মাত্র ৫ টাকায় চারাগাছ

Comments

গতিশীল যান্ত্রিক নগর ঢাকা। এই মহানগরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যন্ত্রের আধিপত্যই সহজ এবং স্বাভাবিক বিষয়। গতকালই শুনলাম এয়ারপোর্ট থেকে আজমপুর (উত্তরা) পর্যন্ত ফুটপাথ জুড়ে ছায়া দানকারী গাছগুলা কেটে উন্নয়নের নামে ল্যাম্পপোস্ট বসানো হচ্ছে। নগর সভ্যতার ক্ষেত্রে হয়তো ছায়াবতী বৃক্ষের চেয়ে ল্যাম্পপোস্টের গুরুত্ব অধিক।  আর এজন্যই দিন দিন এই মহানগরী ইট কাঠের জংগলে পরিণত হচ্ছে। বিশ্বায়নের এই যুগে বৃক্ষবিহীন নগর চিরায়ত সত্য, সহজ ও সাবলীল।

                             আরও পড়ুন: উত্তরায় গাছের বিকল্প ল্যাম্পপোস্ট (ফটো স্টোরি)

এর বিপরীত চিত্রও দেখা যায় ঢাকায়। এই শহরের অধিকাংশ মানুষের শেকড় বাংলাদেশের কোন না কোন গ্রামে। তাই এখানকার নাগরিকদের ভিতরে থাকা শ্যামল শেকড় এখনো উপড়ে তুলতে পারেনি শতাব্দীর এই যান্ত্রিক নগর। ঢাকা শহরের বহু বহুতল ভবনের ছাদেই শখের বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। আর তা এখানকার সাধারণ নাগরিকরা স্বপ্রণোদিত হয়েই এই কাজগুলো করছেন। এছাড়াও সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সামাজিক বনায়নকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

সামাজিক বনায়নকে উৎসাহিত করতে এমনই এক উদ্যোগ পরিচালিত হচ্ছে খোদ ঢাকাতেই। মাত্র ৫ টাকায় উন্নতমানের গাছের চারা বিক্রয় করা হয় ঢাকাবাসীর হাতের নাগালেই। ঢাকার ভিতরে সামাজিক বনায়নকে উৎসাহিত করতে এবং নামমাত্র মূল্যে নীরোগ ও উন্নতমানের গাছের চারা সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বন বিভাগের উদ্যোগে এই ব্যাতিক্রমী কার্যক্রম চলছে দীর্ঘদিন থেকেই। হাতের কাছেই বোটানিক্যাল গার্ডেনে অবস্থিত বন বিভাগের এই নার্সারী। ‘ঢাকা সামাজিক বনায়ন’ নামে বন বিভাগ এই নার্সারী গড়ে তুলেছে। মহখালী এলাকায় বনবিভাগের অধীনে প্রায় বছর দশেক আগে পথচলা শুরু হয় এই কার্যক্রমের। পরবর্তীতে নার্সারীতে পর্যাপ্ত জায়গার অভাব দেখা দেওয়ায় তা বোটানিক্যাল গার্ডেনে সরিয়ে নেওয়া হয়। তারপর থেকে সেখানেই ‘ঢাকা সামাজিক বনায়নের’ এই ব্যাতিক্রমী কার্যক্রম চলছে।

এই নার্সারীর মালী মোঃ হারেস খান জানান, এখন অফ সিজন হওয়ায় ৬০ থেকে ৬৫ প্রজাতির চারাগাছ এখন স্টকে আছে যার প্রত্যাকটির মূল্যই ৫টাকা। বর্ষাকালে তারা দেড়শটিরও বেশি প্রজাতির চারাগাছ বিক্রি করেন। পরিচর্যা ও দুষ্প্রাপ্যতার কারণে কোন কোন গাছের দাম একটু বেশি হলেও সেটা ১৫-২০ টাকার বেশি নয়। তিনি সহ আরও ১০ জন মালি নিয়মিত কাজ করেন এখানে। নার্সারীর ভিতরেই তাদের আবাসনের ব্যবস্থাও করেছে সরকার।

 

 

আরও পড়ুন:  উত্তরা পরিণত হচ্ছে মরুভূমিতে

উল্লেখ্য, ব্র্যাক সহ, আরও বেশকিছু এনজিও ও সামাজিক সংগঠন সামাজিক বনায়নের লক্ষ্যে নার্সারী গড়ে তুললেও চারার দাম অনেক বেশি। সাধারণত এসকল নার্সারী জাত ও মানের উপর নির্ভর করে ৫০ থেকে ১৫০ টাকার ভিতর চারাগাছ বিক্রয় করে থাকে। দুষ্প্রাপ্য বা বিদেশী গাছের চারার মূল্য আরও বেশি। কিন্তু ‘ঢাকা সামাজিক বনায়নের’ নার্সারীটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, চারাগাছের মান যথেষ্ট উন্নত এবং দামটা একদমই নামমাত্র।

এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে জনগণের সাড়া কেমন পাওয়া যায় এমন প্রশ্নের উত্তরে হারেস খান বলেন, ‘বর্ষার সময় কিছু ক্রেতা থাকলেও অন্যসময় ক্রেতা থাকে না বললেই চলে। অনেকেই এই নার্সারীর খবর জানে না, অনেকে জানলেও চিনে না। তবে নার্সারীওলারা মাঝে মধ্যেই চারা কিনে নিয়া যায়।’

চারা উৎপাদনে বিক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় হয়, তাহলে এতোদিন ধরে অর্থের এই ঘাটতি মিটছে কিভাবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকার বেতন দেয় আমরা কাম করি। বীজ-সার সহ অন্যান্য খরচাপাতি সরকার দেয়।’

এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে বোটানিক্যাল গার্ডেনের কর্মচারী মো. আব্দুর রব জানান, বনায়নের ক্ষেত্রে জনসাধারণের আগ্রহ প্রচুর। কিন্তু সামাজিকভাবে জনগণকে এই বিষয়ে আরও আগ্রহী করতে সরকার ও প্রশাসনের ঘাটতি রয়েছে। সামাজিক বনায়নকে আরও ছড়িয়ে দিতে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণা ও জেলাভিত্তিক হর্টিকালচারগুলোর সাথে বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেনসহ, সরকারীভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোর সমন্বয় জরুরী বলে মনে করেন তিনি। এছাড়াও, ঢাকাকে বসবাসের উপযুক্ত করতে ফুটপাথসহ সম্ভাব্য সকল জায়গায় সরকারী উদ্যোগে গাছ লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ঢাকা সামাজিক বনায়নের এই উদ্যোগকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বোটানিক্যাল গার্ডেনের এই কর্মচারী।

 

বাঙালীয়ানা/এএ/জেএইচ

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.