সময়ের সাতকাহন
কখনও কখনও সময়কেও
ক্লান্ত অবসন্ন মনে হয়
ভীষণ কান্না পায়;
হৃদয় ক্ষতবিক্ষত আকার ধারণ করে
যেদিকে তাকাই ধূ ধূ মরুভূমি
নির্বাসনের জায়গা মনে হয়।
তখন ইচ্ছেগুলোয় ধ্বংসের উপস্থিতি
তছনছ করে ভেঙ্গে ফেলে বন্ধ জানালার কপাট।
জীবন মুখরিত জয়গান অথচ
অন্তরে আগ্নেয়াস্ত্রের মতো বিস্ফোরণ,
প্রিয়জনের উপস্থিতিও বিরক্তিকর মনে হয়।
সুন্দর মূহুর্তের অনুভূতিগুলো
ভোতা তরবারি দিয়ে আঘাত হানার মতো লাগে;
নান্দনিকভাবে সাজানো বেলকনিকে লাগে
রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাজপথের মতো এলোমেলো রক্তাক্ত,
যেন ঝড়ো হাওয়ায় লণ্ডভণ্ড ফসলের মাঠ।
তবুও সময়,
সময়ে অসময়ে উঁকি মারে মনের জানালায়।

আত্মিক টানের জন্য অপেক্ষা
কেউ অপেক্ষা না করলেও
আমি করি
দারুণ অভিনব কায়দায় অপেক্ষা করি
দুরন্ত নদ তোমার জন্য।
আশ্চর্য শিকড়ের টানে আটকে আছি আমি এখনো।
আমার হৃদয়ে মাঠের নরম মাটি
ঝাঁঝালো গন্ধময় আঘ্রাণ
বড়ই তলার ঝরে পড়া বড়ই কুড়ানোর
দিনগুলো নাড়া দেয় খুউব;
হেঁটে আসি পেছনের স্বপ্নময় দিনগুলোতে,
শুনতে পাই,
স্রোতস্বিনী নদীর কলকল বয়ে চলার শব্দ
ঘন বাঁশবনের পাতার খসখস শব্দ
সন্ধ্যা হলেই জোনাকি পোকার গান
কিছু সহজ সরল মনের মানুষের
আশা জাগানিয়া গল্প,
জেগে থেকেও স্বপ্নে আমি হেঁটে বেড়াই
সুনিবিড় ছায়াঘেরা মায়াময় আত্মিক গ্রামে।

মাধবীরাত
এমন কত মাধবী রাতের জন্য
উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করেছি
আবেগী মনে
দেইনি বিষণ্নতার স্পর্শ ছুঁতে
যাতে লীন হয়ে না যায় সবকিছু
থেমে যায় না চলার সোনালি গতি।
শুধু পূর্ণিমার ঝিকিমিকি আলোয়
দক্ষিণের দুয়ার খুলে প্রত্যাশা নিয়ে
জাগ্রত থেকেছি,
মশাল হাতে দেখেছি শুধুই
অগ্রে পরিক্রমশীল যাত্রা।
এ যাত্রায় ভেতরের তাড়না থেকে
সঞ্চার হতো কিছু কবিতা
কিছু অলক্ষ্য শ্লোগান
সুঘ্রাণ ভরা দীর্ঘ জীবন লাভের আশা
ছায়াকে মায়াকে ঘিরে
ধ্বনিত হতো শুধুই বাঁচার আশা।

মন বিলাস
একঘেয়ে স্যাঁতস্যাঁতে বর্ষার পর
হঠাৎ রৌদ্রময় সোনালি আকাশ
দেখলে ক্লান্তি দূর হয়ে পরিতৃপ্ত
হয় মন।
অলস বিশ্রামের পর কেবলি
ইচ্ছে করে দুরন্ত গতিতে ডানা মেলে
ছুটে চলি এক প্রান্ত হতে আরেক প্রান্ত।
ইচ্ছে করে ঘ্রাণে ভরা মুক্ত বাতাসে
উথাল-পাতাল ঢেউয়ে মোহাবিষ্ট হয়ে
একাকিত্বকে ভুলে যেয়ে
কোন এক আলোকময় শহরে
বসত গড়ি।
যেখানে শূন্যতা থাকবে না
থাকবে না মন খারাপের কারণ
থাকবে না স্বপ্ন দেখা বারণ।

আত্মিক সম্পর্ক
আমি চাই পৃথিবীতে নেমে আসুক
স্বস্তির নিঃশ্বাস
আত্মার অভ্যন্তরে জেগে উঠুক
অটল বিশ্বাস
দিনের শুরুতে সূর্যরশ্নি থেকে বের হোক
উচ্ছল কলহাস্য রোদ।
নব প্রেমিক প্রেমিকার মনে বাস করুক আত্মিক প্রেম।
শুধু কফি শপের আড্ডায় কিংবা কামনায় নয়,
প্রেম বেড়ে উঠুক স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে
পৌঁছে যাক শুভ্রতা সাথে নিয়ে
পবিত্র গন্তব্যে;
খুঁজে পাক অমরতার সন্ধান।

একটি ভোরের অপেক্ষায়
গাঢ় নীলচে আঁধারের দিকে
চেয়ে আছি ভোরের সৌন্দর্য
উপভোগের অপেক্ষায়।
মনে হয়, পৃথিবীতে
এই সময়টার একমাত্র আমিই একজন
যে কি’না রাতের শেষে ভোরের সূর্য
ওঠার দৃশ্য দেখবার নেশায় মগ্ন।
যে সময় স্নিগ্ধতা ছড়ায়
মানুষের মন পবিত্র হয়
সবার বোধের দূয়ার উন্মুক্ত হয়
আত্মার ভেতর জেগে ওঠে
জ্যোর্তিময় উচ্ছল কলহাস্য মন।

লেখক:
মাহমুদা মৌ, কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক