➤আপনার নাট্যজীবন শুরু কিভাবে?
➤আমি স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়তাম এবং সেখানে ছাত্র রাজনীতি করতাম। বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম আমি । আমার নাটক দেখা শুরু ক্লাস নাইন – টেন থেকে,যখন হাইয়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দেবো তখন নাটক দেখতাম। নাটকের প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা তৈরী হয়েছিল,কিন্তু আমি নিজে থিয়েটার করবো ভাবিনি।পত্র-পত্রিকা,লিটল ম্যাগাজিনা লেখালিখি করতাম তখন এবং ভেবেছিলাম লেখালিখিতেই যাবো।তার আগে যখন ফুটবল খেলতাম,তখন ভাবতাম ফুটবলার হবো, শেষমেশ কোনোটাই হওয়া হলো না।যেহেতু আমার বাবা যাত্রার মঞ্চে একজন পেশাদারী অভিনেতা ছিলেন, আমি কখনো যাত্রা করবো ভাবিনি। কিন্তু নাটকের প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মেছিলো।সেই সূত্র ধরে আমি আমার গ্র্যাজুয়েশানের পরে থিয়েটার ব্যাপারটা ঠিক কিভাবে হয় তা জানবার জন্য ‘নান্দীকার’ এর একটা ওয়ার্কশপে যোগ দিতে আসি। সেখানে বহু ছেলেমেয়ে এসেছিলো। তার মধ্যে থেকে পঁচিশ জনকে নির্বাচন করা হয়েছিল,যার মধ্যে ছিলাম আমি। সেটা ছিল ছিয়াশি সাল,সেই থেকে আজ বত্রিশ বছর আমি এই কাজটির সাথেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছি। আজও শেখার চেষ্টা করে চলেছি।মাঝে অনেক প্রযোজনা করেছি।২০০২ থেকে আমি ‘নান্দীকার’ এর বাইরে বিভিন্ন দলের সঙ্গে অভিনয় করেছি। নাটকের এই চর্চার মধ্যে দিয়ে অনেক রকম ওয়ার্কশপ , বিভিন্ন মানুষ, তাদের নাটকের চর্চা, দক্ষতা,নাটকের প্রতি ভালোবাসা ও অনুরাগের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। এর মধ্যে দিয়ে নিজেও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।কোনো নাটকে ছোট পাঠ ,কখনো বা বড়,এভাবেই বহুদিন নাটকের সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে এবং তাগিদেই হয়তো আজ আমি বেশি পাত্তা পাই। মূলত আমি নিজেকে অভিনেতা হিসেবেই গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম।নাটক যেহেতু তিলোত্তমা শিল্প,সেহেতু বলা যায় নানাবিধ ঘটনার সাথেই আমাদের যুক্ত হতে হয়। জীবনযাপনে যা কিছু লাগে সেই সমস্ত কিছুকেই নাটকে স্থান দেওয়া যায়, সেখান থেকে দাঁড়িয়েই আমি শিক্ষানবিশি অভিনেতা ,আজও শেখার চেষ্টা করছি।এই মুহূর্তে আমার কোনো নিজস্ব সংগঠন নেই, কলকাতার প্রায় সব সংগঠনই আমার নিজস্ব সংগঠন, সবার সঙ্গেই কোনো না কোনো সময়ে অভিনয় করেছি।
➤ছাত্রজীবনে আপনি যখন নাটক দেখতেন,তখন মূলত কাদের নাটক দেখে অনুপ্রাণিত হতেন?
➤আমি মূলত ‘নান্দীকার’ এর নাটকই বেশি দেখতে শুরু করি।এছাড়া উৎপল দত্তের , অর্থাৎ ‘পিএলটি’র নাটক , এই দুই ঘরানার মধ্যে আমি ঘোরাফেরা করেছি।তখন শারদীয়ায় ‘নান্দীকার’ এর শিরোনামে পুজোর সময় একটি নাটক হতো আকাদেমিতে,আর পুজোর সময় যেহেতু বাড়ি থেকে বেরোনোর সুযোগ থাকতো, পয়সাও দিতেন বাবা-মা। আমরা সেই পয়সা দিয়ে নাটক দেখতাম।সেই জন্য শুরু থেকেই ‘নান্দীকার’, ‘পিএলটি’, ‘বহুরূপী’এর ওয়ার্কশপ, দয়াপ্রসাদ ভৌমিকের অনেক রকম কাজ দেখেছি। আরো পরে যখন অন্য থিয়েটার যখন এলো,যেখানে বিভাস চক্রবর্তী অভিনয় করেছেন,মূলত এই দলগুলির মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছি।অনেক ছোট দলের অভিনয় দেখেছি। দক্ষিনেশ্বরে ‘সাংস্কৃতিক চক্র’ বলে একটি দল আছে।এরকম আরো দেখেছি।
➤একজন নাট্যকার হিসেবে ,সেযুগ আর এযুগের থিয়েটারের ধরণ কতটা বদলেছে বলে আপনি মনে করেন?
