আত্মবিনাশী কবি
অবিনাশী কবি তুমি। এ কেমন আখ্যা উপাখ্যান
ধ্যানমগ্ন চেতনায় অবসাদ, চিন্তার জাহাজ
নোঙ্গর করে না, শুধু কবিবর ভাবতে থাকুক
ভাবতে ভাবতে কবি ডুবে যায়, ডুবে যাক সূর্য।
দুপুর কিংবা মধ্যরাতে সেই অবিনাশী রোদে
পড়ে না কাহারো ছায়া, অন্ধকারে কোন কালে
কবির মলাট ধুলাহীন তাই ভাঁজও পড়ে না।
শুধুই কবিতা পড়ে। এহেন কবিকে আত্মবিনাশী
রূপে সংজ্ঞায়িত করে কি পাবে সেই আলোচক।
তবে কি তাদের শব্দ অপ্রতুল, এ থেকেই আক্রমণ।
প্যারাবোলিক কাব্য চিন্তার কথায় আজকাল কবিরা
দিশেহারা বোধ করে। চোখে দেখে সর্ষে ফুল অবিরাম
ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে আসে জীবনানন্দ দাস, রবীন্দ্রনাথ
এর ভেতর অহেতুক চক্কর খেতে থাকে কবিতার ছায়া
অথচ কবিতা আজ সময়ের স্পেসশিপ চড়ে চলে গেছে
নাইন ওয়ান ফোর নাইন জিরোর মতো অন্য গ্রহে
বিজ্ঞানের যুগে কবির উপলব্ধি প্রখর ও পরিশীলিত;
কমপ্যাক্ট। শব্দ চাতুর্যে অষ্টভুজ, বাক্য গঠনে ত্রিকোণমিতি
আকৃতিতে গোলাকার যেন এই আমার পৃথিবী

সঙ্গম ও দেহ-বিছানা
সুখদ সঙ্গম শেষে দেহ আর শয্যা
নিদ্রাচ্ছন্ন একসাথে বাম হাতে তারা
ডান হাতে অর্ধচন্দ্র ছটফট প্রেম
কস্তুরী নাভির নিচে পাস্তুরিত ঘুম
ব্যাগ ভরে হেঁটে যায় বিদর্ভ নগরী
সঙ্গম নগরচারী নারীবালা আর
সাজানো বাগান যেন থরথর প্রেম
ইচ্ছা অনিচ্ছায় ভাঙ্গে পাঁজরের হাড়
মুখের ভেতর বমি ঘুরঘুর করে
যেন দলা পাকা কিছু আবেগের মন্ড
আনন্দ নগর এক নব সমারোহ
চারদিকে নগ্ন দেহ ঘাতক দালাল
মাদক পাচারকারী বাজারের খোর
সমাজের পতি যিনি অরক্ষিত সব
একে একে সব দেখে বিষণ্ণ পথিক
হেঁটে যায় দূর বনে অন্যায্য নগরে
বাহুল্য চিন্তায় গড়ে ওঠে স্বর্গ ঘর
নগরী পসরা নিয়ে মেতে ওঠে খুব
সাজায় নির্মল যত আনন্দ বৈভব
রঙ্গিন গোলাপি ফ্রক বাবার আদুরে
আত্মবিশ্বাসের সব মুক্তো ঝরা হাসি
পৃথিবীর নামে চলে বীভৎস নালিশ
উপর শ্রেণির কর্তা সারি থেকে নামে
সঙ্গম সঙ্গম বলে লোকেরা জেনেছে
কামারের পোড়া ছাইয়ের মত গন্ধ
সংগ্রামী জনতা আজ তুলে ধরো খুঁটি
সভ্যতার কোলে দেখি ধর্মের ভন্ডামি
একুশ শতক মুছে দাও সর্বনাশ।

