নূর হোসেন আল কাদেরীর কবিতা

Comments

শেফালির টিফিন বক্স

সোডিয়াম ক্লোরাইড সুইমিংপুলে ডুবে মরুক প্রাগৈতিহাসিক জোনাকি।
মরা শামুকের খোলস ভর্তি শুধু নোনা বালি।
চাইনিজ লাইফ জ্যাকেটে সাঁতার কাটে সমুদ্র।
উপুর হয়ে পড়ে থাকা ঝাউ বন 
নিদারুন তাচ্ছিল্যে উপেক্ষা করে ঢেউয়ের গর্জন।
জিডিপির প্রবৃদ্ধি আর লিপস্টিকের পুরুত্ব বাড়ে একই সাথে।
ঢাকা পড়ে শেফালির সিক্ত অধর টাকার অবমূল্যায়নে।
বস্ত্রের আড়ালে বরাবরের মত লুকানো থাকে শিল্প।
তল পেটের কাটা দাগে মুগ্ধ হয় ইউরোপ সহ পুরো বিশ্ব।
আর আমার বুকের ভেতর বাজে শুধু একটা হলুদ ল্যাম্প পোস্ট; 
মধ্যম আকৃতির একটা রুটির আশায় বেঁচে থাকুক শেফালির টিফিন বক্স।

শিকারির আর্তনা

ঐতিহাসিক শরাবে মাতাল পুরো পৃথিবী। 
সপ্তর্ষীমন্ডলমুখী কিছু শিশু আর নর-নারী। 
আমি তাদের দেখি; আমি দেখি মুক্ত আকাশ;
নদী
পাখী
সমুদ্রের জলরাশি
মেঘ, প্রেম, বৃষ্টি
আর মৌন পাহাড়।
চারিদিকে শুনি বিচিত্র বাহাস; শুনি শিকারির আর্তনাদ।
মনে জাগে ছাই রঙা বোধ;
দেখি পান চিবোয়, উপেক্ষিত অপেক্ষার প্রতিশোধ। 
দেখি মৃত বুনোহাঁস; বিনোদন কেন্দ্রে যেনো রক্তাক্ত পরিহাস।
আমি সঙ্গী হই তাদের; আর উপেক্ষা করি ওদের;
কিংবা আমি উপেক্ষা করি তাদের; আর সঙ্গী হই ওদের;
তারপর, ছাই রঙে আঁকি নতুন করে, পৃথিবীর গল্প আবার।

জ্বলন্ত সিগারেট ঠোঁটে যীশু

একটা রাত কখনও কখনও ঈশ্বর হয়ে ওঠে।
আমার ব্যালকনিতে ঝুলতে থাকে টালমাটাল আকাশ।
জীবনের উচ্ছাসে ভেংগে যায় কাচের দেয়াল; টুকরো টুকরো মেঘ হয়ে।
মানিব্যাগ ছুঁয়ে ঈশ্বর নেমে আসেন আমার ব্যালকনিতে।
আমি খুঁজতে থাকি আমার হারিয়ে যাওয়া প্রতিটা দীর্ঘশ্বাস। 
আর তুমি, তোমার কবিতা খুঁজে পেয়ে হয়ে ওঠো স্বয়ং ঈশ্বর। 
তোমার চোখে আমি দেখতে পাই নৈসর্গিক উন্মাদনা। 
তোমার ঠোঁট ছোঁয়া সিগারেটের পবিত্রতা অতিক্রম করে যায় জগতের সমস্ত আদি পাপ। 
কখনও তুমি হয়ে উঠো নজরুল; লিখতে থাকো ‘বিদ্রোহী’ কবিতা। 
চিৎকার করে বলো-‘গুরুদেব! আজ রাতে আমি আপনাকে হত্যা করেছি’।
কবি গুরু মৃদু হেসে বলেন- ‘উন্মাদ! তোর জীবনে একটা ট্র্যাজেডি আছে। শেলী বা কীটস্ এর মতন’।
কখনও তুমি হয়ে ওঠো জ্যা আর্তুর র‍্যাবো।
একদলা থুথু ছিটিয়ে দাও বোদলেয়ারের মুখে। 
পরক্ষণেই আবার পরম মমতায় আলিংগন করে নাও তাকে। 
হাসনাহেনা ফুলের গন্ধ ছাপিয়ে, তুমি হয়ে ওঠো কবি; তুমি হয়ে ওঠো কবিতা।
অথচ আমি শুধু দেখতে পাই যীশুকে; জ্বলন্ত সিগারেট ঠোঁটে।

রাষ্ট্রের বক্ষবন্ধনী

বলতে চাইলে বলবে তুমি- এটা তোমার অধিকার।
অথচ সেফ্টিপিনে আক্রান্ত রাষ্ট্রের বক্ষবন্ধনী
ভয় পায় সে সত্য প্রকাশে- 
যতটা না তার আসল আকার- তার চেয়ে অনেক বেশি দেখায় সে
অনেক বেশি মনে হয় তার স্তনের মাপ।
আমরা তো দিনে আনি দিনে খাই দর্জি
রাতের অন্ধকারে প্রেমিকার বুকে আমরাও জিডিপি খুঁজি।

নকল প্রাসাদ

নগর ভবনে আজ হোলিরও খেলা
নিখুঁত রঙের কারুকাজ- সেই পুরাতন আভা
নগর ভবনে আজ জেগেছে নেশা।।
উড়ে যায়- উড়ে উড়ে যায় নেশাতুর ককপিট
ভেদ করে লাল রক্তের জমিন
পুরোহিত মনে জাগে আশা, আরও একবার 
চুমুকে চুমুকে গড়ে তুলি আমি এক নকল প্রাসাদ।।

বাষ্পীভূত ইকোনমিক্স

ক্ষুধার্ত কবিতা যেনো এক টিকেটে দুই ছবি।
শব্দ গুলো সব প্রেমিকার ঠোঁট-
পান করে যাই আমি কফিশপে গোপন আঁতাত।
স্তনের ভাঁজে লুকানো চিঠি আর 
জমানো কিছু টাকায় চলে হেলেনের সংসার।
হেলেন! প্রিয় হেলেন!
তোমার চর্বিযুক্ত নরম ত্বকে বাষ্পীভূত ইকোনমিক্স
হুমড়ি খেয়ে উল্টে পড়ে রাষ্ট্র, কবি ও কবিতা;
বিমূর্ত চিত্রকলা খুঁজে পায় অমরত্ব আবার।
নিলামে ওঠানো হয় তোমার স্তনের মাপ 
ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে লুকানো চিঠি আর জমানো টাকা।

লেখক:
Noor Hossain Al Kaderi
নূর হোসেন আল কাদেরী, কবি ও ব্যাংক কর্মকর্তা

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.

About Author

বাঙালীয়ানা স্টাফ করসপন্ডেন্ট