পুলওয়ামা হামলার জবাবে ভারতের বিমান হামলা

Comments
ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এএনআই জানিয়েছে, সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ১২টি জঙ্গি মিরাজ ২০০০ জেট ফাইটার ‘জঙ্গি ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে ১০০০ কেজি বোমাবর্ষণ করে এবং এই আক্রমণে তাদের লক্ষ্যবস্তু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের সূত্রে আনন্দবাজার জানাচ্ছে, এই অভিযানে নিহতের সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০। যদিও সে কথা স্বীকার করেনি পাকিস্তান। প্রাথমিক ভাবে পাকিস্তানের দাবি, ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ববিমানগুলি খুব তাড়াহুড়ো করে বোমা ফেলে ফিরে গিয়েছে। তবে ভারতের এই প্রত্যাঘাতে ইসলামাবাদ এতটাই হতচকিত যে, জরুরি ভিত্তিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেছেন পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই অভিযানের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট  জমা দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এর পর নিজের বাসভবনে ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি-র বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। 

ভারতের এই অভিযানের যোগ্য জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে পাক বিদেশমন্ত্রী বলেন, “ভারত যা করেছে, তা নিয়ন্ত্রণরেখার লঙ্ঘন।” পাকিস্তান এর যোগ্য জবাব দেবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তিনি। বৈঠকের আহ্বান করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও। কুরেশি জানিয়েছেন, সেই বৈঠকেই নির্ধারিত হবে, পাকিস্তান কী ভাবে ভারতকে জবাব দেবে।

এই অভিযানের পর ভারতীয় বায়ুসেনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল-সহ দেশের শীর্ষ নেতা।

আনন্দবাজারের খবর অনুসারে, পূর্বপরিকল্পিত ভাবেই এই অভিযান চালানো হয়। সোমবার বালাকোট সেক্টর থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রায় ৮০ কিলোমিটার ভিতরে ঢোকে ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান। এরপর বালাকোট, চাকোটি এবং মুজফ্‌রাবাদে জইশ-ই-মহম্মদের তিনটি লঞ্চপ্যাড ধ্বংস করে ভারত। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় জইশের কন্ট্রোল রুম আলফা-৩। ধ্বংস করা হয় হিজবুল ও লস্করের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিও।

ভারতীয় সেনা সূত্রে আনন্দবাজার বলেছে, প্রায় ৪০ মিনিট ধরে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের আকাশে ছিল ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানগুলি। তবে ২১ মিনিট ধরে বোমাবর্ষণ চলেছে। চকোটিতে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে রাত ৩টে ৫৮ মিনিট থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত। মুজাফ্ফারাবাদে বোমাবর্ষণ চলে রাত ৩টে ৪৮ মিনিট থেকে ৩টে ৫৫ মিনিট পর্যন্ত।  এই হামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জন নিহত হয়েছে দাবি ভারতের। পাকিস্তান যদিও হতাহতের কথা স্বীকার করেনি।

এই অভিযান প্রসঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। যদিও তাঁর দাবি, পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিরোধের মুখে পড়ে ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলি ফিরে যায়। তিনি জানিয়েছেন, মুজফ্‌রাবাদ থেকে ভারতীয় বিমানগুলি প্রবেশ করে। তাঁর দাবি, পাকিস্তানের জবাবে বালাকোটে বোমা ফেলেই চলে যায় ভারতীয় বিমানগুলি। এই হামলায় বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। যদিও এখনও পর্যন্ত ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি জারি করা হয়নি। এই অভিযানের পর আন্তর্জাতিক সীমান্তে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীকে নরেন্দ্র মোদীকে এই অভিযানের সবিস্তার রিপোর্ট জমা দিয়েছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এর পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি-র বৈঠকে বসেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিরা।

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.