নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ নীল শাপলা। এর নয়নাভিরাম নীল রঙ ও সুগঠিত পত্রবিন্যাস দেখে যে কোনো মানুষ আকৃষ্ট হতে বাধ্য। নীল শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম: Nymphaea nouchali. বাংলায় নীল শাপলা ফুলকে শালুক বা নীলকমল বা নীল পদ্ম বলেও ভুল করা হয়। তবে নীল পদ্মের অস্তিত্ব আজও ভ্রান্ত ধারণাতেই রয়ে গেছে। নীল পদ্মের ধারণা সম্পূর্ণ একটা মিথ। হিন্দু পুরাণে এই মিথের কথা বলা আছে।

নীল শাপলা
নীল শাপলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। জলাশয়ের বুকে মাথা উঁচু করে জানান দেয় এর স্বকীয়তা। যদিও নীল শাপলা যেখানে-সেখানে পাওয়া যায় না। কিছু সৌখিন মানুষের জলাশয়ে এই ফুল ধুকে ধুকে টিকে আছে। তবে আমাদের বিভিন্ন খাল-বিল-হাওড়ে বিচ্ছিন্নভাবে এই শাপলা দেখা যায়। শাপলা ফুল দিনের বেলা ফোটে এবং সরাসরি কাণ্ড ও মূলের সাথে যুক্ত থাকে। প্রায় বছরের সব সময়ই এই শাপলা ফুটতে দেখা যায় তবে বর্ষা ও শরৎ এই উদ্ভিদ জন্মানোর শ্রেষ্ঠ সময়।

নীল শাপলার খোঁজে লেখক
সম্প্রতি খুলনা জেলার তেরোখাদার ভুতিয়ার বিলে পদ্মফুল আর নানান জলজ উদ্ভিদের সাথে এই নীল শাপলা দেখে অপার মুগ্ধতায় আপ্লুত হলাম। অনেকেই খেয়ালখুশিতে ফুলটি উপড়ে ফেলে কিংবা তুলে নেয়। এতে একদিকে যেমন প্রকৃতির শোভাবর্ধনে ব্যাঘাত ঘটে অন্যদিকে বাধাগ্রস্ত হয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা। প্রকৃতির উপহার প্রকৃতির বুকেই মানায়। তাই নীল শাপলা সংরক্ষণের পাশাপাশি জলাশয়ও সংরক্ষণ প্রয়োজন।

জলের নিচে নীল শাপলার মূল, উপরে ভাসমান পাতা
নীল শাপলা শ্রীলংকার জাতীয় ফুল। শ্রীলংকায় এই ফুল Nil Mānel নীল মাহানেল নামে পরিচিত। শ্রীলংকার ভাষায় নীল থেকে এই ফুলকে ইংরেজিতে অনেক সময় blue lotus বলা হয়। শ্রীলংকায় বিভিন্ন পুকুর ও প্রাকৃতিক হৃদে এই ফুল ফোটে। প্রাচীন মিশরে, হাজার বছর ধরে Nymphaea caerulea (এখন যা Nymphaea nouchali/ caerulea এ হারিয়ে গেছে), নীল শাপলা ফুল, সাদা শাপলা ফুলের প্রতি অনুরাগী ছিল। মানুষ এই ফুল খেত, আঁকত এবং শ্রদ্ধা করত।
কথিত আছে, ভারতে হিন্দুদের সর্পদেবী মনসা পূজায় শাপলা ফুল দেয়া হয়। এই জলজ উদ্ভিদের ফুলের বিবরণ বেশ কিছু প্রাচীন বই যেমন– সংস্কৃত, পালি ও শ্রীলংকান ভাষার সাহিত্যে প্রাচীনকাল থেকে “কুভালয়া”, “ইন্ধিয়ারা”, নীলুপ্পালা, নীলথপালা, নীলুফুল নামে পাওয়া গেছে যা শ্রেষ্ঠতা, শৃংখলা ও পবিত্রতার প্রতীক। শ্রীলংকার বুদ্ধদের দৃঢ় বিশ্বাস গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপে পাওয়া ১০৮ টি শুভ চিহ্নের মাঝে একটি ছিল এই শাপলা ফুল।
ছবি: লেখক
বাঙালীয়ানা/এজে