দীর্ঘ ৬৮ বছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি ভাষা আন্দোলনের মুখ্য ভূমিকায় অংশ নেয়া ক’জন সৈনিক। হয়নি তাদের যথাযথ মূল্যায়ন। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী এই সৈনিকেরা হলেন, মোহাম্মদ ইলিয়াস, মোহাম্মদ সুলতান ও মো. ইমাদুল্লাহ।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষা সৈনিকদের নামানুসারে বিভিন্ন সড়ক কিংবা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ অথবা বৃত্তি প্রদান করা হলেও এই তিন ভাষাসৈনিকের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মাননার সু্যোগ ঘটেনি। তেমন কোন সরকারি উদ্যোগ এখনো নেই।
মোহাম্মদ ইলিয়াস ভাষা আন্দোলনের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারী ঢাকার রাজপথে সক্রিয় ছিলেন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস ভাষা আন্দোলনের পর আত্মগোপনে চলে যান বেশ কিছুদিনের জন্যে। পরবর্তীকালে তিনি আওয়ামী লীগে যুক্ত হন এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিতও হন।
২০ ফেব্রুয়ারী রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা হলের (বর্তমানে শহীদুল্লাহ হল) পুকুর পাড়ে যে ১১ জন ছাত্রনেতা আলোচনা করে ১৪৪ ধারা ভংগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, মোহাম্মদ সুলতান ছিলেন তাঁদের একজন। সারারাত তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একত্রিত করায় কাজ করেছিলেন। পরদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঘোষণার পর তিনি ১০ জন করে প্রতি দলের নাম লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। ২২ ফেব্রুয়ারী সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে তিনিই প্রথম কালো পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে একুশের প্রথম সাহিত্য সংকলন ” একুশে ফেব্রুয়ারী” প্রকাশ করেন তিনি। এ অপরাধে তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়, পুলিশ তাঁর দোকান তছনছ করে।
পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের (আওয়ামী যুবলীগ নয়) অফিস ছিলে যোগীনগরে যুবলীগ নেতা মো. তোয়াহার বাসার বৈঠকখানায়। জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী সময়কালে ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করতে এই অফিসে ব্যস্ত সময় পার করেছেন পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের সম্পাদক মো. ইমাদুল্লাহ। সক্রিয় ছিলেন ২১ ফেব্রুয়ারীতে। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২২ ফেব্রুয়ারী সকালে মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সামনে একুশের শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত গায়েবী জানাজা শেষে মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহর সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সভা হয়। সভায় তিনি অত্যন্ত আবেগী এবং জ্বালাময়ী বক্তৃতা উদ্দীপিত করেন উপস্থিত জনতাকে। পরবর্তীতে গ্রেফতার থেকে বাঁচতে তিনিও আত্মগোপনে চলে যান।
৫২ -র সেই উত্তাল দিনগুলোতে মোহাম্মদ ইলিয়াস, মোহাম্মদ সুলতান ও মো. ইমাদুল্লাহর ভূমিকা ছিল অনন্য। তাঁদের সাধনা আর ত্যাগ এই দেশের ভাষা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যায় স্বাধীকার আন্দোলনের পথে। অথচ ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর এমনকি স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এঁদের সেদিনের সেই স্বর্ণোজ্জ্বল ভূমিকার কোন মূল্যায়ন হয়নি। তারা পাননি কোন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।
বাঙালীয়ানা/এসএল
আরও পড়ুন:
ভাষা আন্দোলন ও পাকিস্তানের ‘ধর্ম’ তাস । সাগর লোহানী
শহীদ মিনার আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর গল্প । জন মার্টিন
বাংলা ভাষা আন্দোলনে ভদ্রলোকদের দ্বিচারিতা এবং কিছু মতামত । রাহমান চৌধুরী
মাতৃভাষার এ অবমাননা ভুলতে চাই । কামাল লোহানী
বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষা প্রদান এবং রবীন্দ্রনাথ । রাহমান চৌধুরী
ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে বাংলা ভাষায় শিক্ষা । রহমান চৌধুরী