শান্তনু দেহ দিয়ে গেলেন চিকিৎসা গবেষণায়

Comments

বাংলাদেশের নাট্যকর্মী-নাট্যজনেদের খুব কাছের একজন সহযোদ্ধা নাট্যকার-অভিনয় শিল্পী শান্তনু বিশ্বাস। বাংলাদেশের গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের এক নিরলস কর্মী শান্তনু বিশ্বাস। নিজে যেমন ছিলেন সকলের কাছে প্রিয় নিজেও ভালবাসতেন স্বজনদের প্রগাঢ় প্রেমে। সেই প্রেম, সে ভালোবাসা শুধুই কি স্বজনদের প্রতি? মনে হয় না। তাই তো তিনি ভেবেছিলেন মৃত্যুর পরেও কিভাবে অপরের প্রয়োজনে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন, ভেবেছিলেন অন্যের বাঁচবার অবলম্বন হয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবেন মৃত্যুর পরে!

Shantonu biswas02

শান্তনু বিশ্বাসের মরনোত্তর দেহদানের ইচ্ছাপত্র

তাই জীবদ্দশাতেই নিজ মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ( চমেক ) শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য দান করে গিয়েছিলেন লিখিত ভাবে। তাঁর মরণোত্তর ইচ্ছা পূরণার্থে রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৯, সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর স্ত্রী ও দুই কন্যা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এনাটমি বিভাগে শান্তনুর মরদেহ হস্তান্তর করেন। এ সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সেলিম জাহাঙ্গীর, এনাটমি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাে. আশরাফুজ্জামানসহ মেডিকেল কলেজের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও শান্তনুর স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

Shantonu biswas01

শান্তনু বিশ্বাসের মরদেহ হস্তান্তর

শান্তনু বিশ্বাসের মরদেহ দান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ইতিহাসে সম্ভবত প্রথম। এটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেই মনে করেন এনাটমি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাে. আশরাফুজ্জামান।

চট্টগ্রামের নাট্যাঙ্গনের অনুকরণীয় এক পুরুষ শান্তনু বিশ্বাস। চট্টগ্রামে নিয়মিত নাট্যচর্চার উন্মেষকালের অন্যতম মেধাবী সারথি তিনি। নাটক রচনা, নির্দেশনা, অভিনয় এবং নাট্যনির্মাণের সব কটি ক্ষেত্রে ছিল তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ। বাদ পড়েনি সংগীত রচনা, সুরারােপ, সংগঠন পরিচালনা, পত্রিকা সম্পাদনা। শিল্পের বিবিধ শাখায় বিস্তৃত জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন শান্তনু বিশ্বাস। চট্টগ্রামে তিনি বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক কর্মী হিসাবে সকলের কাছে অনুকরণীয় ও আদর্শ ছিলেন তিনি। নাট্যচর্চার প্রারম্ভে শান্তনু বিশ্বাস ছিলেন মূলত অভিনেতা। এরপর আত্মপ্রকাশ নাট্যকার হিসাবে। অভিনয় শিল্পী হিসাবে তিনি গণায়ন নাট্যসম্প্রদায়ের মাধ্যমে নাট্যচর্চা শুরু করেন। এ দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য তিনি। ১৯৭৮ সালে ‘অঙ্গন থিয়েটার ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হলে শান্তনু বিশ্বাস যোগ দেন এ দলে। অঙ্গনে তিনি নাট্যকার ও নির্দেশক হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন। এ দলে তাঁর রচিত তিনটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। ১৯৮২ সালে শান্তনু বিশ্বাস ‘কালপুরুষ নাট্যসম্প্রদায়’ নামে নিজেই গড়ে তোলেন নাট্যদল। এখানেই তিনি নিজস্ব নাট্যচিন্তা নিয়ে স্বকীয় ভঙ্গিতে আত্মপ্রকাশ করেন। এসময় তিনি নিবিড় নাট্যচিন্তায় নবনাট্য আন্দোলনের সম্ভাবনা , সংকট ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে একাধিক প্রবন্ধ রচনা করে নাট্যচিন্তক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। নিজস্ব ও সম্মিলিত নাট্যভাবনা প্রকাশের জন্য সম্পাদনা করেন নাট্যপত্রিকা। মুক্তিযুদ্ধে তিনি হারিয়েছেন অগ্রজ অতনু বিশ্বাসকে। ভাই হারানোর বেদনা আর মুক্তিযুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি ও দৃপ্ত চেতনাকে তিনি আমৃত্যু লালন করেছেন তাঁর কর্মে।

Shantonu biswas03

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে নিজের লেখা ও নির্দেশনায় শেষ অভিনীত “নির্ভার” নাটকের একটি দৃশ্যে শান্তনু বিশ্বাস

প্রসঙ্গত , দেশের অন্যতম খ্যাতনামা শিল্পপ্রতিষ্ঠান ইস্পাহানী গ্রুপের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা ও বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক প্রতিভার অধিকারী শান্তনু বিশ্বাস চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ জুলাই, ২০১৯ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।

বাঙালীয়ানা/এসএল

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.