পূর্ববঙ্গের প্রতিরোধ লড়াই এবং রবীন্দ্রনাথ – শেষ পর্ব

Comments

।। কামাল লোহানী ।।

সাংস্কৃতিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার পর আমরা সকলে প্রতিবাদী চরিত্র নিয়ে নিজেদের অনুষ্ঠান সাজাতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। তবে ছায়ানট এবং বুলবুল একাডেমীর ভূমিকাই ছিল প্রধান, আমরা কর্মী ছিলাম মাত্র। ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে আয়োজিত হয়েছিল এই ব্যাপক অনুষ্ঠানসূচী। আর সচেতন রবীন্দ্রপ্রেমীদের সাড়াও ছিল নির্ভীক ও অভূতপূর্ব। প্রথম দুদিন ছিল উপচে পড়া ভিড়। ইস্কান্দার মীর্জা হলে তিলধারনের জায়গা ছিলনা কোনদিন। এমনিভাবে প্রথম দুদিনতো নির্বিঘ্নে কাটলো, কিন্তু তৃতীয় দিনে আমাদের অনুষ্ঠানে গুন্ডাবাহিনীর হামলার পূর্বাভাস পেলাম। অনুষ্ঠান শুরু হবার বেশ আগে দুপুর তখনো গড়ায়নি, হলের পাশে ছোট সবুজ মাঠে বসে আছি আমরা ক’জন। উর্দু কবি প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব নওশাদ নুরী, ফতেহ ফারুক আর আরিফ হুশিয়ারপুরী আর উর্দূভাষী এক ছাত্রনেতা সৌদ। হঠাৎ দেখলাম ছাত্র ইউনিয়ন নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হ্যাংলা পাতলা ছাত্র রাশেদ খান মেনন এবং হায়দার আকবর খান রনো পাজাকোলা করে বেশ কিছু হকিস্টিক নিয়ে আসছেন। এ দৃশ্য দেখে হতবাক হওয়া ছাড়া উপায় কি? জিজ্ঞেস করতে জবাব পেলাম, “রেখে দিন কাজে লাগবে”। তারপর গ্রীনরুমে রেখে দিলাম। আশঙ্কা ছিল বটে, তবে হামলার কথা ভাবিনি এভাবে। অবশেষে তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরুর সময় এলো। কিন্তু হল তো ভর্তি, ভর্তি নয় কেবল, ঠাসাঠাসি। এরমধ্যে ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্য শুরু করবো কি করে? দেরী দেখে আচমকা এক প্রস্তাব নিয়ে এলো জগন্নাথ কলেজের বাবুল, ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপ করে এবং সন্ত্রাসে যুক্ত বলেও বদনাম আছে, তবু সে আমাদের খুবই শ্রদ্ধা করে, তাই বাবুল এসে জানাল, “লোহানী ভাই, একজন উর্দূভাষী ভদ্রলোক আপনার সাথে কথা বলতে চান। জানলাম মোহম্মদপুর আর মীরপুর থেকে দুই ট্রাক যে গুন্ডাবাহিনী এসেছে ইনি তাদের নেতা। ভাবলাম, শুনি তার কথা। বললাম,“ডাকো”।

