নিভৃতচারী, আত্মপ্রচার বিমুখ ভাষাসংগ্রামী ড. সুফিয়া আহমেদ

Comments

স্বপ্নটা ছোটবেলার। বাবার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিস্তৃত প্রাঙ্গণে আসতে যেতে শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছাটা পেয়ে বসেছিল। সময়ের ব্যবধানে শিশুমনের সে স্বপ্ন পূর্ণতা পেয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশের প্রথম মহিলা জাতীয় অধ্যাপক-এর সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৫২ সাল বাঙালির জীবনের স্মরণীয় এক অধ্যায়। ১৯৫২-তে যাদের অসামান্য অবদানের জন্য আজ আমরা বাংলায় লিখছি, বলছি, প্রাণ খুলে আড্ডায় মেতে উঠছি সেসব ভাষাসৈনিকদের অন্যতম তিনি। নিভৃতচারী, আত্মপ্রচারে বিমুখ সে ব্যক্তিত্ব ড. সুফিয়া আহমেদ। শান্ত, সৌম মুখের মানুষটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে এখনও সমানভাবে সোচ্চার। দীর্ঘ সময়ের পথচলার অভিজ্ঞতা তাঁর ভাণ্ডারে। ভাষা আন্দোলনে, স্বাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন সুফিয়া আহমেদ। বিস্তৃত তাঁর কাজের পরিধি। আর প্রতিটি ক্ষেত্র থেকেই সফলতা তুলে এনেছেন স্বযত্নে।

আজকের খ্যাতিমান নারী ব্যক্তিত্ব সুফিয়া আহমেদ ১৯৩২ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সুফিয়া আহমেদ তাঁর আজকের উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও আপোষহীন দৃঢ় মনোবলের জন্য পুরো কৃতিত্বটায় দিতে চান তাঁর বাবাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, বিচারপতি ও আইনমন্ত্রী মোহাম্মদ ইব্রাহীম কন্যাকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই মানুষ করেছেন। সুফিয়া আহমেদের মা লুত্ফুন্নেছা ইব্রাহীম। বাবা-মা আর দু্ই ভাইকে নিয়েই সুফিয়া আহমদের ছোটবেলার জগত্‍ গড়ে উঠেছিল।

‘ছোটবেলায় একবার হাম কি পক্স হয়েছিল ঠিক মনে নেই। আমার দেখাশোনার জন্য বাবা একজন খৃষ্টান নার্স রাখলেন। গায়ে মাখন লাগালে দাগ হয় না। আব্বা সেজন্য প্রতিদিন আমার গায়ে ঠিকমত মাখন লাগনো হচ্ছে কিনা তার তদারকি করতেন।’ এভাবেই নিজের শৈশবকালের গল্প শোনালেন। তিনি আরও বললেন, ‘ছোটবেলাটা ছিল অদ্ভুত। সাত বছর পর্যন্ত তো আমি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলাম। পরে আমার দুই ভাই হলো। এতদিন পর ছোট ভাই হওয়াতে কিছুটা ঈর্ষা আবার কিছুটা মুগ্ধতাও ছিল।’

কন্যাকে নিয়ে বাবা বিচারপতি মোহাম্মদ ইব্রাহীমের ছিল হাজারো স্বপ্ন। আর শৈশব থেকেই তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায়। নাচ, গান, সেলাই, রান্না, রূপচর্চা প্রভৃতিতে ভরা ছিল ছোটবেলাটা। ক্লাসিক্যাল শিখতেন ওস্তাদ গুল মোহাম্মদের কাছে, সেলাই শেখানোর জন্য আসতেন এক মিস, রান্না শেখার জন্য হোসনে আরা রশীদের ‘পাক প্রণালী’ বই আর রূপচর্চার জন্য অন্য একটি বই তাঁর বাবা তাঁকে কিনে দেন।

