পরিবেশ অধিদপ্তর বলেছে, সন্ধান পেলেই পলিথিন তৈরির কারখানায় অভিযান চালানো হবে। মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজারে দুটি অবৈধ পলিথিন তৈরির কারখানায় অভিযান পরিচালনাকালে অধিদপ্তর কর্মকর্তা বলেছেন যে ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে আনতেই নাকি এই উদ্যোগ!
বিশ্বে প্রথম পলিথিন নিষিদ্ধকারী দেশ বাংলাদেশ। ২০০২ থেকে বাংলাদেশে ২০ মাইক্রনের চাইতে কম পাতলা পলিথিন উৎপাদন, বিপণন এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল তৎকালীন সরকার।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত) ২০০২, প্রণীত আইনে এ আইন অমান্য করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। বাজারজাত করলে ৬ মাসের জেল এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সারা বিশ্বে সে সময়ে এই নিষিদ্ধকরণ প্রশংসিত হয়েছিল। ২০০২ সালে আইন প্রণয়ন এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে ৯৩১ টন পলিথিন জব্দ করা হয়েছিক, ৫২ টি কারখানা উচ্ছেদ হয়েছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৬ বছর পরে সেই বাংলাদেশে আগের তুলনায় পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বেড়েছে কয়েক শত গুণ। গবেষণায় দেখা গেছে শুধু ঢাকা শহরেই এখন প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হয়। শুধু পুরোনো ঢাকাতেই বর্তমানে রয়েছে ৩শ’র বেশি অবৈধ পলিথিন কারখানা যেখান থেকে রাতের আঁধারে বিশেষ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানীর পরিবহণের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে পলিথিন। তাছাড়া আগে যেখানে কেবলমাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রামে ছিল বৈধ পলিথিন কারখানা এখন সেখানে ৫০টিরও বেশী জেলা শহরে এমন কি বেশ কিছু উপজেলা শহরেও অবৈধ পলিথিন কারখানা রয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে নাইলনের নেট ব্যাগ, নাইলনের থলে এবং বিদেশী নাইলনবস্তা কেটে বানানো ব্যাগ যা একইভাবে পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্যে মারাত্মক বিপজ্জনক।
সাম্প্রতিক অভিযানে দুটি অবৈধ কারখানাকে সীলগালা করা এবং অর্থ জরিমানা ছাড়াও কর্মরত কয়েক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর। তবে তারা এই দুই কারখানার মালিকের নামদাম পরিচয় জানায়নি। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা বা না করা হয়ে থাকলে করবার কোন চেষ্টা করা হচ্ছে কি না তাও জানায়নি। বিগত ১৬ বছরে কয়টি কারখানায় অভিযান চালানো হয়েছে তা বলতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তর। বলতে পারেনি কয়জন অবৈধ পলিথিন প্রস্তুতকারক বা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বলতে পারেনি কতজনকে জেলজরিমানা করা হয়েছে।
পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আর্থ ডে নেটওয়ার্ক এক প্রতিবেদনে বলেছে বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ১০ নম্বরে। এর কারণ কি কেবলই অর্থ লিপ্সু কিছু ব্যবসায়ী? যাদের দায়িত্ব আইন অমান্যকারীদের প্রতিহত করা তারা কি তাদের দায় এড়াতে পারবে? পারবে কি দায় এড়াতে যারা ভোটের জন্যে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভোট ভিক্ষা করে সেইসব ক্ষমতার মসনদে বসা রাজনীতিকেরা?
আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত না হলে এদেশের সমস্ত অর্জন একদিন ভোজবাজির মত হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। তখন কোন বাগাড়ম্বর নিয়ে রাজনীতি করবেন আপনারা তা কি একবার ভেবে দেখেছেন?