বালক সঙ্কেত
বালকেরা আছে বলে এ লগনে আলোকিত তোরা
এমন বালক বাণী, চারদিকে পড়ে যায় সাড়া
আসেনি বালিকা তাই অপরাহ্নে ছোটে নাই ঘোড়া
বালকও অস্ত যায় ম্রিয়মান সুর্যাস্তের সাথে
বালিকা দখলে নেয় ধীরে ধীরে অদৃশ্য আঁধার
অতঃপর খেলা চলে রাতভর আনন্দ মৌতাতে
এ কেমন পরকীয়া পদ চিহ্ন খোঁজে বার বার।।
কেবলই ঘরকন্যা,পরের স্ত্রী, বলে সুশাসন
আসেনা বালিকা মাঠে শুষ্ক প্রায় সব থমথম
ঘুমায় না কেউ কেউ মুষ্টিমেয় অচেতন মন
মনুষ্য সমাজে ঘটে অবিরাম দৃষ্টির বিভ্রম।
বালক ইশারা দিয়ে বলে যায় ওহে বালিকারা
পরকীয়া নয় আর সভ্য প্রেমে হব মাতোয়ারা

ইস কি নামে ডাকে
খুব কিছু চাইনে তোমাদের কাছে।
ভালোবাসা না দিতে পারো,
না পারো কোলের কাছে বসতে
কতটুকুইবা জায়গা দরকার
বিন্দুর জায়গাটা, কে কবে নিয়েছে দখল করে
আমি অপার সিন্ধুর ধারে বসে দেখেছি
এতো কম কিছু নেই;
তোমাদের কাছে খুব কিছু চাইনে
নারী বলেই ভ্রম করো,
কিসের এতো অহংকার বলো
তোমারো তলপেটে অযথা অপমানের শেল বিঁধে নাও
কষ্টের রাখাল এখনো তালপাতা হাতে হাতে ব্যথা চরায়
ঘুঘুরা ডাকে এখনো, নাবিক মন চমকে ওঠে
এই হাতে নাম লেখা নারী; আর হাতে মানুষ
এর বেশি কী দেবে আমাকে তুমি?
আমার পাশে জায়গা দিলাম বসো মন খুলে
ভুল করলে ফেলে দেবো না,
ভুলে গেলে মুছে দেবো না
শুধু অনভ্যাসের শেকল কেটে
একবার এসো- অহংকার ভেঙ্গে মনুষ্য সমাজে।

ডেফিনেশান
হৃদরোগ গুলো যখন তখন বসে পড়ে
ব্যস্ততার পিড়ি নিয়ে উদাম শরীরে;
নিথর সব পড়ে থাকে সব্জী আনাজ,
কালি-কলম ও গানের কলি।
সুর্য এসে গা ধুইয়ে দিলে
নবজাতকের প্রাণ আবার ফিরে আসে
সবারই নিজস্ব একটা কান্না থাকে;
হৃদয়ের কান্নার খবর কেউ রাখে না।
রাত যখন সঙ্গমে লিপ্ত হয়
অপারগ শিশ্ন তখন ঘুমায় ব্যাপক
জড়তার আলিঙ্গনে মধুমাস
ও বিষণ্ণ বিপ্লবে কোমর থেকে
খসিয়ে দেয় তার মুক্ত বেণি
ইচ্ছেতে জেগে ওঠে প্রগাঢ় বাসনা;
ভিজে যাক, খাট পালং, বিছানা, বালিশ,
কাঁথা-গঞ্জ থেকে আনা তাঁতের শাড়ি,
স্তনের নিচে জমে থাকা থকথকে আকাঙ্ক্ষা,
পোড়া তাওয়ার মতো সব শুকনো খটখটে।
সকালে যে শরীর পড়ে যায় বিছানা থেকে উবু হয়ে
তাকে জোর করে তুলে নিয়ে চলে যায়
ফ্যাক্টরির দুয়ারে, সেখানে শরীর ভেজে না
বয়ে যায় অন্যায়ের স্রোতধারা ঘন্টার পর ঘন্টা
অচেতন রক্তের নদীতে। জীবনের নামে তখন
উপরতলা ব্যাপক ডেফিনেশান তৈরি করে।
হৃদয়ের কান্না কেউ দেখে না।

লেখক:
মৌ মধুবন্তী, কানাডা প্রবাসী কবি, আবৃত্তিশিল্পী, গীতিকার, সঞ্চালক ও সংগঠক