ড. সুফিয়া আহমেদের শিক্ষা জীবন নানা বর্ণে রঙিন ও গৌরবোজ্জ্বল। বিচারপতি বাবার বদলির চাকরি এবং তত্কালীন সময়ে বাংলাদেশে ভালো ইংরেজি স্কুল না থাকায় তাঁর শৈশবের বেশ কিছুটা দিন অবিভক্ত ভারতের দার্জিলিং-এ কেটেছে। আর সেখানেই শিখেছেন পিয়ানো। তবে শিক্ষা জীবনের প্রথমটা শুরু হয় ঢাকার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে। এরপর চলে যান দার্জিলিং-এর Dow Hill স্কুলে। মেয়ের সেই বোডিং জীবনে প্রতিদিন চিঠি লিখতেন বাবা। এমনকি অংকে দুর্বল মেয়েকে চিঠিতে জ্যামিতি লিখে এবং এঁকে বোঝাতেন স্নেহময় বাবা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ক্রমেই দেশের পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকায় যোগাযোগ ব্যাবস্থাও ভেঙ্গে পড়ে। তাই সুফিয়া আহমেদ চলে আসেন নিজ দেশে। এরপর ১৯৪৮ সালে বিচারপতি বাবার কর্মস্থল বরিশাল থেকে প্রাইভেটে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।

পূর্ব পাকিস্তান থেকে ১৯৫০ সালে Intermediate of Arts পরীক্ষা দেন। এই পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেল সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে প্রথম দশজনের মধ্যে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে লেটার মার্কস নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন তিনি। তত্কালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন ড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন (১৯৪৮-১৯৫৩)। তিনি আবার বিচারপতি ইব্রাহীমের ঘনিষ্ট বন্ধু। বিচারপতি, আইনমন্ত্রী বাবা সে বন্ধুর পরামর্শ মতেই মেয়েকে লেটার পাওয়া বিষয়ে অনার্সে ভর্তি করেন। সুফিয়া আহমেদের অবশ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান অথবা ইংরেজিতে অনার্স করার ইচ্ছে ছিল। বাবার ইচ্ছেতেই শেষ পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইংরেজিকে সাবসিডিয়ারি করে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন। তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবন ছিল ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৪ সালে এম.এ. পড়ার সময় তিনি সান্ধ্যকালীন Law ক্লাসে ভর্তি হন।

এম.এ. পরীক্ষার অল্প কিছুদিন পরেই ১৯৫৫ সালে PhD করতে তিনি স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমদ ও ছোট ভাই খালেদ ইব্রাহীমের সঙ্গে লণ্ডনে চলে যান। ফলে Law কোর্স শেষ করেও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় বসতে পারেননি । তাঁর PhD-র বিষয় ছিল-‘আধুনিক ভারতের ইতিহাস’। লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের School of Oriental and African Studies-এ ভর্তি হন এবং ১৯৬০ সালে তিনি-‘Some Aspects of the History of The Muslim Community in Bengal (1884- 1912)’ শিরোনামে অভিসন্দর্ভ রচনা করে Ph.D. লাভ করেন।

সুফিয়া আহমেদের বাবা ১৯৪২ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের Law বিভাগে ক্লাস নিতেন। সেই সময় বাবার সঙ্গে আসতে যেতে মনের অজান্তেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন বপন হয়ে যায় ছোট মনে। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আলোর মুখ দেখে ১৯৬১ সালে, তাঁর নিজের বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাত্‍ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৮৩ সালে তিনি এই বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন।

