উঠে দাঁড়াতে হবে
আদেশের অপেক্ষা না করে
উঠে দাঁড়াতে হবে
যে আদেশের অপেক্ষা করে
সে পরাধীন
শিরোচ্ছেদের পরও
নিজেকে প্রতিফলিত করতে হবে রক্তের ব্যাসার্ধ পর্যন্ত
এমনকি মেঘের পেটের মধ্যে প্রাণভোমরা ধরতে হবে
সমুদ্র ঝাঁট দিলে দেখা মিলবে সুরাসুর
ভাবলে চলবে না তোমার মাথা নেই
বরং আর্গাসের প্রতিটি রেখা তোমার মাথা
প্রতিটি রোমকূপ নাক
প্রতিটি পশম চোখ
শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুগ্রহ থেকে মুক্ত হও
প্রলয়ের পর সময় শুধু একা দাঁড়িয়ে থাকে
ভাবো স্পার্টাকাসের কথা শিরোচ্ছেদের পর আজো
সে দাঁড়িয়ে আছে

আশ্চর্য প্রয়াণ
এইসব আশ্চর্য প্রয়াণ
আমাদের ভাবিয়েছে-কষ্ট দিয়েছে
একদিন স্মৃতি হবো
আমাদের বৃক্ষগুলো তাকিয়ে দেখবে দুঃখ পাবে
পোষা প্রাণীদের চোখে শোকসভা
কত গান কীর্তি কবিতা
ছবির ভেতরে চিরস্থায়ী হবে
মৃত্যুর পর যারা নক্ষত্র হয়
আর মৃত্যুর আগে যারা
উভয়ের বিচারের ভার সূর্য নিয়েছে
একদিন পৃথিবীতে শুধু আলো থাকে
একদিন শুধু অন্ধকার
কেউ কেউ বীরবাহু
কি ভাবে বাঁচতে হয় তারচেয়ে
বেশি জানে কিভাবে মরতে
দীর্ঘ পথ দীর্ঘ দূর
গন্তব্য ক্ষীণ হয়ে আসে

স্পোক্সম্যান
যে সব দরোজা নিজেদের খুলে রাখার অধিকার চায়
তাদের উল্টো করে ঝুলিয়ে দাও
তাদের সন্তান জানালা আর ভেন্টিলেটর ভাইবোনদের
সীমাহীন রাতজুড়ে জ্বালিয়ে দাও
তাদের স্ত্রী চৌকাঠদের এক কোপে
বিচ্ছিন্ন করো
আর তাদের গৃহপালিতগুলো দাও গিলোটিনে
কিন্তু কারো গোলামী আর দাসত্বকে
স্পর্শ করো না
সমাজপতি আর পোষা কবিরা তাদের
মহিমাকীর্তন করবে
মুহুর্মুহু বিবৃতি দেবে বুদ্ধিজীবীরা
রাষ্ট্র তাদের বিভূষিত করবে তকমায়
দরোজাকে দোষী বলবে আদালত
একজন গলাকাটা দরোজা উন্মুক্ত হতে পারে না
মুণ্ডুহীন পোষা বিড়াল মিউ মিউ ডাকতে অপারগ
বুদ্ধিজীবী আর স্পোক্সম্যানরা পাবে
আমৃত্যু ভাতা বাগানবাড়ি এমনকি
স্বর্গের সার্টিফিকেট
অধিকার চেয়ে আন্দোলন করেছিলো
যে বাড়িঘর–দরোজা-জানালা
তাদের কোনো স্পোক্সম্যান নেই
তারা চিরদিন হাঁটতে থাকবে প্রোমিজ ল্যান্ড ইতিহাসের দিকে

একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে
ঠিক মতো কিছুই হয় না
বাড়ি থেকে বেরুনোর সময়
দরোজার মুখে কুলুপ আঁটা হয় না
জামার একটা বোতাম সাবানে খাওয়া
প্যান্টের ভেতর থেকে শার্টের বিদ্রোহ
জুতোর ফিতে ক্ষুধার্ত বলে ঠিক মতো দাঁড়াতে পারে না
চশমার জানালায় মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁচ দ্বিখণ্ডিত
শ্বাসকষ্টে ঘড়ির কাঁটার নিঃশ্বাস নিভে আসছে
সূর্য স্থির বলে কতদিন
প্রিয়জনের সাথে দেখা হয় না
তাই বলে পৃথিবীর কোনো কিছু থেমে নেই
পরাশক্তির ক্ষেপণাস্ত্র
আঘাত হানছে বৃষ্টির ফোঁটায়। ইসরাইল টেনে লম্বা করছে রক্তের রেখা
চিনের মৌমাছিরা সিল্করোডে সাজোয়া যান নিয়ে ছুটে যাচ্ছে
ইউক্রেনের সব গম খেয়ে ফেলছে
রুশট্যাঙ্ক
আমেরিকা জুতোর তলায় রোধ
করে রেখেছে ফ্লয়েডের দৃষ্টি
শুধু আমি সবকিছু ঠিক করে উঠতে
অপারগ
ঘড়িকে ঠিক মতো নাস্তা দিতে পারি না
জুতোর দাঁত মাজতে ব্রাশ কেনা হয় না
এবং চশমার জন্য একটা ছোট্ট ফ্লাট
অপেক্ষা করছি
ভাবছি হয়তো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে

লেখক:
রেজাউদ্দিন স্টালিন, কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদ সাহিত্যিক