পূর্ববঙ্গের প্রতিরোধ লড়াই এবং রবীন্দ্রনাথ -এর চারটি পর্ব পড়ুন

পর্ব ০১
পর্ব ০২
পর্ব ০৩
শেষ পর্ব

সুদর্শন এক ‘ভদ্রলোক’ আমার সামনে এলেন এবং আমাকে সালাম জানিয়ে বললেন, “দেরী কিঁউ, ফিকির মাত্ কিজিয়ে, শো শুরু কার দিজিয়ে”। কি বলবো ভেবে না পেয়ে বললাম, “এখুনি করবো।” লোকটি চলে গেল। বাবুল এসে জানাল, ওরা দুই ট্রাক ভর্তি হয়ে এসেছিল। হলঠাসা দর্শক দেখে হামলার চিন্তা ছাড়েনি, তবে পরের শো’তে হবে বুঝলাম। ওই লোকটি আসবার আগেই আমরা লোক দর্শক সমাগম দেখে ঘোষণা দিয়েছিলাম “আজ যে ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্য হবার কথা, আমরা আপনাদের আন্তরিকতা ও আগ্রহের প্রতি সম্মান দেখিয়ে দ্বিতীয় শো’র আয়োজন করবো”। মনে হলো গভর্নর মোনায়েম খাঁ যে গুন্ডাবাহিনী পাঠিয়েছিল শো’তে আক্রমণ চালাবার জন্য, লোকের বিপুল উপস্থিতি দেখেই হয়তো ভেবেছে, এ শো’তে হামলা করলে হতাহত বেশী হবে। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেহেতু দ্বিতীয় শো হবে, তাহলে তখন লোক কম থাকবে, তখনই হামলা চালানো ঠিক হবে। আর সে কারনেই বোধ হয় গুন্ডাবাহিনীর লীডার আমার সাথে কথা বলতে এসেছিল। ওরা দুই ট্রাকই নিয়ে কাছেই রমনা রেঁস্তোরা, সেখানে গেছে। অপেক্ষা করবে পরের শো’র জন্যে। শুনলাম, সময় কাটাবার জন্য তাদের মাতাল অবস্থায় রাখার জন্যে ভাড়েভাড়ে তাড়ি সাপ্লাই দেয়া হচ্ছিল। ওগুলো গিলে ওরা মাতাল হয়ে গড়াগড়ি যাচ্ছিল। আর এদিকে প্রথম শো ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্য শেষ হলে, আবার যখন দর্শক মিলনায়তনে ঢুকে নিজেদের আসন দখল করে নিতে শুরু করলো, আমরা চট্জলদি সিদ্ধান্ত নিলাম, এমন হামলার হুমকি সামনে রেখে শো করা উচিত হবেনা। এ কথা ঠিক হতেই ওয়াহিদ ভাই পর্দার ওপারে মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে করজোড়ে বলতে শুরু করলেন, “বহিরাগত গুন্ডাবাহিনীর আক্রমণের আশঙ্কায়………”। যেই না একথাগুলো বলা ওমনি ওয়াহিদ ভাইকে টেনে ভেতরে আনা হলো। বললাম, “খোলামেলা এভাবে ঘোষণা দেয়া যাবে না। বলতে হবে ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্যের নায়িকা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, সে জন্য দ্বিতীয় শো করা সম্ভব হবে না। তাই আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং সত্বর এই নৃত্যনাট্য মঞ্চায়নের ব্যবস্থা আপনাদের জন্য আমরা করবো। আজ আর শো হচ্ছে না, ক্ষমা করবেন।” আকস্মিক অসুস্থতার কথাটা মোক্ষম কাজে লাগল। এবারে গুন্ডাবাহিনী হলে এসে পৌঁছবার আগেই বিশেষ করে মেয়েদের নিরাপদে বাড়ী পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। বুলবুল একাডেমীর একটি মিনিবাস ছিল, আমরা সব মেয়েকে ওতে তুলে একাডেমীর ৪র্থ বর্ষের ছাত্র রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার্থী মুরাদকে দায়িত্ব দেয়া হলো, নিরাপদে বাড়ী পৌঁছে দেবার। মুরাদ সাহসী ছিল, নিরাপত্তার প্রয়োজনে অস্ত্রও থাকতো ওর কাছে। দরকার হলে ও লড়তে পারবে। নিশ্চিন্তে মেয়েদের পাঠিয়ে দিয়ে আমি, ওয়াহিদ ভাই, হাজেরা আপা তখনো ইন্সটিটিউট হলে থেকে গিয়েছিলাম নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’র প্রয়োজনে ব্যবহৃত সব বাদ্যযন্ত্র, ওগুলোর কি হবে ভাবছিলাম। এমনি সময়ে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা রেজা আলী দৌড়তে দৌড়তে হলে এসে আমাদের জলদি হল ত্যাগ করতে অনুরোধ করলেন। হল থেকে কিছুটা দুরে ওর গাড়ীটা রেখে, আমাদের নিতে এসেছে, বললেন, “তাড়াতাড়ি করুন, এক্ষুনি ওরা হামলা করবে। আপনারা হল ছেড়ে আমার গাড়ীতে উঠুন”। হলের সামনে বেরুলাম। যন্ত্রগুলোকে রেখেই চলে এলাম। দেখলাম, আজকের শিখা চিরন্তন বরাবর রাস্তার উপর একটা ফোরডোর ফোক্সওয়াগন দাঁড়িয়ে। হায় স্বদেশ! আমরাই প্রাণ বাঁচালাম ওটায় চড়ে। ঢাকা শহরে তখন সম্ভবত: ওটাই এ ধরনের একমাত্র গাড়ী। চললাম হাজেরা মাহমুদ আপাকে ধানমন্ডী নামিয়ে দিয়ে ওয়াহিদ ভাইয়ের পরামর্শে প্রেসক্লাবে গেলাম এককাপ চা খাওয়ার জন্যে, ভাবলাম, আমাদের দুশ্চিন্তা কিছুক্ষণের জন্যে তো প্রশমিত হবে। হলোও তাই। চা পান শেষে সাংবাদিক বন্ধুদের আশংঙ্কার কথা জানালামও। কিছু সময় ক্লাবে কাটিয়ে, ভাবলাম গভর্ণর মোনায়েম খানের গুন্ডাবাহিনী নিশ্চয়ই এখন আর নেই, দেখি হলের কি অবস্থা। রেজা আলীকে নিয়েই হলে পৌঁছে দেখি, এক তান্ডব ঘটে গেছে মঞ্চে। যত রকম বাদ্যযন্ত্র ছিল, ওরা আমাদের না পেয়ে ঐ বাদ্যযন্ত্রগুলো আর হলের প্রথম সারির সোফাগুলোকে ভাঙচুর করেছে। হতবাক হয়ে দেখলাম ঐ হিটলারী অভিযানের পরিণতি। মন যতই খারাপ হোক, বাস্তব আমাদের মেনে নিতেই হবে। কিন্তু অশেষ ঘৃণা উদ্গীরণ করলাম গুন্ডাবাহিনী, ওদের নেতা সেই ‘ভদ্রলোক’ আর সামরিক শাসকবর্গের পূর্ববঙ্গীয় গভর্নর মোনায়েম খাঁ’র প্রতি। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমরা প্রমাণ করলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অপ্রতিরোধ্য। তিনি আছেন আমাদের দেহে, মনে, মননে, মানসিকতায়। ওরা ধ্বংস করবে কাকে, কতদূর। হিংস্রতার বিষাক্ততা ছড়িয়েও রবীন্দ্রচর্চা বন্ধ করতে পারেনি। তাই কবিগুরুর ‘বাধা দিলে বাধবে লড়াই’ এই মন্ত্রই জয়ী হলো। পূর্ববঙ্গের মাঠঘাট, নগর-বন্দর প্রবল প্রতিরোধই সেনাশাসনকে উপেক্ষা করে যেন আরও দ্বিগুণ গতিতে চলতে থাকলো রবীন্দ্রচর্চা। আমরা রবীন্দ্রপ্রেমকে স্বাদেশিকতার বিপুল ঐশ্বর্য্যে ধারন করলাম। তখনকার খ্যাতিমান রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী জাহেদুর রহিম (বাবু) “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি” গানটি গাইতে শুরু করলেন সবখানে। এ গান যেন অনিবার্য হয়ে উঠল। রংপুর থেকে এলেন অজিত রায়, জাহেদুর রহিমের যাত্রা পথে আরেক অভিযাত্রি যুক্ত হলেন।