শিক্ষা ও গবেষণা সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও সুফিয়া আহমেদ সংস্কৃতি, নারী উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি তুরস্কে পাকিস্তান সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের ছাত্রী সদস্য হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন। তখনই তুরস্ক সম্পর্কে হয়ে ওঠেন আগ্রহী। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে আধুনিক তুরস্ক (উনবিংশ থেকে বিংশ শতাব্দী) ও সেখানকার নারীদের নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেন।দেশের বাইরেও সুফিয়া আহমেদ একজন অনন্য শিক্ষা ব্যক্তিত্ব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদ অধ্যাপনাও করেছেন। তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অবস্থিত Basphorus University তে তিনি ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৫ সালের জুলাই পর্যন্ত Visiting Professor হিসেবে অধ্যাপনা করেন। আবার ১৯৮৫ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের Wisconsin State-এ অবস্থিত Milwaukee শহরের একটি মহিলা কলেজ – Alverno College এখানেও তিনি Fulbright Visiting Professor হিসেবে অধ্যাপনা করেন।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতা আছে এই ব্যক্তিত্বের ভাণ্ডারে। সম্ভবত তিনিই প্রথম মহিলা যিনি দুই বার জাতিসংঘে কোন দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রথমবার ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের এবং দ্বিতীয়বার ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের হয়ে। এরপর প্যারিসে ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশনে ১৯৮৩ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন।

Sufia Ahmed02

নিজের বৈঠকখানায় সুফিয়া আহমেদ

ICDDRB-এর ‘এথিক্যাল রিভিউ কমিটি’র মেম্বার হিসেবে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত। বেশ কিছুদিন আগে নিজের বেডরুমের কার্পেটে পা বেঁধে পড়ে গিয়ে হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছে। তারপর থেকে হাঁটতে কষ্ট হয়। কিন্তু হাসি মুখে কথা বলা মানুষটিকে দেখে তাঁর কষ্টের খোঁজ পাওয়া দুষ্কর। আজও নিয়মিতভাবে জরুরি মিটিং-এ উপস্থিত হয়ে নিজের সুচিন্তিত মতামত দান করে চলেছেন। PhD -র ছাত্রদের গাইড করতে নিজে লেখাপড়াও করেন প্রচুর ৷ বাংলা ভাষায় ইতিহাস চর্চায় নিয়োজিত সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ’ ও ‘Cheshire Home Foundation’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ৷ বাংলাদেশ ব্যাংক-এর ‘মেম্বার বোর্ড অব ডাইরেক্টর’ হিসেবে ২০০৪ থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন ৷সুফিয়া আহমেদ জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা ছাড়াও ১৯৭২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত গার্ল গাইড আন্দোলনের নির্বাচিত আন্তর্জাতিক কমিশনার ছিলেন। আর এই সূত্রে তিনি গার্ল গাইডের চারটা বিশ্ব সম্মেলনসহ ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্স, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ ‘নারী দশক’ ঘোষণা করে। এই দশক উপলক্ষে ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক প্রস্তুতি বৈঠকে দেশের প্রতিনিধি হিসেবে আবার জাপানের টোকিওতে যান সুফিয়া আহমেদ। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ ‘কন্যা শিশু বছর’ ঘোষণা করে। ভাষাকন্যা ‘সমউন্নয়ন পরিষদ’-এর পক্ষ থেকে নারী শিশু উন্নয়ন ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সেমিনার, সিম্পোজিয়ামসহ ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। সমাজসেবামূলক কাজেও এই নারী ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করে চলেছেন সমানভাবেই।

উদার, ধর্মনিরপেক্ষ, নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী ও ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির ঘোর বিরোধী ভাষাসৈনিক জাতীয় অধ্যাপকের পরিবারেও যেন বসেছে চাঁদের হাট। তিনি সাবেক Attorney General, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পরপর দু’বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ ইশতিয়াক আহমদের স্ত্রী। সুফিয়া আহমেদ ও সৈয়দ ইশতিয়াক আহমদের দাম্পত্য জীবন আলো করে আছে তাঁদের দু’সন্তান। বড় সন্তান সৈয়দ রাফাত আহমেদ ও একমাত্র কন্যা ডা. তাসনীম ফাতেহ।

