নৃশংস পিলখানা হত্যাযজ্ঞ: ১০ বছর পেরল

Comments
সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, বিডিআর সদর দফতরে সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞের ১০ বছর পূর্তি, শোকাবহ পিলখানা ট্র্যাজেডি দিবস। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে বিডিআর সদস্যরা কিছু দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্মম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে তাণ্ডব চালায়।

ওই দু’দিনে তৎকালীন বিডিআরের মহাপরিচালকসহ (ডিজি) ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং নারী ও শিশু ছাড়াও আরও ১৭ জনকে হত্যা করে বিদ্রোহীরা। দীর্ঘ ১০ বছরেও ওই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি নিহতদের স্বজনরা।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী ছিল তৎকালীন বিডিআরের বার্ষিক দরবারের দিন। অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল ৯টায় সদর দফতরের দরবার হলে।

সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, উপমহাপরিচালক (ডিডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএ বারী, বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাসহ বিডিআরের নানা পদের সদস্যরা। সরকারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে, ওই দিন দরবারে উপস্থিত ছিলেন ২ হাজার ৫৬০ জন।

দরবার শুরুর পর মহাপরিচালকের বক্তব্য চলাকালে সকাল ৯টা ২৬ মিনিটে মঞ্চের বাঁ দিকের পেছন থেকে দু’জন বিদ্রোহী জওয়ান অতর্কিতে মঞ্চে প্রবেশ করেন, একজন ছিলেন সশস্ত্র। শুরু হয় বিদ্রোহ। দরবার হলের বাইরে থেকে গুলির আওয়াজ ভেসে আসে।

কিছুক্ষণের মধ্যে লাল-সবুজ রঙের কাপড় দিয়ে নাক-মুখ বাঁধা বিদ্রোহী জওয়ানরা দরবার হল ঘিরে গুলি শুরু করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্রোহীরা কর্মকর্তাদের দরবার হল থেকে সারিবদ্ধভাবে বের করে আনে। ডিজির নেতৃত্বে কর্মকর্তারা দরবার হলের বাইরে পা রাখা মাত্র মুখে কাপড় ও মাথায় হলুদ রঙের হেলমেট পরা চারজন ডিজিকে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করেন। ডিজির পর হত্যা করা হয় আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে।

এরপর পিলখানার ভেতরে হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট ছাড়া হলে ওই হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে বিদ্রোহীরা।

এ সময় প্রায় আধঘণ্টা ধরে বিদ্রোহীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। সন্ধ্যায় পিলখানার বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের লাশ মাটিতে পুঁতে ও সরিয়ে ফেলা হয়।

২৬ ফেব্রুয়ারী বেলা আড়াইটায় টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণ করে ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে। এরপর বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণ শুরু করে।

সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, সকাল ৯টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা জানানো হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে।

এর আগে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা জানিয়েছেন, বর্বরোচিত ওই হত্যাকাণ্ডে শহীদদের স্মরণে সোমবার শাহাদতবার্ষিকী পালন করবে বিজিবি।

এছাড়া মঙ্গলবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, বিকেলে বিজিবি সদরদপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ছাড়াও স্বরাষ্ট্র সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, শহীদদের নিকটাত্মীয়রা, পিলখানায় কর্মরত সব কর্মকর্তা, সৈনিক ও বেসামরিক কর্মচারীরাও এতে অংশগ্রহণ করবেন।

বাঙালীয়ানা/এসএল

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.