➤আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সভ্যতার চলনেই পরিবর্তন ঘটে গেছে,থিয়েটার তার মধ্যে সবচেয়ে কম পরিবর্তিত হয়েছে।শিল্পমাধ্যমগুলির মধ্যে, হয়তো প্রযুক্তিকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেনি বা চায়নি, লেপেলটা অনেক আগে থেকেই ছিল,কম্পিউটারে,ল্যাপটপে,মোবাইলে যে মিউজিক বাজানো হয়, এইগুলি তখন ছিল না। এগুলির সংযোজনের ফলে অনেক সুবিধা হয়েছে।থিয়েটার এমন একটি চর্চা যা মঞ্চে সম্পাদন করতে হয়। মঞ্চসজ্জার পরিবর্তন ঘটেনি,কিন্তু থিয়েটার প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেকরকম বদল ঘটেছে।আশি-একাশি সাল থেকে এখনকার সময়ের মধ্যে খানিক বদল তো ঘটবেই,তবে খুব যুগান্তকারী বদল ঘটেছে সেটা আমি বলবো না। এক অর্থে ইতিবাচক,এক অর্থে নেতিবাচক বলা যেতে পারে এই বদলকে।নানা থিয়েটারে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়েছে।আমি মূলত প্রসেনিয়াম(proscenium) থিয়েটারের কথা বলছি।সেই বদলের ধরণ আগেও ছিল-নানা ভাবনা,নানা প্রকরণ।রাতারাতি বদলাতে হবে এটাও কেউ বলেনি।পরিবর্তন খুব বড় এবং খুব ভালো ব্যাপার, কিন্তু আমি কী করতে চাইছি সেটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।আজকে যে আমরা থিয়েটার করি,নানা দল একসঙ্গে,আগে প্রত্যেকের আলাদা আলাদা দল ছিল। এখন প্রায় সব দলের অভিনেতারা সব দলেই অভিনয় করেন। বাদকরাও সমানভাবে বহুদলে যোগদান করেন।আমার মনে হয়,এটা অবশ্যই ভালো হয়েছে।
➤আমরা তো জানি আপনি থিয়েটারের পাশাপাশি সিনেমাও করেন।দুটো সত্ত্বাকে কিভাবে একসাথে ফুটিয়ে তোলেন?
➤অভিনয়ের দুটি মাধ্যম মাত্র।মাধ্যমের চাহিদা অনুযায়ী অভিনয় করতে হয়। আমাদের কাজ হচ্ছে মাধ্যমটি বুঝে কার্য নির্ধারণ করা। একটাকে যদি মোগলাই বলে তবে অপরটি হয়ে ওঠে চাইনিস খাবার।দুটোতেই তৃপ্তি হয়। দুটোতেই সমান আনন্দ।সিনেমা কম করেছি ,কারণ তা জীবনে এসেছে অনেক পরে। আর থিয়েটারের সঙ্গে বেশিদিন আছি বলে প্রেম জমেছে। সিনেমা করতে করতেও প্রেম আসে,ভালোই লাগে।
➤অভিনয়ের পরে পরিচালনার কাজ করার ইচ্ছা আছে ?
➤না,সেরকম কোনো সচেতন ইচ্ছা নেই যে করতেই হবে। কোনোদিন হয়তো নির্দেশনা করবো।আমার মনের মতো কাজ,যেটা অন্য কেউ নির্দেশনা করছে না,সেটা হয়তো আমাকেই করতে হবে। নির্দেশক যে হতেই হবে এমন কোনো মাথার দিব্যি নেই।
➤আপনি কলকাতা শহরের বুকে এমন একজন অভিনেতা যিনি একাধারে চল্লিশটি নাটকও মঞ্চস্থ করেছেন। এমন স্মৃতিশক্তির গোপন রহস্যটি কী?
➤সব রহস্য উদঘাটন না করে ভালো। এটি আমার ভালোবাসার , জীবনের অঙ্গ,শরীরও অনুমতি দেয় পাশাপাশি।সেইজন্যই করে চলেছি এবং আশা করি ভবিষ্যতেও করতে পারবো এবং করবো।