ব্যক্তিগত জীবনে সুফিয়া আহমেদ ও সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, দুই জগতের দুই মহীরুহর মধ্যে ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক সহমর্মিতার সম্পর্ক। আর একারণেই দুজনই দুজনের কাজের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। ‘আমার কিছুই করা সম্ভব হতো না যদি ইশতিয়াক না থাকত। আমার PhD -র শেষ দিকে আমি পড়েছি আর ও বাচ্চার দেখাশোনা করেছে।’ সারা জীবনের সে বন্ধুর ছায়া পাশে আর পড়ে না। এ কথা ভেবে আজও ভারী হয়ে ওঠে সুফিয়া আহমেদের মন।

‘ভাষা আন্দোলন’ এই শব্দটার সঙ্গে সম্মুখ পরিচিতি তাঁর। তাই বোধ হয় সেদিনের কথা বলতে গেলে চর্চিত কালো চুল আর হালকা সজ্জিত মুখ আজও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। অতি আগ্রহে বলে ওঠেন, ‘পুরো বিষয়টায় তো আকস্মিক। এই আন্দোলন করলে ইতিহাসে নিজেদের নাম লেখা থাকবে এমন কোনও ভাবনাই তো তখন কাজ করেনি। ভাষাকে রক্ষা করতে হবে, স্বাধিকার আদায় করতে হবে এটা ছিল প্রাণের তাগিদ। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই সেদিন রাস্তায় নেমেছিলাম।’ তাঁর সঙ্গে কথোপকথনের মাঝে উঠে আসে ১৯৫২। পুরো দিনটার বর্ণনা তিনি এভাবে দেন, ‘১৯৫২ সালের সে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সংখ্যা ছিল বড় জোর ৭০। এর মধ্যে হলে থাকত ৩০ থেকে ৩৫ জনের মতো। Co- education হলেও ছেলেমেয়েদের মধ্যে কথা হতো প্রক্টরের মাধ্যমে। অবাধে মেলামেশার কোনও সুযোগ কল্পনায় করা যেত না। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। এই ধারা ভাঙ্গা হবে কিনা এ নিয়ে ছাত্র নেতাদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল। তবে নিয়ম শৃঙ্খলতার কঠোরতা ভেঙ্গে মুখের ভাষা রক্ষার তাগিদে সেদিনের আন্দোলনে ছাত্রীরাও এসেছিলেন।’

সেদিনের কথা স্মরণ করতে গিয়ে সুফিয়া আহমদের মুখে সহযোদ্ধা হিসেবে ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু, ড. হালিমা খাতুন, শামসুন নাহার, সারা তৈফুর, শফিয়া, রোকেয়া খাতুন-এর নাম স্বগৌরবে উচ্চারিত হয়। বোরকা পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে আসত যে মেয়েটি তাকে সহপাঠিরা দুষ্টুমি করে ‘বোরকা শামসুন’ নামে ডাকত। আর সেই মেয়েটিও কিনা সেদিন বোরকা পরেই রাস্তায় নেমে এসে স্লোগান ধরেছে ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ভাষাসৈনিকদের মধ্যে ড. সুফিয়া আহমেদ, ড. হালিমা খাতুন ও রওশন আরা বাচ্চু ছাড়া বাকিরা আজ শুধুই স্মৃতি।

