জাবালে নূরের বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের নিহত দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খাতুন মীম হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। দুই চালকসহ তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
এছাড়া আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়েছে।দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছে−জাবালে নূরের চালক মাসুম বিল্লাহ, আরেক গাড়ির চালক জোবায়ের সুমন ও হেলপার আসাদ কাজী। আসাদ পলাতক রয়েছে। এ মামলায় বাকি দুই আসামি হেলপার এনায়েত হোসেন এবং বাস মালিক জাহাঙ্গীর আলম খালাস পেয়েছে।
১৪ নভেম্বর ২০১৯, রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন বিচারক। এ মামলায় ৩৭ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত।
আসামিরা হলো—জাবালে নূর পরিবহনের মালিক শাহাদাত হোসেন আকন্দ, চালক মাসুম বিল্লাহ ও হেলপার এনায়েত হোসেন এবং অন্য বাস মালিক জাহাঙ্গীর আলম, গাড়ির চালক জোবায়ের সুমন ও হেলপার আসাদ কাজী। ২২ অক্টোবর ২০১৮, আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন। আর ২৫ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত চার্জ গঠন করেন।

সড়কে রাজীব ও দিয়া হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা জাবালে নূর পরিবহণের বাসে আগুন দেয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে কালশী ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস ফ্লাইওভার থেকে নেমে সেখানে দাঁড়ায়। এসময় পেছন থেকে জাবালে নূরের আরেকটি বাস দ্রুতগতিতে ওভারটেক করে সামনে আসতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এতে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় রাজীব ও দিয়া। এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এ ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিহত দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলা করেন।
দুই সহপাঠীর মর্মান্তিক মৃত্যু ও বেশ কয়েকজনের আহত হবার ঘটনায় আগের দিনের মতো সোমবারও শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা ওই সড়কে বিক্ষোভ মিছিল, অবরোধ ও যানবাহনে ভাংচুর করে।
নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানের অশোভন বাচনভঙ্গি এবং বক্তব্য শিক্ষার্থীদের ক্ষোভে ঘি ঢেলেছে। শিক্ষার্থীরা ‘নৌমন্ত্রী ক্ষমা চাও’, ‘ঘাতক চালকের ফাঁসি চাই’, ‘জাবালে নূর পরিবহন বন্ধ কর’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয়। ক্যান্টনমেন্ট এলাকার আরো চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভে যোগ দেয়। এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে একইভাবে শাহবাগ, কলাবাগান, মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও যানবাহন ভাংচুর করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করে। তারা নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ, ঘাতক চালকের ফাঁসি, শিক্ষার্থীদের জন্য ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ, নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা চালুসহ ১০ দফা দাবি পেশ করে।
স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে দেশে সড়ক নিরাপত্তায় গড়ে ওঠে সবচেয়ে বড় আন্দোলন।
বাঙালীয়ানা/এসএল
মন্তব্য করুন (Comments)
comments