রোববার, ২৯ জুলাই, ২০১৮
দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম ওরফে মিম ও আব্দুল করিম রাজীবের উপর জাবালে নূর পরিবহনের বাস উঠিয়ে দিলে ঘটনাস্থলেই দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। আহত হয় আরও ১২ জন। মানবিক শাখার দ্বাদশ শ্রেণীতে আবদুল করিম এবং দিয়া একাদশ শ্রেণীতে পড়ত। আহত অন্য শিক্ষার্থীরাও একই কলেজের পড়ুয়া।
শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ অন্য শিক্ষার্থীরা একই পরিবহনের অন্য একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভাঙচুর করে আরও কিছু বাস। দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জাবালে নূর পরিবহনের বাসটিকে আটক এবং চালক ও হেলপারকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। আহতদের কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে (র্যাডিসন হোটেলের উল্টো দিকে)। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দর সড়কের বাম পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এ শিক্ষার্থীরা। বিমানবন্দর সড়কের অদূরে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজটির অবস্থান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছুটি শেষে বাসে ওঠার জন্য কলেজটির বেশকিছু শিক্ষার্থী র্যাডিসন হোটেলের উল্টো পাশে সিএমএইচ স্টপেজে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় কালশী ফ্লাইওভার দিয়ে মিরপুর থেকে উত্তরাগামী জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস ওই স্টপেজে এসে দাঁড়ালে সেটিতে শিক্ষার্থীরা উঠছিলেন। ঠিক সেই সময় যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে একই পরিবহনের আরেকটি বাস দাঁড়ানো বাসটির বাম পাশ দিয়ে দ্রুতগতিতে ঢুকে পড়ে এবং দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের ওপর উঠে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, বাসটির চাপায় ঘটনাস্থলেই কলেজ শিক্ষার্থী দিয়া আক্তার মিম ও আব্দুল করিম রাজীব নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। পথচারীরা সঙ্গে সঙ্গে আহতদের নিকটস্থ কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান।
দিয়ার বাড়ি মহাখালী দক্ষিণপাড়ায়। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম। অন্যদিকে, আব্দুল করিম ওরফে রাজীব কলেজের আশকোনা এলাকায় বাস করত বলে জানা যায়।
ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও জনতা এ ঘটনায় ইসিবি চত্বরের সামনে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং আরও অর্ধশতাধিক বাস ভাঙচুর করে। এতে বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয়।

এই হত্যাকান্ডের পর পরিবহন মালিকদের নেতা তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাসতে হাসতে বলেন, ‘ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি পেতেই হবে’। মন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি হবে। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, যে যতটুকু অপরাধ করবে, সে সেভাবে শাস্তি পাবে। যে শাস্তি হবে, সেই শাস্তি নিয়ে বিরোধিতার কোনো সুযোগ এখানে নেই’।
বাঙালীয়ানা/এসএল