প্রত্যক্ষ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সুফিয়া আহমেদ ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে তাঁর হৃদয় থেকে তুলে এনে দাঁড় করিয়ে দেন এভাবে আমাদের সামনে- ‘এখন যেখানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড, সেখানেই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন। আর এই কলা ভবনের সামনে আমগাছের গোড়াতে ছিল সদা হাস্যময় মধুদার দোকান। সেদিন এখানেই জমেছিল ছাত্র জনতার ভিড়। সবাই স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের মায়ের ভাষাকে আপনার করে রাখার সংগ্রামে হাজির হয়েছিল। বেলা ১১ কি ১২ টার দিকে মিটিং শুরু হলে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গা হবে কি-না এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলছিল। ভাষা আন্দোলনের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের সাথে স্কুল কলেজের ছাত্রীরাও মিটিং, মিছিল করেছে সক্রিয় ভাবে। ২১ তারিখেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মিটিং-এ সিদ্ধান্ত হয় যেহেতু বাইরে ১৪৪ ধারা তাই ছেলেরা ১০ জন এবং মেয়েরা ৪ জন করে ভাগে ভাগে বের হবে। ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার এই সিদ্ধান্ত বুঝতে পারে পুলিশ। গেটের সামনেই পুলিশ লাঠি নিয়ে কর্ডন করে। পুলিশের তত্পরতার মুখে সিদ্ধান্ত হয় গ্রেফতার এড়াতে মেয়েরা আগে রাস্তায় নামবে। প্রথম ব্যাচেই শফিয়া আপা, রওশন আরা, শামসুন নাহার আর ইডেন কলেজের একটি মেয়ে যার নাম এখন আর মনে নেই। সবাই মিলে রাস্তায় নেমে আসি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ইস্ট বেঙ্গল এসেমব্লি হল (এখন যেটা জগন্নাথ হল)। ড. শফিয়া খাতুন পুলিশের লাঠির ওপর দিয়ে লাফ দিয়ে কর্ডন পার হয়ে যায়। ড. হালিমা কয়েকজন স্কুলের মেয়ে নিয়ে পুলিশের বন্দুকের নল সরিয়ে তার নিচ দিয়ে বের হয়ে যায় রাস্তায়। পুলিশ বেশ কিছু ছেলে-মেয়েকে ভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে যায় অবশ্য পরে টঙ্গির কাছে ছেড়ে দেয়। এই ঘটনার পরপরই ছাত্রজনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশের ওপর। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ শুরু করে। এতে আমিসহ আরও অনেকেই আহত হয়। তার উপরে টিয়ার গ্যাসের ঝাঁজ তো আছেই। সে এক ভয়ংকর অবস্থা। লাঠিচার্জ আর গ্যাসের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে শুরু করলাম।’

নিয়মের কঠোর শৃঙ্খল ভেঙ্গে মেয়েদের আন্দোলনে অংশ নেওয়াটাকে এই ভাষাসৈনিক নারী স্বাধীনতার অনন্য একটি ধাপ হিসেবে দেখতে চান। সেদিনের আন্দোলন মেয়েদের হাজার বছর এগিয়ে দিয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারির আন্দোলন আরও সংগঠিত করে বাঙালিদের। মেয়েদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সেদিনের সংগ্রামকে যেমন বেগবান করে তুলেছিল তেমনই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সংগ্রামে, আমাদের ভূখণ্ড দখলের লড়াইয়ে নারীরা হাতে অস্ত্র নিয়েছে, যুদ্ধ করেছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর UNESCO ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর মর্যাদা দিয়েছে। এ বিজয় বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক বিজয়।সময়টা বিকাল ৩টার কাছাকাছি। আহত সুফিয়াসহ আরও অনেকে তত্কালীন প্রভোস্ট ড. গণির বাসার বাগানের কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে আশ্রয় নেন। বাগানে পানি দেওয়ার কলে হাত মুখ ধুতে ধুতেই তারা হঠাত্‍ শুনলেন বারুদ ছোড়ার শব্দ। অর্থাত্‍ পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালানো শুরু করেছে। এখন যেখানে শহীদ মিনার সেখানে মেডিক্যাল কলেজের টিন আর বাঁশের বেড়ার হোস্টেল ছিল। সেদিনের গুলিতে গড়িয়ে পড়ে আজকের নাম জানা ভাষা শহীদ বরকত, শফিক, জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকে।