শুরু হলো বর্ষামঙ্গল, শারদোৎসব, বসন্তোৎসব। নানা আয়োজনে পঞ্চকবির গান পরিশীলিত শিল্পীসংঘের গলায় উঠলো। ১৯৬৭ সাল পেরিয়ে পূর্ববাংলার ধানের গুচ্ছে যে রক্ত জমেছিল এতদিন, বিদ্রোহ করলো একসাথে। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন জনগণের সান্নিধ্যে প্রবল বিস্ফোরনের অপেক্ষায়। এই বিপুল ঐশ্বর্য্যের অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে বাংলা হয়ে উঠলো উত্তাল। উনসত্তরে গনঅভ্যুত্থান আসাদ, জোহা, মতিয়ুরের মত শত শহীদের রক্তে স্নাত হলো। রাজনীতির পালে লাগলো বাতাস আর তাতে ঘৃণার পাহাড় টলিয়ে সত্তরের সামরিক চক্রের দেয়া সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার ৬-দফার গৌরবে যেমন, তেমনি ছাত্রসমাজের ১১-দফায় উদ্বেলিত হয়ে তৎকালীন সারা পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের দেয়া রায়ে সামরিক শত্রুকে টপকে যাবার সাহস পেলো। আওয়ামী লীগ জিতলো পূর্ববঙ্গেতো বটেই সারা পাকিস্তান জাতীয় পরিষদেও। কিন্তু পাঞ্জাবী রাজনৈতিক ক্লিবের ষড়যন্ত্রে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার মতন মতলব এঁটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও তার নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্ষমতায় বসতে দিলো না। স্বাধিকার থেকে অসহযোগ আন্দোলন ক্রমশ পরিণত হলো সব মানুষের মুক্তিযুদ্ধে। জয়ী হলো ‘ভেতো বাঙালি’, ‘দুর্ধর্ষ্য’ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিফৌজের অপরিমেয় শক্তিতে।

