প্রতিরূপ
মানুষ হয়তো সামুদ্রিক —
ভেতরে ব্যথার নোনাজল
চাঁদের রাতে আছড়ে পড়ে বুকে
লু হাওয়ায় জাগে পানির নৈঃশব্দ্য
ভেজা বালি, পদচিহ্ন
মানুষ ভেতরে সামুদ্রিক
নইলে ঝিনুকে কেনো মুক্তা ফলে—

পুষ্পস্নান
তোমার স্নানের পাশে আমি এক মিথ্যে প্রহরী
জলকে মর্দ বলে মনে হয়
মৃদু ঢেউয়ের কেলিতে জোড়া হাঁস আর ফুল
ভেসে যাচ্ছে নীলজানীতে…
বুদ্ধের ধ্যান ভঙ্গের কালে
খেইহারা বাজ পড়লো কী অশ্বত্থের চূড়ায়!
উফফ্—
ভেতরে টাটাচ্ছে…

মানবী
নৈঃশব্দের ওপারে ভাঙা গ্রামোফোনে মধ্যযুগীয় কোন গান বেজে যাচ্ছে
তা হতে সুর নয় ভেসে আসেছে তোমার দেহের ঘ্রাণ
যে আদিমপুস্তক জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম
তার প্রতিটি পাতায়, অক্ষরে ধ্বনিত হচ্ছে কারও পদধ্বনি
আহার গ্রহণের মতো তীব্র, জৈবিক
আমাদের পরস্পরের করুণা জুড়ে বিকশিত হয়
মানবীয় প্রেম, নাকি রক্তবাসনা?
পায়েলের শব্দে, চুড়ির রিনরিন ধ্বনির ভেতর
একা একা বিভোর থাকে দাসত্ব সংকেত, যৌনঈর্ষা
আমি তপ্তযুগের আগামবার্তা নিয়ে, উল্কাপতন নিয়ে
আকণ্ঠ বেদনাহত তোমার অবচেতনে কুহু ডেকে যাচ্ছি
দেবী ডাকতে ভয় হয় যদি বিসর্জন চাও!

অন্ধ জ্যোতিষী
প্রতিটি প্রেমিক গোপনে কুশল-ভাঁড়
এই অদ্ভুত জোকার
প্রেমিকা নামের এক বা একাধিক দর্শকের মনে
প্রতিনিয়ত নির্মাণ করে হাসির ছলনা, ধুলোর চাঁদ
আর প্রেমিকা—
হাওয়ায় দোলা সজনেগাছের মতো
টিপ টিপ পাতা ঝরায়, ভেঙে যায়
একদিন নিজের ভেতর খুঁজে নেয়
প্রসন্ন নারীজীবন, সলা সলা সজনেফল

শারদীয়
মনোরথ জুড়ে তুমি কার অপেক্ষা করছো
সে কি আমার ছায়া না দেহ
নৈঃশব্দের গভীরে যে একাকিত্ব
তা তেপান্তরে হারিয়ে যাওয়া নিশিট্রেনের শব্দের মতো প্রতীকী
হাসপাতাল ফেরত মানুষ যেমন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে
তেমনি যদি আমাদের অশ্রুপ্রণয় ঘটে
তবে শরতের কাশফুলে প্রতিমা বিসর্জ্জনের সন্ধ্যা হয়ে
আমায় খুঁজবে কি তুমি?
আমাদের সাম্প্রদায়িক ক্ষত জুড়ে একটিবার
শুশ্রূষার হও, সবুজ হও প্রেমে
ক্লান্তি আসার আগেই
তোমার হৃদয়ের ধারণা জড়িয়ে শুধু বলতে চাই
ভালো নেই মা—

লেখক:
শৈবাল নূর, কবি