লেখাপড়াতে চিরদিনই অসম্ভব আনন্দ খুঁজে পান অসাম্প্রদায়িক গবেষক সুফিয়া আহমেদ। আর গবেষণাকর্ম হলে তো কোনও কথায় নেই। নিজের প্রতিটি লেখাতে তিনি তথ্যের সংমিশ্রণ ঘটান খুব দক্ষতা ও যত্নের সঙ্গে। আর সেজন্য পড়াশুনা করতে সুফিয়া আহমেদের কোনও ক্লান্তি নেই। নিজের বাড়িতেও সমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরি তৈরি করেছেন। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন লেখকের লেখা বই, পত্রপত্রিকা, জার্নাল, আর্টিকেল সেখানে স্থান পেয়েছে। তাঁর তত্ত্বাবধানে গবেষক ছাত্রছাত্রীদেরকেও প্রতিনিয়ত তথ্যের দিকে মনোযোগী হতে উপদেশ দেন।

সুফিয়া আহমেদের পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিচরণ ক্ষেত্র –

ক. ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মুসলমানদের ইতিহাস
খ. আধুনিক তুরস্ক (উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দী)
গ. বাংলাদেশ ও তুরস্কের নারী উন্নয়ন।

সুফিয়া আহমেদের গবেষণা অভিসন্দর্ভটি ‘The Muslim Community in Bangla (1884-1912)’ এই শিরোনামে ১৯৭৪ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রথমবারের মতো এবং ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো প্রকাশিত হয়। ২০০২ সালে বাংলা একাডেমি ‘বাংলায় মুসলিম সম্প্রদায়’ শিরোনামে গ্রন্থটির বাংলা সংস্করণ প্রকাশ করে। বইটি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে পাঠ্য।

দেশী ও আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি গবেষণা পত্রপত্রিকায় তাঁর রচনা ও প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তিনি Dhaka University Studies -এর সম্পাদনা পর্ষদের ভূতপূর্ব সদস্য। এছাড়াও Asiatic Society of Bangladesh কর্তৃক প্রকাশিত History of Bangladesh এবং History and heritage, Encyclopedia of Bangladesh প্রকল্পেরও সম্পাদনা পরিষদের সদস্যরূপে দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাপিডিয়ার সম্পাদক বোর্ডের সম্মানিত সদস্য সুফিয়া আহমেদ। এখানে তাঁর লেখা পাঁচটি প্রবন্ধ রয়েছে। বর্তমানে এই মহীয়সী তাঁর বাবা বিচারপতি ইব্রাহীমের জীবনী লেখার কাজে ব্যস্ত।