ন’ মাসের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও রবীন্দ্রসঙ্গীত সংগ্রামের শাণিত হাতিয়ারে রূপ নিলো সংগঠিত গণসাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে। ‘আমার সোনার বাংলা’ হলো আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। কী অপরিসীম কাব্য মাধুর্য সুরসুষমায় মন্ডিত হয়ে কবিগুরুর তিনটে গান ও সুর, তিনটি রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতে রূপ নিলো। এ এক অনন্য ঘটনা, বিশ্বের যে কোন কবির জন্যে।

শুধু কি তাই, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় দেশে যে পরিবর্তন আনবার কথা সে বিস্ময়কর হলেও অনুপস্থিত একটা বিষয় দেখলাম রবীন্দ্রচর্চার প্রতি প্রবল আগ্রহ অনেককেই তৎপর করে তুললো। দেশবরেণ্য সাহিত্যিক ও ভাষা সংগ্রামী ড. আহমদ রফিক গড়ে তুললেন ‘রবীন্দ্র চর্চা কেন্দ্র’ বেশ বৃহৎ পরিসরে। কিন্তু টিকিয়ে রাখতে পারলেন না। উদ্যোগটি ছিল অসাধারণ ও ব্যাপক। ছায়ানটের প্রবল শক্তিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা ক্রমশ বেড়ে যেতে থাকলো এবং চর্চা ক্রমশ রীতিশুদ্ধ হতে শুরু করলো। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সমাজে প্রতিযোগিতার মনোভাব দেখা দিল। প্রথানুযায়ী রবীন্দ্রচর্চা গবেষণা বৃদ্ধি পেতে থাকলো। ছায়ানট যে গুরুদায়িত্ব পালন করছিল রবীন্দ্রচর্চা প্রসারে, তার পরিধিও বেড়ে গেল ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে। খ্যাতিমান সাংবাদিক, সঙ্গীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক আর ড. সনজীদা খাতুন অনন্য গৌরবের পত্তন করলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষা সম্প্রসারনে। সুসংগঠিত এই ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ’ দেশের প্রত্যন্ত জেলাশহরে গিয়ে তাদের উৎসব আয়োজন করতে করতে আজ রবীন্দ্রনাথ কেবল সীমাবদ্ধ কোন দেশের কবি নেই হয়ে গেছেন সাধারণ মানুষের পরিচিত এক পথপ্রদর্শকে। রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের উৎসব যে এলাকায় আয়োজিত হয়; সেখানে সে ক’দিন তুমুল তৎপরতা ও সাংগঠনিক দক্ষতার সাথে উৎসব আয়োজনে বিপুল লোকসমাগম হয় যা মফস্বল শহরে চিন্তাও করা যায়না। এমন দৃশ্যই প্রমাণ করে রবীন্দ্রনাথ কতখানি জনগণের কাছে পৌঁছে গেছেন। কতটা প্রাসঙ্গিক তিনি আজ বাংলার মানুষের কাছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।

কবিগুরুকে আশ্রয় করেই আজ ‘ছায়ানট’ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। বিশাল ‘ছায়ানট’ ভবন যেন রবীন্দ্রনাথকে পাকিস্তানী হানাদার হায়েনা আর সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ লড়াইয়ের ‘রবীন্দ্রস্মৃতিস্তম্ভে’ রূপ নিয়েছে। তাইতো পহেলা বৈশাখ রমনার বটমূলে বর্ষবরণকে নস্যাৎ করতে মৌলবাদীরা বোমা হামলায় রবীন্দ্রপ্রেমী বাংলার ১০ জন মানুষকে হত্যা করেছিল। কিন্তু কবিগুরুর অমোঘ বাণী: ‘বাধা দিলে বাধবে লড়াই’। ওরা ভাঙতে পারেনি বাঙালি জাতিসত্ত্বার অরুণোদয়- পয়লা বৈশাখ কে। কী আশ্চর্য এরপর থেকে যেন জনস্রােত উপচে পড়ে রমনায়। কত যে নিরাপত্তা। তবু মানুষের ঢল তল্লাট জুড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ যখন বিশ্ব স্বীকৃতি পায়, তখন যেন সংস্কৃতির অপরিমেয় ঐশ্বর্য্য বাংলার সব মানুষকে উদ্বেলিত করে। কিসের ডর, কিসের ভয়- রবীন্দ্রনাথ আমাদের অধিকার আদায় আর সংরক্ষণের মূলমন্ত্র, জয়তু কবিগুরু।

 লেখক:
কামাল লোহানী: শব্দসৈনিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Kamal Lohani

 

 

 

 

পূর্ববঙ্গের প্রতিরোধ লড়াই এবং রবীন্দ্রনাথ -এর চারটি পর্ব পড়ুন

পর্ব ০১
পর্ব ০২
পর্ব ০৩
শেষ পর্ব

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.