যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া দিয়ে সাধারণ মাত্রা পাওয়া ঘূর্ণিঝড় ফণী শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৯, সকালে প্রবাহিত হবার সময় ফসলসহ জানমালের প্রভূত ক্ষতি সাধন করছে।
শনিবার, ৪ মে, ২০১৯, সকাল ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি দূর্বল হয়ে পড়ায় আগের মত প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি আর নেই। আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলেই আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষরা আবার তাদের ঘরে ফিরতে পারবেন। এটি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ঢাকাসহ প্রায় সারাদেশে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণী সকাল ৬টার দিকে বাংলাদেশের খুলনাঞ্চলে পৌঁছায়। এটি ধীরে ধীরে উত্তর ও উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এখন এর অগ্রভাগ মেহেরপুর কেন্দ্রিক।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় শনিবারও বৃষ্টি থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দুপুরের পর থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। শনিবার সকাল থেকে ঢাকার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন।
মৃত্যু: ১৬
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাসে কাঠের ঘর ভেঙ্গে শনিবার ভোররাত আড়াইটার দিকে উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদুয়ানি গ্রামে বাঁধঘাট এলাকায় নিহত হয়েছে দুজন, নুরজাহান (৬০) ও জাহিদুর (৯)। বাড়ির একটি কক্ষে দাদি নুরজাহানের সঙ্গে ঘুমিয়েছিল নাতি জাহিদুর। রাতে প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে ওই কক্ষটি ধসে পড়লে ঘটনাস্থলেই দাদি-নাতির মৃত্যু হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটা শহরের মনসাতলী এলাকায় তীব্র বাতাসে গাছের ডাল ভেঙে আহত পৌর সভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ওরকা পল্লি এলাকার বাসিন্দা মোটরসাইকেল চালক হাবিবুর রহমান মুসুল্লি (২৫), শনিবার, ৪ মে, বরিশাল সেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে মো. ইসমাইল (২) নামে এক শিশু ঘরচাপা পড়ে নিহত হয়েছে। ঝড়ে চর জব্বর ইউনিয়নে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে।
একই দিনে নেত্রকোনার মদন উপজেলার হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রাঘাতে আবদুল বারেক (৩৫) নামে এক কৃষক মারা গেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বগডহর গ্রামে বজ্রাঘাতে আপেল মিয়া (২০) নামে এক কৃষক নিহত হয়।
নিম্নাঞ্চল প্লাবিত:
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শক্তিশালী জোয়ারে উপকূলীয় দুই জেলার অন্তত ২৮টি গ্রাম প্লাবিত।
জোয়ারের চাপে পটুয়াখালীতে বেশ কিছু পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে ও পানি উপচে তিনটি উপজেলার অন্তত ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, ফসলি জমি।
জোয়ারের পানির চাপে বেড়িবাঁধ উপচে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর ঢেউয়ে দূর্গাবাটিতে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে, গ্রামে ঢুকছে পানি।
ঝালকাঠিতে ফণীর প্রভাবে জেলার সুগন্ধা, বিশখালী আর হলতা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে কমপক্ষে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নদীর পানি বেড়ি বাঁধ উপচে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
ঘর-বাড়ী:
শনিবার ভোররাতে ঝড়ে সুবর্ণচরে শতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয় বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইকবাল হাসান জানিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে ঘরচাপা পড়ে ভোলায় শুধু সদর উপজেলায় দুই শতাধিক বাড়িঘর বিধস্ত হয়েছে।
চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের মান্দেরবাজার, জিদকান্দি ও শিলারচর এলাকায় ফণীর তাণ্ডবে শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার সুন্দরতলা, জয়মনি, কাটাখাল, চিলা, বৌদ্ধমারী, কানাইনগর ও বুড়িরডাঙ্গা এলাকার শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাইনগর এলাকার ছয় হাজার ফুটের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।
ট্রলারডুবি:
লালমোহনের কচুয়াখালী চর থেকে শনিবার সকালে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে মাইনুদ্দিনে একটি ট্রলার ডুবে গেছে। এতে চার থেকে পাঁচজন আহত হয়েছে।
শঙ্কা কেটে গেলেও সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বাংলাদেশ এবং এর উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব অব্যাহত থাকায় এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাঙালীয়ানা/এসএল