বিশিষ্ট রচনাবলীর একটি তালিকা-
  1. Nawab Khwaja Salimullah in Journal of the Asiatic Society of Bangladesh, Vol, XXI, No.3, Dhaka 1976.
  2. ‘Turkish Elections 1977’ in Dhaka University Studies, Part A, Vol. XXVII, Dhaka, 1977.
  3. ‘A commentary on a Note on Muhammadan education in Bengal’ Itihash Parishad Potrika, Baishak-Chaitra, 1382.
  4. ‘Legal Status of Woman in Bangladesh’ in situation of women Edited by Woman for Woman Research: A study Group, Published by UNICEF, Dhaka, Bangladesh 1977.
  5. ‘Origins of the Dhaka University’ Dhaka University Studies, Vol. XXXX, Part A, June 1984.
  6. ‘Ataturk and the Muslims of Bengal’ Daily News, 23-24 April, 1985, Ankara, Turkey.
  7. ‘A survey of the source materials relating to Mustafa Kamal Ataturk written in the Bengali language available in Bangladesh’ Published Proceedings of the Seminar on Samsun, Turkey from 11th to 13th May,1985.
  8. ‘Gleanings from the Writings of Justice Muhammad Ibrahim’ The New Nation, Dhaka, Bangladesh, 15 October 1986.
  9. ‘The Impact of Mustafa Kamal Ataturk’s Ideas on the Muslims of Bengal’ Published Proceedings of the Seminar on’ The Impact of Ataturk’s reforms Aboard’ Organized by Bogazici University, Istanbul, Turkey from 7th to 11th November, 1988.
  10. ‘The Roll of Dhaka Nawab Family in the Socio Economic Development of the city of Dhaka ‘ Paper read on 7th November, 1984 at the symposium entitled. The historic city of Dhaka: Changes, Development and Possibility from 7-13 November, 1989, sponsored by the Bangladesh National Museum (To be published).
  11. ‘Emancipation of Woman in Turkey’ Mustafizur Rahman Khan and Saleha Khanam Trust- fund Lecture, November 17, 1991: Lecture series 1991, the Asiatic Society of Bangladesh, p -27- 44.
  12. ‘ Bicharpoti Ibrahim: Sankhipta Jiban Alekho (Justice Ibrahim: A Short biographical sketch) in Bengali’ Daily Ittefaq 13, October 1993.
  13. Ataturk in Bengali Literature, Weekend Independent, 23, August, 1996.
  14. Historical Links between Turkey and Bengal, Observer Magazine, 21, March, 1997.
  15. The foreign policy of Turkey under Mustafa Kamal Ataturk – Observer Magazine, 23 January, 1997.
  16. Paper Presented at the Seminar on: Kamal’s, Instrument of Cultural link between Turkey and Bangladesh at the Nazrul Institute, Dhaka, 27 April, 1998 (To be Published).
  17. Paper Presented at the International Symposium Titled ‘New Horizon in Turkey’s foreign Policy in 2000 and beyond’ on: Relations between Turkey & Bangladesh with special emphasis on the historical and cultural links between the two regimes held in Ankara on 24-25 March 2000.

ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গে বারবার গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে সুফিয়া আহমেদের নাম। পূর্ব বাংলার Assembly-তে সংসদ সদস্য বেগম আনোয়ারা খাতুন ১৯৫২ সালে বিশেষভাবে সুফিয়া আহমেদের নাম উচ্চারণ করেছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানের Assembly proceeding-এ এর উল্লেখ রয়েছে। শিক্ষা, সমাজসেবা, নারী উন্নয়ন ও মানবসেবার ক্ষেত্রে সুফিয়া আহমেদের অবদান অবিস্মরণীয়।

এই মহান মানুষটি সম্মাননা, স্বীকৃতির জন্য বসে থাকেননি। নিজের সাধনায় তিনি ধ্যানমগ্ন। বয়সের ভারে হাঁটতে কষ্ট হলেও সুফিয়া আহমেদ নারী শিক্ষা ও নারী মুক্তি আন্দোলন, তাদের উন্নয়ন এবং সামাজিক ও জনহিতকর কার্যে আজও সোচ্চার এক কন্ঠ। তাঁর আন্তরিক অনুরক্তির স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে বিভিন্ন সম্মননায় সম্মানীত করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর ‘স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভলপমেন্ট’ বেগম রোকেয়া দিবসে বাংলাদেশের নারী স্বাধীনতা ও নারী অগ্রগতিতে অবদান রাখার জন্য দেশের ১৬ জন বিশিষ্ট নারীকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মান জানায়। সুফিয়া আহমেদ তাঁদেরই একজন। ১৯৯৬ সালে দেশের বিশিষ্ট দশজন মহিলার মধ্যে একজন হিসেবে ১৯৯৭ সালের ৩ জানুয়ারি পাক্ষিক অনন্যা পত্রিকার পক্ষ থেকে অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদকে ক্রেস্ট ও স্মারকপত্র দিয়ে সম্মান জানানো হয়। দেশের প্রথম মহিলা জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে তিনি এ সম্মাননা পান।

ঐতিহাসিক মহান ভাষা আন্দোলন এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে সুফিয়া আহমেদের অবদানের সর্ব্বোচ্চ স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্র তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করেছে ২০০২ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে। এই ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তমদ্দুন মজলিশও তাঁকে মাতৃভাষা পদক-২০০৩-এ সম্মানিত করে।

