পৌষমেলা করতে উদ্যোগী শিক্ষামন্ত্রী, দেখা দিল আশার আলো

Comments

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আবারও নিশ্চিত করেছে যে তাদের পক্ষে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা করা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় উদ্যোগ নিয়েছেন পৌষমেলা আয়োজন অব্যাহত রাখার।

শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৯, সকালে বিশ্বভারতী কর্মপরিষদের বৈঠকের পরে পৌষমেলা না করার সিদ্ধান্তেই অনড় অবস্থানে থাকার কথা জানায় বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘আমরা পৌষমেলা নিয়ে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি সেটিতেই অনড় আছি। পৌষমেলা করতে আমরা অপারগ। তবে যথারীতি পৌষ উৎসব পালিত হবে।’’

তবে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘‘তবে কেউ যদি পৌষমেলা করতে দায়িত্ব নিয়ে সাহায্য করে আমরা পাশে আছি।’’

এর আগে চলতি বছর থেকে পৌষমেলা বন্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। যার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় সব মহলে।  বিশ্বভারতীর এহেন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয় শান্তিনিকেতনে। এই পরিস্থিতিতে মুখ খলেন রাজ্য শিক্ষামন্ত্রী। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “পৌষমেলা বন্ধ হোক, চাই না। আমি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। পৌষমেলা একটা আবেগ। প্রয়োজনে সবার সঙ্গে কথা বলব। সবাই মিলে বসব।”

পৌষমেলার আয়োজন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হওয়ায় আশার মুখ দেখছেন বিভিন্ন মহল।

প্রসঙ্গত, দূষণ ও আরও নানাবিধ কারণে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা আয়োজনে ফি বছর নাভিশ্বাস উঠছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। ৪ জুন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় বিশ্বভারতীর মত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পৌষমেলার দায়ভার নেবে না। এই সংশয়ের মূল কারণ মেলায় দূষণ নিয়ে পরিবেশ আদালতে দায়ের হওয়া মামলা। মামলাটি করেছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত।  সেই মামলার খরচ টানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোষাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অথচ বিশ্বভারতীর কোনও আয় নেই মেলা থেকে। তাই এই বিপুল খরচের জোগান আসবে কোথা থেকে সেই প্রশ্ন তুলেই বিশ্বভারতীর মেলা না করার ঘোষণা দিয়েছে।

১৮৮৮ সালের ৮ মার্চ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর “শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট” ডিডে  পৌষমেলা সম্পর্কে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট প্রতি বছর একটি মেলা বসাবে। এই মেলা মূলত হবে সর্বধর্মের মিলনক্ষেত্র। সেই ঐতিহ্য মেনে প্রতিবছর শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে ৭ পৌষ হয় পৌষমেলার সূচনা।

শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ডিডে বলা রয়েছে – ‘যদি এই মেলা থেকে কোনও প্রকার আয় হয় সেই টাকা আশ্রমের উন্নতি কল্পে ব্যয় করা হবে।’ সেই নিয়ম মেনেই  মেলা থেকে উদ্বৃত্ত  অর্থ দিয়ে সারা বছর সেবা মূলক কাজ করে আসছে ট্রাস্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা, মামলার দায়ভার বহন করতে নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ হয়ে গিয়েছে প্রায় দশ লক্ষ টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান আসবে কোথা থেকে। তাই ১৪২৬ সালের পৌষ মাসের ৭-৯ তারিখ  পৌষ উৎসবের ঐতিহ্যপূর্ণ কর্মসূচী যথোচিত মর্যাদায পালিত হবে। কিন্তু পৌষমেলা করবে না বিশ্বভারতী।

বাঙালীয়ানা/এসসি

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.