়ার পর একা বাসায় সে আত্মহত্যা করে।
হাসপাতালের এক আয়াকে মেয়েটি বলেছিল, বাদশা তার মুখ চেপে ধরার পর সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। এরপর কী হয়েছে সে আর কিছুই জানে না। মুখ চেপে ধরার বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে ধর্ষণের বিষয়টি উঠে আসে। গ্রেফতারের পর বাদশাকে জিজ্ঞাসাবাদে এবং পরে আদালতে জবানবন্দিতে বাদশা ধর্ষণের কথা বিষয়টি স্বীকার করেছে।
এছাড়া বাদশার বাসা থেকে মেয়েটির ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও আইডি কার্ড এবং বাদশার গাড়ীটিও জব্দ করেছে পুলিশ। বাদশাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বাঙালীয়ানা/এসএল