র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে একজনের জখম গুরুতর বলে জানা গেছে। আহত শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, বিকেলে শিক্ষার্থীদের বহনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরণ-২ বাসটি সায়েদাবাদ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের ওঠার মুখে র্যাব ১০ এর সদস্যদের সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে এক অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটার কথা স্বীকার করেছে র্যাব। র্যাব বলছে, ভুল বোঝাবুঝির কারণে এটা হয়েছে। তবে তাদের দাবি, আহত হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান শুভ, সাংবাদিকতা বিভাগের ১৪তম ব্যাচের সুলাইমান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১১তম ব্যাচের রবিউল, বাংলা বিভাগের ১৩তম ব্যাচের আল-আমিন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৪তম ব্যাচের তাওসীফ।’
বাসে থাকা শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে জানায়, ‘উত্তরণ-২ বাসটি সায়েদাবাদ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে পৌঁছানোর পর দেখা যায় একটি সাদা গাড়ি (ঢাকা মেট্রো চ-৫৩২২৩৭) ফ্লাইওভারে ওঠার মুখ বন্ধ করে আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় শুভ নামে ১১তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী গাড়িটি সরাতে বললে ওই গাড়ি থেকে কয়েকজন র্যাব সদস্য নেমে তাকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বাস থেকে নেমে আসলে তাদেরও মারধর করা হয়। এরপর বাকি শিক্ষার্থীরা বাস থেকে নেমে সড়ক অবরোধ করলে র্যাববাহী গাড়িটি ফ্লাইওভারের ওপর উঠে যায়।’ শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ওটা একটা সাদা গাড়ি ছিল, ওটা যে র্যাবের গাড়ি আমরা তা বুঝতে পারিনি। শুভ গাড়িটি সরাতে বলাতে আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে মারধর করা হয়। ওর চোখে মুখে মারাত্মক জখম হয়েছে।’
বাসের চালক হাসান বলেন, ‘ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে পৌঁছলে একটা সাদা রঙের হাইস (বড় মাইক্রোবাস) আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়েছিল। আমি দুবার হর্ন দিলেও গাড়িটি সরেনি। এ সময় শিক্ষার্থীরা গাড়ি সরাতে বললে তাদের মারধর করা হয়। পরে শিক্ষার্থীরা সড়ক ঘিরে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিলে র্যাবের গাড়িটি চলে যায়।’
এদিকে বাংলাট্রিবিউন জানিয়েছে যে এ বিষয়ে র্যাব ১০-এর অধিনায়ক কাইউম উজ্জামান খান বলেন, ‘ওটা আমাদের একটা অভিযানের গাড়ি ছিল। এএসপি শহিদুল ইসলাম মুন্সী গাড়িটির দায়িত্বে ছিলেন। আমাদের গাড়িটা গিয়ার পাচ্ছিল না তাই দাঁড়িয়েছিল। ওখানে মূলত ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। র্যাব বুঝতে পারেনি ওরা ছাত্র। আর ছাত্ররাও বুঝতে পারেনি র্যাবের গাড়ি। আমার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।’
গাড়িতে থাকা র্যাব ১০-এর স্কোয়াড কমান্ডার (ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-১) এএসপি মো. শহিদুল হক মুন্সী বাংলাট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি নিজেই উপস্থিত ছিলাম। আহত হওয়ার মতো এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। একটি ছোট বিষয়কে নিয়ে নিজেদের সম্মান নষ্ট না করি।’ আহতদের কথা জানালে তিনি পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, ‘কেন শিক্ষার্থীরা র্যাবের গাড়ির সামনে এলো?’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বাংলাট্রিবিউনকে বলেন, ‘র্যাবের গাড়িটা ওখানে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। উপাচার্য মহোদয় র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আগামী রবিবার তারা ক্যাম্পাসে এসে মীমাংসা করবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।’
ছবি: বাংলাট্রিবিউন
বাঙালীয়ানা/এসএল