যুক্তরাষ্ট্রে নবান্ন উৎসব

Comments

রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮, নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ড লেভিটটাউন কমিউনিটি হলে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় বাঙ্গালীর চিরন্তন নবান্ন উৎসব। নিউ ইয়র্কে প্রথমবারের মত নবান্ন উৎসবের এ আয়োজন করে শিল্পাঙ্গন, অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ থেকে আগত এবং প্রবাসী শিল্পীবৃন্দ

1C

নবান্ন উৎসবের সূচনা হয় দূপুর ১:০০ ঘটিকায় পিঠা উৎসবের মাধ্যমে। আমন্ত্রিত সকল দর্শক ও অতিথিবৃন্দকে নানা প্রকারের সুস্বাদু পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করে শিল্পাঙ্গনের শিল্পী ও কর্মীবৃন্দ। একই সাথে শুরু হয় শাড়ী, গয়না ও খাবারের মেলা যা সুধীজনের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

5

এরপর শিশু, কিশোর ও বড় শিল্পীদের বৃহৎ দল নিয়ে নবান্ন শোভাযাত্রা শুরু মিলনায়তনের প্রবেশদ্বার থেকে। ঢাক ঢোলের বাদ্যে বর্ণাঢ্য প্ল্যাকার্ড নিয়ে শোভাযাত্রা মিলনায়তন প্রদক্ষিণ করে মঞ্চে ওঠে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পাঙ্গনের শিল্পীবৃন্দ। মঞ্চ আলোকিত করেন বাংলা গানের কিংবদন্তী শিল্পী সুবীর নন্দী। শিল্পাঙ্গনের পক্ষ থেকে ফালাহ আহমেদ ও আকতার কামাল সুবীর নন্দীকে সম্মাননা ও উত্তরীয় প্রদান করেন। “আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে” গানের সঙ্গে প্রধান অতিথি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে নবান্ন উৎসবের উদ্বোধন করেন। আমর আশরাফের স্বাগত বক্তব্যের পর শিল্পী সুবীর নন্দী সকলকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। এরই সঙ্গে শিল্পাঙ্গনের আলেখ্যানুষ্ঠান “এসো হে সুন্দর” অসাধারণ পরিবেশনা দিয়ে নবান্ন উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়।

1B

রাত ১১:০০ ঘটিকা পর্যন্ত একটানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলে। শিল্পাঙ্গনের নিজস্ব পরিবেশনার পাশাপাশি আমন্ত্রিত তারকা শিল্পীদের পরিবেশনা এক ব্যতিক্রম উদাহরণ তৈরী করে উত্তর আমেরিকার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে। শিল্পাঙ্গনের গুণী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কারপ্রাপ্ত শিল্পীবৃন্দ একে একে পরিবেশন করেন কবিতার আসর “ভালো থেকো”, নৃত্যালেখ্য “নবরবিকিরণে”, গীতিআলেখ্য “ভালোবাসার গল্প”, পুঁথিপাঠের আসর “খনার বচন”, নবান্নের আলেখ্যানুষ্ঠান “নতুন সকাল” ছাড়াও একক সঙ্গীত, আবৃত্তি ও কৌতুক।

47

আমন্ত্রিত শিল্পীদের মাঝে ছিলেন নজরুল কবীর, তাহরিনা পারভীন প্রীতি, শরিফুজ্জামান মুকুল এবং মঞ্জুর কাদের। শিল্পাঙ্গনের শিল্পীবৃন্দের মাঝে ছিলেন সামায়রা মাহিবা, এলমা হক, রাই সরকার, নুসায়বাহ কবির, লিয়ানা মাহবিন, সানজিদা রাহমান রাইনা, আয়না মাহিবা, আবীর ইসলাম, সাহিল কামাল, তাসনিম লোকমান, জিনাতুন নাহার হেরা, লিউনা মুহিত, শারমিন হক, শাহনাজ কোরেশী, কামরুন আহমেদ, শাহপার খান ডানা, শুক্লা রায়, নাদিরা আহমেদ মুন্না, সাবিনা হাই উর্বি, তাহমিনা তাহরীন বুলা, তাসফিয়া রুবাইয়াৎ, সোনিয়া হক, ইশরাত কুমু, মৌসুমী বড়ুয়া, ফারজানা সুলতানা শরমিন, ইশরাত আহমেদ পোরশিয়া, মাহনাজ হাসান কেয়া, সামিনা আশরাফ লাজু, বিদিশা দেওয়ানজী, সৌগত সরকার, সাইফুল্লাহ পারভেজ, মোহাম্মদ শানু, দীপ্তি বড়ুয়া, মাহমুদ চৌধুরী, সায়েম শাহরিয়ার এবং অশোক চৌধুরী। সঙ্গীত পরিকল্পনা, পরিচালনা ও শিল্পাঙ্গনের ভাব সংগীতের সুর করেন বিদিশা দেওয়ানজী। সহযোগিতায় ছিলেন সাইফুল্লাহ পারভেজ। শিল্পাঙ্গন সঙ্গীতের কথা লিখেছেন মো: নজরুল ইসলাম।

