অনেক দিন পরে
অনেক দিনের পরে। নিজেকে বসিয়ে রাখি বিবাহ বাসরে
অলীক যদিও, তবু নিজেকে আদর করি শরীর তাপাই
আমাকে আমি পাই সঙ্গমে, ক্লান্ত শামুকের ন্যায় জলের তলায়
সারারাত সুখী চাঁদ, বসে থাকে দুই হাত ধরে
একটা দুইটা পাখি উড়ে গেল। দূরে, হঠাৎ উড়ে যাওয়া ঘৃণার মতো
অনেকটা পাখি এসে ঝাপটায় ডানা
অনেকটা পাখি, শতশত
অনেকদিন পর নিজেকেই নিজের লেগে গেছে ভালো
জানালার গ্রিল বেয়ে মাধবীলতার মতো নেমে এলো, থোকা থোকা আলো
এই ধ্যানী দুপুর ওড়াচ্ছে ধোঁয়া
কাকে যেন ভালোবাসি, কাকে? কুয়াশাকে! ভালোবাসি কত
ভেতরে সোহাগ ঝাড়ে অনেকটা পাখি
অনেকটা পাখি, শতশত

ঝড়
ঝড় বইছে, উল্টে যাচ্ছে গাছ
চাঁদ ফেটেছে, জোছনা ছিটকে পড়ে
ঝড়ে ও চাঁদে অসম-প্রণয় দিয়ে
দুই পৃথিবী একটা সুতায় গাঁথে
গোধূলি তার আলো রেখে যায় কিছু
বাতাসে ওড়ে সময়ের ধুলাবালি
পাখির স্বরে কথা বলে কার ছায়া
জলের দ্বিধা কাঁপছে জলের গায়ে
যা কিছু আছে আসলেই কি তা আছে?
নাকি সবটা থাকার ধারণা শুধু?
সুগাঢ় হলো না-থাকা–থাকার ভ্রম
অলীক সেতু পতনলোভী আরও
স্বর বদলে সন্ধ্যা ডাকছে কাকে!
তোমার ডাকে তারই প্রতিরূপ যেন
রাস্তা জানে হারিয়ে ফেলেছি ঘর
বাহির টানে, ঘর-পথ একাকার

কাঁপন
এ তো আমার খিদে, আমারই খিদে শুধু
তুমি কেন নেবে সকল দায়!
অতীত আমার অন্ধকারে ভেজা
দাড়ি-কমা ঠিক রাখেনি কেউ
একই পুস্তক ভিন্ন কেবল ভাষা
পড়ছি আজও, অভিজ্ঞতা খুলে
জ্বলছে জ্বলুক সহজ মোমবাতি
নিরাবেগের বাতাস লেগে কাঁপতে থাকি মৃদু

কদমগাছের সখা
কিছুই বলেনি, কেবল একটা চাঁদ মেলে ধরেছিল অন্ধকার পথে
কিছুটা এগিয়ে দেওয়ার ছলে পিপাসা ছুঁয়ে দিয়েছিল
বলেছিলো, সময় সুদক্ষ শিকারী, তাকে খেপাতে নেই।
খাবারের পাশে খিদেহীন বসে থাকার ম্যাজিক থেমে যায়
চুম্বনের নন্দিত অছিলা তীব্র হলে বুকে গজায় কুর্চির বন
চাঁদেরও জ্যোৎস্না ভঙ্গ হয়। শিরায় মিলনের বিলাপ
অতঃপর
ম্লান হয়ে ওঠা দাগে, আরও কিছু ব্যথা ঢেলে দিয়ে
বলেছিলো– ভালোবাসা কুয়াশাবিড়াল– অন্তরালে ডাকে
প্রেম গাঢ় হলে ফাঁকা ঘরে মানুষ নিজেই নিজের লুণ্ঠনকারী।

অব্যক্ত
কোনো ছবিকেই আর বিশ্বাস করো না
ওই হাসিমুখ, উজ্জ্বল সুখের দ্যুতি
কিছুই আদপে সত্য বলে না
সম্পর্কের তর্জনী শাসন
যার কোনো পূর্বসূত্র নেই
অসংযুক্ত থাকো
ঢেকে রাখো ভেতরের ছন্দভঙ্গুরতা
নির্বিশেষ কার্যকরণ ছাড়া–
যে-কেউ ছেড়ে যেতে পারে
কেবল চরের মতো জেগে থাকে ধু ধূসরতা
শব্দ তোলে না কারোর যাওয়া
ভেতরেই থাকে ধ্বনি, সমুদ্রনির্মিত ফেনা
নিথর করপুটে সামান্য লেগে থাকে– না-থাকা
সয়ে নেওয়া যায় সবই, সমস্তই
নিত্য-দৃশ্যাবলীর মাঝে পায়রার ওড়া
আহার-স্নান, বেঁচে-থাকা
আর, জুড়ে থাকার দূরকল্পনাও
প্রলম্বিত হতে পারে পথ, পথের বাঁক
আনুকুল্যে আসতে পারে বিরহের ভারবাহী ঘোড়া
মেঘ কেটে গেলে সূর্য মেলে ধরে তার কড়কড়ে জিভ
অথচ
পিপাসার কথা বলেনি কোন রোদ

লেখক:
রিমঝিম আহমেদ, কবি, ঔপন্যাসিক, উন্নয়নকর্মী