২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট-এর সদস্যরূপে মনোনীত করেন। মর্যাদাপূর্ণ নেতৃত্বের অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য তাঁর জীবনী American Biographical Institute Inc. কর্তৃক ২০০২ সালে প্রকাশিত International Dictionary of Distinguished Leadership-এর নবম সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শিক্ষা ও সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতি জানিয়ে Zonta International Club তাঁকে ২০০৫ সালের ১৬ জুন Life time Achievement Award প্রদান করে।

১৯৯৫ সালে ড. সুফিয়া আহমেদকে জানানো হয় বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপকের সম্মান। এখন পর্যন্ত তিনি আমাদের দেশের একমাত্র নারী যাঁকে জাতি এই বিরল সম্মানে সম্মানিত করেছে।

বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, শিক্ষামূলক ও বুদ্ধিবৃত্তিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অগ্রগতি আনয়নের প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৭ সালে তুরস্কের তত্কালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি সোলায়মান ডেমিরেল স্বয়ং ঢাকার তুর্কি দূতাবাসে তাঁকে বিরল সম্মাননা হিসেবে একটি স্মারকপত্র ও তাঁর নিজের স্বাক্ষরকৃত একটি ছবি উপহার দেন। বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফেডারেশন ২০০১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভাষা আন্দোলনে গৌরবময় অবদানের জন্য তাঁকে মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মাননা প্রদান করেন। ২০০১ সালের মে মাসে তিনি আধুনিক তুরস্কের জন্মদাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের ওপর একটি সেমিনারে অংশ নিতে তুরস্ক যান ৷

জাতীয় অধ্যাপকের বাড়িতে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি দেখতে পাব এটা স্বাভাবিক, পেলামও তাই। সেই সঙ্গে আরও পেলাম দু্ই জন ব্যক্তিত্বের ছবি। যারা সুফিয়া আহমেদের দীর্ঘ ও বিস্তৃত কাজের জগতে প্রেরণা হয়ে কাজ করেছেন। তাঁদের একজন পূর্ব পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী মোহাম্মদ ইব্রাহীম। ভাষা আন্দোলনে মেয়ের অংশগ্রহণকে যিনি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। অন্যজন কামাল আতাতুর্ক, সমস্যাসংকুল সময়ে যাকে সামনে রেখে তিনি উত্সাহ পান। শ্রেষ্ঠ ফিলসফার হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর মনের বিশেষ জায়গা জুড়ে আছে। আর সজীব, সতেজ গাছের মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রাণ খুঁজে পান তিনি। তাই বাড়ি জুড়ে নানা গাছের ছড়াছড়ি। তাঁদের প্রতিও সবসময় সমান খেয়ালের দৃষ্টি রাখেন সদাব্যস্ত সুফিয়া আহমেদ।

বয়স তাঁকে একটুও কাবু করতে পারেনি। নেই কোথাও বয়সের এতটুকু ছাপ। ১৯৫২-র দৃঢ়তা এখনও কথাবার্তায় স্পষ্ট। চিন্তা ভাবনায় আধুনিকতার ছাপ। ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির ঘোর বিরোধী সুফিয়া আহমেদ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকেই কাজে লাগাতে চান নিজস্ব ধারায়। সুফিয়া আহমেদ সুদীর্ঘকালব্যাপী শিক্ষা, গবেষণা ও নারী অধিকার নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। বিস্তৃত তাঁর কাজের ক্ষেত্র। কোনও সম্মাননা তাঁর লক্ষ্য নয়। তিনি নিজের জ্ঞান বুদ্ধি ছড়িয়ে দিতে চান বাংলাদেশের তথা বিশ্বের সর্বত্র। আজীবন তিনি তাঁর সাধনায় ধ্যানমগ্ন।

লেখক: আয়েশা সিদ্দিক
সৌজন্যে: গুণীজন

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.