বাণিজ্যযুদ্ধের সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ

Comments

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো। শ্রমবাজার সস্তা হওয়ায় বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বায়াররা।

রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের কয়েকজন উদ্যোক্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বাঙালীয়ানাকে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। নতুন নতুন ক্রেতা পোশাকের ক্রয়াদেশ নিয়ে আসছে। পুরোনো ক্রেতারাও আগের চেয়ে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্রয়াদেশ বাড়িয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় আরও বাড়বে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সোলার প্যানেল আমদানিতে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার মধ্য দিয়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। সোলার প্যানেল উৎপাদনে শীর্ষস্থানে আছে চীন। পরবর্তীতে, ৬ জুলাই, ২০১৮, ট্রাম্প প্রশাসন ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের চীনা পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কও আরোপ করে। এর জবাবে চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। ফলে ফেব্রুয়ারী মাসে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানিতে পাল্টাপাল্টি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশদুটি।

এরই ধারাবাহিকতায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী বছরের শুরুর দিকে এই শুল্কহার বেড়ে ২৫ শতাংশ হতে পারে। হাতব্যাগ, চাল, কাপড়সহ প্রায় ছয় হাজার চীনা পণ্যের ওপর এই শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে ৬ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের মার্কিন পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে চীন সরকার।

এদিকে, বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর বিগত দু-তিন মাস ধরে বাড়তি ক্রয়াদেশ নিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের কারখানাগুলোতে আসছে মার্কিন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো। নতুন অনেক মার্কিন প্রতিষ্ঠানও ক্রয়াদেশ নিয়ে আসছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। পুরোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোও ২৫-৩০ শতাংশ ক্রয়াদেশ বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একক বৃহৎ বাজার যুক্তরাষ্ট্র। রানা প্লাজা ধসের পর বাজারটিতে পোশাক রপ্তানি কমে যায়। দীর্ঘ ১৫ মাস পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই বাজারে পোশাক রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ায়। গত আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) বাজারটিতে ৩৬৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করে চীন। অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চীন ২০১৭ সালে, যুক্তরাষ্ট্রে ২ হাজার ৭০৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির ৩৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। চলতি বছরেও প্রথম আট মাসে ১ হাজার ৭২৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে দেশটি যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ০৪ শতাংশ কম।

রপ্তানি আয় কমার সঙ্গে সঙ্গে চীনের বাজার হিস্যাও কমে ৩২ দশমিক ৯০ শতাংশে নেমেছে। ইউএস পলোর পোশাক তৈরি করে বাংলাদেশের জায়ান্ট গ্রুপ। বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কারখানাটিতে ইউএস পলো ক্রয়াদেশ ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে। জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প লাভবান হবে। ইতঃমধ্যে বাড়তি ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করেছে। এছাড়াও, বাণিজ্যযুদ্ধ শেষ হলেও ক্রয়াদেশ কমবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বাঙালীয়ানা/এএ/জেএইচ

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.