আমন্ত্রিত অতিথি নবান্ন উৎসবে উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী ও সমাজ সেবক সৈয়দ জাকি হোসেন, নাসাউ কাউন্টির এক্সিকিউটিভের প্রতিনিধি এবং নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা। নাসাউ কাউন্টি থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় প্রতিথযশা শিল্পী সুবীর নন্দী, মেধাবী শিল্পী বিদিশা দেওয়ানজী ও সৌগত সরকার, এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন শিল্পাঙ্গনকে।

46

নবান্ন উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ছিল পাঁচজন শিল্পীর অসাধারণ পরিবেশনা। নৃত্যশিল্পী প্রিয়া ডায়েস তাঁর নৃত্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশ ও নবান্নের উপর ভিত্তি করে এক অতুলনীয় নৃত্যালেখ্য উপস্থাপন করেন।

মঞ্চ, টেলিভিশন, বেতার ও চলচ্চিত্রের শিল্পী শিরীন বকুল একাধারে আবৃত্তি ও দু’টি নাটকে মনোমুগ্ধকর অভিনয় করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “রক্তকরবী” নাটকের অংশবিশেষে নন্দিনীর চরিত্রে শিরীন বকুল ও রাজার চরিত্রে মো: নজরুল ইসলামের অভিনয় উপস্থাপিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত আমর আশরাফের ভাবনা ও প্রয়োগে এবং মো: নজরুল ইসলামের রচনা ও নির্দেশনায় “এখানে দরজা ছিল” নাটক উপস্থাপন করা হয়। এতে অভিনয় করেন শিরীন বকুল, মিলা হোসেন, ম ম জসীম, শওকত রিমন, মোহাম্মদ শানু, মোস্তফা মোর্শেদ মানু, লতিফ রহমান, মো: আওকাত খান, সামায়রা মাহিবা, সোনিয়া হক, ইশরাত কুমু ও মো: নজরুল ইসলাম। মাসুদুল ইমামের মঞ্চ, মো: নজরুল ইসলাম ও আহমেদ নাসিমের আবহ ও শিল্পীদের অভিনয় উপভোগ করেন দর্শক।

 

3নবান্ন উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন তনিমা হাদী এবং সুবীর নন্দী। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন তবলায় তপন মোদক, কীবোর্ডে রিপন, অক্টোপ্যাডে তুষার দত্ত, গীটারে আকাশ আহসান ও মোহাম্মদ শানু।

আমর আশরাফের সার্বিক সমন্বয়ে, ফালাহ আহমেদ ও আকতার কামালের ব্যবস্থাপনায়, মো: নজরুল ইসলামের গ্রন্থণায় ও বেবী আজিজের উপস্থাপনায় দীর্ঘ অথচ সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত নবান্ন উৎসব লং আইল্যান্ড তথা নিউ ইয়র্কে এক মাইলফলকের সূচনা করে। মঞ্চসজ্জার নকশা প্রণয়ন করেন টিপু আলম, পোশাক সরবরাহ করেন বিবির বায়না, শব্দ নিয়ন্ত্রণ করেন নিবিড় খান, আলোকের দায়িত্বে আতিয়ার রহমান, এবং চিত্রগ্রহণে ছিলেন কাজী শফিকুল হক। শিল্পাঙ্গনের উপদেষ্টা রাহাত হোসেন নাজু, আবুল কালাম আজাদ, রোজিনা কবির, মো: রফিকুল ইসলাম, রাজিবুল হক ও শাহাব আহমেদ, এবং শুভাকাঙ্খী মিজান রহমান, আব্দুর রহমান, মাহবুবুর রশীদ, হুসেন শরীফ আহমেদ, মো: নুরুর রহমান, শাফকাত মোস্তফা, মীরা রহমান, অনিক রহমান, জাকারিয়া হোসেন জিকো, হাসান ইসলাম সানি, ইকবাল ইসলাম, পলি ইসলাম, জাওয়াদ হোসেন হাসিব, সাইফুল ইসলাম, খালেদ চৌধুরী, শামীম ইসলাম, সোনিয়া পান্না ও স্বপন কবিরের কর্মোদ্দীপনায় নবান্ন উৎসব এক দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। নিউ ইয়র্কের সারাদিনে ছ’ শতাধিক দর্শকের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য।

বাঙালীয়ানা/এসএল

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.